-- বিজ্ঞাপন ---

নভেম্বরে রিয়াদে জি-২০ সম্মেলনের আগেই সৌদি বাদশাহ হতে যাচ্ছেন যুবরাজ সালমান! 

0

মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম: সৌদি রাজপরিবারের জটিল ক্ষমতার কাঠামোর মধ্যে সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের কোণঠাসা করে বাদশাহর ঠিক পরে শীর্ষ স্থানে পৌঁছানোর মতো অসাধ্য সাধন করেছেন ‘এমবিএস’ নামে পরিচিত সৌদী ক্ষমতাধর যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। রাজপরিবারের তিন প্রভাবশালী সদস্যকে গত ৬ মার্চ শুক্রবার আটকের পর নতুন করে আরও দুজন গুরুত্বপূর্ণ রাজ পরিবারের সদস্যকে আটক  করেছে সৌদি প্রশাসন । বাদশাহ সালমানের ছোট ভাই আহমেদ বিন আবদুল আজিজ ও ভ্রাতুষ্পুত্র  সাবেক ক্রাউন প্রিন্স  মোহাম্মদ বিন নায়েফকে আটকের পর নায়েফের আরেক ভাইকেও গত শনিবার আটক করেছে।  আসছে নভেম্বরে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে অনুষ্ঠেয় শিল্পোন্নত দেশগুলির সংস্থা জি-২০ এর সম্মেলনের আগেই ক্রাউন প্রিন্স যুবরাজ সালমান নিজেকে বাদশার পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার পথটি নিষ্কন্টক করতে চাইছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানীসহ পশ্চিমা গণমাধ্যম এ খবর দিয়েছে। তবে সৌদি সরকার কিংবা সেদেশের প্রচার মাধ্যম এসকল গ্রেফতার নিয়ে প্রকাশ্যে তেমন কিছু বলছেনা।

মানচিত্রে সৌদি আরবের অবস্থান

 

সৌদি আরবে তিন সৌদি রাজপুত্রসহ বহু আটক

রাজপরিবারের তিন প্রভাবশালী সদস্যকে শুক্রবার আটকের পর নতুন করে আরও দুজন গুরুত্বপূর্ণ রাজ পরিবারের সদস্যকে আটক  করেছে সৌদি প্রশাসন । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানীসহ পশ্চিমা গণমাধ্যম এ খবর দিয়েছে। বাদশাহ সালমানের ছোট ভাই আহমেদ বিন আবদুল আজিজ ও ভ্রাতুষ্পুত্র  সাবেক ক্রাউন প্রিন্স  মোহাম্মদ বিন নায়েফকে আটকের পর নায়েফের আরেক ভাইকেও গত শনিবার আটক করেছে।  সাবেক সেনা গোয়েন্দা প্রধান প্রিন্স নায়েফ বিন আহমেদ আটকদের মধ্যে রয়েছেন। এমন তথ্য প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল স্ট্রীট জার্নাল পত্রিকা জানায়, রাজপরিবারের সদস্যগণ ছাড়াও গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে  স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বেশ কিছু কর্মকর্তা, সিনিয়র সেনা অফিসারও রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে।

সৌদি বাদশাহ সালমানের ডানপাশে রয়েছেন গ্রেফতার হওয়া ভাই প্রিন্স আহমেদ বিন আবদুল আজিজ ও বামে যুবরাজ এমবিএস সালমান

 

সৌদি রাজপরিবারের তিন সদস্যকে শুক্রবার অভ্যুত্থান পরিকল্পনার অভিযোগে আটক করা হয়েছে। তাদের একজন বর্তমান রাজা সালমানের ভাই প্রিন্স আহমেদ বিন আবদুল আজিজ আল-সৌদ। আছেন রাজার ভাইয়ের ছেলে প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফও। গত ৬ মার্চ শুক্রবার তাদেরকে নিজেদের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করেছে রয়্যাল গার্ডের সদস্যরা । নাম প্রকাশ না করে একটি সূত্রের বরাত দিয়ে এমন খবর প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।

