বর্তমান বিশ্বে একক পাওয়ার হারিয়ে যাচ্ছে। আগে মনে করা হতো সামরিক দিক দিয়ে বুঝি আমেরিকা বা রাশিয়া শক্তিশালী। কিন্ত বর্তমান প্রেক্ষাপট ভিন্ন। বেশ কয়েক বছর ধরে সামরিক দিকে দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে মুসলিম বিশ্বের কয়েকটি দেশ। এগুলোর মধ্যে তুরস্ক ও ইরান রয়েছে অগ্রভাগে। নানা কারনে ইরানের সীমাবদ্ধতা থাকলেও তুরস্ক দ্রুত নিজের শক্তি বাড়িয়ে চলেছে। পশ্চিমা শক্তিগুলোকে টেক্কা দেয়ার মতো তুরস্কের সামরিক শক্তির যোগান বাড়ছে। নানা প্রযুক্তি ও ভিন্ন ধরনের অস্ত্র সরঞ্জাম বানিয়ে তুরস্ক সরবরাহ করছে বিভিন্ন দেশে। আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার যুদ্ধে তুরস্কের হস্তক্ষেপ এবং অঅজারবাইজানের জয় তুরস্ককে নিয়ে গেছে অন্য মাত্রায়। তাছাড়া তুরস্ক চাইছে এখন মুসলিম সামরিক জোট হোক। এ লক্ষে বসে নেই তুরস্ক। এরদোগান সরকার মুসলিম দেশগুলোর সাথে নিজেদের সম্পর্ক আরো জোরালো করছে। তার প্রভাবও পড়তে শুরু করেছে।
সম্প্রতি ট্রাম্প বিদায়কালে তুরস্কের উপর অবরোধ আরোপ, গ্রীসের কারনে ফ্রান্স ও গ্রীসের সাথে তুরস্কের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। পশ্চিমা গুলো নানা কারনে তুরস্কে উপর নজর রাখছে। তবে তুরস্ক দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে। তুরস্ক চাইছে বিশ্ব বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ। মার্কিন নৌ-বাহিনীর কাছ থেকে এ নিয়ন্ত্রন কিভাবে নেয়া যায় তার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে র্তুকি। চীনও এখন আলাদাভাবে নিজের মতো বাণিজ্য রুট তৈরি করছে। তুরস্ক বরাবর চীনের সাথে সম্পর্ক রেখে চলেছে। তুরস্ক চীনকে নিয়ে এশিয়া ও ইউরোপে আধিপত্য বিস্তার করার জন্য পরিকল্পনা নিয়েছে।
সূত্র বলছে, সারাবিশ্বে অধিপত্য বিস্তার জন্য কোন একক দেশের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর আমেরিকা যেভাবে একক ভাবে বিশ্ব নিয়ন্ত্রন করেছে সেটার কার্যকরীতা অনেক আগেই হারাতে শুরু করেছে। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন ভবিষ্যৎ বিশ্ব বেশ কিছু অঞ্চলিক শক্তিদ্বারা নিয়ন্ত্রণ হবে। এই বাস্তবতায় মুসলিম শক্তির সম্ভবনা ও প্রবল। কোন দেশ বা ব্লক যদি বিশ্বে প্রভাব বিস্তার করতে চায় তাহলে তাদের দুটা দিকে শক্তিশালী হতে হবে।
প্রথমত, অর্থনীতিতে নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে হবে। অর্থাৎ প্রকৃত অর্থনীতিক সমৃদ্ধি অর্জন করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, সামরিক শক্তি অর্জন করতে হবে। এই বিষয়ে পরনির্ভর হওয়ার কোন সুযোগ নেই। নিজে এবং নিজের ব্লক কে নিরাপত্তা দিতে সকল ধরনের সমরাস্ত্র সমমানা দেশের মধ্যেই তৈরি করতে হবে।
এক্ষেত্রে মুসলিম দেশ গুলোর মধ্যে একটা অলিখিত জোট তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে তুরস্ক, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া সহ বেশ কিছু দেশ। এই জোটে বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, কাতার, আজারবাইজানসহ কয়েক ডজন দেশ সরাসরি অথবা কুটনৈতিক সমর্থন দিবে।
