--- বিজ্ঞাপন ---

মহাকাশ কাহিনী…যে গল্পের শেষ নেই

0

কাজী আবুল মনসুর  :

দাদী শুরু করলেন, ‘রাক্ষসের ছেলে হয়েছে, রাক্ষুসী মায়ের ইচ্ছে বেশ ঘটা করে ছেলের মুখে ‘ভাত’ দেবে। তোড়জোড় শুরু হয় রাক্ষসপুরিতে। অনেক রাক্ষস খাবে, আর মানুষের তুলনায় ওদের খাওয়াতো ভীষন বেশি। তাই আয়োজনও চলছে সেরকম। উঠোনে বাঁধা গোটা পঞ্চাশ হাতি। উনুনে কড়াই চাপানো হয়েছে, তাতে ঢালা হয়েছে তেল। তেল গরম হলেই আস্ত হাতীগুলোকে নুন – হলুদ মেখে তার মধ্যে ছেড়ে দেয়া হবে। গরম হাতির ঝোল, রাক্ষদের জন্য ভারী সুস্বাদু। রাধুনীর জিভ দিয়ে অমনি টপ টপ করে জল পড়ছে।’ সন্ধ্যার চাদনিঁ রাতে দাদি নাতিদের গল্প চলছে। এক নাতি হঠাৎ বলে বসল,‘ ওমা এতগুলো হাতী এক সাথে কড়াই এ ছেড়ে দেবে, কড়াই টা কি খুব বড়ো’। দাদী উত্তর দিল খুওব বড়। সঙ্গে সঙ্গে নাতিরা একজোট হয়ে বলল, কত বড়। আমাদের সামনের মাঠটার সমান? নাহ আরও বড়। তাহলে কি এ শহরটার সমান’। না না তার চাইতেও বড়ো। দাদির মাথায় চট করে বুদ্ধি এলো, বলল নাহ্ ঐ আকাশটার সমান। আর কোন প্রশ্ন নেই, নাতিরা বলল তাই বুঝি। গল্প এগিয়ে চলল। আকাশ যে কত বড় তার একটা ধারনা পেয়ে গেল নাতিরা। অতএব আর কোন প্রশ্ন নয়।’ ভাগ্যিস দাদি তো আর জানে না মহাকাশের কথা। তবে তোমরা কিন্ত খুজলে অনেক কিছু পাবে এই মহাকাশ নিয়ে। হয়েছে কত কাহিনী, গল্প, উপন্যাস।


আকাশ সত্যি কত বড়ো তা কি তোমরা জানো। কত কত বড় পন্ডিত, জ্যের্তিবিদ বছরের পর বছর ধরে এর আয়তন মাপতে গিয়ে হিমসিম খেয়ে গেছেন। কত রকমের আকাআকি,হিসেবপত্র কষা হয়েছে। কিন্ত কোথায় সীমানা? যুগ যুগ ধরে চলছে মহাকাশ নিয়ে গবেষণা। অবিশ্বাস্য কত কিছু যে মহাকাশ নিয়ে রচিত হয়েছে। আমাদের দৃষ্টির বাইরে এই দুর আকাশ হলো মহাকাশ। আর এ মহাকাশকে যদি সাগরের সাথে তুলনা করা হয় তাহলে আমাদের এই পৃথিবী হবে তারই বুকে এক ফোটা জল। আর আমরা সেই পৃথিবীর বুকে যে কয়েক’শ কোটি মানুষ বাস করছি তারা বোধ হয় অতি ক্ষদ্র ক্ষুদ্র জীবানু।
দুর আকাশের যে বিশেষ জিনিষটি আমাদের চোখে লাগে তা হলো সূর্য। এটি দিনের বেলায় এত উজ্বল যে যার দিকে ভালো করে তাকানো যায় না। সকালে বা সন্ধ্যায় এটি লাল থালার মতো হয়ে যায়। তোমার কি জনো, এ সূর্য পৃথিবী থেকে কতো বড়। বলছি শুন, ১৩ লাখ পৃথিবীকে যদি একত্র করা হয় তাহলে তা হবে সূর্যের সমান! সূর্য অনেক দুরে আছে বলেই তা অনেক ছোট দেখায়। পৃথিবী থেকে সূর্যের দুরত্ব ৯ কোটি ৩০ লাখ মাইল। কিলোমিটারের হিসেবে তা হলো ১৪ কোটি ৯৭ লাখ ৩০ হাজার কিলোমিটার। আর এ সূর্যকে মাঝখানে রেখে আমাদের পৃথিবী তার চারিদিকে ঘুরছে। শুধু পৃথিবী নয়, পৃথিবীর মতো আরও কতগুলি জ্যেতিষ্ক পদার্থ সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। তাদের আমরা গ্রহ বলি। এ গ্রহগুলো যতদুর পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে ততদুর পর্যন্ত সূর্যের রাজত্ব। বাংলায় যার নাম সৌরজগত। কিন্ত মহাকাশের তুলনায় এ সৌরজগত কিছু না।
সৌরজগতের বাইরে যে বিশাল মহাকাশ আছে তাতে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য আলোকবিন্দু যাদের আমরা নক্ষত্র বলি। খালি চোখে আমরা পৃথিবীর এক এক গোলার্ধ থেকে তিন হাজার তারা দেখতে পায়। কিন্ত দুরবিণ দিয়ে দেখলে তার পরিমান বহুগুন বেশি। বিজ্ঞানীরা কয়েক”শ কোটি তারা সন্ধান পেয়েছে। কিন্ত পরিমান আরও বেশি। বিজ্ঞানীদের মতে, এগুলো আকারে সূর্যের চেয়েও বড়। হতে পারে কয়েকগুন! বিজ্ঞানীরা ‘মীরা’ নামের একটি তারার কথা বরেছেন, যার মধ্যে নাকি আমাদের পৃথিবীর মতো তিন হাজার নয়’শ কোটি পৃথিবী ভরে রাখা যাবে!


তোমরা অনেকে ‘সপ্তর্ষি’ নামে তারার নাম শুনেছ। একটি তারার ঝাকঁ। তারও ফাকেঁ ফাকেঁ আমাদের সৌরজগতের মতো ২৫টি সৌরজগত ঢুকে যাবে। ‘হারকিউলস’ নামে একটি তারার ঝাকঁ আছে যার এক কোণা থেকে আর কোণা মাপলে হয় ৩৬০০ তে ৫৮৭৬০৬৮৮৮০০০০ দিয়ে গুন করলে যত হয় তত। মাথা ঘুরে যাচ্ছে না অনেকের। অথচ এটাই সত্যি।
তোমরা সবাই জানো পৃথিবীর সর্বোচ্চ উচু জায়গা হচ্ছে ‘এভারেষ্ট পর্বত’। মাটি বা সমুদ্রপৃষ্ট হতে যার দুরত্ব ৫ মাইল। আর সূর্য হচ্ছে ৯ কোটি ৩০ লাখ মাইল দুরে। তোমরা অনেকে জানো না, সূর্য যখন পৃথিবীর আকাশে দেখা দে ঠিক তখনই আমরা দেখতে পায় না। দেখতে পায় ৮ মিনিট পর! অর্থাৎ সূর্যের আলো পৃথিবীতে আসতে সময় লাগে আট মিনিট। আলোর গতি হচ্ছে প্রতি সেকেন্ড ১ লাখ ৮৬ হাজার মাইল।
আমরা যে ‘তারা’গুলো দিকে তার মধ্যে সবচেয়ে কাছের তারা থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে কত সময় লাগবে বলতে পারো। চার বছর তিন মাস! এবার হিসেব করে দেখো কাছের তারাটির আলোর অবস্থা যদি এরকম হয় তাহলে দুরের তারাগুলোর আলো পেতে কত সময় লাগতে পারে। কথাগুলো ভাবতে কেমন কেমন লাগছে তাই না। প্রতি রাতে আমরা আকাশে দিকে তাকালে দেখি কতো তারা মিট মিট করে জ্বলছে। আমরা যে তারাগুলো রাতে দেখি সেগুলো কিন্ত ঐ সময়ের তারা নয়, অনেক আগে একদনি সে তারা রওয়ানা হয়েছিল। তারপর ছুটতে ছুটতে এসে হাজির হয় আমাদের চোখের সামনে। ঔ আলো যেদিন রওয়ানা হয়েছিল সেদিন হয়তো পৃথিবীতে মানুষের কোন অস্তিত্ব ছিল না। হয়তো অতিকায় কোন প্রানীর পৃথিবীতের ঘুরে বেড়াতো।
