ইন্টারনেটে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা জার্মানির ডয়চে ভেলে কর্তৃক প্রচারিত দেড় মিনিটের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, রোহিঙ্গা তরুণী রহিমা আকতার ওরফে রাহী খুশি উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে একটি এনজিওর কর্মী হিসেবে তার স্বদেশি রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন।
ভিডিওটিতে উল্লেখ করা হয়, ১৯৯২ সালে রোহিঙ্গা তরুণী রহিমা আকতার ওরফে রাহী খুশির পরিবার একইভাবে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছিল। সেখানে বলা হয়, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সন্তানেরা বৈধভাবে বাংলাদেশের কোনো স্কুলে পড়তে পারে না।
তাই রোহিঙ্গা পরিচয় লুকিয়ে এবং ঘুষ দিয়ে কক্সবাজারের একটি স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন খুশি। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোহিঙ্গা পরিচয় লুকিয়ে এবং ঘুষ দিয়ে ভর্তি হওয়া সেই স্কুলটি হলো কক্সবাজার শহরের বৈল্যাপাড়ার বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমি। জানা গেছে, খুশি কক্সবাজার বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমি থেকে এসএসসি ও কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। বর্তমানে তিনি কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। কক্সবাজারের ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে এলএলবি অনার্স পড়ছেন। তবে তার পরিচয় জানার পর কতৃপক্ষ তার ছাত্রত্ব বাতিল করেছে।
এই রোহিঙ্গা তরুণী রহিমা আকতার ওরফে রাহী খুশি বাংলাদেশের একটি শীর্ষস্থানীয় দৈনিক পত্রিকার সংগঠন বন্ধুসভার জেলা কমিটির অর্থ সম্পাদক। এছাড়া ওমেন লার্নিংথ সেন্টার, মার্কি ফাউন্ডেশন, কক্সবাজার সরকারি কলেজের স্কাউটসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে তিনি সম্পৃক্ত। সম্প্রতি বার্তা সংস্থা ডয়চে ভেলে খুশির দেড় মিনিটের ভিডিওটি ইন্টারনেটে প্রচার করলে তার রোহিঙ্গা পরিচয় ফাঁস হয়ে যায়। তার সহপাঠীরাও রীতিমতো বিস্মিত খুশি একজন রোহিঙ্গা এবং সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী।
ফেসবুকে সুজন দত্ত লিখেছেন, ‘আমি আজ জানতে পেরেছি যে খুশি একজন রোহিঙ্গা। এত দিন জানতাম না বিষয়টি।’
তাহামিদুল মুনতাসির লিখেছেন, ‘ও মাই গড! এই মেয়েটা রোহিঙ্গা!! সে বিবিসি মিডিয়া নামে একটা এনজিওতে চাকরি করে সম্ভবত। কদিন আগে ছিনতাইকারী মেরে পেপার হেডলাইন হয়েছিল।’ আরিফ শিকদার বাপ্পী লিখেছেন, ‘তথ্যবহুল আলোচিত এটি, আশা করি, এর গুণে প্রশংসিত না হয়ে এখনই প্রতিবাদ করা প্রয়োজন। কক্সবাজারসহ দেশের সকল প্রতিষ্ঠানের ভর্তি বাণিজ্যে লিপ্ত না হয়ে দেশের স্বার্থে কঠোর হওয়া দরকার।’ কক্সবাজারের সাংবাদিক ইমরুল কায়েস চৌধুরী ফেসবুকে লেখেন, পরিচয় গোপন করে নৌ স্কাউট, স্কুলশিক্ষক ও প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্য হলো রোহিঙ্গা তরুণী।’
কক্সবাজারের কুতুপালং নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবিরের তরুণী রহিমা আকতার। তার বাবার নাম মোহাম্মদ ইলিয়াস আর মায়ের নাম মিনু আরা। রহিমার জন্ম থেকে শুরু করে বেড়ে ওঠা সবকিছুই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। কিন্তু গত দুই বছরে বদলে গেছে সবকিছু। গোপন করেছেন নিজের পরিচয়। বানিয়েছেন নকল জন্মসনদ। রহিমা আক্তার থেকে হয়ে গেছেন রাহি আক্তার খুশি। নেতৃত্ব দিচ্ছেন কক্সবাজার নৌ স্কাউটের, হয়েছেন কক্সবাজার পৌর প্রিপারেটরি স্কুলের আইটি প্রশিক্ষক।
বাবা-মাসহ পরিবারের সবার বসতি রোহিঙ্গা শিবিরের। কিন্তু খুশি শিবিরের অবরুদ্ধ পরিবেশে থাকতে চাননি। বেরিয়ে পড়েন বাংলাদেশী পরিচয় অর্জনের মিশনে। কিছু অসাধু এদেশি মানুষের সহযোগিতায় সফল হয় সেই মিশনে। খুশি এখন আর রোহিঙ্গা নয়, মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে সবকিছু পাল্টে ফেলেছেন। খুশির বাংলাদেশি হওয়ার মিশনে হঠাৎ ঝড় উঠেছে মাত্র দেড় মিনিটের একটি ভিডিও ক্লিপে। ফাঁস হয়ে যায় খুশির আসল পরিচয়। পরিচয় ফাঁস হওয়ার পর সহপাঠিরাও রীতিমতো বিস্মিত খুশী একজন রোহিঙ্গা এবং সরকারী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। জার্মানভিত্তিক বার্তা সংস্থা ডয়চে ভেলে’কে দেওয়া একটি ভিতিও সাক্ষাতকারে খুশি নিজেই স্বীকার করেন তিনি মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক। ১৯৯২ সালে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। ওই ভিডিওটি সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকে খুশিকে ঘিরে কক্সবাজারসহ সারাদেশে ব্যাপক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তাকে যারা প্রশ্রয় দিয়েছিল তাদেরকে ঘিরেও সন্দেমূলক অভিব্যক্তি দেখা গেছে ফেসবুকে।
