-- বিজ্ঞাপন ---

ইরাকের মার্কিন ঘাটিতে ইরানের হামলার ক্ষয়ক্ষতির ছবি প্রকাশ

0

মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হুমকির পরিবর্তে নরম সুরে কথা বলতে শুরু করেছেন। বুধবার জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে তার বক্তব্যে এমনটিই পরিলক্ষিত হয়েছে। ইরান সেদেশের চৌকশ  সামরিক জেনারেল কাসেম সোলেমানিকে হত্যার প্রতিশোধ নেবে হুমকি এবং সর্বশেষ মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র কিছুটা নরম সুরে কথা বলছে। পরে ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের হুমকি না দিয়ে কড়া অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বলেছেন।

সামরিক বিশ্লেষকরা এমনটিই মনে করছেন। ইরানের পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইরাকে মার্কিন বিমান ঘাঁটি আল আসাদ এয়ারবেস এর প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি উপগ্রহের মাধ্যমে প্রাপ্ত ছবিতে এটা পরিস্কার ধরা পড়েছে। যদিও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক টুইট বার্তায় বলেছেন,  ‘অল ইজ ওয়েল’ সব ঠিকঠাক আছে । তেমন কিছু হয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে সেখানে প্রাণহানি ঘটেনি তেমন কিছু হয়নি বলা হলেও স্যাটেলাইট ইমেজে প্রাপ্ত ছবিতে ঘাঁটির অভ্যন্তরে ব্যাপক ধ্বংসাবশেষ দেখা গেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্ল্যানেট ল্যাব আইএনসি সরবরাহকৃত ইমেজে ঘাঁটিটির আগে ও পরের ছবি তুলে ধরা হয়।

মিলিটারী টাইমস অনলাইন এর সাংবাদিক ডায়ানা স্ট্যানসি কোরেল ও এ্যারন মেহতা এনিয়ে প্রতিবেদনে এ তথ্য জানান। এতে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার রাতে ঐ হামলায় ইরান দুটি মার্কিন ঘাঁটিতে ডজন খানেক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। প্রাপ্ত ছবিগুলি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করা হয়েছে। মনটারির মিডলবারি ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ এগুলি পরখ করে দেখে নিশ্চিত হয়েছে যে, ঐ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় মার্কিন ঘাঁটির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ১০টি ক্ষেপণাস্ত্র আল আসাদ বিমান ঘাঁটিতে আঘাত হানে। অপর ক্ষেপণাস্ত্রগুলি ইরবিল আন্তর্জাতিক  বিমান বন্দরে নিক্ষেপ করে। ইরাকের প্রধানমন্ত্রী আদেল আবদুল মাহদি জানান তাকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের কিছু সময় আগেই অবহিত করা হয়েছিল। মার্কিন সামরিক সদর দপ্তর পেন্টাগণ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ঐ ঘাঁটি দুটি ইরানের সম্ভাব্য প্রতিশোধ হামলা শিকার হতে পারে এমনটি তারা আগে থেকেই ধারণা করে সর্বদা সতর্ক ছিলেন। সেখানে প্রায় ৫ হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে।

ইরানের হাতে ৫৫ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র

প্রতিরক্ষা বিষয়ক পোর্টাল ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট ৮ জানুয়ারী অনলাইন প্রতিবেদনে জানায়, ইরানের হাতে এ মুহুর্তে ৫৫ হাজার ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। তবে এগুলির মধ্যে বেশীর ভাগ সংখ্যকই হচ্ছে স্বল্প পাল্লার শাহাব-১ ও ফাতেহ-১১০ শ্রেণীর। দেশটির দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইলের পাল্লা ১,২৫০ মাইল। যা দিয়ে ইরান মধ্যপ্রাচ্য, পূর্ব ইউরোপ, পূর্ব আফ্রিাকা ও দক্ষিণ এশিয়ায় আঘাত হানতে সক্ষম। ইরানের নিকট ৫০০ মাইল দূরত্বে ছুঁড়তে সক্ষম ‘কিয়াম’ নামের রকেট রয়েছে। সর্বশেষ মার্কিন ঘাঁটির এ হামলায় উপগ্রহ মারফত প্রাপ্ত ছবি মতে ‘কিয়াম’ রকেট ব্যবহার করা হয়েছে বলে ধারণা করছেন ক্ষেপণাস্ত্র বিশেষজ্ঞ জেফরি লুইস। এই রকেট ১,৭০০ পাউন্ড ওজনের ওয়ারহেড বহনে সক্ষম। সামরিক বিষয়ক সংবাদদাতা ডেভিড এক্স জানান, ইরানের নিকট ‘সাহাব-৩’, ‘গদর-১’, ‘সেজ্জিল’ ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে যাতে আরও বেশী ভারী ২,২০০ পাউন্ড ওয়ারহেড বিস্ফোরক নিয়ে আঘাত হানা যায়।

