-- বিজ্ঞাপন ---

ডেঙ্গু জ্বর যা ব্রেকবোন ফিভার নামেও পরিচিত

0

ডেঙ্গু জ্বর

ডেঙ্গু জ্বর যা ব্রেকবোন ফিভার নামেও পরিচিত, একটি সংক্রামক ট্রপিক্যাল ডিজিজ যা ডেঙ্গু ভাইরাস-এর কারণে হয়। যে উপসর্গগুলি দেখা যায় তার মধ্যে আছে জ্বরমাথাব্যথা,পেশি এবং গাঁটে ব্যথা, এবং একটি বৈশিষ্ট্য ত্বকে র‍্যাশ যা হামজ্বরের সমতুল্য। স্বল্প ক্ষেত্রে অসুখটি প্রাণঘাতী ডেঙ্গু হেমোর‍্যাজিক ফিভার-এ পর্যবসিত হয় ,যার ফলে রক্তপাতরক্ত অনুচক্রিকার কম মাত্রা এবং রক্ত প্লাজমার নিঃসরণ অথবা ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম-এ পর্যবসিত হয়, যেখানে রক্তচাপ বিপজ্জনকভাবে কম থাকে।

ডেঙ্গু, প্রজাতি এডিস-এর বিভিন্ন প্রকার মশাদ্বারা পরিবাহিত হয়। প্রধানতঃ ভাইরাসটির চারটি বিভিন্ন প্রকার আছে;

একটি প্রকারের সংক্রমণ সাধারণতঃ জীবনভর সেই প্রকারে প্রতিরোধ ক্ষমতা দেয়, কিন্তু অন্য প্রকারগুলিতে শুধুমাত্র স্বল্পমেয়াদী প্রতিরোধ ক্ষমতা দেয়। অন্য প্রকারের পরবর্তী সংক্রমণ প্রবল জটিলতার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। যেহেতু কোন ভ্যাকসিন নেই, মশার সংখ্যা বৃদ্ধির অনুকূল পরিবেশ ও মশার সংখ্যাবৃদ্ধি হ্রাস এবং মশার কামড়ের সম্ভাবনা কমানোর মাধ্যমে প্রতিরোধ প্রয়োজন।

অ্যাকিউট ডেঙ্গুর চিকিৎসা শায়ক প্রকৃতির, স্বল্প বা মাঝারি রোগের ক্ষেত্রে রিহাইড্রেশন ওরাল বা ইন্ট্রাভেনাস পদ্ধতিতে ইন্ট্রাভেনাস ফ্লুইডএবং আরো প্রবল ক্ষেত্রে ব্লাড ট্রান্সফিউশন। ডেঙ্গু জ্বরের ঘটনা ১৯৬০ সালের পর থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, প্রতি বছর প্রায় ৫০-১০০ মিলিয়ন লোক এতে আক্রান্ত হয়। ১৭৭৯ সালে এর প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়, এবং এর ভাইরাসঘটিত কারণ এবং সংক্রমণ বিষয়ে বিশদে জানা যায় বিংশ শতকের প্রথম ভাগে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময় থেকে ডেঙ্গু দুনিয়াজোড়া সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় এবং ১১০ টিরও বেশি দেশে মহামারীর আকার নেয়। মশাকে বিচ্ছিন্ন করা ছাড়াও ভ্যাকসিনের ওপর কাজ চলতে থাকে আর তার সাথে ওষুধ প্রয়োগ করা হয় সরাসরি ভাইরাসের ওপর।

 

চিহ্ন উপসর্গ

সাধারণভাবে, ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্তরা হয় উপসর্গবিহীন (৮0%) অথবা সাধারণ জ্বরের মত সামান্য উপসর্গ।  বাকিদের রোগ হয় আরো জটিল(৫%), এবং স্বল্প অনুপাতে এটি প্রাণঘাতী হয়। ইনকিউবিশন পিরিয়ড (উপসর্গসমূহের সূত্রপাত থেকে রোগের প্রাথমিক পর্যায়ের মধ্যবর্তী সময়) স্থায়ী হয় ৩-১৪ দিন, কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা হয় ৪-৭ দিন। অতএব, আক্রান্ত এলাকা-ফেরত পর্যটকদের ডেঙ্গু হয় না যদি ঘরে ফেরার ১৪ দিনের বেশি পরে জ্বর ও অন্যান্য উপসর্গ শুরু হয়। বাচ্চাদের প্রায়ই এই উপসর্গগুলি হয় যা সাধারণ সর্দি এবং গ্যাস্ট্রোএন্টারাটাইটিস (বমি ও ডায়েরিয়া)র সমান, আর সাধারণতঃ বড়দের চেয়ে উপসর্গের তীব্রতা কম হয়, কিন্তু রোগের জটিলতার শিকার বেশি পরিমাণে হয়।

