--- বিজ্ঞাপন ---

প্রতি বছর পানি বাড়ছে শূন্য দশমিক ১২ ইঞ্চি হারে, অস্থির বঙ্গোপসাগর

0

বঙ্গোপসাগরের তলদেশে ফাটল ও আবহাওয়া পরিবর্তনের কারনে বাড়ছে সমুদ্রের অস্থিরতা। সমুদ্রের পানি প্রতি বছর বাড়ছে শূন্য দশমিক ১২ ইঞ্চি হারে। দিন যতই যাচ্ছে পানির উচ্চতা বাড়ছে। গত ২৫ বছরে উচ্চতা বেড়েছে প্রায় ৬ ফুট। বর্তমানে পানির ঢেউ উপচে পড়ছে পাড়ে। মাঝে মাঝে সমুদ্রের পানি স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে বেশি বেড়ে যায়। অনেক সময় ৮ ফুট উঠে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সমুদ্র পাড়ের দোকান-পাট। পূর্নিমার কারনে জোয়ারের পানি এত প্রবলভাবে বেড়ে যায় যে, চট্টগ্রাম শহরের মধ্যে কোমর সমান পানি উঠে যায়। বিশেষ করে চট্টগ্রামের বাণিজ্যিক এলাকা আগ্রাবাদ, হালিশহরের পশ্চিমাংশে জোয়ারের পানির উচ্চতা বেড়েই চলেছে। সমুদ্রের পানির উচ্চতা যে হারে বেড়ে চলেছে তাতে চট্টগ্রাম শহর হুমকীর মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে সমুদ্র পাড়ের হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে।
গত ১৫ বছর আগেও চট্টগ্রাম সমুদ্র সৈকতের বালুচরে পর্যটকরা দাফিয়ে বেড়াতো। এখন আর বালুচর দেখা যায় না। নীরবে বাড়ছে সমুদ্রের পানির উচ্চতা। বালুচর হারিয়ে পানির উচ্চতা পাড়ের চেয়ে ৬ ফুটের মধ্যে এসে গেছে। গত কয়েকবছর ধরে চলছে এ অবস্থা। মাঝে মাঝে সমুদ্রের পানির উচ্চতা ৮ ফুট পর্যন্ত বেড়ে যায়।
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে যাওয়া অনেক স্থানীয় পর্যটক সাগরের অস্বাভাবিক জোয়ারের তরঙ্গ দেখে অনেক সময় সৈকতে নামতে সাহস করেন না। বিশেষ করে মাঝে মাঝে রাতে বেলায় পানি বাড়তে থাকলে উপক‚লের অনেক মানুষ ঘর ছেড়ে চলে যায়। জোয়ারের পানির উচ্চতা উঠে ৮ ফিট পর্যন্ত। শুধু চট্টগ্রাম সৈকত নয়, এখন প্রতিনিয়ত জোয়ারের পানির সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছে কুতুবদিয়া, মহেশখালী ও সেন্টমার্টিনের মানুষ। জোয়ারের পানির উচ্চতা ৬ ফিট উঠার পর দ্বীপাঞ্চলের মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে বিভিন্ন সাইক্লোন সেন্টারে আশ্রয়গ্রহণ করে। সম্প্রতি আবহাওয়ার বিরুপ আচরনের ফলে জোয়ারের তরঙ্গে উপকূলীয় এলাকার অনেক ঘর ভেসে যায়। উপক‚লের বনভূমির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। সাগওে মাঝে মাঝে যে জলোচ্ছ¡াস দেখা দেয় তাতে হ্যাচারি ব্যবসায়ীরাও বিপাকে রয়েছে। সাগরের এ অস্বাভাবিক আচরণকে দ্বীপাঞ্চলের মানুষরা বরাবরের মতোন সৃষ্টিকর্তার লীলাখেলা বলে অবহিত করছেন। অবস্থা এখন এমন যে, ভাটার সময় পানি কিছুটা কমলেও জোয়ারের তরঙ্গ পুনরায় আঘাত করছে। চট্টগ্রামের উপকুলীয় অঞ্চলের মানুষ সাগরের এ আচরণকে পূর্ণিমার সঙ্গে সংশি¬ষ্ট বললেও কারও মতে সাগরের নিচে ভুমিকম্পজনিত ফাটলের প্রতিক্রিয়ায় এ অস্বাভাবিক আচরণ।
সমুদ্রের পানির উচ্চতা ও জোয়ারের প্রবল ঢেউয়ের পানি ঢুকে পড়ে শহরে। পতেঙ্গা, হালিশহর, সরাইপাড়া, জেলেপাড়া, কাট্টলীসহ শহরের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে সমুদ্রের জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ে। আগ্রাবাদের অভিজাত সিডিএ এলাকার বেশিরভাগ রাস্তা হাটু পানি, অনেকাংশে কোমর পানিতে তলিয়ে যায়। বুধবার রাত থেকে পানি উঠতে থাকলে এলাকাবাসীর মধ্যে আতংক দেখা দেয়। বিশেষ করে সমুদ্র পাড়ের এলাকাগুলোতে পানির পরিমান পূর্বের রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। নগরীতে বর্ষাকালেও তেমন বৃষ্টি না হলে আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকার পানির অবস্থা দেখে হতভম্ব হয়ে পড়ে অফিসগামী লোকজন। এ অবস্থা কখনও হয়নি বলে উল্লেখ করেন অনেকে। নগরীর পতেঙ্গাসহ উপকুলীয় এলাকায়ও বেড়িবাঁধের ফাকঁেফাকরে আশপাশের এলাকায় ঢুকে পড়ে সাগরের উত্তাল জলরাশি। এতে পতেঙ্গা সৈকতের দোকানপাটগুলো কোথাও হাঁটু আবার কোথাও কোমর পানিতে ডুবে গেলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন।
সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়ার সাথে সাথে উপকুলিয় এলাকা বাশঁখালি ও আনোয়ারার অনেকাংশ পানিতে তলিয়ে যায়। এলাকাবাসী বলছে, পূর্ণিমার প্রভাব ও বিভিন্ন সময় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে উপকুলীয় এলাকায় ঢুকে পড়েছে সাগরের পানি। বিশেষ করে চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও আনোয়ারা থানা এবং নগরীর পতেঙ্গাসহ উপকুলীয় এলাকায় ঘর-বাড়ি ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে ঢুকে পড়ে সাগরের পানি। এতে এসব এলাকার মানুষ চরম দুর্ভোগের মুখে পড়ে। সাগরের লোনা পানি ঢুকে ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়। জেলার বাঁশখালীর উপকুলবর্তী অন্তত ১৫টি গ্রামে সাগরের লোনা পানি ঢুকে পড়ে। বিশেষ করে খানখানাবাদ, কদমরসুল, প্রেমাসিয়া, কাথারিয়া, ডোংরা, সাধনপুরের অনেক গ্রামে বাধ ডিঙিয়ে সাগরের পানি ঢুকে সবচেয়ে বেশি। এসব এলাকার দেড়শ থেকে ২০০ ঘরবাড়ি হাঁটু পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। ডুবে যায় অনেক রাস্তাঘাটও। বাঁশখালীর ৩৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ২০ কিলোমিটারই ইতিমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। তাই সাগরে কোন চাপ সৃষ্টি কিংবা পূর্ণিমা-অমাবশ্যার সময় বেড়িবাঁধবিহীন এলাকায় সাগরের জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ে।
আনোয়ারার অনেক এলাকাও অস্বাভাবিকভাবে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ে। রায়পুর ইউনিয়ন, গহিরা, পূর্ব গহিরা, সরেঙা, পশ্চিম রায়পুরসহ আরো কয়েকটি এলাকায় অসংখ্য ঘরবাড়িতে জোয়ারের পানি ঢুকে যায়। আভ্যন্তরীণ রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গিয়ে এসব এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। একইসাথে আনোয়ারার শত শত একর ফসলি জমিতে সাগরের লোনা পানি ঢুকে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বঙ্গোপসাগরের তলদেশে ফাটল ও আবহাওয়া পরিবর্তনের কারনে বাড়ছে সমুদ্রের অস্থিরতা। সমুদ্রের পানি প্রতি বছর বাড়ছে শূন্য দশমিক ১২ ইঞ্চি হারে। দিন যতই যাবে ততই উচ্চতা বাড়বে। ফলে দেশের উপকুলিয় এলাকাগুলো পানির নিচে তলিয়ে যাবে। আগামী ২০৫০ সালে সমুদ্রের পানির স্বাভাবিক উচ্চতা বাড়বে প্রায় ৪ ফুট। গত ২০১০ সালে বঙ্গোপসাগরের আন্দামান দ্বীপাঞ্চলে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প এবং ২০১১ সালের ৩ জুন নিকোবর দ্বীপাঞ্চলে ৫ দশমিক ৯ মাত্রার ভুমিকম্পের কারনে সমুদ্রের ফাটল কি অবস্থায় রয়েছে তা নিয়েও বাড়ছে নানা সংশয়।
সমুদ্রের পাড়ে রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর, চট্টগ্রাম ইপিজেড, চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরসহ চট্টগ্রামের ভারী শিল্পগুলো। পানির উচ্চতা ও সমুদ্রের বিরূপ আচরনের কারনে শংকিত এসব এলাকার মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে সমুদ্রের পানির উচ্চতার দিকে নজর না দেয়ার কারনে নীরবে হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগে গড়া এসব প্রতিষ্ঠান নিয়ে সংশয় বাড়ছে। বিগত ৯১ সালের প্রবল ঘুর্নিঝড় ও জলোচ্ছাসের কারনে এসব এলাকার ৮০ শতাংশই ধংব্স হয়ে যায়। পরে তা আবার গড়ে উঠে। এ অবস্থায় সমুদ্রের পানির উচ্চতা নিয়ন্ত্রনের দিকে নজর না দিলে যে কোন বড় ধরনের ক্ষতি পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।###১.৭.১৯

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.