-- বিজ্ঞাপন ---

রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র কি ভারতের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আনছে ! পরিণতি কি তুরস্কের মত !

0

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: অবশেষে ভারতের পরিণতিও কি তুরস্কের মত হবে !  তুরস্কের উপর আরোপের পর সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসন ভারতকেও রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এস-৪০০ ক্রয় করা থেকে সরে আসতে চাপ দিতে শুরু করেছে।  রাশিয়ার কাছ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ করতে সক্ষম এই  এস-৪০০ প্রযুক্তি কিনতে  মরিয়া হয়ে কিনতে চায় ভারত। আমেরিকাকেও সেই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে দেশটি । ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন রাশিয়ার এই ক্ষেপণাস্ত্র ক্রয়  নিয়ে কথা  ট্রাম্প প্রশাসনকে ‍বুঝাতে। ভারতের এনডিটিভি ও অন্যান্য সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, গত ২ অক্টোবর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের যুক্তি মেনে নেবে। এনডিটিভি জানায়, এই মুহূর্তে ওয়াশিংটনে রয়েছেন এস জয়শঙ্কর। তাঁকে সেখানে এস-৪০০ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘ভারত সিদ্ধান্ত নিয়েছে এস-৪০০ কেনার ব্যাপারে এবং আমরা সেটা মার্কিন সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেছি।”এক রাশিয়ান সাংবাদিক তাঁর কাছে জানতে চান, কাটসা আইন অনুযায়ী আমেরিকা ভারতকে  এস-৪০০ কেনার অনুমতি দেবে কিনা। জয়প্রকাশ বলেন, ‘‘আমি আশা করব লোকেরা বুঝবে এই নির্দিষ্ট লেনদেন কেন আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।”

ভারতীয় পত্র -পত্রিকা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে ভারত ঘোষণা করে রাশিয়ায় তৈরি এস-৪০০ প্রযুক্তি কিনতে চায় তারা। ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য  এই প্রযুক্তি কিনতে ৫.৪৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে দু’দেশের মধ্যে। গত বছর যখন রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতি‌ন ভারতে আসেন সেই সময় এটি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। ট্রাম্প প্রশাসনের সিনিয়র কর্তারা ভারতকে হুঁশিয়ার করে জানিয়েছে, এই চুক্তি আমেরিকার ‘কাউন্টারিং আমেরিকাজ অ্যাডভারসারিজ থ্রো স্যাঙ্কশনস্ অ্যাক্ট’ (কাটসা) আইনের পরিপন্থী হতে পারে। রাশিয়া থেকে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা (এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমস) সংগ্রহ করায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তুরস্কের উপর। যেমনটি ধারণা করা হচ্ছিল, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত ১৭ জুলাই তুরস্কের উপর প্রথম নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেন। চুক্তি থাকা সত্বেও তুরস্ককে উচ্চ প্রযুক্তির ১০০টি  এফ-৩৫ লাইটনিং-২ স্টীলথ রাডার ফাঁকি দিতে সক্ষম জঙ্গী বোমারু বিমান দেয়া হবেনা। অথচ আংকারা শুরু থেকেই এ বিমান তৈরী প্রকল্পের অন্যতম শরিক দেশ। ইতিমধ্যেই প্রকল্পের পার্টনার দেশ হিসেবে ১৪০ কোটি ডলারও দিয়েছে দেশটি।

কাটসা আইন অনুযায়ী রাশিয়া, ইরান ও উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র এবং প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।এস-৪০০ সবচেয়ে উন্নত দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী প্রযুক্তি। ২০০৭ সালে এটা রাশিয়া তৈরি করে। এ  ক্ষেপণাস্ত্র  তৈরি করা হয়েছে, বিমান, জাহাজ ও ব্যালিস্টিক মিসাইল ধ্বংস করার জন্য। এর মধ্যে মাঝারি পাল্লার মিসাইলও রয়েছে। এটি ৪০০ কিলোমিটার দূর থেকে লক্ষ্যে হানা দিতে পারে।গত মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাশিয়ায় গেলে দুই দেশের মদ্যে আলোচনা শুরু হয় রাশিয়া সেনার প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ভারতে তৈরি করা শুরু করতে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন ইচ্ছা প্রকাশ করেন ভারত-রাশিয়া সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার হুমকি সত্ত্বেও রাশিয়ার কাছ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিনবে ভারত এবং এ বিষয়ে কাউকে জবাবদিহিও করবে না একথা অবশ্য ইতিমধ্যেই সাফ জানালেন ভারতের কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর । ওয়াশিংটন সফরে গিয়ে তিনি বলেন, ভারত আমেরিকার সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করলেও রাশিয়া থেকে এস-৪০০ কেনার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পূর্বাভাস দিতে নারাজ।  “আমরা যা কিনেছি – (সামরিক সরঞ্জাম এস-৪০০) – এটি আমাদের  সার্বভৌম অধিকার, এবং আমরা সর্বদা তা বজায় রেখেছি” মার্কিন বিদেশ সচিব মাইক পম্পেওর সঙ্গে বৈঠকের আগে সাংবাদিকদের বলেন সেদেশের কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রী। তিনি বলেন,”আমরা চাই না যে আমেরিকা আমাদের বলুক যে রাশিয়ার কাছ থেকে কোন অস্ত্র কেনা উচিত বা কোনটা কেনা উচিত নয় বা আমেরিকার থেকে কোনটা কেনা উচিত”। “পছন্দের সেই স্বাধীনতা আমাদের আছে এবং আমরা মনে করি এই স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয়া প্রত্যেকেরই স্বার্থে প্রয়োজন” বলেন এস জয়শঙ্কর।

