-- বিজ্ঞাপন ---

পৃথিবীর উচ্চতম যুদ্ধস্থান বরফাচ্ছাদিত সিয়াচেনেও মুখোমুখি ১৬ হাজার  ভারত-পাকিস্তানী সৈন্য

0

মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম (২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ইং) : বিশ্বের উচ্চতম যুদ্ধক্ষেত্র কাশ্মীরের সিয়াচেন হিমবাহ এলাকায় ভারত ও পাকিস্তানের সৈন্যরা একে অপরের দিকে তাক করে আছে।কাশ্মীর নিয়ে বর্তমান উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে একে অপরের মুখোমুখি ।  ইংরেজীতে পৃথিবীর এই সবচাইতে উঁচু যুদ্ধস্থানকে  সিয়াচেন গ্লেসিয়ার বলা হয়। সর্বোচ্চ যুদ্ধক্ষেত্রের উচ্চতা কোন কোন স্থান ২২ হাজার ফুট উচ্চতা ও তারও বেশী। সৈন্যদের  যোগাযোগ ও রসদ সরবরাহের  মাধ্যম হেলিকপ্টার। দুই পরমাণু শক্তির অধিকারী দেশের সৈন্যরা বিশ্বের অন্যতম দুর্গম উচ্চতায় একে অপরের দিকে তাক করে আছে । মুহু মুহু তুষার ঝড়ে  তাপমাত্রা মাইনাস ১৫ থেকে  ৫০ ডিগ্রীতে বিনা যুদ্ধেই মারা যাচ্ছে উভয় দেশের বহু সৈন্য। তবুও নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজী নয়। ১৯৮৪ সালে প্রচন্ড বরফ ঝড়ে উভয় পক্ষের বিপুল  সংখ্যক সৈন্য মারা যায়।

ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ঐ সময় সে দেশের ৮৬৯ জন সৈন্য প্রচন্ড শীতে বরফ ঝড়ে মারা যান। ভারতের ঐ সৈন্যদের মধ্যে ৩৩ জন অফিসার ও ৫৪ জন নন কমিশন অফিসার ছিলেন। অপর এক বড় একক ঘটনায় ২০১২ সালে  গায়ারি এলাকায় পাকিস্তানের ১৪০ জন সৈন্য বরফ ধসে মারা যান। পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রিত উত্তর কাশ্মীরের স্কার্দু বিমান ঘাঁটি থেকে সিয়াচেন মাত্র ১৪০ কিলোমিটার দূরত্বে । দুদেশের কাশ্মীরের সীমান্ত রেখা বা লাইন অব কন্ট্রোল রয়েছে প্রায় ৭৮০ কিলোমিটার লম্বা। তাদের স্মরণে এখনও সেখানে স্মৃতিস্তম্ভ  চোখে পড়বে। ঐ সময়ের কিছু পরে পাকিস্তানের ঐসময়ের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ এভাবে প্রকৃতির বৈরী পরিবেশে আর যাতে সৈন্য ক্ষয় না হয় সেজন্য জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে উভয় দেশের সৈন্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছিলেন। অবশ্য  পাকিস্তানের এ প্রস্তাব ভারত  প্রস্তাব প্রত্যাখান করে। বৃটিশ সংবাদ সংস্থা বিবিসির মতে, ১৯৮৪ সালের ১৩ এপ্রিল  থেকে  ‘বিলাফন্ড লা পাস’  অঞ্চলে  উভয় পক্ষের কতৃত্ব নিয়ে সৈন্য সমাবেশ শুরু হওয়ার পর থেকে সিয়াচিনে এ পর্যন্ত পাকিস্তান ও ভারতের ২,৫০০ সৈন্য প্রাণ হারিয়েছে।

