বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্র বিজয় সরণিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ঘিরে তৈরি করা হয়েছে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’। ভাস্কর্যটির পেছনে ক্রমবর্ধমান সাতটি প্রাচীরের ম্যুরালে খোদিত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস। গত ১০ নভেম্বর ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’ এর উদ্বোধন ও এর ভূয়সী প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর বাস্তব রূপ দিতে নকশা করেছেন স্থপতি সোহেল আহমেদ রাসেল। তিনি স্থাপত্যবিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘আর্কিয়ান আর্কিটেক্টস’র কর্ণধার।
স্থপতি সোহেল আহমেদ রাসেল আহসানুল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষ করেন। তিনি জানান, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্টেশন সদর দপ্তর থেকে তাঁকে ডাকা হয় দুটি কাজের জন্য, যার একটি হলো বঙ্গবন্ধু কে নিয়ে তৈরি ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’, অপরটি বাঙালি জাতির গৌরব, আত্মত্যাগ ও সাহসিকতার প্রতীক এবং জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, সাত বীরশ্রেষ্ঠের স্মরণে নির্মিত প্রকল্প ‘আমরা তোমাদের ভুলব না’। রাসেল বলেন, বেশ কয়েকটি ডিজাইন আমরা এবং আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সেখানে জমা দিই। সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ এসবিপি (বার) মহোদয়ের পৃষ্ঠপোষকতা ও পরামর্শে নকশা চূড়ান্ত হয়। পুরো কাজটির সামগ্রিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খালেদ শামছ মহোদয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘জাতির পিতার ভাস্কর্যটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নির্মাণ করা হয় এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বিজয় দিবস প্যারেডে প্রদর্শিত হয়। প্রধানমন্ত্রী ভাস্কর্যটির ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং সেনাবাহিনী প্রধানকে ভাস্কর্যটি বিজয় সরণিতে স্থাপনের নির্দেশনা প্রদান করেন। ফাইবার গ্লাসে নির্মিত জাতির জনকের ভাস্কর্যটির প্রধান ভাস্কর শ্যামল চন্দ্র সরকার।
‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যকে ঘিরেই আমাদের এই প্রাঙ্গণের পরিকল্পনা। ভাস্কর্যটির পেছনে রয়েছে সাতটি প্রাচীর। প্রাচীরের ম্যুরালে খোদিত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের আলোকিত ৭টি আন্দোলন তথা ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্র আন্দোলন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থান এবং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রতিচ্ছবি।’ আরও রয়েছে সবুজের সমারোহে ল্যান্ডস্কেপিং!
‘এ ছাড়া সাতটি প্রাচীর দীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে নির্দেশ করে। পাশাপাশি ক্রম ঊর্ধ্বগামী ৭টি প্রাচীর জাতির পিতার স্বপ্নের ‘‘সোনার বাংলা’’ গড়ার প্রত্যয়ে তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের ক্রমবর্ধমান উন্নয়নকে নির্দেশ করে।’
এদিকে স্থপতি সোহেল আহমেদ রাসেলের নকশায় গত ১২ নভেম্বর ঢাকা সেনানিবাসের মাটিকাটা মিলিটারি পুলিশ চেকপোস্ট এলাকায় বাঙালি জাতির গৌরব, আত্মত্যাগ ও সাহসিকতার প্রতীক এবং জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, সাত বীরশ্রেষ্ঠের স্মরণে নির্মিত প্রকল্প ‘আমরা তোমাদের ভুলব না’-এর উদ্বোধন করা হয়েছে। এই ভাস্কর্যের উদ্বোধন করেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, এসবিপি (বার), ওএসপি, এনডিইউ, পিএসসি, পিএইচডি।
‘আর ‘আমরা তোমাদের ভুলব না’ ভাস্কর্যটিতে ‘অর্ধবৃত্তাকার প্রাচীরে’ সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে তুলে ধরা হয়েছে। ভাস্কর্যের সম্মুখের ফোয়ারাটি নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।’
‘ফোয়ারা থেকে প্রাচীর পর্যন্ত সংযুক্ত রেখাগুলো সূর্যরশ্মির প্রতীক। রেখাগুলোর মাধ্যমে বীরশ্রেষ্ঠরা যে জাতির সূর্য সন্তান এবং তাঁরা সূর্যরশ্মির মতোই দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আলোর দিশারি ও অনবদ্য অনুপ্রেরণার উৎস, সেটি উপস্থাপন করা হয়েছে।’
সোহেল আহমেদ রাসেল আরও জানান, নকশা বাস্তবায়নের পর আমরা পুরো টিম মিলে কাজটি করি। যেখানে ভাস্কর্য শিল্পী হিসেবে ছিলেন শ্যামল সরকার’ দেয়াল চিত্রে শিল্পী কাব্য করিম ও তার দল আর আলোক সজ্জায় ছিলেন মোহাম্মাদ রফিক।##
-- বিজ্ঞাপন ---
পূর্ববর্তী সংবাদ
পরবর্তী র্সবাদ
New Generation CCTV Cameras with Facial Recognition Software