--- বিজ্ঞাপন ---

শোকে স্তব্ধ শ্রীলঙ্কা, নিহত বেড়ে ৩২১

0

নিউজ ডেস্ক: প্রাণঘাতী সিরিজ বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩২১ জনে পৌঁছেছে। ইতিমধ্যেই গতকাল নিহতদের প্রথম দফার গণঅন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে । নেগাম্বোতে অবস্থিত সেইন্ট সেবাস্তিয়ান গির্জায় চোখের জলে নিহতদের শেষ বিদায় জানিয়েছেন শোকাতুর স্বজনেরা। এদিকে, রোববারের হামলার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গোয়েন্দা সংস্থা সাইট ইন্টেলিজেন্স বলছে, নিজেদের ওয়েবসাইটে আইএস দু’দিন আগের হামলায় তাদের সম্পৃক্ততার কথা জানিয়েছে। তবে নিজেদের দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ হাজির করেনি তারা। এর আগে শ্রীলঙ্কান প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুয়ান বিজেবর্ধনে দাবি করেন, নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে গত মাসে চালানো হত্যাযজ্ঞের প্রতিশোধ নিতেই শ্রীলঙ্কার চার্চে সিরিজ বোমা হামলা চালানো হয়েছে। পার্লামেন্টে তিনি এই বক্তৃতা দেয়ার খানিক বাদেই আইএসের দায় স্বীকার করার খবর পাওয়া যায়। তবে এর আগে বলা হচ্ছিল, হামলার সঙ্গে স্থানীয় কয়েকটি উগ্রপন্থি দল জড়িত।
ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, গতকাল পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৩২১ জনে পৌঁছেছে। এ ছাড়া আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন আরো প্রায় ৫০০ জন। এদের মধ্যে অনেকের অবস্থাই গুরুতর। গতকাল নগোম্বোতে অবস্থিত সেইন্ট সেবাস্তিয়ান গির্জায় নিহতদের প্রথম দফা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া, গতকাল জাতীয় শোক দিবস পালন করে শ্রীলঙ্কা। নতুন করে হামলার আশঙ্কায় জারি করা জরুরি অবস্থাও বহাল রয়েছে।
এর আগে, রোববারের হামলার জন্য স্থানীয় ন্যাশনাল তৌহিদ জামায়াতকে (এনটিজে) দায়ী করেছিল সরকার। তবে এই গ্রুপটির বড় কোনো হামলা চালানোর ইতিহাস নেই। গত বছর তারা বৌদ্ধ মূর্তি ভাঙচুর করেছিল এতটুকুই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল। বিভিন্ন গণমাধ্যমে তাদের হামলার দায় স্বীকারের কথাও প্রচার করা হয়েছে। একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, মঙ্গলবার পর্যন্ত হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আটক করা হয়েছে অন্তত ৪০ জনকে। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে একজন সিরীয় নাগরিকও রয়েছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
রোববার কলম্বোর উত্তরে নেগোম্বোতে অবস্থিত সেইন্ট সেবাস্তিয়ান গির্জায় বোমা হামলা হয়। সেখানেই  গতকাল নিহতদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। হামলার সময়ের সঙ্গে মিল রেখে স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে গতকাল ৩ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এ সময় জাতীয় পতাকা ছিল অর্ধনমিত। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারীরা নীরবতা পালন করার সময় মাথা নিচু করে শ্রদ্ধা জানান নিহত ও আহতদের প্রতি।
বার্তা সংস্থা এএফপি’র খবরে বলা হয়, রোববারের হামলার পেছনে দেশের অভ্যন্তরীণ দুইটি ইসলামপন্থি সংগঠন দায়ী বলে ধারণা তদন্তকারীদের। তারা হলো ন্যাশনাল তাওহিদ জামায়াত (এনটিজে) ও জামা’আতুল মুজাহিদীন ইন্ডিয়া (জেএমআই)। দ্বিতীয় সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয় গত বছর। এটি খুব কম পরিচিত সংগঠন।
