আলোচিত পাপিয়াকে থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। বহিস্কার করা হয়েছে দল থেকে। এক সময় অনেক প্রভাবশালী তার আশেপাশে ঘুরঘুর করলেও এখন কেউ নেই। তবে তার কাছে রয়ে গেছে অনেক প্রমান। অনেক যৌন কাব্যের সিডি। এতে চিন্তিত অনেক রতি মহারথি। বলা হচ্ছে, ক্যাসিনো সাম্রাজ্যের যোগসুত্র রয়েছে পাপিয়ার সাথে। তা নাহলে এত কাড়ি কাড়ি টাকা তার কাছে আসতো ক্যামনে।
হোটেল ওয়েস্টিনের ২১ তলা। বিলাস বহুল ফ্ল্যাট্ দামি কার্পেট। চোখ ধাধানো সব উপকরণ। এরই মাঝে আরাম আয়েশে বসে থাকতেন মক্ষী রানি খ্যাত পাপিয়া। চালাতেন হুকুম। দু’হাতে উড়াতেন টাকা। বিদেশী টাকাও চলতো মাঝে মাঝে। এ যেন হিন্দি কোন ছবির গল্প। এ হোটেলের প্রেসিডেন্ট কক্ষটি গত নভেম্বর মাসে ভাড়া নেন পাপিয়া। তিনি গত তিন মাসে ওই কক্ষের ভাড়া পরিশোধ করেছেন প্রায় ৮৮ লাখ টাকা। অন্যান্য খরচসহ মোট খরচ তিন মাসে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। প্রতিদিন বারের বিল ১২ লাখ টাকা। আয়কর ফাইলে তার বছরে আয় ২২ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে। হোটেল ওয়েস্টিনের ১৯ তলায় একটি বার রয়েছে, যেটি পাপিয়া পুরোটাই বুক করে নিতেন। প্রতি দিন আড়াই লাখ টাকা মদের বিল পরিশোধ করতেন। সব মিলিয়ে দেখা যায়, গত তিন মাসে নাকি তিনি প্রায় তিন কোটি টাকা বিল পরিশোধ করেছেন হোটেল কর্তৃপক্ষকে।
পাপিয়া টার্গেট সুন্দরী নারীদের। তাদের আর্থিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে মাঠে নামাতেন তিনি। বছরের অধিকাংশ সময় তিনি রাজধানীর বিভিন্ন বিলাসবহুল হোটেলে অবস্থান করেন। সেখান থেকেই নানা সোর্সের মাধ্যমে নারী সংগ্রহ করেন পাপিয়া। তাদের ঘসামাঝা করে স্মার্ট করতেন। এর পর কাজে লাগাতেন। এই অবৈধ কাজ থেকে পাওয়া টাকা দিয়ে গড়েছেন একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাটসহ বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ। শাফিউল্লাহ বুলবুল আরও বলেন, গুলশানে অবস্থিত অভিজাত একটি হোটেলে ২১ তলায় তার দুটি রুম ভাড়া নেয়া আছে। সেখানেই তিনি তার কাজে সহযোগী মেয়েদের রাখেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এবং তার কাছ থেকে পাওয়া রশিদ অনুযায়ী, গত তিন মাসে অভিজাত একটি হোটেলে বার খরচ ও রুম ভাড়া হিসেবে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা খরচ করেছেন তিনি।
এদিকে শনিবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হতে দেশ ত্যাগের সময় অবৈধ অর্থসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করে র্যাব। তাদের মধ্যে অন্যতম এই শামীমা নূর পাপিয়া।র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে র্যাব ১ এর অধিনায়ক শাফিউল্লাহ বুলবুল বলেন, শামীমা নুর পাপিয়া একজন ব্যবসায়ী। এফডিসি সংলগ্ন কার এক্সচেঞ্জ নামক গাড়ির শোরুম আছে তার। তবে এই ব্যবসার আড়ালে তিনি অবৈধ অস্ত্র, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ নারীঘটিত অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। দুপুরে জাল টাকা সরবরাহ করে বিদেশ পাড়ি দেয়ার উদ্দেশ্যে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গেলে র্যাব তাদের আটক করে। আটকের সময় তাদের নিকট হতে ৭টি পাসপোর্ট, বাংলাদেশি নগদ ২ লাখ ১২ হাজার টাকা, জাল ২৫ হাজার টাকা, ভারতীয় রুপি ৩১০, শ্রীলংকান মুদ্রা ৪২০, ১১ হাজার ৯০ ইউএস ডলার উদ্ধার করা হয়। এ সময় শামীমা নুর পাপিয়ার দুই ব্যক্তিগত সহযোগী ও তার স্বামীকেও আটক করা হয়।
আটককৃত অন্যরা হলেন, স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন, সাব্বির খন্দকার, শেখ তাইয়েবা মতি। আটক মতি পেশায় একজন ব্যবসায়ী। দেশে স্ত্রীর ব্যবসায় সহযোগিতার পাশাপাশি থাইল্যান্ডে তার বারের ব্যবসা রয়েছে। তিনি স্ত্রীর মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের অসহায় নারীদের অনৈতিক কাজে ব্যবহার করেন। অবৈধ অস্ত্র, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে তিনি জড়িত। আটক সাব্বির খন্দকার পাপিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী এবং আটক তায়্যিবা মতি সুমনের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। পাপিয়া ও মতি সুমনের ব্যক্তিগত সম্পত্তির হিসাব রক্ষণাবেক্ষণসহ সকল অবৈধ ব্যবসায় এবং অর্থ পাচার ও রাজস্ব ফাঁকি দিতে তারা সহযোগিতা করে আসছিলেন বলে জানায় র্যাব।
এরই মধ্যে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে যুব মহিলা লীগের নরসিংদী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শামিমা নূর পাপিয়াকে আজীবনের জন্য সংগঠন থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। রোববার সংগঠনের সভাপতি নাজমা আক্তার এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক অপু উকিল স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নরসিংদী যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শামিমা নূর পাপিয়াকে সংগঠনের গঠনতন্ত্রের ২২ (ক) উপ-ধারা অনুযায়ী দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে আজীবনের জন্য বহিস্কার করা হলো। এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর করা হবে।’###২৩.২.২০২০