শুধু গ্রহ তারা না আরও কত উজ্বল জ্যোতিষ্ক মহাকাশ ঘুরে বেড়ায়। অনেকে নীহারিকার নাম শুনেছ। নীহারিকা আসলে জ্বলন্ত পিন্ড। মহাকাশের কোটি কোটি মাইল এলাকা জুড়ে এদের রাজত্ব। এক একটা নীহারিকা কত বড় হতে পারে তা ধারনার বাইরে। বিজ্ঞানীরা ‘এ্যান্ড্রামিডা’ নামের একটি নীহারিকার ওজন সর্ম্পকে বলেছেন, এটির ওজন আমাদের সূর্যের চেয়েও তিন হাজার কোটিগুন বেশি! আর ‘এ্যান্ড্রোমিডা’ নিয়ে যে কত কাহিনী আছে। যা শুনলে তোমরাও মজা পাবে। মহাকাশের সব চেয়ে দূরের যে জিনিষটি দেখা যায় তাও নীহারিকা। যা থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে সময় লাগবে ৫০০ কোটি বছর!
মহাকাশের বাসিন্দা যেমন পৃথিবী তেমনি আরও আটটি গ্রহও পৃথিবীর মতো সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে। এদের মধ্যে সূর্যের সবচেয়ে কাছের গ্রহ হলো বুধ বা মার্কারি, তারপর শুক্র বা ভেনাস, পৃথিবী বা আর্থ, মঙ্গল বা মার্স, বৃহস্পতি বা জুপিটার, শনি বা স্ট্যাটার্ন, ইউরেনাস, নেপচুন , প্লুটো। ভ্যালকান নামের আরও একটি ক্ষুদ্র গ্রহের কথা বিজ্ঞানীরা বলে থাকেন। এ ছাড়া মঙ্গল আর বৃহস্পতির মাঝখানে ছোট ছোট অসংখ্য গ্রহ ছড়িয়ে আছে, তাদের গ্রহ কণিকা বা গ্রহাণু বলা হয়।
তোমরা তো অনেকে রেল গাড়ী পছন্দ করো। চলো আমরা এবার রেল গাড়ীতে করে গ্রহে যাবো। আমাদের দেশের রেলগাড়ী চলে ঘন্টায় ৬০ মাইল বেগে। মহাকাশে পাতা কল্পনার রেল গাড়ীতে উঠে যদি আমরা রওয়ানা দিই তাহলে আগে পৌছাবো শুক্র গ্রহে। রেলগাড়ী কোথাও না থেমে আমাদের শুক্র গ্রহে পৌছুতে সময় লাগবে কতো জানো, ৫৩ বছর! তারপর মঙ্গলে যেতে ৭৫ বছর, বুধে যেতে ১১০ বছর, বৃহস্পতিতে যেতে ৭৪০ বছর, শনি গ্রহে যেতে ১৪৭০ বছর, ইউরেনাসে যেতে ৩১৬০ বছর আর নেপচুনে যেতে লাগবে ৫০৫৫ বছর! আর যদি তোমরা কেউ সূর্যে যেতে চাও তাহলে লাগবে ১৭৭ বছর। আর ঐভাবে চাদেঁ যেতে সময় লাগবে মাত্র সাড়ে ৫ মাস।
মহাকাশে সূর্যের রাজ্য, গ্রহের রাজ্য ছাড়িয়ে আছে নক্ষত্র বা তারার রাজ্য। তারাগুলো গ্রহের চেয়েও অনেক বড়ো। আমাদের চোখে গ্রহ আর তারা দেখতে একই রকম লাগে বিধায় আমরা পার্থক্যটা ধরতে পারি না। আকাশের দিকে তাকালে দেখি অনেক তারা বেশি উজ্বল। অনেকগুলো হঠাৎ হঠাৎ জ্বলে উঠে। বৃহস্পতি আর শুক্র গ্রহ খুব জ্বলজ্বলে। তাই এগুলোকে তারার মতো মনে হয়। আর তারার আলো কখনও স্থির থাকে না বলে চিনতে কষ্ট হয়। তারাগুলোর দিকে তাকালে মনে হবে একবার জ্বলছে আর একবার নিভছে।