এই দুইজনকে একসময় দেশটির সিংহাসনের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচনা করা হতে ।  তারা বর্তমান রাজা এবং যুবরাজকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্রে অভিযুক্ত হয়েছেন সৌদি রাজ আদালতে।এই দুইজন ছাড়াও প্রিন্স নায়েফের ছোট ভাই প্রিন্স নওয়াফ বিন নায়েফকেও আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস। তবে এই বিষয়ে এখনও মুখ খোলেনি সৌদি কর্তৃপক্ষ। ৮৪ বছর বয়সী সালমান বর্তমানে সিংহাসনে থাকলেও কার্যত যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানই দেশটির প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করেন। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যারা হুমকি হতে পারে রাজপরিবারের এমন সদস্যদের বন্দী ও বিচারের মুখোমুখি করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। নতুন করে রাজপুত্রদের বিরুদ্ধে নেয়া পদক্ষেপকে যুবরাজের ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করার প্রচেষ্টা হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকরা ।

এদিকে ‘মিডল ইস্ট আই’ সংবাদ মাধ্যমের মতে, এসকল ধরপাকড়ের প্রধান উদ্দেশ্য হলো, আসছে নভেম্বরে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে অনুষ্ঠেয় শিল্পোন্নত দেশগুলির সংস্থা জি-২০ এর সম্মেলনের আগেই ক্রাউন প্রিন্স যুবরাজ সালমান নিজেকে বাদশার পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার পথটি নিষ্কন্টক করতে চাইছেন। পত্রিকাটি এটাও বলছে, যুবরাজ সালমানের উদ্বেগ ও আশংকা মার্কিন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হয়তবা পুন:বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত না-ও হতে পারেন। কারণ, ডেমোক্রেট পদপ্রার্থীদের  অধিকাংশই তার কট্টর সমালোচক। মিডল ইস্ট  আই’র মতে, ক্ষমতা নিষ্কন্টক করতে ইতিমধ্যেই ‘এমবিএস’ অর্থাৎ যুবরাজ যিনি এমবিএস (মোহাম্মদ বিন সালমান) নামে পরিচিত, কমপক্ষে ২০ জন প্রভাশালী যুবরাজকে আটক করে রেখেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক রেন্ড কর্পোরেশনের বিশ্লেষক বেকা ওয়াসার বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ক্ষমতা বিস্তারে যারা হুমকী তাদের এরইমধ্যে জেলে দিয়েছেন প্রিন্স মোহাম্মদ, সমালোচকদের হত্যা করেছেন । বর্তমান পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে রাজপরিবারের সদস্যসহ অন্যদেরকেও নতুন করে তিনি বার্তা দিয়েছেন বলে মনে করেন ওয়াসার। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে প্রিন্স নায়েফ সৌদি আরবের সাবেক ক্রাউন প্রিন্স এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন ৷ ২০১৭ সালে তাকে হটিয়ে ক্রাউন প্রিন্স হন মোহাম্মদ। অন্যদিকে সত্তরোর্ধ্ব প্রিন্স আহমেদ লন্ডনে বসবাস করতেন  সাংবাদিক জামাল খাশোগজি হত্যার পর তিনি সৌদি আরব ফিরে আসেন ।

দেশে ফেরার আগে ২০১৮ সালের অক্টোবরে আহমেদের একটি ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। খাশোগজি হত্যা প্রসঙ্গে সেখানে তিনি বলেন, ‘‘রাজপরিবার এই বিষয়ে কী করতে পারে । এর জন্য দায়ী নির্দিষ্ট কয়েকজন…রাজা এবং যুবরাজ ।”  তার এই মন্তব্যকে সৌদি রাজপরিবারের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিরল এক সমালোচনা হিসেবে দেখা হয়েছিল।  যদিও আহমেদ পরে দাবি করেছেন তাকে ভুলভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে। ক্ষমতা খুইয়েও তিনি বর্তমান ক্রাউন প্রিন্সের প্রতি পরে তাঁর আনুগত্য প্রকাশ করেন।

