আফগানিস্তানে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার সাহায্য কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। গত সোমবার আফগানিস্তান সফর থেকে ফেরার পরপরই এ ঘোষণা দেন তিনি। আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি ও তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আবদুল্লাহ আব্দুল্লাহর মধ্যে সমঝোতা প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দেশটিতে মার্কিন সাহায্য কমানোর এ ঘোষণা এলো।
গনি ও আবদুল্লাহর মধ্যকার মতবিরোধ নিরসনের উদ্দেশ্যে সোমবার একদিনের অঘোষিত সফরে আফগানিস্তানে গিয়েছিলেন। পম্পেও এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ২০২১ সালে আরো এক বিলিয়ন ডলার মূল্যের সহায়তার পরিমাণ কর্তনে প্রস্তুত এবং আরো কিছু সহায়তা কমানো যায় কি না তা নির্দিষ্ট করতে আফগানিস্তান বিষয়ক আসন্ন দাতা সম্মেলনে আমাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্বিবেচনা করার জন্য সব কার্যক্রম এবং প্রকল্পের একটি পর্যালোচনা করা হবে।’
বিশ্বে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার মধ্যেই পম্পেওর এই প্রচেষ্টা থেকে এটিই বোঝা যায় যে, দীর্ঘ দুই দশক ধরে চলা আফগান যুদ্ধের অবসান ঘটাতে এবং দেশটিতে রাজনৈতিক উপায়ে শান্তি ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্র কতটা বদ্ধপরিকর। আর সে যাত্রায় যখন পম্পেও এ প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হলেন, তখন স্বভাবতই ওয়াশিংটন ক্ষুব্ধ এবং তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছে বিশ্ব মোড়ল হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্র।
পম্পেও বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র অত্যন্ত আশাহত’ যে গনি এবং আবদুল্লাহ একটি ঐকমত্যের সরকার গঠনে একমত হতে পারেনি। তাদের ব্যর্থতা ওয়াশিংটন ও কাবুলের সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।’ এমনকি এই ব্যর্থতাকে পম্পেও আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় জীবন উৎসর্গকারীদের জন্য অপমানজনক বলেও আখ্যা দিয়েছেন।
এ দিকে আফগানিস্তানের সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠন তালেবান নেতাদের সাথে আকস্মিক সাক্ষাৎ করেছেন মাইক পম্পেও। এ সময় তারা স্বাক্ষরিত শান্তি চুক্তির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। গত সোমবার এক সংক্ষিপ্ত সফরে কাবুল পরিদর্শন শেষে ফেরার পথে কাতারের রাজধানী দোহায় তালেবান নেতাদের সাথে সাক্ষাৎটি করেন তিনি।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র মর্গান অরতাগাস জানিয়েছেন, গত মাসে স্বাক্ষরিত শান্তি চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়নের জন্য তালেবান নেতাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করেন মাইক পম্পেও। বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘ ১৮ বছর যাবৎ চলা আফগান যুদ্ধ সমাপ্তির জন্য গত ২৯ ফেব্রুয়ারি তালেবান নেতাদের সাথে ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। চুক্তি অনুযায়ী আফগান সরকারের সাথে আলোচনা শুরুর পূর্বশর্ত হিসেবে কারাবন্দী তালেবান সদস্যদের মুক্তি দাবি করে গোষ্ঠীটি। যদিও প্রাথমিকভাবে দাবিটি মানতে অস্বীকৃতি জানায় আফগান কর্তৃপক্ষ।
এমন পরিস্থিতিতে আফগান নেতাদের সাথে বৈঠক শেষে ফেরার পথে কাতারের আল-উদেইদ বিমান ঘাঁটিতে তালেবান নেতা মোল্লা আবদুল গনি বারাদারের সাথে অঘোষিত সাক্ষাৎ করেন মাইক পম্পেও।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে শুরু হওয়া শান্তি আলোচনায় তালেবান নেতাদের মুখ্য আলোচক ছিলেন এই মোল্লা আবদুল গনি বারাদার। তার নেতৃত্বেই মার্কিন প্রতিনিধিদের সাথে শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে যুক্তরাষ্ট্র। সূত্র : আল জাজিরা