জাং ইউন-কিয়ং দক্ষিণ কোরিয়ার এ সংক্রামক রোগ এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। বর্তমানে কেসিডিসি, কোরিয়া রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। চৌকস এই মহিলা যিনি ২০০৩ এবং ১৯৮১ সালে যথাক্রমে এই সংস্থা এবং এর পূর্ববর্তী জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (কেএনআইএইচ) তৈরির পরে কেসিডিসি নেতৃত্ব দিয়েছেন।

কেসিডিসির প্রধান হিসাবে পদোন্নতি পাওয়ার আগে, জনস্বাস্থ্যের জরুরি প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়া কেন্দ্রের নেতৃত্বে ছিলেন এই বিশেষজ্ঞ । ২০১৫ সালে মার্সের প্রাদুর্ভাব যখন ঘটে এবং কেন্দ্রের পরিচালক হিসাবে প্রেস ব্রিফিং এবং এর সংকট পরিচালনার জন্য দায়িত্বে থাকার কারণেই তিনি কোরিয়ার আমজনতার কাছে পরিচিত হন তিনি। এর আগে কেসিডিসির রোগ প্রতিরোধ কেন্দ্র এবং কেন্দ্রের দীর্ঘস্থায়ী রোগ নিয়ন্ত্রণ গবেষণা বিভাগের প্রধান হিসাবেও কাজ করেছিলেন। ১৯৯৫ সালে একটি এজেন্সির গবেষক হিসাবে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে কেএনআইএইচে যোগদান করেন। সিউল ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক, জনস্বাস্থ্যের উপর মাস্টার্স এবং রোগ প্রতিরোধক মেডিসিনে ডক্টরেট করেন বিশ্বে খ্যাতি পাওয়া এই এই নারী।
কোরিয়ার গণমাধ্যম, সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন প্রধান Jung Eun-Kyeong (জাং ইউন কিয়ং কে “জাতীয় হিরো” হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। নভেল করোনা ১৯ মোকাবেলায় অসামান্য বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য এই স্বীকৃতি দেয়া হয়। চীনের পর যে কোরিয়াকে করোনার সেকেন্ড এপিসেন্টার বলা হতো। মাত্র কয়েকদিন আগেও, যেখানে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল রোগী,আজ মংগলবার হলো ৫০ জন রোগী, গত কয়েকদিন ধরে শতের নিচে।
সংশ্লিষ্ট সংবাদ
এই পর্যন্ত করোয়াতে টেষ্ট চার লাখ সাতাত্তর হাজার চারশ চারজন,মোট রোগী ১০৩৩১জন,সুস্থ ৬৬৫০ জন, মৃত্যু ১৯২ জন। টেষ্ট, টেষ্ট, টেষ্ট ছিল কেসিডিসি প্রধানের নীতি। ধীর স্থির নীতি অনুসণ করে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে কেসিডিসি । কোরিয়া কোন শহর লকডাউন না করে, এর বদলে কেসিডিসি সাথে মুনজেইনের সরকার ক ভাইরাস আক্রান্ত বা সন্দেহজনক ব্যক্তিদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে থাকার নিয়ম করেছে। সামাজিক দূরত্ব, ধর্মীয়, রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান পরিহার, মাস্ক পরিধান এবং পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে । বিমান যোগাযোগ বন্ধ না করে সিউল বিমানবন্দরে বিশেষ ব্যবস্থা চালু করেছে সিউল। যাত্রীদের শারীরিক তাপমাত্রা পরীক্ষা, খুঁটিনাটি ভ্রমণ তথ্য, স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিস্তারিত প্রশ্নের উত্তর দিতে হচ্ছে।
গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত অন্তত চার লাখের অধিক মানুষের শারীরিক পরীক্ষা করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। কোরিয়ায় প্রতিদিন অন্তত ২০ হাজার মানুষের করোনা টেস্ট করা হচ্ছে। বিদেশীসহ সন্দেহভাজন করোনা রোগীদের মেডিকেল টেস্ট সম্পূর্ণ ফ্রি করে দিয়েছে। চিকিৎসকরা রেফার্ড করলে সন্দেহভাজন রোগীরা বিনামূল্যেই টেস্ট করাতে পারছেন। দেশটির শতাধিক হাসপাতাল-ক্লিনিকের পাশাপাশি করোনাভাইরাস টেস্টে ষাটটি ভ্রাম্যমাণ ল্যাবরেটরিও কাজ করছে,তাছাড়া টেস্টিং বুথতো রয়েছে। কোরিয়া এখন প্রায় করোনার টুটি চেঁপে ধরেছে।
এই সফলতার পেছনের মূল নিয়ামক বলছে, কোরিয়ার কেসিডিসি প্রধানকে। আরিরাং টেলিভিশন এক প্রতিবেদনে তাকে ন্যাশনাল হিরো হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। তার চমৎকার ব্যবস্থাপনা সবার নজর দেশ বিদেশে সবার নজর কেড়েছে।তিনি রাজনৈতির ভাবে পরিচালিত নন বরং দায়িত্বের প্রতি অত্যন্ত প্রতিশ্রুতিশীল। সেখানে আরো বলা হয়, দেশের অন্য কোন ভি আইপি নন কোরিয়ার জাতীর বীর জাং ইউন কিয়ং।
প্রেষণা,দায়িত্বের প্রতি উম্মাদনা আর সততায় এটা সম্ভব করেছে। আশা করা যাচ্ছে,সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দক্ষিণ কোরিয়া করোনা ভাইরাস সম্পূর্ণরুপে নিয়ন্ত্রন আনবে জনগণ ও সরকারের প্রাণোচ্ছল ইচ্ছায়।