বিবিসি’র হিসাবে, এই মৃতদের মধ্যে ৭০ ভাগই মারা যান বিনাযুদ্ধে অর্থাৎ প্রতিকূল তুষারজনিত পরিবেশের কারণে। সেখানে অক্সিজেনের স্বল্পতা, বরফ আচ্ছাদিত চোরা খাদ এসবই মৃত্যু ফাঁদ। জানা গেছে, প্রতিদিন একজন সৈন্যকে সেখানে ৪০০০ থেকে ৫০০০ ক্যালরি খাদ্যের প্রয়োজন হলেও তারা দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে তারা সেটা পাননা। এজন্য সেখান থেকে ফিরলে দেখা যায় সৈন্যদের প্রতিজনের ওজন ৩-৪ মাসের মধ্যেই কমে যায় ৫ থেকে ১০ কিলোগ্রাম। সেখানে পানি পান করতে হয় স্টোভে গলিয়ে। আর জ্বালানি তো সেখানে হিসাব করেই খরচ করতে হয়। সব মিলিয়ে দুদেশের সৈন্যরা অত্যন্ত কঠিন পরিবেশে পৃথিবীর উচ্চতম যুদ্ধস্থানে রয়েছে বলছেন সফরকারী সাংবাদিকরা। হিমালয় পর্বতমালার মধ্যে পূর্বাংশে ৭৬ কিলোমিটার (৪৭ মাইল)  জুড়ে রয়েছে পৃথিবীর এই দ্বিতীয় বৃহত্তম সিয়াচেন  হিমবাহ বা গ্লেসিয়ার। ২০০৩ সালের পর থেকে সেখানে উভয় পক্ষ যুদ্ধবিরতি পালন করে আসছে।  সেখানে ভারতের প্রায় ১০ হাজার সৈন্য মোতায়েন আছে। মার্কিন পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্টেও মতে, ঐ অঞ্চলে পাকিস্তান ব্যয়  করছে ভারতের হিসাবে প্রতিদিন ঐ সৈন্যদের জন্য  ৫ কোটি ভারতীয় রুপী খরচ হচ্ছে। তবে গত ৫ আগস্ট থেকে কাশ্মীরের উপর থেকে ভারত বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের পর থেকে বর্তমান যুদ্ধ পর্যায়ের উত্তেজনায় এখানেও উভয় দেশের সৈন্যরা সতর্কবস্থায় রয়েছে।

তুরস্কের আন্দালু সংবাদ সংস্থার একদল সাংবাদিক  গত  ১৬ সেপ্টেম্বর ঐ অঞ্চলে মোতায়েন পাকিস্তানের অংশের সৈন্যদের  যুদ্ধ প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণ করেন। সেখানে সাংবাদিকরা  দেখতে পান,  ১৯,৮০০ ফুট উঁচুতে  পাকিস্তানি সৈন্যদের ‘শের’ সামরিক চৌকি,  ১৮,৬০০ ফুট উঁচুতে ‘ভিক্টর’ সামরিক  ঘাঁটিতে  সৈন্যরা ভারতীয় অবস্থানের দিকে তাক করে রয়েছে দেখতে পান।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন সদস্য জানালেন, সিয়াচিনে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস হচ্ছে কেরোসিন।কেরোসিন হচ্ছে তাদের জীবন রক্ষাকারী বস্তুর মতো। এর মাধ্যমে থাকার ঘর উষ্ণ রাখা, ফোন চার্জ দেয়া, বরফ গলানো এবং পানি ফুটানোর মতো কাজ করা হয়।

এদিকে জার্মান বার্তা সংস্থা ডিডব্লিউ (ডয়চে ভেলে) এর মতে, ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের সীমান্ত  থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত শহর কারগিল৷ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কারগিলের উচ্চতা প্রায় ষোলো হাজার ফুট ৷ ১৯৯৯ সালের মে মাসে এই কারগিলেই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সর্বশেষ যুদ্ধের শুরু ৷

তিন মাস ধরে চলা এই যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটে যখন লাইন অফ কন্ট্রোল বা এলওসি পেরিয়ে পাকিস্তানি সেনারা ঢুকে পড়ে ভারতীয় মাটিতে ৷ দুই তরফে গোলাগুলি চলে ৷ ভারতীয় সূত্র মতে, নিহত হন ৫২৭জন, পাক কর্তৃপক্ষের চোখে এই সংখ্যা হয়ে যায় চার হাজার ৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি প্রতিবেদনে জানায় যে, কারগিল যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন ৭০০জন ৷ ভারত ও পাকিস্তানের এই যুদ্ধে কতজন নিহত হয়েছেন, তা নিয়ে নির্ভরযোগ্য কোনো সংখ্যাই পাওয়া যায় না৷ ঠিক যেমন জানা যায় না আসলেই কতটুকু জয়ী হয়েছে ভারত ৷