আকাশ পরিষ্কার থাকলে অনেক সময় আমরা দেখি সাদা রঙের আবছা একটা পথ অনেক দুর চলে গেছে। এটি আসলে ছায়াপথ। তবে নীহারিকাই হচ্ছে আকাশের সবচেয়ে দুরতম অধিবাসী। আকাশের কোটি কোটি মাইল জুড়ে দাউ দাউ করে অবিরাম এগুলো জ্বলছে। এসব নীহারিকা কোনটি গোল, কোনটি থালার মতো, আবার ডিমের মতো, আছে স্ক্রুর মতো প্যচানো। আসলে আকাশযোড়া অগনিত নক্ষত্ররাজি, গ্রহ-উপগ্রন-সূর্যে গড়া আমাদের সৌরজগত। আর এসবের সৃষ্টি নাকি ঐ নীহারিকা থেকেই। আরও রয়েছে উল্কা, ধুমকেতু। আরও কত বাসিন্দা রয়েছে মহাকাশের। যেগুলোর অনেক অজানাই রয়ে গেছে।

মহাকাশের নানা বিষয় নিয়ে পৃথিবীতে গল্পের শেষ নেই। ছায়াপথ, তারা, চাদঁ অনেক কিছু নিয়ে কাহিনী চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। বিশেষ করে আগেকার মানুষ বিশ্বাষ করতেন এসব গল্প – কাহিনী। শুনবে নাকি এমন কিছু গল্প।
তাহলে শুন, মহাকাশের সবেচেয় সুন্দর একটি জিনিষ হচ্ছে ছায়াপথ। এ ছায়াপথকে প্রাচীন মিশরের লোকজন মনে করতো তাদের প্রিয় নীল নদ। আবার ভারতীয়রা ছায়াপথকে বলেছে আকাশগঙ্গা। চীনারা মনে করতো এটি স্বর্গের নদী। সে যাই হোক। তবে ছায়াপথ নিয়ে জাপানী কাহিনী বেশ চমৎকার। ‘একদিন স্বর্গ থেকে নেমে এলো এক পরী। সে তার পালকে গড়া পোশাক হেগোরোমো রেখে গোসল করতে নামল। পৃথিবীর এক যুবক দেখে ফেলল পরীকে। সে পরীর পোশাক লুকিয়ে ফেলল। পোশাক ছাড়া তো পরী স্বর্গে যেতে পারবে না। এখন কি করা। শেষপর্যন্ত পৃথিবীর যুবকের সাথে স্বর্গের পরীর বিয়ে হলো। পৃথিবীতে চলছিল তাদের দিন। এভাবে অনেক দিন পর পরী লুকিয়ে রাখা পোশাক হেগোরামো খুজেঁ পেলো। সে পোশাকটি পরে স্বর্গে চলে গেলো। স্বর্গে যাওয়ার পরও মন থেকে ফেলতে পারে নি পৃথিবীর যুবককে। চলে যাবার সময় পরী একটি চিঠি লিখে রাখলো যুবকের জন্য। চিঠিতে সে লিখে গেলো কিভাবে স্বর্গে যাওয়া যাবে। চিঠির মতে যুবক একটি বাশঁ রোপন করলো। বাশঁটি লম্বা হতে হতে প্রায় স্বর্গের কাছে পৌছে গেলো। ঐ বাশেঁ করে যুবক অনেক কষ্টে স্বর্গে পৌছে গেল। যুবককে দেখে তো আনন্দে আত্মহারা পরী। কিন্ত পরীর বাবা বলল পরীকে পেতে হলে কয়েকটি শর্ত পূরণ করতে হবে। যুবক তার স্ত্রী সাহায্যে একে একে সব শর্ত পূরণ করলো। কিন্ত শেষ শর্ততে এসে যুবক ভুল করে ফেলল। অথচ শেষ পরীক্ষাটি ছিল সহজ। তাকে বলা হয়েছিল একটি উরি কাটতে হবে। উরি হচ্ছে তরমুজের মতো একটি ফল। তার স্ত্রী তাকে বলেছিল প্রস্থ বরাবর কাটতে। কিন্ত যুবক কেটে ফেলল দৈর্ঘ্য বরাবর। তখন উরি থেকে পানি গড়াতে শুরু করলো। পানি ক্রমান্বয়ে বাড়তে লাগলো। আর তারা দু’জন পরস্পর থেকে পৃথক হয়ে যেতে থাকলো। এই পানির প্রবাহ থেকে সৃষ্টি হয়েছে ছায়াপথ।

