--- বিজ্ঞাপন ---

যেভাবে সহজেই বিদেশে পড়াশোনার সুযোগ পেতে পারেন-

0

আমিনুল ইসলাম : এক ছেলে গতকাল আমাকে টেক্সট করে লিখেছে, স্যার, আমার সিজিপিএ খুব একটা ভালো না। এই বছরেই পড়াশোনা শেষ হবে। আমার খুব ইচ্ছে ছিল বিদেশে পড়তে যাওয়ার। জিপিএ ভালো না হওয়ায় মনে হয় বিদেশে পড়তে যাওয়ার স্বপ্ন আর পূরণ হবে না।

প্রতিদিন অনেক মেসেজ আমি ফেসবুকে পাই। এর একটা বিশাল অংশ জানতে চায়, কিভাবে বিদেশে পড়তে যাওয়া যেতে পারে। জানতে চাওয়া মোটেই দোষের কিছু না। তাছাড়া আমি যেহেতু বিদেশে থাকি এবং বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াই তাই জানতে চাইতেই পারে। তবে বলতেই হচ্ছে, আপনার যদি বিদেশে পড়াশোনা করার ইচ্ছে থাকে, তাহলে কারো কাছ থেকে জানতে চাওয়াটা স্রেফ বোকামি! এর কারণ হচ্ছে আপনি যেই প্রশ্নগুলো করছেন, এর উত্তর আমাকেও ইন্টারনেট ঘেঁটেই বের করতে হবে।

আমি নিজে ১৪ বছর আগে যখন পড়তে আসি, তখনতো ইন্টারনেট দেশে সেই অর্থে ছিলই না। তখনওতো আমরা ইন্টারনেট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে বিদেশে এসেছিলাম পড়তে। আর এখনতো ইন্টারনেট সবার হাতে হাতে!

এর আগে এই নিয়ে একটা লেখা লিখেছিলাম। আজ আবার লেখা যাক। যাদের এই বিষয়ে তথ্য জানার আছে, তারা এই লেখাটা সংগ্রহে রাখতে পারেন কিংবা আপনাদের অন্যান্য বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গেও শেয়ার করতে পারেন।

বিদেশে পড়তে আসা খুব সহজ বিষয়। ধরুণ, আপনি ছয় মাস কিংবা এক বছর পর বিদেশে পড়তে যেতে চাইছেন। প্রথম স্টেপ হচ্ছে- আপনাকে প্রতিদিন বেশ কিছু সময় ইন্টারনেট ঘাঁটতে হবে। ইন্টারনেটে আপনি কি তথ্য জানতে চাইবেন? শুরু করবেন গুগল সার্চ দিয়ে। ধরুণ, আপনি আমেরিকায় পড়তে যেতে চাইছেন কিংবা ইংল্যান্ড, সুইডেন বা জার্মানি।

এখন আপনার কাজ হচ্ছে গুগলে সার্চ দিয়ে এইসব দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ করা। জগতের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে তাদের ভর্তির তথ্য দেয়া থাকে এবং আবেদন অনলাইনেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে করা যায়।

এখন আপনি যেই তথ্যগুলো নেবেন, সেটা হচ্ছে- ওই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হতে কিংবা স্কলারশিপ পেতে কি কি যোগ্যতা লাগে। দেখবেন বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আলাদা একটা সেকশন থাকে, যেখানে লেখা থাকবে- ইংলিশ রিকয়ারমেন্ট। অর্থাৎ আপনাকে ইংলিশ টেস্ট স্কোর কত পেতে হবে। এছাড়া আপনার সিজিপিএ কত থাকা উচিত ইত্যাদি। অনেক ক্ষেত্রে সিজিপিএ চায়ও না!

অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়তো দেখবেন অনেক বেশি ইংলিশ টেস্ট স্কোর চাইছে, অনেক জায়গায় হয়তো আপনার যেই যোগ্যতা তাতেই হয়ে যাবে, আবার এমন বিশ্ববিদ্যালয়ও পাওয়া যেতে পারে, যেখানে হয়তো টেস্ট না দিলেও চলছে! এই তথ্যগুলো জানার জন্য আপনাকে যেটা করতে হবে- প্রতিদিন এভাবে ১০-১৫টা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ঘাঁটতে হবে। এভাবে ওয়েবসাইট ঘাঁটতে ঘাঁটতে একটা সময় আপনি আবিষ্কার করবেন- আপনার যোগ্যতা অনুযায়ী আসলে কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনি আবেদন করতে পারবেন।

