--- বিজ্ঞাপন ---

দেশের মানুষ কারাগারে আবদ্ধ : মির্জা ফখরুল

0

নিউজ ডেস্ক: গণতন্ত্রকে বিসর্জন দিয়ে ক্ষমতাসীন সরকার একদলীয় শাসন ব্যবস্থা পুনরায় প্রবর্তনের চক্রান্ত করছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এ রাষ্ট্র থেকে গণতন্ত্রকে চিরতরে বিসর্জন দিয়ে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালুর আয়োজন প্রায় সম্পন্ন হয়ে গেছে। এখন বাংলাদেশের মানুষ পুরোপুরি একটা কারাগারে আবদ্ধ রয়েছে। বুধবার বিকেলে এক আলোচনা সভায় দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, আজকে দেশে যে সঙ্কট তা শুধু বিএনপির নয়, এটা জাতির সঙ্কট, রাষ্ট্রের সঙ্কট।

নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে, সরকারের এ ষড়যন্ত্রকে রুখে দিতে হবে। গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের আন্দোলনে নামতে হবে। গণবিচ্ছিন্ন হয়ে কখনো কোনো আন্দোলন সফল হয় না, হবে না। জনগণকে সম্পৃক্ত করার জন্য আমাদেরকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে খুব আশাবাদী মানুষ। আমি মনে করি, কখনো অন্যায়ের কাছে ন্যায়ের পরাজয় হতে পারে না। যেটা হয় সেটা সাময়িক হতে পারে। ন্যায়ের জয়, সত্যের জয় অবশ্যই হবে।

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাজা বাতিল ও নি:শর্ত মুক্তি এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সাজা বাতিল, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও সাবেক ছাত্র নেতৃবৃন্দের মুক্তি দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের নিচতলার মিলনায়তনে এ সমাবেশ হয়। ‘৯০’র ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য’ এ সমাবেশের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের শুরুতে বিএনপি ও বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নিহত নেতাকর্মীদের স্মরণে বিশেষ মুনাজাত করা হয়।

ডাকসুর সাবেক ভিপি আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও বিএনপি নেতা এবিএম মোশারফ হোসেনের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা শহীদউদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, কামরুজ্জামান রতন, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, নব্বই দশকের ছাত্রনেতা সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, লুৎফর রহমান, আসাদুর রহমান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভুইয়া জুয়েল, ছাত্রদলের এজমল হোসেন পাইলট সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। সমাবেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ড. আসাদুজ্জামান রিপন, মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল খান, তকদির হোসেন মোহাম্মদ জসিম, ছাত্রদলের ইখতিয়ার রহমান কবির, জহিরুল ইসলাম বিপ্লব, আসাদুজ্জামান আসাদ, বায়েজীদ আরেফিন, আব্দুর রহিম, রাজীব আহসান পাপ্পু সহ কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপি পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে: মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সঠিকভাবেই আমাদের অঙ্গসংগঠনগুলো পুনর্গঠনের ও সক্রিয় করার কাজ শুরু করেছেন। বিএনপির সাংগঠনিক জেলাগুলোকে সক্রিয় করার কাজ শুরু করেছেন। আমার বিশ্বাস, অতি অল্প সময়ের মধ্যেই বিএনপি আবার নিজের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম হবে। অনেক ঝড় গেছে, অনেক সমস্যার মধ্যেও বিএনপি সবসময় উঠে দাঁড়িয়েছে ।

তিনি বলেন, অনেকে হতাশায় ভোগেন। হতাশায় ভুগলে বিজয় অর্জন করা সম্ভব নয়। বিএনপি এ দেশের জনগণের জন্য রাজনীতি করে। এদেশের মানুষ হচ্ছে বিএনপির সবচেয়ে বড় শক্তি। এ শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে, অতীতে আমরা তা লাগিয়েছি। কুচক্রীরা বার বার বিএনপিকে ভেঙে ফেলতে চেয়েছে, নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছে কিন্তু বিএনপি ঠিকই উঠে দাঁড়িয়েছে সমস্ত বাঁধা-বিপত্তি অতিক্রম করে। আমরা বিশ্বাস করি, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে, গণতন্ত্রকে মুক্ত করে, বিএনপি আবার উঠে দাঁড়াতে সক্ষম হবে। দেশনেত্রীর মুক্তিই আমাদের কাছে প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য। তার মুক্তির জন্য আমাদেরকে সংগঠিত হয়ে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এগুতে হবে। তার মুক্তি হলে তখন গণতন্ত্রেরও মুক্তি হবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমাদেরকে দুর্বার আন্দোলনে যেতে হবে।

‘মিডিয়া নিয়ন্ত্রিত’: মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, আমাদের মিডিয়া এখন নিয়ন্ত্রিত। আপনারা লক্ষ্য করে দেখবেন, এখানে বিরোধী দলের খবর এখন সবচেয়ে কম ছাপা হয়-তৃতীয় কিংবা চতুর্থ পৃষ্ঠায়। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় কয়েক সেকেন্ড খবর দেয়া হয়। কারণটা কী? মিডিয়া হচ্ছে একটা বড় মাধ্যম, যে মাধ্যমে জনগণের কাছে পৌঁছানো যায়। সে কারণে এ সরকারের অপচেষ্টা হচ্ছে, জনগণকে বিভ্রান্ত করে, যারা জনগণের শক্তি নিয়ে এগুতে চায় তাদেরকে বিভ্রান্ত করা।

আমাদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্ট করার চেষ্টা করা হচ্ছে বিভিন্নভাবে। আমাদের দলের ত্যাগী-লড়াকু সৈনিকদেরকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা হচ্ছে। আমাদের উচিত হবে, এসমস্ত বিভ্রান্তিতে না পড়ে, দল ঐক্যবদ্ধ থেকে যাতে যে কোনো লড়াইয়ে অংশ নিতে পারে সেজন্য নিজেকে তৈরি করা। অতীতে আমরা দেখেছি, জনগণের শক্তির কাছে কোনো শক্তি জয়ী হতে পারে না, সম্ভব নয়। আমাদেরকে জনগণের ওপরই নির্ভর করতে হবে, তাদের কাছেই যেতে হবে এবং তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের এই অপশক্তিকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে।

বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি করে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান বলেন, দেশনেত্রীর মুক্তির জন্য প্রয়োজনে আমরা স্বেচ্ছায় কারাবরণ করবো। হয় আমরা বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবো নাহলে আমরা সকলে জেলে থাকব-এটাই আজ আমাদের শপথ হোক। কারাগারে দীর্ঘদিন আটক আবদুস সালাম পিন্টু, লুৎফুজ্জামান বাবর, গিয়াস কাদের চৌধুরী, আসলাম চৌধুরী, হাবিব উন নবী খান সোহেল, ফজলুল হক মিলন, মীর সরফত আলী সপু, শহিদুল ইসলাম বাবুল, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ইসহাক সরকার, মামুনুর রশীদসহ সকল নেতা-কর্মীর মুক্তির দাবিও জানান তিনি।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.