পৃথিবীব্যাপী লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলেছে করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। একই সাথে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা,আমরা জানি কিছু দেশ যথাযথ সময়োপযোগী কার্যকর ব্যবস্থা নিয়ে ভাইরাসটির বিস্তৃতি রোধে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। এদের মধ্য অন্যতম দক্ষিণ কোরিয়া।কোরিয়া শান্ত ও বুদ্ধিদীপ্ত উপায়ে এই ভাইরাস মোকাবিলা করে।শুধু তাই নয়, দেশটির ভাইরাস এপিসেন্টার হিসেবে খ্যাত দেগুও নিয়ন্ত্রণে। ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সফল এই দেশটি প্রযুক্তি, টেষ্ট করা ছাড়াও আরো প্রয়োজনীয় জনহিতকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে, এদের থেকে শিক্ষণীয় কী কী আছে ঢাকার , ঢাকা কী এই পথে হাটতে পারে ?
#প্রথমত,
জন কল্যাণে তড়ীৎ ব্যবস্থা গ্রহণ : কোরিয়া করোনার প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে সরকার উচ্চ পর্যায়ের দায়িত্বশীল ব্যক্তি ও রোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা একযোগে কাজ করেছে। ব্যাপকভাবে পরীক্ষা চালু রেখেছে,একই সাথে আক্রান্ত ব্যক্তিদের আলাদা রাখার ব্যবস্থা এবং সামাজিক মেলামেশাকে নিরুৎসাহিত করেছে শান্ত ও ধীর চলার নীতিতে। বাংলাদেশ অনেক সুযোগ হারিয়েছে,চীনে ভাইরাসটি ছড়ানোর পর তারা দুই মাস সময় পেয়েছিল। অথচ জনগণ ও উচ্চপর্যায়ের লোক একটি ভুল ধারণা পোষণ করে ছিল যে চীন থেকে এই ভাইরাস বাংলাদেশে আসবে এবং বার বার নিজেদের প্রস্তুতি আছে বলে জানিয়েছে ঢাকা।আদতে ভুল নীতিতে ছিল ঢাকা। চীনের থেকে শিক্ষা নিয়ে কোরিয়া টেষ্ট বাড়িয়েছে।কোরিয়ায় শুরুতে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছিল,কোনো ব্যক্তি ভাইরাসে আক্রান্ত কি না, সে পরীক্ষা শুরু করে ব্যাপকভাবে।এতে সফলতাও পাই কেসিডিসি,এখন পর্যন্ত দেশটি ৩ লাখ। উপর মানুষকে পরীক্ষা করেছে দেশটি। প্রতিদিন দেশটি বিনা মূল্যে ১৫হাজার লোকের পরীক্ষা চলছে।
#দ্বিতীয়ত,
শনাক্ত ও পৃথকের পথেই ছিল সিউল : যাদের উপসর্গ রয়েছে, শুধু তাদের পরীক্ষা করাই যথেষ্ট নয়। ওই ব্যক্তির সংস্পর্শে কারা কারা এসেছে, তাদের শনাক্ত করে আলাদা করেছে । সিসিটিভি ফুটেজ,ডাটা ব্যবহার দেখে সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের শনাক্ত করে সিউল। করোনা উপসর্গ রয়েছে এমন ব্যক্তির সঙ্গে কারা মেলামেশা করেছে, তা শনাক্ত করা হয়।
#তৃতীয়ত
সামাজিক গেদারিং সীমিতকরণ: করোনাভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া রোধে সামাজিক মেলামেশা সীমিত করেছে সিউল প্রশাসন আগামী এপ্রিলের ৫ তারিখ পর্যন্ত সামাজিক মেলামেশা, ধর্মীয় অনুষ্ঠান করতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী, তিনি সকলের সহযোহিতা কামনা করেন। কোরিয়ানরা জাতি হিসেবে সচেতন,তাদের দূরত্ব বজায় রাখাটা অন্যতম কার্যকর একটি উপায় হিসেবে কাজ দিয়েছে,কিন্তু এত কিছুর পরেও একদিনের জন্য কাজ থেমে নেই।
#চতুর্থত
স্বাস্থ্যকর বিমানবন্দর : কোরিয়ার ইনছন এয়ারপোর্টই বিশাল ডিজিটাল স্ক্রিনে লেখা আছে “করোনামুক্ত বিমানবন্দর”
এবং এজন্যে তারা আজ পর্যন্ত কোন দেশের উপর প্রবেশ নিষেধাজ্ঞাও জারি করে নি। উলটো ১৫০ টির উপরে দেশ কোরিয়াকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কোরিয়াতে করোনা প্রভাবে পন্যের দাম বাড়েনি, মাস্কের সংকট নেই, ডাকঘর, ফার্মেসীতে পর্যাপ্ত মাস্ক রয়েছে। কোরিয়ায় পর্যাপ্ত মালামাল মজুদ রয়েছে, সমানতালে কাজ চলছে, পুরো কোরিয়াকে কিটনাশক দিয়ে ধোত করেছে,এতে অংশ নেনে জনপ্রতিনিধিরা।কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট , প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা তাদের চার মাসের বেতনের ৩০% কোরিয়ায় কোভিড১৯ নিয়ন্ত্রণে অনুদান দেন,একিই সাথে ৭০জনের উপর শোবিজ তারকা তাদের ইনকাম থেকে করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় রাষ্ট্রীয় কোষাগারে প্রদান করেন। হ্যান্ড স্যানিটাইজার, রেল স্টেশন, বাস স্টেশন বিমান বন্দরে দিয়ে রেখেছে সরকারি ভাবে ফ্রী তে ব্যবহারের জন্যে। চীনের উহানের ভাইরাসটি সিউলের দেগুতে থেকে যাত্রা শুরু কোরিয়ায় যে তাণ্ডবলীলা চালিয়েছিল, সিউল সেটিকে জনগণের সহযোগিতায় কমাতে সক্ষম হয়। শাটডাউন না করে গণজমায়েত নিষিদ্ধ,ধর্মীয় অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ, স্কুল সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে,অফিসের কাজ বাড়ীতে করার নির্দেশ,কোম্পানীর কর্মচারীদের বাইরে যেতে নিরুৎসাহিতকণ।