এ ছাড়া, সন্দেহভাজনদেরকে আদালতের নির্দেশ ছাড়াই গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দেশটির পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এর আগে গৃহযুদ্ধের সময় এমন ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল তাদেরকে। অন্যদিকে, আগে থেকে সতর্কতা থাকা সত্ত্বেও কেন হামলা থামাতে ব্যর্থ হয়েছে দেশটি তা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। তোলপাড় চলছে সরকারে। বিষয়টি পুলিশ প্রধান পুজুথ শীর্ষ কর্মকর্তাদের জানালেও তা প্রধানমন্ত্রী রণিল বিক্রমাসিংহ বা মন্ত্রিপরিষদকে জানানো হয় নি বলে অভিযোগ। কিন্তু কেন? এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদের মুখপাত্র রজিথা সেনারত্নে। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী রণিল বিক্রমাসিংহে ও প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনার মধ্যে বিরোধ আছে। এ জন্যই হয়তো রণিল বিক্রমাসিংহকে নিরাপত্তার বিষয়ে ব্রিফিং করা হয় নি। বিষয়টি তদন্তে সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারকের নেতৃত্বে বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
শোকে স্তব্ধ শ্রীলঙ্কা
নজিরবিহীনভাবে এত বিপুল সংখ্যক মানুষ নিহত হওয়ায় শোকে স্তব্ধ হয়ে আছে গোটা শ্রীলঙ্কা। কাঁদছে পুরো দেশ। ওদিকে পুলিশ প্রধানের সতর্কতা সত্ত্বেও হামলা বন্ধ করতে ব্যর্থতার জন্য ক্ষমা চেয়েছে দেশটির সরকার। মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রী রণিল বিক্রমাসিংহে টুইট করে জানিয়েছেন, ইস্টার সানডে’তে নিরপরাধ এত মানুষের কাণ্ডজ্ঞানহীন প্রাণহানিতে জাতি হিসেবে আমরা শোক প্রকাশ করছি। এতে তিনি শ্রীলঙ্কার জরুরি বিভাগ ও নিরাপত্তা রক্ষীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন দ্রুত সেবায় এগিয়ে আসার জন্য। রোববার ইস্টার সানডে’র প্রার্থনার সময় তিনটি গির্জা, তিনটি বিলাসবহুল হোটেল ও অন্য দুটি স্থানে ভয়াবহ বোমা হামলা চালানো হয়। এ খবর দিয়েছে অনলাইন সিএনএন।
সোমবার সরকার স্বীকার করে তারা আগে থেকে সতর্কতা থাকা সত্ত্বেও ব্যর্থ হয়েছে। তাদের দাবি এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী একটি গ্রুপ জড়িত থাকতে পারে। মুখপাত্র রাজিথা সিনারত্নে বলেছেন, হামলার আগেই সরকার সতর্কতা পেয়েছিল। এর মধ্যে একটি সতর্কতায় ন্যাশনাল তাওহীদ জামা’আতের (এনটিজে) কথা বলা হয়েছিল। রজিথা সেনারত্নে একই সঙ্গে দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রীও। তিনি বিশ্বাস করেন না যে, স্থানীয় একটি গ্রুপ একা এই হামলা চালিয়েছে। তার ভাষায়, এর সঙ্গে বিস্তৃত আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক আছে। ওদিকে শ্রীলঙ্কার সামরিক মুখপাত্র সুমিত আতাপাত্তু বলেছেন, বোমা হামলায় জড়িত ৬ আত্মঘাতী। জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার করা ২৪ জনের মধ্যে ৯ জনকে ৬ই মে পর্যন্ত রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া, রাজধানী কলম্বোর প্রধান বাসস্টেশনের বেসরকারি টার্মিনাল থেকে পুলিশ ৮৭টি ডেটোনেটর উদ্ধার করেছে। রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর বন্দরনায়েকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে একটি বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.