-- বিজ্ঞাপন ---

দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতায় নিরাপত্তাই মুখ্য ইস্যু

0

নিউজ ডেস্ক: ঢাকায় ওয়াশিংটনের সঙ্গে নিরাপত্তা সংলাপে উভয়পক্ষ একমত হয়েছে যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও সহযোগিতায় ‘নিরাপত্তা’ই মুখ্য ইস্যু। এ নিয়ে গতকাল দিনভর অত্যন্ত সফল আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নিরাপত্তা-সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় নিয়ে ২০১২ সাল থেকে অল্টারনেটিভ ভেন্যুতে বাৎসরিক ওই সংলাপ হয়ে আসছে। বৃহস্পতিবার ঢাকায় ছিল এর সপ্তম আসর। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে- ঢাকা-ওয়াশিংটন সংলাপে মোটা দাগে যেসব বিষয়ে কথা হয়েছে তা হল- জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম বিশেষত: এতে বাংলাদেশের ভূমিকা এবং সম্পৃক্ততা কীভাবে আরও বাড়ানো যায়, দুই দেশের সামরিক বাহিনীর পরস্পরিক সহযোগিতা, নিরাপত্তা সহায়তা, প্রতিরক্ষা বাণিজ্য, সন্ত্রাস ও সহিংস চরমপন্থা দমন, চলমান রোহিঙ্গা সংকটের প্রেক্ষাপটে আঞ্চলিক ও আন্ত:সীমান্ত ইস্যু, মুক্ত এবং অবাধ ইন্দো-প্যাসিফিক এর লক্ষ্য (ভিশন) এবং মনিবিক নিরাপত্তা ইত্যাদি। বিজ্ঞপ্তি মতে, সংলাপে বৈশ্বিক শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সৈন্য প্রেরণকারী জাতি হিসাবে বাংলাদেশের অবদানের ভূয়সী প্রশংসা করে মার্কিন প্রতিনিধি দল।
একই সঙ্গে তারা জোর দেয় বিশ্বের যে কোন স্থানে জরুরি শান্তিরক্ষী প্রেরণের সক্ষমতা বাড়াতে বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের। ঢাকা জানিয়েছে, শান্তিরক্ষায় ১৫ ভাগ নারী রাখার যে টার্গেট জাতিসংঘ নির্ধারণ করেছে তা পূরণে বাংলাদেশ বদ্ধ পরিকর।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়- আলোচনায় মার্কিন প্রতিনিধি দল বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণ, তথ্য বিনিময়, আধুনিক সরঞ্জাম ও যৌথ অনুশীলনের মাধ্যমে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন বজায় রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। তাছাড়া ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটে পূনরায় বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট চালুর বিষয়ে আলোচনা করেন তারা। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে চলমান লড়াই জোরদার করার পাশাপাশি বেসামরিক লোকজনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সংলাপে উভয় পক্ষ সম্মত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের তরফে যে কোন ধরণের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি বিদ্যমান থাকার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করা হয়।
বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনী রাশেদ চৌধুরীকে ফেরতের অনুরোধ জানায়। বলা হয়- আদালত তার বিরুদ্ধে যে রায় দিয়েছে তা কার্যকরে বিশেষত ন্যায় বিচার নিশ্চিতে তাকে দেশে ফেরানো জরুরি। সংলাপে উভয় পক্ষ এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং অপরাপর অপরাধ দমনে পারস্পরিক তথ্য আদান প্রদান এবং ডাটা শেয়ারিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সংলাপের উভয়ের জন্য উদ্বেগের এমন সব প্রথা ও অপ্রথাগত নিরাপত্তা হুমকির বিষয়েও আলোচনা হয়। রোহিঙ্গা সংকটকে আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য বহুমুখী হুমকি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। সংলাপে বর্মী বর্বরতায় বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের রাখাইনে টেকসই এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। বাংলাদেশের তরফে সমুদ্র নিরাপত্তায় যৌথভাবে কাজ করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। জবাবে মার্কিন প্রতিনিধিরা ঢাকার আহ্বানের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেন।
উভয়পক্ষ ভবিষ্যতে অপ্রচলিত বা অপ্রথাগত নিরাপত্তা ইস্যুতে একসঙ্গে কাজ করার বিষয়েও সম্মত হয় বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। সংলাপে মার্কিন প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন স্টেট ডিপার্টমেন্টের পলিটিক্যাল অ্যান্ড মিলিটারি ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত উপ-সহকারী মন্ত্রী মাইকেল মিলার। সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্র দপ্তরের সংশ্লিষ্ট ব্যুরো ও বিভাগের আরও ৬ জন প্রতিনিধি। ঢাকা থেকে যুক্ত হন মার্কিন দূতাবাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা। বাংলাদেশের পক্ষে সংলাপে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমেরিকাস অনুবিভাগের মহাপরিচালক ফেরদৌসি শাহরিয়ার। ওয়াশিংটস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের উপ-প্রধান মাহবুব হাসান সালেহসহ বাংলাদেশের সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তারাও প্রতিনিধি দলে অন্তর্ভূক্ত ছিলেন। উল্লেখ্য, দুই দেশের মধ্যকার নিরাপত্তা সম্পর্ক বৃদ্ধি এবং আঞ্চলিক শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রতি উভয়ে অঙ্গিকার নিরাপত্তা সংলাপে প্রতিফলিত হয়।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.