রেনিটিডিন। একটি ওষুধের নাম। গ্রামে-গঞ্জে বহুল প্রচারিত গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ বললে যে কেউ চিনে নেন। বাংলাদেশে যে কটি ওষুধ সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় তার মধ্যে রেনিটিডিন অন্যতম। দীর্ঘ বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশের সাধারন মানুষ এটি খেয়ে আসছে। এই ওষুধটি হঠাৎ করে মানুষের আতঙ্কের কারন হয়ে দাড়িয়েছে। ভারত বর্ষে এটি নিষিদ্ধ করার পর রবিবার থেকে বাংলাদেশেও নিষিদ্ধ করা হলো। ওষুধ অধিদপ্তর রেনিটিডিনের কাঁচামাল আমদানি, উৎপাদন ও বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান গণমাধ্যমকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন (জিএসকে)হচ্ছে এ ওষুধটির প্রস্ততকারক প্রতিষ্ঠান। তারা জানালো, রেনিটিডিনে ‘জেনোটক্সিস নাইট্রোসায়ামান’ নামে মানব দেহে ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে। যা গ্রহনের ফলে দেহে ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে। যে কারনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এটি তুলে নেয়া হচ্ছে। ভারতে প্রতিদিন এ ওষুধের বাজার রয়েছে ৭০০ কোটি টাকার। আমেরিকাতে প্রথম ১৩ সেপ্টেম্বর এফডিএ জানায়, বর্তমানে প্রচলিত রেনিটিডিন (জেনট্যাক) এ নিচু মাত্রার ‘জেনোটক্সিস নাইট্রোসায়ামান রয়েছে। যা এনডিএমএ নামে পরিচিত। এ তথ্যের পর আমেরিকান কোম্পানি নোভারটিস আমেরিকার বাজার থেকে এগুলো তুলে নেয়। সাধারনত পেট জ্বালা পোড়া, পেট ব্যাথা, পেটে গ্যাস জমাসহ নানা কারনে ডাক্তাররা রেনিটিডিন ওষুধ দেয়। প্রাথমিকভাবে যেটি ধারনা করা হচ্ছে, রেনিটিডিনে যে জেনোটক্সিস উপাদান রয়েছে তাতে ক্যান্সারের মতো রোগ সৃষ্টি হতে পারে। এ অবস্থায় বিভিন্ন উন্নত দেশে রেনিটিডিন নিষিদ্ধের পর বাংলাদেশেও এটি নিষিদ্ধ করা হলো। তবে বাংলাদেশে গ্যাস্ট্রিকের জন্য অন্য যেসব ওষুধ ওমিপ্রাজল বা অন্যান্য ওষুধে এ ধরনের কোন সমস্যা রয়েছে কি-না নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আমেরিকাতে রেনিনিডিন জ্যানটেক নামে বহুল প্রচারিত। তারা শুধু এওষুধের ক্ষেত্রে সমস্যাটি পেয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে ঔষধ প্রশাসনের মহাপরিচালক গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের নির্দেশনা অনুসারে রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) থেকেই বাজারে সব রেনিটিডিন বিক্রি নিষিদ্ধ। ব্যবসায়ীদের উদ্যোগেই বিভিন্ন নামে থাকা ওষুধগুলো প্রত্যাহার করা হবে। বাংলাদেশের ৩১টি ওষুধ কোম্পানি ভারতের ফারাক্কা নামে একটি কোম্পানি থেকে রেনিটিডিন ট্যাবলেটের কাঁচামাল আমদানি করে। এছাড়া, ডক্টর রেড্ডি নামে আরেকটি কোম্পানি থেকেও কাঁচামাল আমদানি করা হয়, যদিও তাদের কাছ থেকে আমদানি নিষিদ্ধ ছিল। এবার দু’টি কোম্পানি থেকেই রেনিটিডিনের কাঁচামাল আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির নেতারা জনস্বার্থেই বাজার থেকে রেনিটিডিন প্রত্যাহার, কাঁচামাল আমদানি ও উৎপাদন না করার বিষয়ে রাজি হয়েছেন। বৈঠকে উপস্থিত জিএসকে কোম্পানির প্রতিনিধিরাও বাজার থেকে রেনিটিডিন তুলে নেওয়ার কথা বলেছেন বলে জানান মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান। এছাড়া, বাজার থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ঔষধ প্রশাসনের পরীক্ষাগারে এগুলোর গুণগত মান পরীক্ষা করা হবে। সে অনুসারেই এ বিষয়ক পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
তবে বিদেশী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি অতি মাত্রা সেবন করলে এ ধরনের সমস্যা হতে পারে। তারপরও এ ব্যাপারে কেউ ঝুকি নিতে চাইছে না। এটি নিষিদ্ধ করাকে মঙ্গল মনে করছে বিভিন্ন দেশ।## (সূত্রঃ হারবার্ড হেলথ)