--- বিজ্ঞাপন ---

আমাদের সন্তানরা বিশ্ববিদ্যালয় হতে কি শিখছে?

0

আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মান কোথায় গিয়ে দাড়িয়েছে তার কোন গবেষণা নেই। কেউ এ নিয়ে চিন্তাও করে না। আমাদের সন্তানরা বিশ্ববিদ্যালয় হতে কি শিখছে, তাদের এ শিক্ষা আদৌ কোন কাজে লাগছে কিনা এ নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। ২০১৫ সালে এশিয়ার সেরা ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পায় নি। বাংলাদেশের সাথে অবশ্য পাকিস্তানও রয়েছে একই কাতারে। তবে স্থান পেয়েছে ভারতের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়। লন্ডন ভিত্তিক টাইমস হাইয়ার এডুকেশন শিক্ষার মান, পরিবেশ, গবেষণাসহ বিভিন্ন মানদন্ডের উপর ভিত্তি করে ২০১৫ সালের এশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থান ভিত্তিক তালিকা তৈরি করে। যাতে দেখা যায় বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বাদ দিলাম প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরও নাম নিশানা নেই। আর এতে বুঝা যায় আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার করুন চিত্র। আমাদের সন্তানরা কোথায় পড়ছে, কি শিখছে তা একনজরে দেখতে হলে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দিকে না তাকিয়ে উপায় নেই।
দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় হতে অনার্স মাষ্টার্স পাশ করে বের হওয়াদের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। উচ্চশিক্ষিত মানুষের সংখ্যা বাংলাদেশে এখন ভুরি ভুরি । এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স মাষ্টার্স পাশ করে অনেকের এমন এমন চাকরি করতে বাধ্য হয় যা করতে এসএসসি পাশই যথেষ্ট । আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ শিক্ষিতরা অনেকটা সার্টিফিকেট নির্ভর। এ শিক্ষা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তেমন কোন কাজে লাগে না। আমরা শিক্ষিত হচ্ছি এক ধরনের জগাখিচুরি মার্কা শিক্ষায়। আর্ন্তজাতিক র‌্যাকিং এ আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থান কোথায়। গ্লোবাল র‌্যাংকিং এ তো বাংলাদেশের কোন উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম খুজে পাওয়াও মুসকিল। তারপরও পাওয়া তথ্যে দেখা যায় আমাদের প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান ৩৮৬১ নাম্বারে! আর আমরা যে বুয়েট নিয়ে গর্ব করি তার স্থান ২৪১৫ নাম্বারে। আমাদের শিক্ষকরা বিদেশ যেতে পারলে, ঘুরতে পারলে খুশি। উচ্চতর ডিগ্রীর বহর নিয়ে আসেন তারাঁ। তাদের ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ার সময় কোথায়। আমাদের সন্তান তোতাপাখির গ্রন্থপাঠ করেই নিচ্ছে উচ্চতর ডিগ্রী।
আমাদের পাশের দেশ ভারত। বাংলাদেশের মানুষ এ দেশটিকেই সবচেয়ে বেশ ভালো করে চিনে। কারনে অকারনে আমরা এ দেশের মুন্ডপাত করি। অথচ ২০১৫ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা ভারতের ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম স্থান পেয়েছে। এর জন্য ভারতের মানুষ গর্বিত। কারন পাশের দেশ বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের শিক্ষা ব্যবস্থার চেয়ে তারা কত যে উন্নত তা প্রমান করার অন্যতম উপায় এটি। ভারতের পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটি এ তালিকায় ৩২তম স্থানটি দখল করেছে। এছাড়া ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব খরগপুর, ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব কানপুর, ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট আব দিল্লী, ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব রোরকি, ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব গোহাটি, ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব মাদ্রাস, যাদবপুর ইউনিবার্সিটি, আলীগর ইউনিভার্সিটি, জওহরলালা ইউনিভার্সিট্রি নাম তালিকায় উঠে এসেছে। তবে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে তালিকায় সর্বপ্রথম স্থানটি দখল করেছে জাপানের টোকিও ইউনিভার্সিটি। দ্বিতীয় স্থানটিতে রয়েছে সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। তৃতীয় হংকং এর ইউনিভার্সিটি অব হংকং। পুরো তালিকায় চীন ও জাপানের বিশ্ববিদ্যালয়ের দাপট অনেককে হতবাক করে দিয়েছে। চীনের ২১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম তালিকায় গুরুত্ব পেয়েছে। জাপানের রয়েছে ১৯টি। তালিকায় দক্ষিন কোরিয়া, থাইল্যান্ড, তাইওয়ান, তুরস্ক, ইরান, সৌদিআরবের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম স্থান পেয়েছে। লেবানন ও ইসরাইলের একটি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামও তালিকায় রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হতো প্রাচ্যের অক্সফোর্ড। কারন এমন এক সময় ছিল এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যারা পড়াশুনা শেষ করে বের হতেন তাদের বলা হতো ‘জিনিয়াস’। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামটি দেয়ার কারন এ বিশ্ববিদ্যালয়টির পড়াশুনার মান এত উন্নত ছিল যে এশিয়ার কোন বিশ্ববিদ্যালয় টেক্কা দিতে কারও সাহস পেতো না। এখান থেকে পাস করে যিনিই বের হন তার মতোন সেরা আর কেউ নেই। ১৯২১ সালে বৃটিশ রাজের সময় প্রতিষ্ঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয়টি দীর্ঘদিন ধরে তার সুনাম অক্ষুন্ন রেখেছিল। কিন্ত বর্তমানে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলে খ্যাত এ বিশ্ববিদ্যালয়টির পাত্তা নেই এখন এশিয়ায়। তথাকথিত ছাত্র রাজনীতি আর পক্ষপাতদুষ্ট শিক্ষক নিয়োগের কারনে দেশের সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের করুন হাল নজরে পড়ার মতো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান। আমি নিজেও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। কিন্ত বর্তমান অবস্থার মতোন করুন হাল আর কখনও নজরে পড়ে নি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনার মান যে কত নিচে তা এ বিশ্ববিদ্যালয় হতে বের হওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের জ্ঞান অর্জনের বহর দেখলে বুঝা যায়। এখানে ছাত্রদের বড় একটি অংশ এখন রাজনীতির নামে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাচ্ছে। দিনের পর দিন বন্ধ থাকে বিশ্ববিদ্যালয়। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো ভিসি হওয়ার প্রতিযোগিতা। আর একবার ভিসি হতে পারলে বিশ্ববিদ্যালয়কে পারিবারিক ঘর-বাড়ী হিসেবে ব্যবহার করতে যেন বাধাঁ নেই। ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশুনার পরিবর্তে এখন ভিসি ব্যস্ত থাকেন নিয়মনীতি লঙ্গন করে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ থেকে শুরু করে অযোগ্য শিক্ষককে যেনতেন ভাবে নিয়োগ দেয়ার কাজে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক বেশ কয়েকজন ভিসি’র বিরুদ্ধে এমনতর অভিযোগ অনেকটা ওপেন সিক্রেট। এক শ্রেনীর শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে নেতা হওয়ার জন্য এমন কিছু রাজনৈতিক নেতার কাছে নিজেকে খাটো করে তা বলাবাহুল্য। বিগত এক যুগ ধরে এখানে যেসব শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে তাদের বেশিরভাগেরই যোগ্যতা ও মান নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। এরা না পারে ভালো বাংলা বলতে না পারে ভালো ইংরেজি। ফলে ছাত্রদের কি শিখাবে। এদের কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করে আমাদের ভবিষ্যত প্রজম্ম্ কি করতে পারবে এ নিয়ে সচেতন হওয়ার সময় কি এখনো আসেনি?

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.