২৬ জুলাই ১৯৯৯ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ভারত এই যুদ্ধে তাদের জয় ঘোষনা করে ৷ উল্টোদিকে ঐসময় পাকিস্তানী তথ্যমন্ত্রী মুশাহিদ হুসেন এই যুদ্ধে পাক সেনার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির বাস্তবতা মেনে নিলেও, জোর গলায় বলেছিলেন যে এই যুদ্ধের ফলস্বরূপ ভারতীয় সেনাবাহিনীর দুর্বল দিকগুলি আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন তারা৷

বিবিসি বাংলা ন্যাভিগেশন গত ৩ জানুয়ারি ২০১৮ ইং  বিশ্বের সবচেয়ে  উঁচু যুদ্ধক্ষেত্র সিয়াচেন হিমবাহে সৈনিকদের জীবন কাটে যেভাবে এই শিরোনামে  একটি প্রতিবেদন প্রচার করে। এতে বলা হয়, উত্তর কাশ্মীরের সিয়াচেন হিমবাহ পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত।ভারত এবং পাকিস্তান উভয় দেশ এ জায়গাটি নিজেদের বলে দাবী করে। উভয় দেশ এখানে কয়েক হাজার সৈন্য মোতায়েন রেখেছে। কিন্তু সিয়াচেনে দায়িত্ব পালন করা একজন সৈনিকের জন্য ভীষণ কষ্ট এবং বিপদের।এখানে সৈন্যরা যে প্রতিপক্ষের গুলি কিংবা মর্টারের আঘাতে আঘাতে মারা পড়ছে তা নয়।

এখানকার সবচেয়ে বড়  প্রতিপক্ষ হচ্ছে আবহাওয়া। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে সিয়াচেন হিমবাহের উচ্চতা তের থেকে বাইশ হাজার ফুটের মধ্যে।অধিকাংশ সৈনিক মারা যায় তীব্র ঠান্ডা এবং তুষাড় ঝড়ের কারণে।১৯৮৪ সালে সিয়াচেনে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত শুরু হবার পর উভয় দেশ প্রায় আড়াই হাজার সৈন্য হারিয়েছে।এটি হচ্ছে আনুষ্ঠানিক হিসেব। কিন্তু অনানুষ্ঠানিক-ভাবে জানা যায়, নিহত সৈনিকের সংখ্যা তিন থেকে পাঁচ হাজার। নিহতের মধ্যে ৭০ শতাংশই মারা গেছে আবহাওয়াজনিত কারণে। ২০০৩ সালে সিয়াচেন নিয়ে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ বিরতি হবার পর এখনও পর্যন্ত  প্রপিক্ষের গুলিতে একজন সৈন্যও মারা যায়নি।

পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা জানান সিয়াচেনে তারা প্রতিপিক্ষ নিয়ে উদ্বিগ্ন নয় বরং তাদের  প্রধান শত্রু হচ্ছে আবহাওয়া। এতো উঁচুতে অক্সিজেনের ঘাটতি একটি বড় সমস্যা। ২০১২ সালে এক ভয়াবহ তুষার ঝড়ে পাকিস্তানের ১৪০জন সেনা সদস্য বরফের নিচে চাপা পড়ে মারা গেছে।গত বছর বছর একই ধরনের ঘটনায় ভারতীয়  সেনাবাহিনীর নয় জন নিহত হয়। কিন্তু এরপরেও কোন পক্ষই তাদের সামরিক শক্তি কমায় নি।