শুনবে নাকি এ্যান্ড্রোমিডার গল্প
পৃথিবীতে আবিসিনিয়া নামের এক রাজ্যের রাজা ছিলেন সেফিউস। সেফিউসের সুন্দরী স্ত্রীর নাম ছিল ক্যাসিওপিয়া। এ ক্যাসিওপিয়ার সাথে শক্রতা ছিল সমুদ্রের। সমুদ্রের মায়াবিনী ডাইনির রূপের বড়াই করতে গিয়ে ক্যাসিওপিয়া সমুদ্রের অধিপতি পসেইডনের রোসানলে পড়েন। পসেইডন একদিন রেগে গিয়ে ক্ষুদ্ধ হয়ে আবিসিনিয়াকে ধংসের জন্য এক বিশাল তিমিকে পাঠিয়ে দিলেন। তিমিটি ছিল হিংস্র, ভয়ংকর প্রকৃতির। সে কথা শুনে চিন্তিত রাজা সেফিউস রাজ্য সভা ডাকলেন। রাজ্যের জ্ঞানী গুনি ব্যক্তিদের ডাকা হলো। পরামর্শ দিতে তারা হাজির হলেন রাজ দরবারে। শেষপর্যন্ত সভায় সিদ্ধান্ত হলো, তিমিকে থামাতে হলে রাজা সেফিউসের সবচেয়ে সুন্দরী কন্যা এ্যান্ড্রোমিডাকে ঐ তিমির কাছে সমর্পন করেন। নিরুপায় ও অসহায় রাজা সে সিদ্ধান্ত মেনে নেন যাতে দেশটি রক্ষা হয়। এ্যান্ড্রোমিডাকে সাগরতীরের একটি পাহাড়ে এনে বেধেঁ রাখা হলো, যাতে তিমি এসে নিয়ে যেতে পারে। তখন ঐ রাজ্যের আর এক বীরযোদ্ধা পার্সিয়ুস কোন বীরত্বপূর্ণ কাজে যাওয়ার জন্য প্রস্তত হচ্ছিল। পার্সিয়ুস সে নির্জন দ্বীপে এসে উপস্থিত হলো। সে দ্বীপে বাস করতো ভয়ংকর দানবী গর্গনরা। তাদের মাথায় ছিল কেশের পরিবর্তে অসংখ্য সাপ। গর্গনদের প্রধান ছিলেন মেডুসা। দুঃসাহসি পার্সিয়ুস মেডুসাকে আক্রমন করে তার মাথা কেটে ফেলল। তারপর আবিসিনিয়ার উপর দিয়ে উড়ে যাবার সময় নজর পড়ল বন্দি এ্যান্ড্রোমিডার উপর। এদিকে ভয়ংকর তিমিও এগিয়ে আসছে। পার্সিয়ুস তিমির উপর ঝাপিয়ে পড়ল। শুরু হলো তিমি ও পার্সিয়ুসের লড়াই। পার্সিয়ুস তিমিকে মেডুসার কাটা মাথা দেখালো। অমনি তিমি পরিনত হলো পাথরে। রাজা সেফিউস কৃতজ্ঞতার চিহ্ন হিসেবে বীরযোদ্ধা পার্সিয়ুসের সাথে এ্যন্ড্রোমিডার বিয়ে দিলেন।


ধ্রুব তারার কথা
তোমরা অনেকে ধ্র“বতারার কথা শুনেছ। এই ধ্র“বতারা নিয়ে অনেক গানও আছে। তবে গল্পটি বেশ চমৎকার। শুন তাহলে, ‘এক পাহাড়ী রাজ্যে ছিল সাত ভাই। তারা সবাই ডাকাত। একদিন তারা জানলো, পৃথিবীর অন্য এক প্রান্তে বাস করে সাত বোন। তারা দেখতে বেশ সুন্দরী। ডাকাত ভাইরা সিদ্ধান্ত নিল সাত বোনকে ধরে আনবে। তারা সাতবোনের রাজ্যে গেলো। একদিন সাত বোন ঘর থেকে বেড়াতে বের হলে ডাকাত সাত ভাই তাদের উপর