 

সাংবাদিক জামাল খাশগজি হত্যার দায় নিলেন সালমান

সৌদি আরবের সাংবাদিক জামাল খাশগজি হত্যার দায় স্বীকার করেছেন যুবরাজ মোহামেদ বিন সালমান৷ তবে এই হত্যাকান্ড সম্পর্কে তিনি আগে জানতেন না বলেও দাবি করেছেন।

তুরস্কের ইস্তাম্বুলের সৌদি দূতাবাসে গতবছর অক্টোবরের ২ তারিখ খাশগজিকে হত্যা করা হয়। এর প্রায় দুই মাস পর ডিসেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি প্রচারমাধ্যম পিবিএসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে যুবরাজ এসব মন্তব্য করেন বলে দাবি করা হচ্ছে। তার আগে সালমানের বক্তব্যের কিছু অংশ প্রকাশ করা হয়েছে৷

পিবিএসকে যুবরাজ সালমান বলেন, ‘‘আমি সব দায় নিচ্ছি, কারণ এটা আমার পর্যবেক্ষণে হয়েছে। ’’

তাহলে হত্যাকান্ড সম্পর্কে আগে জানতেন না কেন, সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে সালমান বলেন, ‘‘আমাদের দুই কোটি মানুষ। আমাদের ত্রিশ লাখ সরকারি কর্মচারী রয়েছে। ’’

‘‘তাঁরা কি আপনার একটি বিমান নিতে পারেন?” যুবরাজকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিক । কারণ; রাজকীয় একটি বিমানে করে একটি দল খাশগজিকে হত্যা করতে ইস্তাম্বুল গিয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

প্রশ্নের  উত্তরে যুবরাজ বলেন, ‘‘বিভিন্ন বিষয় অনুসরণ করতে আমার কর্মকর্তা ও মন্ত্রীরা আছেন, এবং তাঁরা দায়িত্বপ্রাপ্ত, তাঁদের এসব করার অধিকার রয়েছে’’।

উল্লেখ্য, খাশগজি হত্যার সঙ্গে যুবরাজ সালমানের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে রিয়াদ।

তবে জাতিসংঘের একজন মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ, যিনি ঐ হত্যাকান্ড নিয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত করেছেন, তিনি বলেন খাশগজি হত্যার সঙ্গে সালমানের জড়িত থাকার ‘বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ’ আছে।

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’ও বারবার বলেছে যে, যুবরাজ সালমান সম্ভবত হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

যুবরাজ সালমান সৌদি নিরাপত্তা অফিসারদের সাথে কথা বলছেন

 

সৌদি রাজকন্যা বাসমাহ বিন্ত সৌদ ‘নিখোঁজ’

গেল প্রায় আট মাস ধরে কোনো হদিস মিলছে না সৌদি রাজকন্যা বাসমাহ বিন্ত সৌদের।চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার সময় তাঁকে আটক করা হয়। এরপর থেকে তিনি গৃহবন্দি হয়েছেন বলে দাবি করেছেন তাঁর ঘনিষ্ঠজনরা। মানবাধিকার নিয়ে কাজ করার জন্য সুপরিচিত সৌদি রাজকন্যা বাসমাহ বিন্ত  সৌদ। বেশ কিছু দিন ধরে তাঁর কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। কোনো রকমের আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই তাঁকে রিয়াদে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

রাজকন্যার ঘনিষ্ঠ একজন জার্মান সংবাদ মাধ্যম ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, বাসমাহ চাইলেও তার বক্তব্য প্রকাশ করতে পারছেন না, কেননা তাঁর সমস্ত যোগাযোগের উপর নজর রাখা হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে ঐ ব্যক্তি নাম প্রকাশ করতে চাননি।

