উত্তর-পূর্ব দিল্লির পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খায় প্রশাসন। এখনও পর্যন্ত জারি রয়েছে কারফিউ। অশান্তিপ্রবণ এলাকাগুলিতে মোতায়েন রয়েছে ৬৭ কোম্পানি আধা সেনা। রাস্তায় রোডমার্চ করছে বাহিনী। মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯। আহত হয়েছেন দু’শোরও বেশি মানুষ।
ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্র জানায়, রবিবার থেকে বুধবার টানা চারদিন ধরে জ্বলছে উত্তর-পূর্ব দিল্লি। রাজধানীর রাস্তায় আগুন, আকাশে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী। গত তিনদিনে অশান্তির এই আগুন ছড়িয়ে পড়েছে জাফরাবাদ, বাবরপুর, মৌজপুর, করদমপুরী, গোকুলপুরী, ভজনপুরা, চাঁদবাগ, করাওয়ালপুর সহ বিভিন্ন জায়গায়। কোথাও পুলিশের সামনেই আগ্নেয়াস্ত্র হাতে দাপিয়ে বেড়িয়েছে দুষ্কৃতী। কোথাও চলছে মুড়ি-মুড়কির মতো পাথরবৃষ্টি। কোথাও পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া হয়েছে পুলিশ ফাঁড়ি।
সোমবার রাতে গোকুলপুরীতে একটি টায়ার মার্কেটে আগুন ধরিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। মঙ্গলবার সকালেও সেই আগুন নেভেনি। আকাশ ঢেকে ছিল কালো ধোঁয়ার কুন্ডলীতে। মঙ্গলবার বেলা গড়াতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ভজনপুরা। বড় রাস্তা দিয়ে দল বেঁধে ছুটে যেতে দেখা যায় একদল তরুণকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই রাস্তার ওপর হাতাহাতিতে জড়ায় দুই গোষ্ঠী। মুখে রুমাল বাঁধা এক তরুণকে
মৌজপুরে মঙ্গলবার সকালে দফায় দফায় পাথরবৃষ্টি চলে। মৌজপুর রোডে একের পর বাইকে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
প্রায় একই ছবি দেখা যায় কবীরনগরেও। জ্যোতিনগরে পরপর দোকানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। জাফরাবাদেও পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া হয়েছে দোকানপাট। যে কয়েকটি দোকান বেঁচেছে, সেগুলির শাটার বন্ধ।
হিংসায় গত তিনদিনে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে রয়েছেন দিল্লি পুলিশের হেড কনস্টেবল রতন লাল। মৃত পাঁচজনের নাম জানা গিয়েছে। এরা হলেন শাহিদ, মহম্মদ ফুকরান, রাহুল সোলাঙ্কি, নাজিম, বিনোদ। বাকি সাতজনের পরিচয় এখনও মেলেনি।
লাগাতার হিংসার ছবি দেখে ইতিমধ্যেই দিল্লি ছাড়তে শুরু করেছেন, অন্য রাজ্য থেকে কাজের খোঁজে আসা যুবকরা। দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া জানিয়েছেন, হিংসাবিধ্বস্ত উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে বুধবার স্কুল বন্ধ থাকবে। সিবিএসই-র অনুরোধ জানানো হয়েছে, বুধবারের পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার জন্য।
জাফরাবাদ মেট্রো স্টেশনের কাছে যে জায়গায় সিএএ-র প্রতিবাদে বিক্ষোভ চলছিল, সেই জায়গাও মঙ্গলবার রাতে খালি করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে মঙ্গলবারই দিল্লি পুলিশের স্পেশাল কমিশনার (আইনশৃঙ্খলা) পদে নিযুক্ত করা হয়েছে আইপিএস অফিসার এস এন শ্রীবাস্তবকে। হিংসা থামাতে উত্তর-পূর্ব দিল্লির চারটি থানা এলাকায় দেখামাত্র গুলির নির্দেশ জারি করল পুলিশ।
অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির খবর সংগ্রহে গিয়ে আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচ জন সাংবাদিক। একটি স্থানীয় টিভি চ্যানেলের এক সাংবাদিককে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ। তাঁকে মারধরও করা হয়েছে। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। জাফরাবাদ মৌজপুর, বাবরপুর, গোকুলপুরী, জোহরি এনক্লেভ এবং শিব বিহার মেট্রো স্টেশন বন্ধ রাখা হয়েছিল দিনভর। এই স্টেশনগুলির গেট বন্ধ করে রাখার পাশাপাশি ট্রেনও চালানো হয়নি।