মার্কিন সংবাদ মাধ্যম ভিওএ ভোয়া জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরাক-ইরানের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জাতির উদ্দেশ্যে বুধবার ভাষণ দেন। তিনি মঙ্গলবার ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যদল যে দুটি বিমান ঘাঁটিতে রয়েছে সেখানে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা সম্পর্কে বলেন যুক্তরাষ্ট্রের বা ইরাকের কেউ নিহত হননি এবং অতি সামান্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্রধারী হতে দেয়া যাবেনা। ইরানকে সন্ত্রাসীদের মদদ দেয়া বন্ধ করতে হবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন ইরানের ওপর বাড়তি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।

বিবিসি বলছে, ঐ ভাষনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, বুধবার ভোররাতে ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কোনো সৈন্য মারা যায়নি, ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে খুবই সামান্য। হোয়াইট হাউজে সংক্ষিপ্ত এক বিবৃতি দেওয়ার সময় হামলার বদলা নেওয়ার কোনো হুমকি দেননি মি ট্রাম্প। বদলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ইরান যদি পারমানবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টা বাদ দেয় এবং, তার ভাষায়, সন্ত্রাসের পথ ত্যাগ করে, তাহলে শান্তি স্থাপনেও তিনি প্রস্তুত।

মার্কিন ঘাঁটিতে আজকের হামলা একটি চপেটাঘাত মাত্র: ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনী

জেনারেল সোলেইমানিকে হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে ইরাকের মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার পর এক সমাবেশে ভাষণ দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনী। তিনি বলেছেন, আজ ভোরে যে প্রতিশোধ নেওয়া হয়েছে তা একটি চপেটাঘাত মাত্র। তিনি আরও বলেছেন, গতরাতে একটি চপেটাঘাত করা হয়েছে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো গোটা অঞ্চলে মার্কিন সেনা উপস্থিতির অবসান ঘটাতে হবে। তারা এই অঞ্চলে যুদ্ধ, বিশৃঙ্খলা ও ধ্বংসযজ্ঞ নিয়ে এসেছে। বিভিন্ন দেশের অবকাঠামো ধ্বংস করে দিচ্ছে।

ইরাক সরকার মার্কিন সেনাদের বহিষ্কারের বিষয়ে সংসদে যে বিল পাস করেছে সেটারও প্রশংসা করেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা। তিনি বলেন, ইরানের সংসদও মার্কিন বাহিনীকে সন্ত্রাসী হিসেবে ঘোষণা দিয়ে ভালো কাজ করেছে।

আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনী বলেন, আমেরিকা চায় ইরাকের সরকার ইরানের সাবেক পদলেহি সরকার অথবা বর্তমান সৌদি সরকারের মতো হবে এবং তেলসমৃদ্ধ এই অঞ্চল তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে যাতে তারা যা ইচ্ছে তাই করতে পারে। তারা দুধেল গাভী চায়। কিন্তু ইরাকের ঈমানদার তরুণ সমাজ এবং ধর্মীয় নেতৃত্ব এসবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। জেনারেল সোলাইমানি এই বিশাল ফ্রন্টকে পরামর্শ দিয়েছেন এবং তিনি ছিলেন তাদের সম্মানিত সমর্থক।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, লেবাননের বিষয়েও একই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চায় আমেরিকা। তারা লেবাননিদের স্বাধীনতার প্রধান উপাদান ধ্বংস করতে চায়। তারা প্রতিরোধ শক্তিকে ধ্বংস করতে চায়।

ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৮০ সন্ত্রাসী মার্কিন সেনা নিহত; আহত ২০০—ইরানের পার্স বার্তা সংস্থা