সিয়াচেনে তুষার ঝড়ের বিপদ থাকে যদিও এটি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বেশ কয়েকবার আলোচনা হয়েছে।২০০৩ সালে যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষরের পরে সিয়াচেনে অবস্থানরত দুই দেশের সৈন্যদের তেমন একটা কাজ নেই। প্রতিদিন চার থেকে ছয় ঘণ্টা তারা টহল দেয়। সারাবছর যাবত সিয়াচেনের তাপমাত্রা থাকে মাইনাস বিশ ডিগ্রি।কিন্তু শীতকালে এ তাপমাত্রা থাকে মাইনাস পঞ্চাশ ডিগ্রী । সিয়াচেনের দায়িত্বপালনকারী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এক মেজর জানালেন সেখানে শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়া  এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। প্রশিক্ষণ শেষে একজন সৈনিককে তাঁর ব্যাগে প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

এসব প্রয়োজনীয়  জিনিসের মধ্যে রয়েছে স্লিপিং ব্যাগ, অক্সিজেন সিলিন্ডার, কেরোসিন তেল, বরফ কাটার যন্ত্র, হাত ও পায়ের মোজা ইত্যাদি। পুরো ব্যাগের ওজন প্রায় ২৫ থেকে ৩০ কেজি!!

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন সদস্য জানালেন, সিয়াচিনে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস হচ্ছে কেরোসিন।

কেরোসিন হচ্ছে তাদের জীবন রক্ষাকারী বস্তুর মতো। এর মাধ্যমে থাকার ঘর উষ্ণ রাখা, ফোন চার্জ দেয়া, বরফ গলানো এবং পানি ফুটানোর মতো কাজ করা হয়।সিয়াচেনে সৈন্যদের জন্য খাবার এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এক বছরের জন্য মজুত রাখা হয়।  সৈন্যদের জন্য কোন তৈলাক্ত খাবার রান্না করা হয় না।

সেনাবাহিনীর একজন মেডিকেল অফিসার বলেন, ” খাবারে কোন স্বাদ নেই। আমার প্রথম দুই সপ্তাহ খুবই খারাপ গেছে। প্রতিবার  খাবার খাওয়ার সময়  আমার মনে হয়েছে যেন বমি করে দিই। এ ধরনের খাবার খাওয়া তো দূরের কথা, আমি এসব কখনো দেখতেও চাই না।” সিয়াচেন থেকে দায়িত্ব পালন শেষে ফিরে আসলে তাঁর ওজন ২২ কেজি কমে গিয়েছিল বলে তিনি জানান।

 

 

শেভ করা, বাথরুমে যাওয়া কিংবা দাঁত ব্রাশ করা সাংঘাতিক কঠিন কাজ। প্রচন্ড ঠান্ডার মধ্যে ঠান্ডা পানি দিয়ে দিনের পর দিন এ ধরনের কাজ করলে হাতের আংগুল জমে যায়। তীব্র ঠান্ডায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় যে হয়তো এক পর্যায়ে হাতের আঙুলে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে অকেজো হয়ে যায়। অনেক সময় কেটেও ফেলতে হয়। সিয়াচেনে রান্নাবান্না করতে অনেক সময়ের প্রয়োজন। প্রায় সারাদিনই লেগে যায় খাবার রান্না করতে। শুধু ভাত এবং ডাল রান্না করতেই চার ঘণ্টা পর্যন্ড সময় লাগে।পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কর্নেল আমের ইসলাম জানালেন, কোন সৈনিককে সিয়াচেনে পাঠানোর আগে সেনাবাহিনীর পর্বত প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে কঠোর অনুশীলন করানো হয়। কম অক্সিজেন নিয়ে কিভাবে বেঁচে থাকা যায় সে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় তাদের।  প্রশিক্ষণ শেষে একজন সৈনিককে তাঁর ব্যাগে প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এসব প্রয়োজনীয় জিনিসের মধ্যে রয়েছে সিপ্লিং ব্যাগ, অক্সিজেন সিলিন্ডার, কেরোসিন তেল, বরফ কাটার যন্ত্র, হাত ও পায়ের মোজা ইত্যাদি। পুরো ব্যাগের ওজন প্রায়  ২৫ থেকে ৩০ কেজি। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন সদস্য জানালেন সিয়াচেনে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বিষয় হচ্ছে কেরোসিন। কেরোসিন হচ্ছে তাদের জীবন রক্ষাকারী বস্তুর মতো। এর মাধ্যমে থাকার ঘর উষ্ণ রাখা, ফোন চার্জ দেয়া, বরফ গলানো এবং পানি ফুটানোর মতো কাজ করা হয়। সিয়াচেনে সৈন্যদের জন্য খাবার এবং প্রয়োজনীয়  জিনিসপত্র এক বছরের জন্য মজুত রাখা হয়। সৈন্যদের জন্য কোন তৈলাক্ত খাবার রান্না করা হয়না।

