আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের যুদ্ধাপরাধ তদন্তের আবেদন নাকচ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আফগানিস্তানে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের তদন্ত দাবি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) কৌঁসুলির করা আবেদন নাকচ করে দিয়েছে সংস্থাটি। সেদেশে চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং স্থানীয় তদন্তকারীদের সহযোগিতার অভাবকে দায়ী করেছে আইসিসি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই রায়কে ‘গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বিজয়’ হিসেবে আখ্যা দিলেও মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এই রায়ের সমালোচনা করেছে।
আইসিসি’র কৌঁসুলি ফাতোও বেনসৌদা’র ভিসা বাতিল করার এক সপ্তাহ পর এই ঘোষণা এলো।
আফগানিস্তানে মার্কিন সেনারা যুদ্ধাপরাধ সংঘটন করেছিল – এমন অভিযোগ তদন্ত করার জন্য আবেদন করেছিলেন মিজ. বেনসৌদা। তার ভিসা বাতিল হওয়ার পর ধারণা করা হয়েছিল যে তার ঐ আবেদনের জবাবে যুক্তরাষ্ট্র তার ভিসা বাতিল করেছে।
সর্বসম্মতভাবে নেওয়া সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা হিসেবে আইসিসি’র বিচার পূর্ববর্তী আদালতের তিন বিচারক বলেন, এ ধরণের তদন্ত ‘ন্যায়বিচারের স্বার্থ রক্ষা’ করবে না।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, এই রায়ের ফলে ‘শুধু এই দেশপ্রেমিকদেরই নয়, আইনের শাসনেরও বিজয় হয়েছে’।
এক বিবৃতিতে মি. ট্রাম্প আইসিসিকে ‘অবৈধ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন এবং বলেছেন তাদের বিরুদ্ধে ‘দ্রুত এবং কঠোর প্রতিক্রিয়া’ দেখানো হবে যদি তারা যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্রদের বিরুদ্ধে বিচারিক কার্যক্রম শুরু করে।
মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, আফগানিস্তানে যুদ্ধাপরাধ তদন্তে অস্বীকৃতি জানানোর সিদ্ধান্ত ‘ভুক্তভোগীদের পরিত্যাগ করার অত্যন্ত বেদনাদায়ক নজির’ যা ‘আদালতের গ্রহণযোগ্যতাকে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করবে’।
অ্যামনেস্টির বিরাজ পাটনায়ক বলেছেন, এই সিদ্ধান্তকে ‘ওয়াশিংটনের হুমকির সামনে কাপুরুষচিত আত্মসমর্পণ’ হিসেবে দেখা হতে পারে।
আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য সেনারাও যুদ্ধাপরাধ করেছে কিনা সেই অভিযোগ প্রায় এক দশক ধরে যাচাই করে আসছে আইসিসির কৌঁসুলিরা।
সম্ভাব্য অপরাধের বিষয় খতিয়ে দেখতে আনুষ্ঠানিকভাবে যাচাই শুরু হয় ২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে।
আইসিসি যদিও বলেছে, যে যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়েছে এমনটা বিশ্বাস করার ‘যৌক্তিক ভিত্তি’ রয়েছে। বিচারকরা বলেন, আফগানিস্তানের বর্তমান অবস্থায় ‘সফল তদন্ত পরিচালনার সম্ভাবনা অত্যন্ত সামান্য।’
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত কী?
যখন কোনো দেশের কর্তৃপক্ষ গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধে দায়ীদের আইনের আওতায় আনতে অপারগ হয়, তখন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি কার্যক্রম পরিচালনা করে।
২০০২ সালে জাতিসংঘের একটি সমঝোতার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের।
যুক্তরাজ্য সহ ১২৩টি দেশ এই সংস্থাকে অনুমোদন দিয়েছে।
তবে চীন, ভারত, রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র সহ অনেক দেশই এই সংস্থার সাথে যুক্ত হতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
এছাড়া আফ্রিকার কিছু দেশের দাবি, এই আদালত আফ্রিকানদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করে।
যুক্তরাষ্ট্র কেন এর বিরোধিতা করছে?
মার্কিন প্রশাসন দীর্ঘদিন ধরেই আইসিসির সমালোচনা করে আসছে।
মার্কিন প্রশাসনের বক্তব্য, এই ধরণের বিচার কার্যক্রমের ফলে তাদের সেনারা রাজনৈতিক মামলার ভুক্তভোগী হতে পারে।
নিজের ক্ষমতাকালের শেষদিকে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত প্রতিষ্ঠা করার সমঝোতায় স্বাক্ষর করেছিলেন, কিন্তু মার্কিন কংগ্রেস কখনোই এর সমর্থন করেনি।
বসনিয়ায় শান্তিরক্ষা মিশন থেকে যুক্তরাষ্ট্র যখন তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করতে অস্বীকৃতি জানায়, তখন এক পর্যায়ে জাতিসংঘ মার্কিন সেনাবাহিনীকে যুদ্ধাপরাধের দায় থেকে রেহাই দিয়েছিল।
কিন্তু ২০০৪ সালে (ইরাকি বাহিনীর ওপর মার্কিন সেনাদের নির্যাতনের চিত্র প্রকাশিত হওয়ার দুই মাস পর) ‘মার্কিন বাহিনীর জন্য ব্যতিক্রম’ বাতিল করা হয়।
মার্কিন নাগরিকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হলে আইসিসি’র বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে – গত সেপ্টেম্বরে এমন হুমকি দেয় মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন।
সূত্র : বিবিসি