সিরিয়া ইস্যুতে তুরস্ক-রাশিয়ার যুদ্ধবিরতির বিষয়টি সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণের জন্য জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে তোলা হলে এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় যুক্তরাষ্ট্র। ফলে সেটি আর সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়নি।
গত শুক্রবার নিরাপত্তা পরিষদের এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে এ ঘটনা ঘটে। যুক্তরাষ্ট্রের যুক্তি এই যুদ্ধবিরতি অপরিণত। পরে মার্কিন প্রতিনিধির সাথে সুর মেলান ব্রিটিশ প্রতিনিধি ক্যারেন পিয়ার্সও। তিনি বলেন, বাস্তবে এই যুদ্ধবিরতি কিভাবে কাজ করবে তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়ে গেছে। এ ছাড়া সেখানে কী ঘটছে তা কারা পর্যবেক্ষণ করবে?
বিভিন্ন কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ হয়েছে রাশিয়া। একই সাথে মস্কো সঙ্কেত দিয়েছে যে, ওয়াশিংটনের এই আচরণের প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানের মধ্যকার যুদ্ধবিরতিতেও সম্মতি দেবে না তারা। বৃহস্পতিবার সিরিয়া ইস্যুতে আলোচনায় বসেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। প্রায় তিন ঘণ্টা আলোচনা শেষে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হন তারা। এই যুদ্ধবিরতি গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকেই কার্যকর হয়। সিরিয়ায় যুদ্ধবিরতির ফলে রাশিয়া সমর্থিত বাহিনী ইদলিবে তুর্কি সমর্থিত বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত কিছু ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ পেয়েছে। রাশিয়া থেকে ফিরে এরদোগান বলেছেন, পুতিনের সাথে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ইদলিবে স্থিতিশীলতা ও বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা দেবে; অন্যথায় এসব মানুষ তুরস্কে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিতেন। যুদ্ধবিরতি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন নিয়ে এসেছে।
চুক্তি বাস্তবায়িত হলে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বাহিনীর অগ্রযাত্রা থেমে যাবে। তুরস্ক ও রাশিয়ার বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, সিরিয়ায় অতীতের যুদ্ধবিরতি চুক্তির মতো এটিও স্বল্পমেয়াদি হবে। জার্মান মার্শাল ফান্ডের ওজগুর আনলুহিসারসিকি বলেন, সিরীয় সেনাবাহিনী থেমেছে কিন্তু পিছু হটেনি। হয়ত এটিই তুরস্কের বড় হার। তুরস্ক ও রাশিয়ার মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি চূড়ান্ত নয়, এটি সাময়িক। আসন্ন দিনে যেকোনো সময় আবার সংঘর্ষ শুরু হতে পারে। নাগরিকদের জায়গা থেকে দেখলে এই দু’টি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ সীমানা ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে কেন ভাববে তুর্কি নাগরিকরা? এটি তাদের ভাবনার বিষয় নয়।
আসাদ বাহিনীর এই অভিযানের লক্ষ্য ছিল ইদলিব দিয়ে যেসব মহাসড়ক গেছে সেগুলোর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয়া। এসব মহাসড়কের মাধ্যমে আলেপ্পোসহ গুরুত্বপূর্ণ শহরের সাথে রাজধানী দামেস্কের যোগাযোগ গড়ে উঠেছে। পুতিন সমর্থক সাবেক এক আইনপ্রণেতা সের্গেই মারকভ বলেন, এই চুক্তি অপ্রত্যাশিতভাবে রাশিয়া ও সিরিয়ার পক্ষে গেছে। যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়া জয়ী হওয়ার কারণে কূটনৈতিক ক্ষেত্রে জয় আসছে। সূত্র : ডেইলি সাবাহ