--- বিজ্ঞাপন ---

ব্রুনাইয়ের সঙ্গে ৬ সমঝোতা সই

0

নিউজ ডেস্ক: দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার বিশেষ করে এলএনজি ও এলপিজি সরবরাহসহ ৬টি বিষয়ে ব্রুনাই দারুস সালামের সঙ্গে পৃথক সমঝোতা স্মারক সই এবং একটি নোট বিনিময় করেছে বাংলাদেশ। দেশটিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বিপক্ষীয় সফরে গতকাল ওই চুক্তিগুলো সই হয়। বাংলাদেশের সরকার প্রধান দেশটির সুলতানসহ বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক করেন। সেখানে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। আসিয়ান জোটের প্রভাবশালী সদস্য ব্রুনাই ওই জোটের অন্যতম শরিক মিয়ানমারের ওপর তাদের বাস্তুচ্যুত
নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে চাপ তৈরি করতে পারে বলে মনে করে ঢাকা। অবশ্য ব্রুনাই’র সুলতান তার গুড অফিস ব্যবহারের আশ্বাস দিয়েছেন। মিয়ানমারে নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিজভূমে ফেরত পাঠাতে ‘সব ধরনের উদ্যোগ’ নেয়া উচিৎ বলে মনে করেন ব্রুনাই’র সুলতান হাজি হাসানাল বলকিয়া।
দেশটির রাজধানী বন্দর সেরি বেগওয়ানে গতকাল সোমবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে সুলতান বলকিয়ার এই অভিমত ব্যক্ত করেন।