বাসমাহ দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবের সাংবাধিনিক সংস্কার এবং মানবাধিকার নিয়ে কথা বলে আসছেন। তাঁর মতো দেশটির রাজতন্ত্রের সমালোচকরা ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের ক্রোধের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। রাজপরিবারের অনেককেই এজন্য হত্যা, গুম, কারাবন্দি ও হুমকির শিকার হতে হয়েছে।

বাসমাহর বিষয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চেয়ে কোনো মন্তব্য পায়নি ডয়চে ভেলে।

বাসমাহ সাবেক সৌদি রাজার ১১৫ সন্তানের একজন। এই পরিবারের একটি অংশকে বর্তমান রাজা সালমান ও তার পুত্রের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দী বলে মনে করা হতো।

বর্তমান সৌদি রাজপরিবারের মোট ১৪ হাজার সদস্য রয়েছেন, যাদের মধ্যে ক্ষমতা বিস্তারের জন্য বেশ কয়েকটি বিভাজন রয়েছে।

সৌদি রাজকন্যা বাসমাহ বিন্ত সৌদ

সূত্র অনুযায়ী, কন্যাকে নিয়ে বিদেশ পালিয়ে যেতে পারেন এমন সন্দেহে চলতি বছরের মার্চে বাসমাহকে বন্দি করা হয়।  চিকিৎসার জন্য তার সুইজারল্যান্ডে যাওয়ার কথা ছিল। জার্মান সংবাদ সংস্থা ডয়েসে ভেলের কাছে আসা নথি অনুযায়ী সুইস ডাক্তারের অনুরোধের প্রেক্ষিতে ১৮ ডিসেম্বর বাসমাহ কন্যাসহ জেদ্দা ত্যাগের ছাড়পত্র পান। কিন্তু ভ্রমণের দিনই দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয় এবং উড়োজাহাজ থেকে নামিয়ে আনা হয় বলে ডয়চে ভেলেকে জানান তার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আইনজীবী লিওনার্ড বেনেট।

বেনেটে বলেন, দুই মাস পর থেকে ‘‘তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। কেউ জানে না তিনি কোথায় আছেন। আমরা প্রকৃতপক্ষে খারাপ কিছুর আশঙ্কা করছি। ”

বেনেট জানান, কয়েক দফা ফোন কল করার পর তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হলেও তিনি তেমন কিছু বলেননি। বাসমাহর কথা শুনে মনে হয়েছে তিনি বন্দি অবস্থায় রয়েছেন। বেনেট বলেন, বাসমাহর গন্তব্য সুইজারল্যান্ডের জেনেভা হলেও, যাওয়ার কথা ছিল তুরস্ক হয়ে। আঙ্কারার সাথে শত্রুতামূলক সম্পর্ক থাকায় রিয়াদ বিষয়টিকে দেখেছে সন্দেহের চোখে।

কোথায় আছেন বাসমাহ?

ডয়চে ভেলেকে বাসমাহর ঘনিষ্ঠ সূত্রটি জানিয়েছে, ‘‘(পালিয়ে যাওয়ার) অভিযোগ সত্য কিনা তারা (কর্তৃপক্ষ) সেই তদন্ত শেষ করেছে। তারপরও এখন পর্যন্ত কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। ” তিনি বলেন, বাসমাহর বিরুদ্ধে দেয়া তথ্য মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে, কিন্তু কেন এখনো তাকে আটকে রাখা হয়েছে সেটি তাদের জানা নেই।

তাকে গেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছে তা পরিস্কার নয় বলে জানিয়েছে এই সূত্র। রাজকন্যার নিখোঁজের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাসমাহর এক বন্ধু এবং ব্যবসায়িক সহকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, শাসক পরিবার ঠিকই জানে বাসমাহ কোথায় আছেন।

তিনি বলেন, ‘‘দুটি সূত্র অনুযায়ী (রাজপরিবারের) এক নম্বর ব্যক্তি (মোহাম্মদ বিন সালমান) বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন। কিন্তু আমি তাদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছি, তিনি জানেন।  আমরাও জানতে চাই সে (বাসমাহ) কোথায় আছে, কেন তাকে বন্দি করে রাখা হয়েছে?”