সেনাবাহিনীর একজন মেডিকেল অফিসার বলেন, ” খাবারে কোন স্বাদ নেই। আমার  প্রথম দুই সপ্তাহ খুবই খারাপ গেছে। প্রতিবার  খাবার খাওয়ার সময় আমার মনে হয়েছে যেন বমি করে দিই। এ ধরনের খাবার খাওয়া তো দূরের কথা, আমি এসব কখনো দেখতেও চাই না।” সিয়াচেন থেকে দায়িত্ব পালন শেষে ফিরে আসলে তাঁর ওজন ২২ কেজি কমে গিয়েছিল বলে তিনি জানান।

পাকিস্তানের মুলতান থেকে যাওয়া একজন সৈন্য জানালেন, তিনি সিয়াচেনে যাওয়ার দুই সপ্তাহ পরে তাঁর বাবা মারা যায়। কিন্তু তিনি আসতে পারেননি। একবার সিয়াচেনে গেলে সেখান থেকে দ্রুত ফিরে আসা খুবই কঠিন।

সিয়াচেনে অনেক অপ্রত্যাশিত বিপদও আসে। একবার এক সৈন্যকে ভাল্লুক আক্রমণ করেছিল।তাঁর চিৎকার শুনে যখন আরকজন সৈন্য সাহায্যের জন্য এগিয়ে যায়, তখন ভাল্লুক তাঁকেও আক্রমণ করে। একজন সৈন্য মারা যায় এবং আরেকজন তাঁর একটি হাত হারিয়েছিল।মন প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে বিষন্নতা থেকে মুক্তি পেতে সৈনিকরা তাদের ছোট ছোট আনন্দ খুঁজে নেবার চেষ্টা করে।

মুহাম্মদ শফিক নামে একজন সৈনিক জানালেন, চ্যাম্পিযন্স  ট্রফিতে পাকিস্তান যখন ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল তখন রেডিওতে সে খবর শুনে তারা বেশ আনন্দ করেছিলেন।জয়ের পর তারা সবাই সারা রাত নাচে-গানে মেতে উঠেছিলেন। অন্য সময় সেনা সদস্যরা বই পড়ত, তাস এবং লুডু খেলে সময় কাটায়। কজন সৈনিক জানালেন, এ ধরনের ছোট আনন্দ না থাকলে তারা তীব্র অবসাদে ভুগতেন। তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, এতো উঁচুতে এসে যুদ্ধ করা পাগলামি ছাড়া কিছুই নয়।

শীতকালে সিয়াচেনে তুষার ধস নামা স্বাভাবিক বিষয়। সে সময় সিয়াচেনের তাপমাত্রা কখনো কখনো মাইনাস ৬০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে নেমে যায়।

১৯৮৪ সাল থেকে সিয়াচেনে প্রায় আট হাজার সেনা নিহত হয়েছে। যুদ্ধ নয় বরং তুষার ধসে চাপা পড়ে, ঠান্ডায় জমে, উচ্চতা থেকে সৃষ্ট নানা রোগ-ব্যাধি এবং হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে মারা গেছে এসব সেনা ২০১২ সালে ভয়াবহ তুষার ধসে পাকিস্তানের ১২৪ সেনাসহ ১৩৫ জন নিহত হয়েছিল। গাইয়ারি সেক্টরে এ ভয়াবহ তুষার ধস আঘাত হেনেছিল।

## শহীদ, ২১.০৯.২০১৯ ইং।

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.