ভারত গত বছর ৫.২ বিলিয়ন ডলার দিয়ে রাশিয়ার থেকে পাঁচটি এস -৪০০ সিস্টেম কিনতে সম্মত হয়েছিল এবং সেই অস্ত্র দেওয়ার প্রক্রিয়া অনেকটাই এগিয়েছে বলে জানিয়েছে রাশিয়া। গত জুনে ন্যাটোর মিত্র দেশ তুরস্ক এস -৪০০ ক্রয় নিয়ে অগ্রসর হওয়ায় মার্কিন রোষে পড়েছিল। জয়শঙ্কর আমেরিকার সঙ্গে সামগ্রিকভাবে উষ্ণ সম্পর্কের তারিফ করলেও ইরানের বিষয়ে ট্রাম্পের অবস্থানের সঙ্গে ভারতের পার্থক্যের বিষয়টিও তুলে ধরেছেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হুমকি দিয়েছে যে সমস্ত দেশকে ইরান থেকে তেল কেনা বন্ধ করতে বাধ্য করবে তাঁরা কারণ ইরান মধ্য প্রাচ্যে যেভাবে আধিপত্য বিস্তার করছে তা নিয়ন্ত্রণ করতে চায় আমেরিকা ।

মে মাসে, ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের তেল কেনার ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানীয় গ্রাহক ভারত সহ অন্যান্য দেশগুলির থেকে ঋণ মওকুফের সুবিধা কেড়ে নেয়।  এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার চুক্তিভুক্ত দেশ হচ্ছে ভারত। চুক্তি অনুযায়ী সেদেশে এ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা পৌঁছুতে বছর চারেক সময় লাগবে। ভারতের বিমান বাহিনী প্রধান বি এস ধানোয়া এস-৪০০-কে ‘গেম চেঞ্জার’ আখ্যা দিয়েছিলেন। এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র  প্রতিরোধ ব্যবস্থা হামলাকারী যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র বা ড্রোন চিহ্নিত করে তাকে পালটা ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে গুঁড়িয়ে দিতে সক্ষম। এর পাল্টা ৪০০ কিলোমিটার। অর্থাৎ্, ৪০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্য বস্তুতে আঘাত আনতে সক্ষম। যার অর্থ হল, পাকিস্তানের প্রায় সবক’টি বিমান ঘাঁটি, চীনের বেশ কয়েকটি বিমান ঘাঁটি ভারতের নাগালের মধ্যে চলে আসবে। ভারতীয় বিমানবাহিনী প্রধান বি এস ধানোয়া দীর্ঘ ও মধ্যম পাল্লার এই বিমান  প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাকে বিমান বাহিনীর শক্তি অনেক বাড়াবে বলে মন্তব্য করেছেন। এটি স্টিলথ বিমান ও আকাশে থাকা অন্য যেকোনো লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত হানতে পারবে বলে তিনি বলেন।

ভারতের প্রাক্তন এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) মনমোহন বাহাদুর বলেছেন, এটি হলো বিশ্বের সবচেয়ে বিধ্বংসী অস্ত্রব্যবস্থা। এটি ভিন্ন ভিন্ন চার স্তরের বিমান প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা করে।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে  । ২ অক্টোবর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের যুক্তি মেনে নেবে। ঠিক একইরকম বক্তব্য তুরস্কও দিয়েছিল তখন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র সেদেশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তবে ভারতের ব্যাপারে  যুক্তরাষ্ট্র কি ব্যবস্থা নিচ্ছে এর আগাম কোন আভাস মিলছেনা।

##শহীদ, ০২.১০.২০১৯

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.