ভারতের নির্মীয়মান বিমানবাহী জাহাজ ‘বিক্রান্ত’-এ বড় নাশকতা : পাকিস্তান-চীন গোয়েন্দারা জড়িত থাকার ইঙ্গিত
মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম: ভারত নিজ দেশে নির্মীয়মান প্রথম বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ ‘আইএনএস বিক্রান্ত’ তৈরীতে বড় ধরনের হোঁচট খেল । সেদেশের গর্ব হিসেবে বহুল প্রচারিত বিমানবাহী জাহাজটির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হার্ড ডিস্ক , র্যাম ও প্রসেসর যা দিয়ে জাহাজটি পরিচালিত হবে এর সবই খোয়া গেছে। ফলে জাহাজটি আর নিদ্দিষ্ট সময়ে ২০২২ সালে ভারতীয় নৌ বাহিনী চালু করতে পারবেনা বলেই দেশের সামরিক বিশ্লেষকরা আশংকা প্রকাশ করেছেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞরা একপ্রকার নিশ্চিত যে এটা বিদেশী গুপ্তচর সংস্থার কাজ। সন্দেহের তীর পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই ( ইন্টার সার্ভিস ইন্টেলিজেন্স) এর দিকে। এ নিয়ে জোর তদন্ত শুরু হয়েছে সেদেশে। ভারতের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সবচাইতে বড় প্রকল্প ৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে কোচিন শিপইয়ার্ডে নির্মিত হচ্ছে ৪০,০০০ টন ক্ষমতার এই বিমানবাহী জাহাজ। ভারতের প্রায় সবকক’টি পত্রিকায় দেশের গর্ব হিসেবে দাবী করা হচ্ছে এমন একটি স্পর্শকাতর বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ প্রকল্পের নিরাপত্তা নিয়ে শংকা প্রকাশ করা হয়েছে।
পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’র দিকে ইঙ্গিত
ভারতের প্রতিরক্ষা সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে সেদেশের পত্র-পত্রিকায় বিষয়টিকে চুরি হিসেবে মনে করা হচ্ছেনা। গত ১৮ সেপ্টেম্বর এ ঘটনাটি ভারতের সকল প্রধান পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এর পর থেকে এখনও ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর কোন কূল কিনারা বের করতে পারেনি সেদেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলি। এটিকে বিদেশের মদদপুষ্ট রাষ্ট্রদ্রোহ এবং বাইরের কোন শক্তির হাত রয়েছে বলে আশংকা ক্রমেই বদ্ধমূল হচ্ছে । বিদেশী হাত বিশেষ করে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই (ইন্টার সার্ভিস ইন্টেলিজেন্স) দিকেই সন্দেহের তীর। সামরিক সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে আরও দু’দিন পর ২০ সেপ্টেম্বর ভারতের ইংরেজী দৈনিক দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকাটি জানায়, এটি সাধারণ কোন চুরির ঘটনা নয়। ভারতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই বিমানবাহী জাহাজের প্রথমে যা বলা হয়েছিল ৪টি হার্ডডিস্ক নয় মোট ১০ টি হার্ডডিস্ক এবং ৩ টি সিপিইউ গায়েব হয়েছে ফাঁস হওয়ার আরও দু সপ্তাহ অর্থাৎ ১৪ দিন আগে। ততদিনে বিমানবাহী জাহাজটির এসকল সম্পর্শকাতর তথ্য গন্তব্যস্থলে অর্থাৎ বিদেশী গোয়েন্দাদের কাছে পৌঁছে গেছে। ভারতের অন্যান্য প্রধান দৈনিকও একই মতামত সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ করে । পাকিস্তান কিংবা চীনের গোয়েন্দাদের এর পেছনে জড়িত থাকার আলামত তারা পেয়েছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকাটি আরও জানায়, এটি অত্যন্ত মারাত্নক ঘটনা যা দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকীস্বরুপ এবং সকল গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থাসমূহ এ ঘটনার তদন্তে নেমে পড়েছে। ঘটনাটি ধরা পড়ার সময় উল্লেখ করে পত্রিকাটি গোয়েন্দা সংস্থার তদন্ত রিপোর্টের উল্লেখ করে আরও জানিয়েছে, এ ঘটনা তখনই আবিষ্কার হয় যখন জাহাজের অত্যাধুনিক আইপিএমএস চালু করার সময়। যখন আইপিএমএস এর সুইচ টেপা হয় তখন দেখা যায় এটি কাজ করছেনা । কেবল তখনই ঘটনা ধরা পড়ে। বিমানবাহী জাহাজটিতে মোট ৯টি কম্পিউটারে এসকল সেনসিটিভ ডাটা রক্ষিত রয়েছে। খোয়া গেছে ৩টি কম্পিউটার থেকে । ১৩ সেপ্টেম্বর ঘটনা আবিষ্কার হলেও রহস্যজনক কারণে এটি সক্রিয় হয় অনেক পরে যা তদন্তে পাওয়া যায়।
এই খোয়া যাওয়ার গুরুতর ঘটনার সর্বশেষ ভারতের ডেক্কান ক্রনিকল প্রত্রিকার ২৭ সেপ্টেম্বর সংস্করণে জানা গেছে, প্রতিরক্ষা বিভাগের তদন্তের পাশাপাশি এখন এটির তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ভারতের এনআইএ (ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেটিভ এজেন্সি )’র হাতে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর পত্র পত্রিকায় ফাঁস হওয়ার পর কোচিন শিপইয়ার্ডে নির্মীয়মান ২০ হাজার কোটি ভারতীয় রুপী ব্যয়ে বিমানবাহী জাহাজটির ৪ টি হার্ড ডিস্ক, র্যাম এবং প্রসেসর গায়েবের ঘটনা ব্যাপক জানাজানি হয়। খোয়া যাওয়া ঐসব হার্ড ডিস্কের মধ্যে বিমানবাহী জাহাজটির অত্যন্ত স্পর্শকাতর আইপিএমএস (ইন্টেগ্রেটেড প্ল্যাটফর্ম ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) যা গোটা জাহাজটির সকল কর্মকান্ড মনিটর হতো এবং জাহাজের কোথাও ত্রুটি দেখা দিলে এর আগাম সংকেত থাকত এগুলোও উধাও হয়েছে। জাহাজটি নৌ বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হলে ভারত বিশ্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের পর ৪০ হাজার টন ক্ষমতার বিমানবাহী জাহাজ নির্মাণে সক্ষম ৬ষ্ট দেশ হিসেবে পরিগণিত হবে। ২০০৯ সাল থেকে দক্ষিণ ভারতের কোচিন শিপইয়ার্ড লিমিটেড-এ নির্মীয়মান ‘বিক্রান্ত’ বিমানবাহী জাহাজের পরীক্ষামূলকভাবে পানিতে ভাসানোর ট্রায়াল দেয়ার কথা ২০২১ সালে। এই বিমানবাহী জাহাজ বিক্রান্ত ৩০টি জঙ্গী বিমান ও ১০টি হেলিকপ্টার বহণ করতে পারবে। এজন্য ভারত আগে থেকেই মিগ-২৯ জঙ্গী বিমান কিনে রেখেছে।
পাকিস্তানের জন্য চীনের বিমানবাহী জাহাজ ‘লিয়াওনিং’
এদিকে, সামরিক বিষয়ক অনলাইন নেভী রিকগনিশন -্এ ৫ ফেব্রুয়ারী এবং পাকিস্তানের ‘নেশন’ পত্রিকায় খবর বের হয় যে, চীন তাঁর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশ পাকিস্তানের নৌ বাহিনীকে ভারতের মোকাবেলা করতে সেদেশের প্রথম বিমানবাহী জাহাজ ৬০ হাজার টন ক্ষমতার ‘লিয়াওনিং’ পাকিস্তানের নিকট বিক্রয় করবে। এই বিমানবাহী জাহাজ ৪০ টি জঙ্গী ও বোমারু বিমান বহন করতে পারে। এবং এটি পাকিস্তানের নৌ বাহিনীতে ২০২০ সাল নাগাদ যুক্ত হতে পারে বলে পত্রিকা দুটি সামরিক গোপন সূত্রে প্রাপ্ত খবরটি প্রকাশ করে। পরে পাকিস্তান ও চীন দু’দেশের পক্ষ থেকেই সংবাদটি অস্বীকার করা হয়। ‘বিক্রান্তে’র এই গুরুত্বপূর্ণ হার্ড ডিস্ক ও ডাটা পাকিস্তানের জন্য চীনের বিমানবাহী জাহাজে ব্যবহার করা হতে পারে ভবিষ্যতে এ আশংকা উড়িয়ে দেয়া যায়না বলেও ভারতের সামরিক সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। ভারতের বিমানবাহী জাহাজের গোপণ এবং দুর্বল দিক জেনে সেই মোতাবেক নাশকতামূলক অপারেশন চালাতে পারে দেশ দুটি এ আশংকাও করছে ভারতের সামরিক মহল ।
## শহীদ, ২৯.০৯.২০১৯ ইং।