অনেকটা হঠাৎ করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরবর্তি উত্তরসূরি কে হবেন এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ তোলপাড় চলছে। প্রধানমন্ত্রী পরিবারে তার পরে নেতৃত্বে হাল ধরার মতোন অনেকেই আছেন। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুই সন্তান উচ্চশিক্ষিত। কন্যা সাময়া ওয়াজেদ পুতুল এরই মধ্যে আর্ন্তজাতিক ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছেন। বিশ্বে প্রতিবন্ধীদের যে কজন নীরবে কাজ করে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে পুতুল একজন। তার একাজের ফলে পুতুলের পরিচিত বিশ্বব্যাপি। অপর দিকে ছোট বোন শেখ রেহানার তিন সন্তানই উচ্চ শিক্ষিত। রাজনীতিতে প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাধিকারী কেও একজন তো হবেন? কিন্ত তিনি কে। প্রধানমন্ত্রী পুত্র জয় দেশের জন্য কাজ করলেও রাজনীতির প্রতি তেমন আগ্রহ কখনো দেখান নি। ভারতের গান্ধি পরিবারে এরই মধ্যে রাজনীতিতে রাহুল গান্ধি ও প্রিয়াংকা গান্ধি প্রকাশ্যে এসেছেন। তেমনিভাবে আওয়ামী লীগের মতোন একটি বড় দলকে প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি পরিবারের কেউ হাল ধরে এগিয়ে নিয়ে যাবেন এটা অনেকটা ওপেন সিক্রেট।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে প্রধানমন্ত্রীর অবৈ’তনিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা জয়ের অবদানের কথা প্রধানমন্ত্রী প্রায়ই বলে থাকেন। তার ভাষ্যে, ‘আজকে যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়েছি। এই ডিজিটাল বাংলাদেশ জয়ের কাছ থেকে শেখা। জয়ই আমাকে এ ব্যাপারে সব রকম পরামর্শ দিয়েছিলো। তথ্য-প্রযুক্তি সমৃদ্ধ উন্নত দেশ গড়তে জয়ের কাছ থেকে সব সময় পরামর্শ নিয়ে থাকেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। সেক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে। ইদানিংকালে প্রধানমন্ত্রী কন্যা সায়সা ওয়াজেদ পুতুলকে সার্বক্ষণিক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা যায়। দেশে বিদেশে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গী হতে দেখা যায় পুতুলকে। এর একটি কারণ হতে পারে প্রধানমন্ত্রীর চক্ষু অপারেশন নিয়ে অ’সুস্থতার দেখভাল। আবার অনেকে বলছেন প্রধানমন্ত্রী তাকে হাতে কলমে রাজনীতির অনেক বিষয় শেখাচ্ছেন।সায়মা ওয়াজেদ পুতুল বিভিন্ন সামাজিক কর্ম’কাণ্ডে যুক্ত। তিনি বেশ ভালো বক্তাও। বিশেষ করে পুতুল একজন প্রখ্যাত অটিজম বিশেষজ্ঞ। সারাবিশ্বেই তিনি অটিস্টিক শিশুদের অধিকার সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বিশেষজ্ঞ প্যানেলের একজন সদস্য। তিনি একজন লাইসেন্সপ্রাপ্ত মনোবিজ্ঞানী।সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের স্বামীর নাম খন্দকার মাশরুর হোসেন। তার তিন কন্যা এবং এক ছেলে। স্বামী খন্দকার মাশরুর হোসেন আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে ফরিদপুর জেলা থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।
সায়মা ওয়াজেদ যুক্তরাষ্ট্রের ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৭ সালে মনোবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি, ২০০২ সালে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির ওপর মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। পুতুল ২০০৪ সালে স্কুল সাইকোলজির ওপর বিশেষজ্ঞ ডিগ্রি লাভ করেন। ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সময় তিনি বাংলাদেশের নারীদের উন্নয়নের ওপর গবেষণা করেন। এ বিষয়ে তার গবেষণাকর্ম ফ্লোরিডার একাডেমি অব সায়েন্স কর্তৃক শ্রেষ্ঠ সায়েন্টিফিক উপস্থাপনা হিসেবে স্বীকৃত হয়। সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল ২০০৮ সাল থেকে শিশুদের অটিজম এবং স্নায়বিক জটিলতাসংক্রান্ত বিষয়ের ওপর কাজ শুরু করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই তাঁর কাজ বিশ্বজুড়ে প্রশংসা পেয়েছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পুতুলকে হু অ্যাক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করে। মনস্তত্ববিদ সায়মা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান অটিজম স্পিকস-এর পরামর্শক হিসেবেও কাজ করেন। তিনি ২০১৩ সালের জুন থেকে মা’নসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বিশেষজ্ঞ পরামর্শক প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত হন ।
উল্লেখ্য সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের উদ্যোগে ২০১১ সালে ঢাকায় প্রথমবারের মতো অটিজম বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। নেতৃত্ব দেওয়ার মতো সকল গুন তার রয়েছে বলে মনে করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। অনেকেই বলছেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল যদি আওয়ামী লীগে সক্রিয় হয়ে মানুষের পাশে থাকেন, তাহলে তিনিও হতে পারেন দলটির কাণ্ডারি। সেটা সময়ই বলে দেবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিশ্চয়ই পুতুলের মতো মেধাবীকে মানুষের সেবা করার জন্য রাজনীতিতে টানবেন। সূত্র ..বাংলা ট্রিবিউন