 পরিবহণ

ডেঙ্গু ভাইরাস প্রাথমিকভাবে এডিস  মশা দ্বারা পরিবাহিত হয়,বিশেষ করে  । সাধারণতঃ এই মশার বাস ল্যাটিচিউড ৩৫°  উত্তর ও ৩৫° দক্ষিণ ১,০০০ মিটার (৩,৩০০ ফু)ঢালেরনীচে। এরা মূলতঃ দিনের বেলা কামড়ায়। অন্যান্য “এডিস” প্রজাতির মশা যারা রোগ ছড়ায় তাদের মধ্যে আছে A. albopictusA. polynesiensis এবং A. scutellaris ।  এই ভাইরাসের প্রাথমিক ধারক মানুষ, কিন্তু মানুষ ছাড়া অন্য প্রাইমেটিদেরদের মধ্যেও সংক্রামিত হয়। একবারের কামড়ালেই সংক্রমণ হতে পারে। স্ত্রী মশা ডেঙ্গু আক্রান্তর রক্তপান করে নিজে সংক্রমিত হয় ও পেটে ভাইরাস বহন করে। প্রায় ৮-১০ দিন পর ভাইরাস মশার দেহের অন্যান্য কোষে ছড়িয়ে পড়ে যার মধ্যে আছে মশার লালাগ্রন্থিএবং শেষে এর লালায় চলে আসে। সারা জীবনের জন্য আক্রান্ত হলেও মশার উপর এই ভাইরাসের কোন ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ে না ।

এডিস ইজিপ্টিকৃত্রিম জলাধারে ডিম পাড়তে, মানুষের সবচেয়ে কাছে থাকতে এবং অন্যান্য মেরুদন্ডীদের চাইতে মানুষের রক্ত খেতে বেশি পছন্দ করে। 

 

সংক্রমিত রক্তসম্বন্ধী সামগ্রী এবং অঙ্গদান-এর মাধ্যমেও ডেঙ্গু পরিবাহিত হতে পারে। সিঙ্গাপুর-এর মত দেশগুলিতে, যেখানে ডেঙ্গু প্রতিদিনের ব্যাপার, সেখানে ঝুঁকির পরিমাণ প্রতি ১০০০০ট্রান্সফিউশন-এ ১.৬ থেকে ৬-এর মধ্যে।  উল্লম্ব প্রবাহন (মায়ের থেকে শিশু)জানা গেছে গর্ভাবস্থায় বা জন্মের সময়ে। অন্য ব্যক্তি-থেকে-ব্যক্তি প্রবাহনের বিষ্যেও জানা গেছে, কিন্তু তা খুবই অস্বাভাবিক।

সমস্যা প্রতিষেধক

প্রচন্ড জ্বর, সর্বাঙ্গে বিশেষত হাড়ে ও গাঁটে গাঁটে ব্যথা, রক্তের প্লাটিলেট দ্রুত কমে যাওয়া, কালসিটেপড়া, শরীরের বিভিন্ন স্থান দিয়ে রক্ত পড়া এর উপসর্গ । গত বছর থেকে ডেঙ্গু জ্বরের নতুন একটি সমস্যা দেখা যাচ্ছে তা হল লিভার আক্রান্ত হওয়া, এতে রুগি দূর্বল বোধ করে, খেতে পারে না, বমি হয়, লিভার ব্যথা করে। এটি সাধারণত জ্বর কমে যাওয়ার পর পর দেখা দেয় এবং ৫-৭ দিন থাকতে পারে। এই রোগে গত কয়েক বছর বেশ কিছু মানুষ মারা যায়।

 

প্রতিরোধ

ডেঙ্গু ভাইরাসের কোন স্বীকৃত ভ্যাকসিননেই। সুতরাং প্রতিরোধ নির্ভর করে জীবাণুবাহী মশা নিয়ন্ত্রণ এবং তার কামড় থেকে সুরক্ষার উপর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পাঁচটি মৌলিক দিশাসমেত সংবদ্ধ একমুখী নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীর সুপারিশ করেছে: # প্রচার, সামাজিক সক্রিয়তা, এবং জনস্বাস্থ্য সংগঠন ও সমুদায়সমূহকে শক্তিশালী করতে আইন প্রণয়ন, # স্বাস্থ্য ও অন্যান্য বিভাগসমূহের মধ্যে সহযোগিতা (সরকারী ও বেসরকারী), # সম্পদের সর্বাধিক ব্যবহার করে রোগ নিয়ন্ত্রণে সুসম্বদ্ধ প্রয়াস, # যে কোন হস্তক্ষেপ যাতে সঠিক লক্ষ্যবস্তুতে হয় তা সুনিশ্চিত করতে প্রমাণ-ভিত্তিক সিদ্ধান্তগ্রহণ এবং #  স্থানীয় অবস্থায় পর্যাপ্ত সাড়া পেতে সক্ষমতা বৃদ্ধি।

aegyptiকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রাথমিক পদ্ধতি হ’ল এরবৃদ্ধির পরিবেশকে ধ্বংস করে ফেলা। জলের আধার খালি করে অথবা কীটনাশকপ্রয়োগ করে অথবা এইসব জায়গায় বায়োলজিক্যাল কন্ট্রোল এজেন্টপ্রয়োগ করে, যদিও spraying with অর্গ্যানোফসফেট বা পাইরেথ্রয়েড স্প্রে করাকে খুব লাভজনক ভাবা হয় না।[৩] স্বাস্থ্যের উপর কীটনাশকের কুপ্রভাব এবং কন্ট্রোল এজেন্টের ব্যয়বহুলতার কথা মাথায় রেখে পরিবেশ শোধনের মাধ্যমে জমা জল কম করাটাই নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে ভাল উপায়।  মানুষজন পুরো শরীর ঢাকা পোষাক পরে, বিশ্রামের সময় মশারীব্যবহার করে এবং/বা কীট প্রতিরোধক রাসায়নিক (DEET সবচেয়ে কাজের) প্রয়োগ করে মশার কামড় এড়াতে পারে।.

 

 

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.