-- বিজ্ঞাপন ---

চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে ছিনতাই চেষ্টা মামলা : অভিনেত্রী শিমলাকে জিজ্ঞাসাবাদ

0

চট্টগ্রাম,( ১২সেপ্টেম্বর ২০১৯ইং): শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে  গত ২৪ ফেব্রুয়ারীর  আলোচিত বিমান ছিনতাই চেষ্টা মামলায় অভিনেত্রী শামসুন্নাহার শিমলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে আজ। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত শিমলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পরিদর্শক রাজেশ বড়ুয়া।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জিজ্ঞাসাবাদকালে শিমলা জানান, রাজধানীর গুলশানের একটি অনুষ্ঠানে দুজনের পরিচয় হয় ২০১৭ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ।এসময় পরিচয়ে পলাশ নিজেকে প্রযোজক বলে পরিচয় দেন। পলাশ বলেন, ঢাকার উত্তরা ও নারায়ণগঞ্জে তার বাড়ি থাকলেও বেশিরভাগ সময় ব্রিটেনে থাকেন তিনি।পরিচয়ের সময় একে অপরের ফোন নম্বর নেন। পরে মোবাইলে দু’জনের মধ্যে প্রায়ই কথা হতো। এতে দু’জনের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে।২০১৮ সালের ৬ মার্চ দু’জন বিয়ে করেন। পরে বাসায় থাকতে চাইলে পলাশ শিমলাকে উত্তরায় তার নিজের বাড়িতে ভাড়াটিয়ারা থাকছেন এবং নারায়ণগঞ্জের বাড়িতে নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি বলে জানায় ।এরপরও বিভিন্ন সময় কথা বলতে বলতেই শিমলা বুঝতে পারেন পলাশ একজন শঠ, প্রতারক। তার মানসিক সমস্যা রয়েছে। বিষয়টি বুঝতে পেরে ২০১৮ সালের ০৫ নভেম্বর বিচ্ছেদের নোটিশ পাঠান তাকে।

বিচ্ছেদের নোটিশ পেয়ে পলাশ বহুবার তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়েছেন বলে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে জানান সিমলা। বলেন, বারবার চেষ্টা করলেও পলাশের সঙ্গে তিনি আর কোনপ্রকার যোগাযোগ রাখেননি ।

বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে কমান্ডো অভিযানে নিহত মাহাবি জাহান ওরফে পলাশ আহমেদ ট্রানজিটের অজুহাতে মুম্বাইতে শিমলার কাছে ছিলেন। এ সময় পলাশ শিমলাকে বলেছিলেন, মুম্বাই ঘুরে ফ্লাইট লন্ডন যাচ্ছে, ট্রানজিটের ফাঁকে তিনি সিমলাকে দেখতে এসেছেন। দুই তিন দিন পলাশ সেখানে অবস্থান করলে সিমলা পলাশকে জানান, ট্রানজিটের সময় এক-দুই ঘণ্টা হতে পারে, এত দীর্ঘ তো হয় না। তখন পলাশ বিভিন্ন অসংলগ্ন কথা বলেন।

তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজেশ বড়ুয়া সাংবাদিকদের  বলেন, বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টার সময় নিহত পলাশের সঙ্গে পরিচয়, বিয়ে এবং পরবর্তীতে বিচ্ছেদ হওয়া নিয়ে বিস্তারিত তথ্য শিমলা আমাদের দিয়েছেন। এ পর্যন্ত তদন্ত  ও সাক্ষ্যে পাওয়া কিছু তথ্যের সঙ্গে শিমলার দেওয়া তথ্যের অনেক ক্ষেত্রে মিল আছে। এক্ষেত্রে আবারও জিজ্ঞাসাবাদে প্রয়োজন  হলে শিমলাকে ডাকা হবে।আজ বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) নগরের দামপাড়া পুলিশ লাইন্সে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট শিমলাকে জিজ্ঞাসাবাদ  প্রায় তিন ঘণ্টা যাবত জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ।এ সময় অনেক অজানা তথ্য উঠে আসে। শিমলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক রাজেশ বড়ুয়া।

গত ২৫ আগস্ট ভারতের মুম্বাই থেকে দেশে ফিরেন অভিনেত্রী শিমলা। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে শিমলা নিজেই বৃহস্পতিবার কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অফিসে আসেন। দুপুর দেড়টার দিকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বেরিয়ে যাবার সময় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন এই অভিনেত্রী।

এসময় শিমলা সাংবাদিকদের বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্তের  ফরমালিটির অংশ হিসেবে আমাকে ডেকেছিলেন। আমার কাছে বিভিন্ন বিষয় জানতে চেয়েছেন। বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টার ঘটনার পরও আমার বক্তব্য আমি মিডিয়ায় দিয়েছি। একই বক্তব্য আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার সামনেও দিয়েছি।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারী  সন্ধ্যায় বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট ময়ূরপঙ্খী ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাই যাওয়ার কথা ছিল। বিকেলে ঢাকা থেকে উড্ডয়নের পর পলাশ আহমেদ নামে এক যাত্রী ফ্লাইটটি ‘ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে  বিভিন্ন ঘটনা  ঘটান। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিমানটি চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক  বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণের পর সন্ধ্যার দিকে মাত্র ৮ মিনিটের কমান্ডো অভিযানে নিহত হন পলাশ এবং এই ছিনতাইকান্ডের অবসান ঘটে।

এই ঘটনায় নগরীর পতেঙ্গা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মরত সহকারি দেবব্রত সরকার। মামলায় নিহত পলাশ আহমেদ ও অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়।

মামলা দায়েরের পর ২৬ ফেব্রুয়ারী  তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে ওই উড়োজাহাজ থেকে উদ্ধার করা পিস্তল ও বিস্ফোরকসদৃশ বস্তুসহ বেশকিছু আলামত জমা দেয়  র‌্যাব ও সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো  টিম।

গত ১৩ মার্চ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি পিস্তলের ব্যালাস্টিক পরীক্ষার প্রতিবেদন দেয় কাউন্টার টেরোরিজমের হাতে। এতে বলা হয়, পিস্তলটি ছিল খেলনা।

## শহীদ, চট্টগ্রাম, ১২.০৯.২০১৯ ইং।

 

 

 

 

 

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.