১৩ তম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে প্রায় দুই কিলোমিটারে রূপ নিলো দেশের সবচেয়ে বড় মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতু। শনিবার সকাল ১০ টার কিছু আগে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে ‘৩বি’ নামের স্প্যানটি সেতুর ১৪ ও ১৫ নম্বর পিলারের উপর বসানো হয়।
দ্বাদশ স্প্যান (অস্থায়ী) বসানোর ১৯ দিনের মাথায় স্থায়ীভাবে বসলো এই স্প্যানটি। এর ফলে প্রমত্তা পদ্মার বুকে সেতুটির ১৯৫০ মিটার দৃশ্যমান হলো। সকাল থেকেই মেঘাচ্ছন্ন আকাশ আর পদ্মা উত্তাল থাকলেও স্প্যানটি বসানোর কাজ শুরু করে কর্তৃপক্ষ।
পদ্মা সেতুর প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের এই তথ্য নিশ্চিত করে জানান, তৃতীয়য় মডিউলের “৩ বি” স্প্যানটি সকাল ৯টা ৫৫মিনিটে বসানো শেষ হয়েছে।
এর আগে গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টা ১০ মিনিটে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের আর ৩ হাজার ১৪০ টন ওজনের স্প্যানটিকে মাওয়া কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে বহন করে নিয়ে আসে তিন হাজার ৬শ টন ধারণক্ষমতার ‘তিয়ান ই’ ক্রেন। তবে প্রতিকূল আবহাওয়ার প্রভাবে এই দিন স্প্যানটি বসানো যায়নি। পরে স্প্যানটি আজকে বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ভাসমান ক্রেনবাহী জাহাজটি যথাস্থানে অ্যাংকরিং সম্পন্ন করার পরই ক্রেনে করে এটি স্থাপন করা হয় খুঁটির ওপরে।
কয়েকদিন আগে নৌরুটে নাব্যতা সংকট, লিফটিং হ্যাঙ্গার স্বল্পতার জন্য নির্ধারিত তারিখ পরিবর্তন করেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার নির্ধারিত পিলারের কাছেই স্প্যানবহনকারী ক্রেনটি অবস্থান করছিল। সেতুর ১৩ ও ১৪ নম্বর পিলারের ওপর বসানো ‘৩-এ’ স্প্যানের পাশেই বসেছে ‘৩বি’ স্প্যানটি।
২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিয়ারে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। এর চার মাস পর ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিয়ারের ওপর দ্বিতীয় স্প্যানটি বসানো হয়। পরে ২০১৮ সালের ১১ মার্চ ৩৯ ও ৪০ নম্বর পিয়ারে তৃতীয়, ১৩ মে ৪০ ও ৪১ নম্বর পিয়ারে চতুর্থ, ২৯ জুন ৪১ ও ৪২ নম্বর পিয়ারে পঞ্চম স্প্যান বসানো হয়। এরপর গত নভেম্বর মাসের দিকে মাওয়া প্রান্তে ৪ ও ৫ নম্বর পিয়ারে ষষ্ঠ স্প্যান বসায় পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ।
চলতি বছরের সাড়ে চার মাসে ছয়টি স্প্যান বসানোর কাজ শেষ করা হয়েছে। এ বছর ২৩ জানুয়ারি ৩৬ ও ৩৭ নম্বর পিয়ারে বসে অষ্টম স্প্যান, ২৮ দিন পর ২০ ফেব্রুয়ারি ৩৫ ও ৩৬ নম্বর পিয়ারে অষ্টম স্প্যান, ২২ মার্চ ৩৪ ও ৩৫ নম্বর পিয়ারে নবম, ১০ এপ্রিল মাওয়ায় ১৩ ও ১৪ নম্বর পিয়ারে দশম, ২৩ এপ্রিল ১১তম স্প্যান এবং ৭ মে ১২তম স্প্যানটি বসানো হয়।
পদ্মা সেতু প্রকল্পটির যাত্রা শুরু হয় ২০০৭ সালে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ওই বছরের ২৮ আগস্ট ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করেছিল। পরে আওয়ামী লীগ সরকার এসে রেলপথ সংযুক্ত করে ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি প্রথম দফায় সেতুর ব্যয় সংশোধন করে। বর্তমান ব্যয় ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। মূল সেতু নির্মাণে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। আর নদীশাসনের কাজ করছে চীনের আরেক প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশন। দুই প্রান্তে টোল প্লাজা, সংযোগ সড়ক, অবকাঠামো নির্মাণ করছে দেশীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।