কিংবা ধরুণ, আপনার ভালো ইংলিশ টেস্ট স্কোর নেই, কিন্তু আপনি সেই বিশ্ববিদ্যালয় পড়তে যেতে চাইছেন, যেখানে ভালো স্কোর চাইছে; তাহলে সেই অনুযায়ী নিজেকে প্রস্তুত করুন।
যখন আপনি দেখবেন ওদের ওয়েবসাইটে দেয়া যেসকল যোগ্যতাগুলো দরকার সেগুলোর সঙ্গে মিলে যাচ্ছে, তখন আপনি আবেদন করবেন। সেখানে দেখবেন দেয়া আছে আবেদন করার শেষ সময় কবে কিংবা ঠিক কবে থেকে আবেদন করা যাবে। এইতো এভাবে অনলাইনে আবেদন করে ফেলবেন, সেই সঙ্গে আপনার সব সার্টিফিকেটগুলো আপলোড করে দেবেন। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় হয়তো আপনাকে বলবে- কাগজগুলোর হার্ড কপি পাঠাতে, সেই ক্ষেত্রে বাই-পোস্টে পাঠিয়ে দেবেন।

আর আপনি যদি স্কলারশিপের জন্যও আবেদন করতে চান, সেক্ষেত্রে ওরা হয়তো আলাদা একটা মোটিভেশন লেটার চাইবে- ঠিক কেন আপনি মনে করছেন, আপনাকে স্কলারশিপ দেয়া উচিত ইত্যাদি। সেটাও লিখে পাঠিয়ে দিতে পারেন। এরপর অপেক্ষার পালা। মাস খানেক বা মাস দুয়েক পরে ওরা আপনাকে ইমেইল করে জানাবে, আপনি এডমিশন পেয়েছেন কিনা। এডমিশন যদি পান, তাহলে ওরা এডমিশন লেটার পাঠিয়ে দেবে। সেই সঙ্গে আপনাকে বলবে ভিসার আবেদন করতে। সেটাও ওরা আপনাকে মেইলে জানাবে।

ভিসার আবেদন করা মোটেই কঠিন কিছু না। ধরুণ, আপনি সুইডেনের কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এডমিশন পেয়েছেন। এখন আপনাকে ভিসা কিংবা রেসিডেন্স পারমিটের জন্য আবেদন করতে হবে। যেই বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনি চান্স পেয়েছেন, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটেই দেখবেন আলাদা করে একটা লিঙ্ক দেয়া আছে, সেই দেশের মাইগ্রেসন বোর্ডের। তো সেখান থেকে আপনি জেনে নিতে পারবেন কিভাবে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।

তাছাড়া আপনি বাংলাদেশের সুইডিশ অ্যাম্বাসিতেও যোগাযোগ করতে পারেন। ওরা বসেই আছে-আপনাকে তথ্য দেয়ার জন্য। প্রতি সপ্তাহে আলাদা এক বা দুই দিন থাকে, যেখানে আপনি গিয়ে সব তথ্য জেনে আসতে পারবেন। শুধু সুইডেন না, অন্য যে কোনো দেশের দূতাবাসের ক্ষেত্রেই সেটা প্রযোজ্য। অ্যাম্বাসি মানেই ভয়ের কিছু না! এরা বসেই আছে আপনাকে তথ্য দেয়ার জন্য কিংবা ভিসা দেয়ার জন্য। আপনাকে স্রেফ নিয়ম মেনে এগুতে হবে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আপনি যদি ছাত্র হিসেবে বিদেশে পড়তে যেতে চান- আপনার এডমিশন লেটার, যদি স্কলারশিপ পান, সেটার সিদ্ধান্ত আর একাডেমিক কাগজপত্র। আর যদি স্কলারশিপ না পান, তাহলে টিউশন ফি পে করে থাকলে সেটার স্লিপ কিংবা কিভাবে ফি পে করবেন তার একটা ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখাতে হয়। এইতো হয়ে গেল বিদেশে পড়তে যাওয়া। এর জন্যতো আপনাকে অন্য কারো কাছে মেসেজ পাঠানোর দরকার নেই।

এইবার আসি- যেই ছেলেটা আমাকে জিজ্ঞেস করেছে তার সিজিপিএ কম, এখন কি সে বিদেশে পড়তে যেতে পারবে কিনা?