দিল্লির পরিস্থিতির খবর সম্প্রচারের ক্ষেত্রেও নির্দেশিকা জারি করেছে কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক। হিংসায় মদত যোগাতে পারে এমন খবর ও ভিডিও সম্প্রচারের ক্ষেত্রে টিভি চ্যানেলগুলিকে সাবধানতা অবলম্বনের কথা বলা হয়েছে ওই নির্দেশিকায়।
মঙ্গলবার দুপুর থেকে মৌজপুরে ছড়িয়ে পড়ে অশান্তির আগুন। মৌজপুর রোডে একের পর বাইকে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। আজ সকালে সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে মোতায়েন আধা সেনা ও পুলিশ।দিল্লির হিংসা নিয়ন্ত্রণে আনার দায়িত্ব এনএসএ অজিত দোভালকে দেওয়া হয়েছে। তিনি পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে পুঙ্খানুপুঙ্খ জানাবেন।
মঙ্গলবার রাতে দোভাল জাফরাবাদ, সিলামপুর এবং অন্যান্য অংশ পরিদর্শন করেন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল জানিয়েছেন, রাজধানীতে আইন শৃঙ্খলার পরিস্থিতি এরকম থাকতে দেওয়া যায় না এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ এবং আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।তেগ বাহাদুর হাসপাতালের এমডি সুনীল কুমার গৌতম জানিয়েছেন, দিল্লি হিংসায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ১৮সিএএ-সংঘর্ষে জ্বলছে উত্তর-পূর্ব দিল্লি। টানা চার দিন সংঘর্ষে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৯, খবর এএনআই সূত্রে। জখমের সংখ্যা ১৯০।
গতকাল রাতেও কয়েকটি জায়গায় গাড়িতে আগুন ধরানো হয়। জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া প্রাক্তন ছাত্র সংগঠন ও জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া কোঅর্ডিনেশন কমিটির সদস্যরা মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের বাড়ির বাইরে বিক্ষোভ দেখায়। দিল্লির হিংসা পরিস্থিতি সামলাতে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং শান্তি পুনরুদ্ধারের দাবিতে তাঁদের এই জমায়েত। পরে বিক্ষোভকারীদের হঠিয়ে দেয় পুলিশ।গভীর রাতে সীলমপুর, জাফরাবাদ, মৌজপুর, গোকুলপুরী চকের মতো অশান্ত এলাকা পরিদর্শেন যান জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। তার আগে দিল্লি পুলিশের পদস্থ কর্তাদের সঙ্গে তিনি বৈঠক করেন।
সেন্ট্রাল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন জানিয়েছে, দিল্লি সরকারের শিক্ষা দফতরের অনুরোধে, শিক্ষার্থী, শিক্ষা কর্মী ও অভিভাবকদের অসুবিধা এড়াতে বোর্ড দিল্লির উত্তর পূর্ব অংশে নির্ধারিত দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির ২৬ ফেব্রুয়ারির পরীক্ষা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।দিল্লি-সংঘর্ষে নিহত কনস্টেবল রতন লালের দেহ রাজস্থানে ফিরতেই বিক্ষোভ। পুলিশকর্মী শহিদের মর্যাদা ও স্ত্রীর চাকরির দাবিতে দিল্লি-বিকানের হাইওয়ে অবরোধ এলাকাবাসীর।দিল্লির হিংসা নিয়ে মধ্যরাতে শুনানি। আহতদের দ্রুত বড় হাসপাতালে ভর্তি করতে দিল্লি পুলিশকে নির্দেশ বিচারপতির।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ বিচারপতি এস মুরলীধরের বাড়িতে শুরু হয় জরুরি ভিত্তিতে শুনানি। উপস্থিত ছিলেন দিল্লি হাইকোর্টের অপর বিচারপতি জি এস সিস্তানি এবং দিল্লি পুলিশের পদস্থ কর্তারা। সংঘর্ষে আহতদের একাংশ ভর্তি আল হিন্দি হাসপাতালে। বিচারপতির ঘর থেকে হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ। তারপরই পরিকাঠামোযুক্ত বড় হাসপাতালে আহতদের ভর্তির নির্দেশ দেন বিচারপতি। সেই মতো রাতেই আল হিন্দ হাসপাতাল থেকে আহতদের অন্যত্র ভর্তির ব্যবস্থা করে পুলিশ। এই নিয়ে হাইকোর্টে রিপোর্ট দিতে হবে দিল্লি পুলিশকে।তিনদিন পর এখও অগ্নিগর্ভ উত্তর-পূর্ব দিল্লি। মঙ্গলবার দিনভর রাস্তায় রাস্তায় চলে পাথরবৃষ্টি। আগুন লাগানো হয় দোকানপাট, গাড়ি, বাইকে।
পরিস্থিতি কোন দিকে যায় এ নিয়ে শংকিত সাধারন মানুষ।###