খুশির পুরো নাম রহিমা আক্তার খুশি। ভিডিওটিতে উল্লেখ করা হয়, ১৯৯২ সালে রোহিঙ্গা তরুণী রহিমা আকতার ওরফে রাহী খুশির পরিবার একইভাবে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছিলো। সেখানে বলা হয়, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সন্তানরা বৈধভাবে বাংলাদেশের কোনো স্কুলে পড়তে পারে না। রোহিঙ্গা তরুণী খুশি অত্যন্ত ধুরন্ধর প্রকৃতির। নিজের পরিচয় লুকিয়ে দ্রুত হাইলাইটস হওয়ার জন্য কলেজ জীবন থেকে জড়িয়ে পড়েন বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের কার্যক্রমে। কক্সবাজার সরকারি কলেজে এইচএসসিতে পড়াকালিন সময়ে শীর্ষস্থানীয় দৈনিক প্রথম আলোর সংগঠন বন্ধুসভার কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বর্তমানে বন্ধুসভা কক্সবাজার জেলা শাখার অর্থ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও ওমেন লার্নিং সেন্টার এবং মার্কি ফাউন্ডেশন, স্কাউটসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত।
জানা গেছে, খুশির পরিবার এখনো রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করছে। তার বাবাকে রোহিঙ্গা শিবিরে রোহিঙ্গা ডাকাত হিসেবে চিনে সবাই। ২০১৭ সালে আসা রোহিঙ্গা ঢলেও খুশির অনেক আত্মীয়-স্বজন চলে এসেছে। খুশির হাত ধরে গত কয়েকবছরে রোহিঙ্গা শিবির থেকে তার অনেক আত্মীয়-স্বজন কক্সবাজার শহরে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। অনেকে চট্টগ্রাম শহরেও বসতি গড়ে তুলেছেন। খুশি শহরের বাহারছড়া এবং কালুরদোকান এলাকার দুটি বাসাতে থাকেন। এ বাসা দুটি তার নিকটাত্মীয়দের বলে জানা গেছে। এবিষয়ে জানতে চাইলে রাহি খুশি বলেন, দেখুন আপনারা যা বলছেন এসব মিথ্যা। আমি বাংলাদেশের নাগরিক। জন্মনিবন্ধন কোথেকে করা হয়েছে জানতে চাইলে রাহি বলেন আমার মাথা ব্যাথা করছে পরে কথা বলবো।’
এদিকে খুশির রোহিঙ্গা পরিচয় ফাঁস হওয়াতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হৈচৈ পড়ে যাওয়ায় নড়েচড়ে বসেছে প্রথম আলোর বন্ধুসভা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বন্ধুসভা কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি ইব্রাহিম খলিল ও সাধারণ সম্পাদক ফারিয়াল মৌমিতা মোস্তফা পুষ্পি যৌথ বিবৃতি দিয়ে খুশিকে বন্ধুসভা থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেন। খুশি বাংলাদেশী নাগরিক প্রমাণে ব্যর্থ হলে চূড়ান্তভাবে বহিস্কার করা হবে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
বন্ধুসভার বিবৃতি :
প্রথম আলো বন্ধুসভা কক্সবাজার জেলা কমিটির অর্থ সম্পাদক পদ থেকে রাহিমা আকতার খুশিকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে রোহিঙ্গা তরুণী হিসেবে খুশিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার বিকালে বন্ধুসভার এক জরুরী সভা প্রথম আলো আঞ্চলিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে খুশিকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হয় এবং পরবর্তীতে খুশি বাংলাদেশী প্রমাণ করতে ব্যর্থ হলে তাকে স্থায়ীভাবে বন্ধুসভা থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
প্রথম আলোর পাঠক সংগঠন বন্ধুসভা। সারাদেশে শিক্ষার্থীদের মেধার বিকাশে গণিত অলিম্পিয়াড, ভাষা উৎসব, ইন্টারনেট উৎসব, বিতর্ক উৎসব, ফিজিক্স অলিম্পিয়াড, বিজ্ঞানমেলাসহ বিভিন্ন কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছে। তাছাড়া এসিড সন্ত্রাস ও মাদকবিরোধী প্রচারণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তা কক্সবাজারের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ অবগত। কক্সবাজারের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া অন্তত ৩০০ শিক্ষার্থী বন্ধুসভার সদস্য। সদস্যরা সকলক্ষেত্রে সৃজনশীল এবং মেধাবী শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের কেউ বন্ধুসভার সদস্য হতে হলে প্রথমে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত শিক্ষাসনদ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র দেখা হয়। তারপর যাচাই-বাছাই শেষে বন্ধুসভার সদস্যপদ দেয়া হয়। খুশির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল। কিন্তু পরিচয় গোপন করে খুশি যদি জন্মসনদ কিংবা শিক্ষাসনদ আদায় করে থাকে তার দায় বন্ধুসভার নয়।
বন্ধুসভার সকল সদস্য মেধাবী ও সৃজনশীল মননে গড়ে উঠা শিক্ষার্থী। তারা অন্ধকারকে দূরে ঠেলে বাংলাদেশের জয় দেখতে চায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আলোকিত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বন্ধুসভা অঙ্গীকারাবদ্ধ। এনিয়ে কাউকে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। (তথ্য সূত্রঃ জাগরন/ ইন্টারনেট)