একটা কথা এখানে বলে রাখা ভালো- আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি স্কলারশিপ না নিয়ে বিদেশে পড়তে যাওয়া একদম উচিত না, যদি না আপনি বিশাল ধনী পরিবারের সন্তান হয়ে থাকেন। নইলে দেখা যায় অনেক সময়ই বিদেশে এসে আর পড়াশোনা হয় না, কাজে-কর্মে লেগে যেতে হয়।

তাই স্কালারশিপ পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। আর সেই ক্ষেত্রে অবশ্যই ভালো রেজাল্ট থাকা উচিত। তবে ভালো রেজাল্ট না থাকলেই যে স্কলারশিপ পাওয়া যায় না, ব্যাপারটা কিন্তু এমনও না। অনেক সময় আপনার মোটিভেশন লেটার কিংবা আপনার এপ্রোচের কারণেও হয়ে যেতে পারে। এছাড়া যেমনটা বলছিলাম- যে যত বেশি ইন্টারনেট ঘাটবে এবং নানা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তথ্য নিবে, তার চান্স তত বেশি।

জগতে অনেক অনেক দেশ যেমন আছে, তেমনি হাজার হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ও আছে। আপনার কাজ হচ্ছে জাস্ট প্রতিদিন ইচ্ছে মত নানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা এবং কোন কিছু না বুঝলে তাদেরকে মেইল দিয়ে বসা।

আর যদি মনে করেন স্কলারশিপ ছাড়াই বিদেশে পড়তে আসবেন, তাহলে জগতে এমন অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আছে যেখানে টিউশন ফি দিয়ে পড়তে যাওয়া যায়। সেই ক্ষেত্রে চান্স পাওয়া খুব কঠিন কিছু হওয়ার কথা না। ভর্তি হওয়ার নিয়মটা সেই একই।

সবশেষে একটা ব্যাপার বলি, এটা একান্তই আমার নিজের ধারণা- আপনার রেজাল্ট কেমন, আপনার ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ টেস্ট স্কোর কেমন এর চাইতেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে- আপনি কি পরিমাণ তথ্য ওয়েবসাইট ঘেঁটে জানছেন। ঘাঁটতে ঘাঁটতে হয়তো এমন একটা দেশ বা বিশ্ববিদ্যালয় পেয়ে যাবেন- যেখানে সব কিছু মিলে যাচ্ছে।

আমার সব সময়ই মনে হয়- আপনার যদি ইচ্ছে থাকে এবং ওয়েবসাইট ঘেঁটে ইংরেজিতে তথ্য সংগ্রহ করার এবং সেটা বোঝার সামর্থ্য থাকে, আপনি দিনশেষে বিদেশে পড়তে যেতে পারবেনই।

আর আপনার যদি ইন্টারনেট ঘেঁটে তথ্য সংগ্রহ করার সামর্থ্য না থাকে, আপনি যদি এর-ওর কাছে জিজ্ঞেস করেন, তাহলে বুঝে নিতে হবে আপনার আসলে বিদেশে পড়ার সামর্থ্য নেই কিংবা শেষ পর্যন্ত বিদেশে চলে আসলেও আপনি পড়াশোনা শেষ করতে পারবেন না কিংবা ভালো কিছু করতে পারবেন না।

ইনফরমেশনের এই যুগে আপনার দরকার স্রেফ একটা কম্পিউটার কিংবা মোবাইল। সেটা হলে বাংলাদেশের অজ-পাড়াগাঁয়ে বসে থেকেও আপনি ইউরোপ-আমেরিকায় চলে আসতে পারবেন।

এর সব কিছুই নির্ভর করছে আপনি কি পরিমাণ সময় দিচ্ছেন তথ্য সংগ্রহ করতে এবং সংগৃহীত তথ্য গুলোকে আপনি কিভাবে কাজে লাগাচ্ছেন। যারা ঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারে- তারাই দিন শেষে সফল হয়।

আপনাদের জানিয়ে রাখি, দেশে ভালো রেজাল্টধারী এমন অনেকে আছে যারা বছরের পর বছর চাইছে বিদেশে পড়তে যেতে, কিন্তু পারছে না। আবার খুব সাধারণ রেজাল্টধারী অনেকে পাশ করেই বিদেশে পড়তে চলে আসছে। এর একটাই কারণ, আর সেটা হচ্ছে- তারা জানে কিভাবে তথ্য সংগ্রহ করতে হয় এবং সেটা কাজে লাগাতে হয়।

আমিনুল ইসলাম
লুন্ড ইউনিভার্সিটি
সুইডেন

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.