লোককে ট্র্যাক করার জন্য তিনটি প্রধান উপায় ব্যবহার
#প্রথমত,
ক্রেডিট এবং ডেবিট কার্ড বিশ্বে নগদহীন লেনদেনের পরিমাণ দক্ষিণ কোরিয়ায় রয়েছে।। লেনদেনগুলি ট্র্যাক করে, মানচিত্রে কোনও কার্ড ব্যবহারকারীর গতিবিধি আঁকানো সম্ভব।
কোরিয়া বর্তমানে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে তাড়াতাড়ি শনাক্ত করতে পারছে।
#দ্বিতীয়ত,
স্মার্ট ফোন:মোবাইল ফোন একই উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যেতে পারে। ২০১২ সালে, দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে বিশ্বের সর্বোচ্চ ফোন মালিকানার হারগুলির মধ্যে একটি।ফোনে মানুষের অবস্থানগুলি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পূর্ণ নির্ভুলতার সাথে রেকর্ড করা হয় কারণ যে কোনও সময় ডিভাইসগুলি এক থেকে তিনটি ট্রান্সসিভারের মধ্যে সংযুক্ত থাকে, এবং প্রায় ৮৬০০০০। 4G এবং 5G ট্রান্সসিভারগুলি ঘন করে পুরো দেশ জুড়ে রয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়হলো, ফোন সংস্থাগুলি সমস্ত গ্রাহকদের তাদের আসল নাম এবং জাতীয় রেজিস্ট্রি নম্বর সরবরাহ করে থাকে । এর ফলে প্রায় প্রত্যেকের ফোনের অবস্থান অনুসরণ করে ট্র্যাক করা সম্ভব। কোরিয়া এই পদ্ধতি ব্যবহার করছে।
সিসিটিভি : সিসিটিভি : সিসিটিভি ক্যামেরা কর্তৃপক্ষকে COVID-19 রোগীদের সাথে যোগাযোগ করে এমন ব্যক্তিদের সনাক্ত করতে সক্ষম করে। ২০১৪ সালে, দক্ষিণ কোরিয়ার শহরগুলিতে ৮ মিলিয়নেরও বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা বা ৬.৩ জন প্রতি একটি ক্যামেরা ছিল। ২০১০সালে, প্রত্যেকে ভ্রমণের সময় প্রতিদিন ৮৩.৩ বার এবং প্রতি নয় সেকেন্ডে ধরা পড়েছিল। এই পরিসংখ্যানগুলি আজ অনেক বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দেবলা যায়, দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বের নজরদারি প্রযুক্তির সর্বোচ্চ একটি দেশ।
ডাটা ব্যবহার: একই সাথে ডেটা ব্যবহার করে
কোরিয়ান নাগরিক কিম জাং জানান,আমাদের সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ, ২০১৫ সালের সার্চ রোগ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছে কোরিয়া।নাগরিকের সহযোগিতায় কোরিয়া এখন বিশ্বের মডেল। কোরিয়ার স্বাস্থ্য বিশারদ চোন জানান,কোরিয়ার এই সফলতা ও অভিজ্ঞতা অন্য দেশের জন্য সহায়তা হবে,একই সাথে কোভিড১৯ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশী কমিউনিটির সাথে সংযুক্ত কয়েকজন প্রতিনিধি জানান,কোরিয়ার উন্নত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা,সরকারের প্রাণপণ প্রচেষ্টায়, কোরিয়া এই ভাইরাসের প্রাদূর্ভাব ঠেকাতে সক্ষম হয়।তবে এখনো রোগী সনাক্ত হচ্চে,তা এত উদ্বেগজনক নয় বলে জানান তারা।
সিউল প্রবাসী রবিউল ইসলাম বুলবুল বলেন,সিউলকে মডেল ধরে, আমাদের দেশে উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নেয়।
সংশ্লিষ্ট সংবাদ
রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম জানান, দক্ষিণ কোরিয়াতে বাংলাদেশীরা সুস্থ রয়েছেন,যেকোনো প্রয়োজনে দূতাবাস তাদের পাশে থাকবে আছে।
এই পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, ৯৪৭৮ জন,মৃত্যু বরণ করেছেন ১৪৪ জন, ৪১ শতাংশ মানুষ সুস্থ হয়েছেন। উল্লেখ্য, আগামী সপ্তাহে ইউরোপে আটকে থাকা কোরিয়ান নাগরিকদেরকে দেশে ফেরত আনবে বলে জানিয়েছে কোরিয়ার সরকার।একই সাথে কোরিয়ার মিয়ংজি হাসপাতালের মালিক ও কোরিয়ান হাসপাতাল সমিতির সভাপতি সম্প্রতি জাতিসংঘের এক ওয়েবিনারে বলেন, কোরিয়াকে রোগীকে সনাক্ত করার পাশাপাশি মিডিয়ার সামনে সবকিছু স্বচ্ছ ও উন্মুক্ত রেখ রেখেছে।