ঝাপিঁয়ে পড়লো। কিন্ত তারা শত চেষ্টা করেও সাত জনকে ধরতে পারলো না, ধরলো একজনকে। বাকিরা ছুটে পালিয়ে গেলো। ডাকাত ভাইরা এক বোনকে ধরে নিচ্ছিল। কিন্ত সৃর্ষ্টিকতা তাদের এ কাজে ভীষন ক্ষুদ্ধ হলো। তাদের এ অপরাধের জন্য সৃষ্টিকর্তা সাত ডাকাত ভাইকে আকাশের তারায় পরিনত করে দিলো। তাদের নিযুক্ত করলো ধ্র“বতারাবে পাহারা দেয়ার জন্য। রাতের আকাশ যদি পরিস্কার থাকে তাহলে দেখা যায় ধ্র“বতারাকে। ধ্র“বতারা হলো সেই সাত বোনের একবোন। প্রতি রাতে দেখা যায় ছয় তারার একগুচ্ছ। সেই ছয় তারা হচ্ছে বাকি ছয় বোন। প্রতিদিন রাতের আকাশে ছয়তারা খুজেঁ বেড়ায় বোনকে।

গ্রহদের কথা
বুধ
ব্যাস – ৪,৮৮০ কিলোমিটার, ওজন ৩৩০২০০০০০০০০০ টন, সূর্য থেকে দুরত্ব ৫৭৯০৯১৭৫কিলোমিটার, এক বছর হয় ৫৮.৬৪ দিনে (সূর্যের চারপাশে ঘুরে আসতে লাগে) , তাপমাত্রা ১৬৬.৮৯ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। বুধের কোন চাদঁ নেই।
শুক্র
ব্যাস-১২,১০৩ কিলোমিটার, ওজন ৪৮৬৯০০০০০০০০০০ টন, সূর্য থেকে দুরত্ব ১০৮ ২০৮৯৩০ কিলোমিটার, এক বছর হয় ২২৪ দিনে, গড় তাপমাত্রা ৪৫৬ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। শুক্রর কোন চাদঁ নেই।
পৃথিবী
ব্যাস – ১২৭৫৬ কিলোমিটার, ওজন ৫৯৭২০০০০০০০০০০ টন, সূর্য থেকে দুরুত্ব প্রায় ১৪৯,৬০০,০০০ কিলোমিটার, এক বছর হয় ৩৬৫ দিনে, গড় তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। পৃথিবীর একটি চাদঁ আছে।
মঙ্গল
ব্যাস ৬৭৯৪ কিলোমিটার, ওজন ৬৪২১৯০০০০০০০০ টন, সূর্য থেকে দুরত্ব ২২৭,৯৪০,০০০ কিলোমিটার, এক বছর হয় ৬৮৬ দিনে, গড় তাপমাত্রা মাইনাস ৬৩ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। মঙ্গলের দুটি চাদঁ আছে।
বৃহস্পতি
ব্যাস ১৪২৯৮৪ কিলোমিটার, ওজন ১৮৯৮৬০০০০০০০০০০০০ টন,সূর্য থেকে দুরুত্ব ৭৭৮৪১২০১০, এক বছর হয় আমাদের পৃথিবীর ১১ বছর ৩১৪ দিনে, গড় তাপমাত্রা ১৪ থেকে ১৯ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড, বৃহস্পতির ৬৩টি চাদঁ আছে।
শনি
ব্যাস ১২০৫৩৬ কিলোমিটার, ওজন ৫৬৮৪৬০০০০০০০০০০০ টন, সূর্য থেকে দুরত্ব ১৪২৬৭২৫৪০০ কিলোমিটার, এক বছর হয় আমাদের পৃথিবীর ২৯ বছর ১৬৮ দিনে, গড় তাপমাত্রা মাইনাস ১৩৯ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড, চাদঁ আছে ৩৪ টি।
ইউরেনাস
ব্যাস ৫১১১৮ কিলোমিটার, ওজন ৮৬৮,৩২০,০০০০০০০০০ টন, সূর্য থেকে দুরত্ব ২৮৭০৯৭২২০০ কিলোমিটার, এক বছর হয় আমাদের পৃথিবীর ৮৪ বছর ৪ দিনে, গড় তাপমাত্রা মাইনাস ১৯৭ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড, ২৭টি চাদঁ আছে।