এর আগে বার্তা সংস্থা পার্স হামলায় ক্ষয়ক্ষতির দাবী করে জানায়, ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি ইরাকের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটি  আইন আল-আসাদে’ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৮০ জন মার্কিন সন্ত্রাসী সেনা নিহত ও অন্তত: ২০০ আহত হয়েছে। ইরানের সামরিক সূত্রের বরাত দিয়ে গণমাধ্যম এ তথ্য জানিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ইরানের নিক্ষিপ্ত একটি ক্ষেপণাস্ত্রও মোকাবেলা করতে পারে নি মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। প্রতিটি ক্ষেপণাস্ত্রই মার্কিন ঘাঁটিতে আঘাত হেনেছে। ইরানের পাল্টা হামলায় মার্কিন ঘাঁটিতে অবস্থিত জঙ্গি বিমান, ড্রোন ও হেলিকপ্টারসহ সামরিক সরঞ্জামের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাওয়াদ জারিফ বলেছেন, জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী জেনারেল সোলেইমানিকে হত্যার প্রতিশোধ নেয়া হয়েছে। আইন আল আসাদ ঘাঁটি থেকেই ড্রোন উড়িয়ে জেনারেল সোলেইমানিকে হত্যা করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

পশ্চিম এশিয়ায় আমেরিকার পা কেটে দেওয়া হবে: হাসান রুহানি

প্রেসিডেন্ট রুহানি

ইরানের প্রেসিডেন্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সোলেইমানিকে হত্যার ঘটনায় আইআরজিসি’র দেওয়া দাঁত ভাঙা জবাব প্রসঙ্গে বলেছেন: তাঁর ভাষায় -‘মার্কিন অপরাধযজ্ঞের চূড়ান্ত জবাবে পশ্চিম এশিয়ায় আমেরিকার কেটে দেওয়া হবে’। এ কথা বলে জনাব রুহানি মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চল থেকে মার্কিনীদের শেকড় উপড়ে ফেলার কথাই বুঝিয়েছেন।

ড. হাসান রুহানি আজ মন্ত্রীসভার বৈঠকে বলেন, ইরাকে জেনারেল সোলাইমানিকে  তাঁর সহযোদ্ধাসহ হত্যার ঘটনা আন্তর্জাতিক সকল রীতিনীতির লঙ্ঘন। ন্যাক্কারজনক এই হত্যাকাণ্ডকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ ও সুস্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন মার্কিন সন্ত্রাসী বাহিনী ওই হত্যাকাণ্ড চালিয়ে তাদের লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।

রুহানি বলেন, ইরানি জেনারেলকে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্র ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ভুল করেছে। জেনারেল সোলেইমানি কেবল একজন সামরিক কমান্ডারই ছিলেন না বরং তিনি ছিলেন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন সংগঠন ও কর্মকর্তার সঙ্গে রাজনৈতিক সংলাপ করার মতো একজন শক্তিশালী ও কৌশলী ব্যক্তিত্ব। তিনি খুব হিসাব নিকাশ করে কাজ করতেন এবং কোনোভাবেই উগ্রপন্থা গ্রহণ করতেন না। ইরানের নিরাপত্তা, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, বায়তুল মোকাদ্দাসের স্বাধীনতা, আঞ্চলিক দেশগুলোর নিরাপত্তা ও আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে নিজ নিজ দেশের ওপর নির্ভরতা এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর স্বাধীনতাই ছিল শহীদ কাসেম সোলেইমানির লক্ষ্য।

পরিস্থিতি শান্ত করতে পাকিস্তান ও তুরস্কের কূটনৈতিক উদ্যোগ

এদিকে আমেরিকার প্রতিরক্ষা সচিব মার্ক এসপার পাকিস্তানের সেনা প্রধান কামার জাভেদ বাজওয়াকে ফোন করেছেন। তিনি বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এতদঞ্চলে সংঘাত চায়না। পরিস্থিতি শান্ত করতে যে কোন দেশের উদ্যোগকে স্বাগত: জানাবেন বলেছেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সে দেশের পররাষ্টমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশীকে ইরান, যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব পাঠাচ্ছেন শীগগীরই । ইমরান খান বলেছেন, পাকিস্তান কোন পক্ষ নিতে চায়না। তবে উত্তেজনা কমাতে শান্তির দূত হিসেবে ভুমিকা রাখতে চায়। অপরদিকে তুরস্ক কূটনৈতিক তৎপরতার অংশ হিসেবে সেদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মভলুত কাভাসুগ্লুকে বৃহস্পতিবার ইরাকে পাঠাচ্ছে জানিয়েছে। দেশটি ফোনে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফের সাথে উত্তেজনা কমাতে কথা বলেছেন বলে জানিয়েছে আংকারা।

# ০৮.০১.২০২০ ইং।

 

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.