সুলতানের বাসভবন ইস্তানা নুরুল ইমানের চেরাদি লায়লা কেনচানায় ওই বৈঠক হয়। পরে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক গণমাধ্যমকে ব্রিফ করেন। সচিব বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে সুলতান অনেক কথা বলেছেন। তিনি যে বিষয়টিতে জোর দিয়েছেন তা হলো- সবাই মিলে একটা সমাধানে পৌঁছানো উচিৎ। সচিব বলেন, সুলতান মনে করেন আমাদের সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া উচিৎ, যাতে বাস্তুচ্যুতরা ফিরে যেতে পারে। শহীদুল হক বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা ইস্যুতে আসিয়ানের বড় ইনভলভমেন্ট চেয়েছেন। তিনি এ ব্যাপারে ব্রুনাই’র সুলতানের সহযোগিতা কামনা করেছেন। সচিব বলেন, সুলতানও রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে আসিয়ানের ইনভলভমেন্টের কথা বলেছেন আসিয়ান হিউম্যানেটেরিয়ান সেন্টারের কনটেক্সটে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ‘শক্তিশালী’ করার ব্যাপারে ব্রুনাই সবসময় সহায়তা করে যাবে- এমন আশ্বাস সুলতানের তরফে পাওয়া গেছে বলেও জানান পররাষ্ট্র সচিব।
এদিকে সমঝোতা সই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, প্রাণি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ উপস্থিত ছিলেন।
নতুন আঞ্চলিক অর্থনৈতিক জোট গঠনের প্রস্তাব: এদিকে বাংলাদেশ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সদস্য পাঁচটি দেশের সমন্বয়ে নতুন আঞ্চলিক অর্থনৈতিক জোট গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে। ব্রুনাই’র সুলতান হাজী হাসানাল বলকিয়ার সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রস্তাব দেন বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব। শহীদুল হক বলেন, প্রস্তাবিত আঞ্চলিক অর্থনৈতিক ফোরাম দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (সিয়াকো) এর সদস্য হবে দক্ষিণ এশিয়া থেকে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও ব্রুনাই। পররাষ্ট্র সচিব জানান, প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে ব্রুনাইয়ের সুলতান আশ্বস্ত করেন যে, তিনি বিষয়টি ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করবেন। ব্রিফিংকালে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম ও বক্তৃতা লেখক নজরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, সুলতানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর আলোচনায় রোহিঙ্গা সংকটসহ দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ ও আন্তর্জাতিক উদ্বেগ সংক্রান্ত বিষয়গুলো স্থান পায়। মিস্টার হক বলেন, বাংলাদেশ ও ব্রুনাইয়ের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও সহযোগিতা আরও জোরদার করার জন্য প্রধানমন্ত্রী আরও কিছু প্রস্তাব করেছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ব্যবসায়ী সমপ্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং এ লক্ষ্যে একটি অগ্রাধিকার বাণিজ্য ব্যবস্থার সম্ভাব্যতা যাচাই করার প্রস্তাবও দিয়েছেন। শেখ হাসিনা দু’দেশের মধ্যে যৌথ কমিশন গঠনের বিষয়ে আলোচনার প্রস্তাব করেন। তিনি পাট ও পাটজাত পণ্য, সফটওয়্যার, কৃষি পণ্য, সিরামিক ও টেবিলওয়্যার, জাহাজ নির্মাণ শিল্প ও পর্যটন ক্ষেত্রে সহযোগিতার উপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার শিল্প পার্ক স্থাপন করছে যেখানে ব্রুনাইয়ের উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করতে পারে।
তিনি দ্বৈত কর পরিহার করার পাশাপাশি পারস্পরিক প্রচার এবং বিনিয়োগের সুরক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। দুই দেশের বিদ্যমান সম্পর্ক সমপ্রসারণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এই সফর মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেন সুলতান। পররাষ্ট্র সচিব জানান, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি বিমান যোগাযোগ চালুর বিষয়টি দুই নেতার কথাতেই এসেছে। প্রবাসী শ্রমিকদের ব্যাপারে একটি ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ করার প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। নন-উইপেন রিলেটেড অঞ্চলে সামরিক সহযোগিতার বিষয়ও আলোচনায় এসেছে। যার মধ্যে ছিল হিউম্যানিটি, অপারেশন্স, নলেজ শেয়ারিং। সুলতান শান্তি মিশনে বাংলাদেশের অবদানের বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী ব্রুনাইয়ের সুলতান ও তার স্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানালে সুলতান তা গ্রহণ করেন বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব। রোববার ব্রুনাই পৌঁছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। পরে বাংলাদেশ হাই কমিশনারের দেয়া নৈশভোজে অংশ নেন। আজ মঙ্গলবার সকালে ব্রুনাইয়ের রাজধানীর কূটনৈতিক এলাকা জালান কেবাংসানে বাংলাদেশ হাই কমিশনের নতুন চ্যান্সেরি ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন শেখ হাসিনা। পরে তিনি রয়েল রেজালিয়া জাদুঘর পরিদর্শন করবেন। সেদিন স্থানীয় সময় বিকাল ৫টায় ঢাকার উদ্দেশে ব্রুনাই ছাড়বেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যায় তার ঢাকা পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
ব্যবসায়ীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে অভিন্ন যাত্রায় বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সমপ্রদায়ের সঙ্গে একটি অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার জন্য ব্রুনাইয়ের ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সোমবার বিকেলে হোটেল এম্পায়ার এন্ড কান্ট্রি ক্লাবে আয়োজিত বাংলাদেশ-ব্রুনাই বিজনেস ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে অভিন্ন যাত্রায় আমাদের ব্যবসায়ী সমপ্রদায়ের সঙ্গে একটি অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার জন্য আপনাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। বাংলাদেশে উন্নয়ন ও ব্যবসায়িক সুযোগ-সুবিধার বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্যও আপনাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যয়, মানব সম্পদ, অভ্যন্তরীণ বাজারের আকার, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশাধিকার, বাণিজ্য সুবিধা, বিনিয়োগ সুরক্ষা এবং সামাজিক-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রেক্ষাপটে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক স্থান হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে উদার বৈদেশিক বিনিয়োগ সুবিধাগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এসব সুবিধাগুলোর মধ্যে রয়েছে আইন দ্বারা বিদেশী বিনিয়োগের সুরক্ষা, উদার কর নীতি এবং যন্ত্রপাতি আমদানির ওপর সুবিধাজনক শুল্ক ব্যবস্থা। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ১০০% বৈদেশিক ইক্যুইটি, অবাধ প্রস্থান, লভ্যাংশ ও মূলধন পূর্ণ প্রত্যর্পণ সুবিধা প্রদান করে। তিনি বলেন, ‘আমরা ইইউ, কানাডা ও জাপানসহ অধিকাংশ বিশ্ব বাজারে অগ্রাধিকার প্রবেশ সুবিধা ভোগ করি। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিায়ায় বাংলাদেশ এখন দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি এবং জিডিপির পরিপ্রেক্ষিতে অবস্থান বিশ্বে ৪১ তম। তিনি বলেন, আমাদের অর্থনীতি একটি সুদৃঢ় সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, গতিশীল বেসরকারী খাত এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান প্রবণতা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.