মুসলিম বিশ্ব অনেক দিন নেতৃত্ব শূন্য ছিলো। তবে তুরস্কের সামরিক উত্থান মুসলিম বিশ্বে নতুন ব্লক তৈরির বাস্তবতা তৈরি করেছে। তাদের দক্ষ পরাষ্টনীতি এবং সমরনীতি এক্ষেত্রে সফল। পশ্চিমা দেশ থেকে সমরাস্ত্র ক্রয় করার পর যদি কোন কারনে তাদের স্বার্থে আঘাত লাগে সে ক্ষেত্রে তারা অবরোধ দেয়। কিন্তু সেই সমরাস্ত্র যদি নিজেদের মধ্যেই তৈরি করা যায় তাহলে সেটা ব্যবহারে স্বাধিনতা থাকে। সম্প্রতি আজারবাইজান কে সমরাস্ত্র দিয়ে তুরস্ক সাহায়তা দিয়ে প্রমান করেছে। তুরস্ক সমরাস্ত্রের যোগান দিতে সক্ষম।
তাই মুসলিম বিশ্বে এটার প্রভাব পরবে। তারা নিজেদের মধ্যে আরো বেশি যোগাযোগ তৈরি করে একটা কার্যকরী ব্লক তৈরিতে পরবর্তী ধাপে এগিয়ে যাবে। মুসলিম দেশ সমহ এখন সব ধরনের সমরাস্ত্র তৈরি করতে সক্ষম। যেমন তুরস্ক তৈরি করতে পারে, ট্যাংক, সামরিক যান, মিসাইল, যুদ্ধজাহাজ, ড্রোন, হেলিকপ্টার এবং যুদ্ধবিমান প্রোজেক্ট রয়েছে। অর্থাৎ সব ধরনের সাপোর্ট তুরস্ক দিতে সক্ষম। পাকিস্তান তৈরি করে,পরমানু বোমা, মিসাইল, যুদ্ধবিমান। পাকিস্তান কিছু দেশে যুদ্ধবিমান রফতানি ও করেছে। ইন্দোনেশিয়া তৈরি করতে পারে, ট্যাংক যুদ্ধজাহাজ এবং যুদ্ধবিমান তৈরির প্রজেক্ট রয়েছে।
এছাড়াও অনেক মুসলিম দেশই বেশ ভালো সমরাস্ত্র তৈরি করতে সক্ষম। অর্থাৎ বলাই যায় ভবিষ্যতে মুসলিম দেশ গুলোর যাবতীয় সমরাস্ত্রের চাহিদা পূরনের জন্য বাহির বিশ্বের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না। তাই মুসলিম বিশ্ব সেগুলো তাদের সার্থে ব্যবহার করে নতুন বিশ্ব ব্যবস্তা তৈরি করা এখন সময়ের ব্যপার মাত্র।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ-তুরস্ক দুই দেশের মধ্যে সামরিক ও কুটনৈতিক সম্পর্ক খুবই উষ্ণ। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষে দুই দেশ একময় হয়েছে। এছাড়াও রোহিঙ্গা সমস্যায় আমাদের সাহায্য করার আশ্বাস পাওয়া গেছে। আর গত কয়েকবছর ধরে তুরস্কের সাথে বাংলাদেশের সামরিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে আর্মি, এয়ারফোর্স, বিজিবি এবং পুলিশ তুরস্কের বিভিন্ন সরঞ্জামাদি ব্যবহার করে থাকে। তবে তুরস্ক বাংলাদেশ নেভির সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে চায়। আর সেই লক্ষেই কয়েক দফায় বেশ কিছু ডিফেন্স ইক্যুইপমেন্ট বাংলাদেশ নেভিকে অফার করেছে তুরস্ক। সাম্প্রতিক সময়ে 6th Turkish Defence Port এ তুরস্ক বাংলাদেশ নেভির নেক্সট জেনারেশন হেভিওয়েট এলপিসির জন্য তাদের ADDA class corvette অফার করেছে। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ নেভি হেভিওয়েট এলপিসির জন্য দরপত্র জারি করে যেগুলোতে ৮টি এন্টিশিপ মিসাইল থাকবে এবং এই জাহাজগুলির প্রযুক্তি কিনে দেশীয় শিপইয়ার্ডে নির্মাণ করা হবে। আর এই ক্যাটাগরিতে তুরস্ক ADDA class corvette অফার করেছে। জাহাজগুলি এন্টিসাবমেরিন ওয়ারফেয়ারে স্পেশালিষ্ট বলা হলেও এটি মাল্টিরোল। আর এটি নৌবাহিনীতে এলপিসি হিসেবে যুক্ত হলে ফায়ার পাওয়ার কয়েক গুণে বাড়বে। সূত্র: World Military Defence Power – (WMDP)”