বাসমাহ নিয়মিত টুইটার ব্যবহার করলেও ফেব্রুয়ারির পর থেকে তিনি অফিসিয়াল অ্যাকাউন্টে নীরব রয়েছেন।  জুলাই অবধি তার কর্মচারীরা কিছু ধর্মীয় পোস্ট দিয়েছেন।

৫ সন্তানের জননী বাসমাহ ২০০৬ সাল থেকে সৌদি গণমাধ্যমে নিয়মিত লেখালেখি করেন। কিন্তু তার ব্যবসায়িক কর্মকান্ড ও জনগণের হয়ে কথা বলার বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি দেশটির শাসকরা। বিবাহ বিচ্ছেদের পর ২০১০-২০১১-র  দিকে তিনি লন্ডনে পাড়ি জমান। পরিচিতি পান গণমাধ্যমে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে আরব অঞ্চলের দুর্নীতি, মানবাধিকার এবং সম্পদের বৈষম্য নিয়ে কথা বলে ব্যাপক আলোচনায় আসেন বাসমাহ।  সৌদি আরবে ধর্মীয় পুলিশের ক্ষমতা  হ্রাস, নারীদের অধিকারসহ বিভিন্ন সাংবিধানিক সংস্কারের দাবিও জানান তিনি। প্রশাসনের সমালোচনা করলেও রাজ পরিবারের বিরুদ্ধে অবশ্য কখনো সরাসরি কোনো কথা তাকে বলতে শোনা যায়নি।

২০১৫ সালের দিকে সৌদি আরবে ফিরে আসেন বাসমাহ। লন্ডনের বেশ কিছু ব্যবসা তিনি গুটিয়ে ফেলেন। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে বিবিসি অ্যারাবিককে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইয়েমেন যুদ্ধের ইতি টানতে সৌদি আরবের প্রতি আহবান জানান। এরপর থেকে তাকে আর গণমাধ্যমে দেখা যায়নি।

লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের সৌদি রাজনীতি ও রাজপরিবার বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মাদাওয়ি আল-রাশিদ বলেন, রাজা আবদুল্লাহর শাসনকালে রাজকন্যারা সব ধরনের আলোচনায় অংশ নিতে পারতেন। এটা অনেকটা জনসংযোগের মতো ছিল। লেলোয়াহ বিন্ত ফয়সাল আল সৌদ ছিলেন তেমনই একজন।  তিনি বাইরের জনসংযোগমূলক কর্মকান্ডের জন্য সৌদি রাজ পরিবারের নারীদের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত ছিলেন। রাশিদ বলেন, এখন এই নারী পুরোপুরি নীরব হয়ে গেছেন। সালমান ও তার সন্তান ক্ষমতার বাইরে থাকা এইসব নারীকে একে একে নীরব করে দিতে চাইলে তা অবাক করার মতো কিছু হবে না বলেই মনে করেন তিনি জানান।

ক্যানাডায় কেমন আছেন সৌদি তরুণী রাহাফ?

কুয়েত থেকে পালিয়ে প্রথমে থাইল্যান্ড বিমানবন্দরের একটি হোটেলে আশ্রয় নেন রাহাফ।  নিজের পরিস্থিতি বর্ণনা করে পরিবারে ফিরে যেতে অস্বীকার করলে আন্তর্জাতিক মহলের চোখে পড়েন তিনি। এক পর্যায়ে থাইল্যান্ডের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা তাঁকে স্বাগত জানান। তিনি এখন কানাডায় রয়েছেন বলে জানা গেছে।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.