নেপচুন
ব্যাস ৪৯৫২২ কিলোমিটার, ওজন ১০২৪৭০০০০০০০০০০০ টন, সূর্য থেকে দুরত্ব ৪৪৯৮২৫২৯০০ কিলোমিটার, এক বছর হয় পৃথিবীর ১৬৪ বছর ২৯৮ দিনে, গড় তাপমাত্রা মাইনাস ২০০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড, চাদঁ আছে ১৩টি।
প্লুটো
সূর্য থেকে সবেচেয় দুরের গ্রহ প্লুটো। ব্যাস ২৩৯০ কিলোমিটার, ওজন ১২৯০০০০০০০০০ টন, সূর্য থেকে দুরত্ব ৫৯১৩৫২০০০০ কিলোমিটার, এক বছর হয় পৃথিবীর ২৪৭ বছর ২৫৬ দিনে, গড় তাপমাত্রা মাইনাস ২১৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড, চাদঁ আছে ৩টি।

১০ম গ্রহ?
তোমরা কি জানো এই ৯টি গ্রহের বাইরে আরও একটি গ্রহ আবিস্কারের কথা বেরিয়েছে। যার নাম ‘জেনা’। আমেরিকার বিজ্ঞানীরা বলছেন এই গ্রহটির ব্যাস ৩০০০ কিলোমিটার যা প্লুটোর চেয়ে বড়ো। এই গ্রহটিরও একটি চাদঁ আছে। বাকি বিষয়গুলো নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে।

মহাকাশে পিঁপড়া
আর্ন্তজাতিক মহাকাশ স্টেশনে এখন অবস্থান করছেন একদল নভোচারী। সম্প্রতি মহাকাশে ৮০০ পিঁপড়ার বিশাল একটি ঝাকঁ সেখানে পৌছানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নাসার গবেষকরা এই পিঁপড়া পাঠায়। মহাকাশে ভরশূন্য অবস্থায় পিঁপড়ার আচরণ কেমন হবে তা জানার জন্য পিপঁড়ার ঝাকটি পাঠানো হয়। এর আগে কুকুর, বানরসহ বিভিন্ন কীটপতঙ্গ মহাকাশ ভ্রমন করে এসেছে। এখন মোট আটটি পিঁপড়ার বাসায় ১০০টি করে পিপঁড়া, ‘ডোভস’ নামের একটি ক্ষুদ্র কৃত্রিম উপগ্রহ ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি নিয়ে ‘সিগনাস’ নামের প্রায় ৩০০০ পাউন্ড ওজনের একটি জাহাজ গত ৯ জানুয়ারী রওয়ানা হয়। তিনদিন পর সেটি আর্ন্তজাতিক স্টেশনে পৌছে। বিশেষ রোবোটিক বাহুর সাহায্যে সেগুলো গ্রহণ করে নভোচারিরা। পিপঁডার দ্বারা কি ধরনের তথ্য মিলে তা ভবিষ্যতে দেখা যাবে।
কারা কাজ করছে মহাকাশে

তোমরা কি জানো মহাকশে দিন রাত কাজ করে চলেছে বেশ কয়েকটি দেশের মহাকাশ সংস্থা। মহাকাশে ঘুরে ঘুরে তারা গবেষণারত। মহাকাশে বিচরন কারী ‘ আর্ন্তজাতিক মহাকাশ স্টেশন’ আসলে একটি বাসযোগ্য কৃত্রিম উপগ্রহ। আর্ন্তজাতিক মহাকাশ স্টেশন পাচঁটি গবেষণা সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত। এ পাচঁটি সংস্থা হচ্ছে- ন্যাশনাল এ্যরোনটিকস এন্ড স্পেস এডমিনিস্ট্রেশন (নাসা), রাশিয়ান ফেডারেল স্পেস এজেন্সি (রাশিয়া), জাপান এরোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সি (জাপান), কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সি (কানাডা), ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি বা এসা। এসা’র মধ্যে রয়েছে বেশ কয়েকটি দেশ।

মহাকাশে যেতে পিছিয়ে নেই নারীরাও
মহাকাশের রহস্য জানতে ছুটছে নারীরাও। তারাও কোন অংশে কম নয় এটা প্রমান করতে এ পর্যন্ত ৫৭ জন নারী মহাকাশে বেরিয়ে এসেছেন। রহস্যের এ জগৎকে জানতে আগ্রহ বাড়ছে দিন দিন। মহাকাশে নারীদের যাবার পথটি খুলে দিয়েছেন রাশিয়ার নারী ভ্যালেন্তিনা তেরেসকোভা। তোমরা নিশ্চয় তার নাম শুনেছ। জানো তার কথা। ১৯৩৭ সালে রাশিয়ার একটি ছোট গ্রাম ইয়ারোস্লাভ এ জ্ম্ম নেন মহিয়সী এ নারী। বাবা ছিলেন সামান্য একজন ট্রাক ড্রাইভার। মা ছিলেন ক্ষুদ্র টেক্সটাইল কর্মচারী। ছোটবেলা থেকেই ভ্যালেন্তিনার স্কুলে মন বসতো না। স্কুলে যেতেও পছন্দ করতেন না তেরেসকোভা। তাই শৈশবে স্কুল ছেড়ে বেছে নেন ব্যাতিক্রম ধর্মী পেশা প্যারাসুট জাম্পার। আকাশে উড়ায় তার শখ। আকাশে প্যারাসুটিং করতে করতে শিখে নেন বিমান চালানোর কাজ। হয়ে যান পাইলট। অচিরেই দক্ষ পাইলট হিসেবে তার সুনাম ছড়িয়ে। ঝুকিপূর্ণ বিমান চালনায় সিদ্ধহস্ত তেরেসকোভা বেশ কিছু ভয়াবহ স্মৃতির মুখোমুখি হন। কিন্ত সবকিছু সফলভাবে শেষ করেন। তার স্বপ্ন ছিল মহাকাশে উড়ার। একদিন সে স্বপ্ন সত্যি হবে তা ছিল তেরেসকোভার কল্পনার বাইরে। ১৯৬১ সালে ইউরি গ্যগারিনের সফল মহাকাশে বিচরনের পর ৬২ সালে নারী নভোচারী পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় রাশিয়া। ডাক পড়ে তেরেসকোভার। এক কথায় রোমাঞ্চকর এ যাত্রার জন্য রাজী হয়ে তিনি। ১৯৬৩ সালে মহাকাশ জয় করে ১৬ জুন পৃথিবীতে ফিরে আসেন তেরেসকোভা। ইতিহাসের পাতায় নাম উঠে যায় তার। ভ্যালন্তেনিার মহাকাশ জয়ে অনুপ্রানিত হয়ে গত ৫০ বছররে অনেক নারী পাড়ি জমিয়েছেন মহাকাশে। এ সংখ্যা প্রায় ৫৭। শুধু বিজয় শেষে ফিরে আসতে পারেন নি আমাদের পাশের দেশ ভারতের নভোচারী কল্পনা চাওলা। সাহসি এ নারীকে এখনও স্মরণ করে ভারত। ইরানের আনুশেহ আনসারী, কানাডার রবারডার বন্ডার, জাপানের চিয়াকী মুকাই, আফ্রিকার নারী ড. জেসমিন, কোরিয়ার লিউসহ অনেক নারী মহাকাশে বেড়ানোর স্বাদ গ্রহণ করেছে। ২০০৩ সালে কল্পনা চাওলা ফিরে আসার সময় নভোযান কলম্বিয়ায় আকস্মিক বিস্ফোরনের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মারা যায় কল্পনা। তারপরও থেমে নেই নারীর মহাকাশ যাত্রা।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.