--- বিজ্ঞাপন ---

রহস্যময় বারমুডা ট্রায়াঙ্গল

0

কাজী আবুল মনসুর  :

বারমুডা ট্রায়াঙ্গল এর কথা তো তোমরা কম-বেশী শুনেছো, এর ভেতরে গেলেই নাকি জাহাজ আর বিমান উধাও হয়ে যায়!! মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট এম এইচ ৩৭০ অস্বাভাবিকভাবে উধাও হয়েছে। বারমুডা ট্রায়াঙ্গল ও অস্বাভাবিক দুর্ঘটনার কথা তো নিশ্চয়ই সবারই জানতে ইচ্ছে করছে? তো আর দেরী করে কাজ কী, চলো সেসব ঘটনা শুনে আসি।

আটলান্টিক মহাসাগরের বারমুডা ট্রায়াঙ্গল পৃথিবীর রহস্যময় স্থানগুলোর অন্যতম। স্থানীয় অধিবাসীরা এ এলাকাটির নামকরণ করেছে পাপাত্মাদের ত্রিভুজ। তিনটি প্রান্ত দিয়ে এ অঞ্চলটি সীমানাবদ্ধ। আর তাই একে বলা হয় বারমুডা ট্রায়াঙ্গল বা বারমুডা ত্রিভুজ। তিনটি প্রান্তে এক প্রান্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা, একপ্রান্তে পুয়ের্টো রিকো এবং অপর প্রান্তে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বারমুদা দ্বীপ অবস্থিত। ত্রিভুজাকার এই অঞ্চলটির মোট আয়তন ১১৪ লাখ বর্গ কিলোমিটার। এটি ২৫-৪০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৫৫-৫৮ ডিগ্রি পশ্চিম দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। এ অঞ্চলের রহস্যময়তার একটি দিক হল, কোনও জাহাজ এই ত্রিভুজ এলাকায় প্রবেশ করার কিছুক্ষণের মধ্যেই বেতার তরঙ্গ প্রেরণে অক্ষম হয়ে পড়ে। উপক’লের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে ব্যর্থ হয়। একসময় দিক নির্ণয় করতে না পেরে রহস্যজনকভাবে অদৃশ্য হয়ে যায়। কিন্তু এরই মধ্যে প্রমাণিত হয়েছে কিছু প্রকৃতিগত ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য ছাড়া এই ট্রায়াঙ্গল অন্য সব এলাকার মতোই স্বাভাবিক।

মার্কিন নেভির সূত্র অনুযায়ী, গত ২০০ বছরে এ এলাকায় কমপক্ষে ৫০টি বাণিজ্যিক জাহাজ এবং ২০টি বিমান চিরতরে অদৃশ্য হয়ে গেছে। এর মধ্যে ১৯৬৮ সালের মে মাসে হারিয়ে যাওয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক ডুবোজাহাজের ঘটনাটি সারা বিশ্বে সবচাইতে বেশি আলোড়ন তুলেছিল। এভাবে এ এলাকায় এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫০০ লোক প্রাণ হারিয়েছে বলে মনে করা হয়। সবচাইতে আশ্চর্যের বিষয় হল, হারিয়ে যাওয়া এসব যানগুলোর কোনও ধ্বংসাবশেষ পরবর্তীকালে অনেক খুঁজেও পাওয়া যায়নি। এর রহস্য উদঘাটনে বিভিন্ন সময়ে বেতার তরঙ্গের অনুপস্থিতির কথা বলা হলেও এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি। মার্কিন সামরিক বাহিনী এ এলাকায় বেশ কিছু গবেষণা চালিয়েও তেমন কোনও তথ্য উদ্ধার করতে পারেনি। অনেকে মনে করেন, নাবিকদের ভাষ্য অনুযায়ী এ এলাকায় মাঝে মাঝে বেতার তরঙ্গ হয়তো হারিয়ে যায়, তবে তা সবসময়ের জন্য নয়। কারণ পৃথিবীর কোনও এলাকায় স্বাভাবিক বেতার তরঙ্গের প্রবাহ হারিয়ে যেতে বা নিশ্চিহ্ন হতে পারে না। তাহলে সারা পৃথিবীর বেতার সিস্টেমই ধ্বংস হয়ে যাবে। গবেষকরা হারিয়ে যাওয়া যানের ধ্বংসাবশেষ না পাওয়ার যে ব্যাখ্যাটি দিয়ে থাকেন তা হল, আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যে একটি অন্যতম গভীর স্থান হচ্ছে এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গল। এমনকি আধুনিক ও প্রশিক্ষিত ডুবুরি সরঞ্জাম দিয়ে এই অঞ্চলে উদ্ধার কাজ চালানো এখনও অসম্ভব। স্যাটেলাইট প্রযুক্তির কারণে ধ্বংসাবশেষ কোথায় আছে তা হয়তো জানা সম্ভব, কিন্তু সেগুলো উদ্ধার করা ততটাই কঠিন। ফলে এ এলাকায় কোনও ধ্বংসাবশেষ নাও পাওয়া যেতে পারে।


বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের বিস্তৃত

এই ত্রিভুজের উপর দিয়ে মেক্সিকো উপসাগর থেকে উষ্ণ সমুদ্র স্রোত বয়ে গেছে। এই তীব্র গতির স্রোতই অধিকাংশ দুর্ঘটনার কারণ। এখানকার আবহাওয়া এমন যে হঠাৎ করে ঝড় ওঠে আবার থেমে যায়, গ্রীষ্মে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। বিংশ শতাব্দীতে টেলিযোগাযোগ, রাডার ও স্যাটেলাইট প্রযুক্তি পৌঁছানোর আগে এমন অঞ্চলে জাহাজ ডুবি খুব স্বাভাবিক একটি ঘটনা। এই অঞ্চল বিশ্বের ভারী বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলকারী পথ গুলোর অন্যতম। জাহাজগুলো আমেরিকা, ইউরোপ ও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে যাতায়াত করে। এছাড়া এটি হল প্রচুর প্রমোদ তরীর বিচরণ ক্ষেত্র। এ অঞ্চলের আকাশপথে বিভিন্ন রুটে বাণিজ্যিক ও ব্যক্তিগত বিমান চলাচল করে। ত্রিভুজের বিস্তৃতির বর্ণনায় বিভিন্ন লেখক বিভিন্ন মত দিয়েছেন। কেউ মনে করেন এর আকার ট্রাপিজমের মত, যা ছড়িয়ে আছে স্ট্রেইটস অব ফ্লোরিডা, বাহামা এবং ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ এবং ইশোর পূর্বদিকের আটলান্টিক অঞ্চল জুড়ে, আবার কেউ কেউ এগুলোর সাথে মেক্সিকোর উপসাগরকেও যুক্ত করেন। তবে লিখিত বর্ণনায় যে সাধারণ অঞ্চলের ছবি ফুটে ওঠে তাতে রয়েছে ফ্লোরিডার আটলান্টিক উপকূল, পর্তুরিকো, মধ্য আটলান্টিকে বারমুডার দ্বীপপুঞ্জ এবং বাহামা ও ফ্লোরিডা স্ট্রেইটস এর দক্ষিণ সীমানা যেখান ঘটেছে অধিকাংশ দুর্ঘটনা।

রহস্যের সূচনা
বারমুডা ট্রায়াঙ্গল বিষয়ে যারা লিখেছেন তাঁদের মতে ক্রিস্টোফার কলম্বাস সর্বপ্রথম এই ত্রিভুজ বিষয়ে অদ্ভুত অভিজ্ঞতার কথা লিখেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন যে তাঁর জাহাজের নাবিকেরা এ অঞ্চলের দিগন্তে আলোর নাচানাচি, আকাশে ধোঁয়া দেখেছেন। এছাড়া তিনি এখানে কম্পাসের উল্টাপাল্টা দিক নির্দেশনার কথাও বর্ণনা করেছেন। তিনি ১১ই অক্টোবর, ১৪৯২ তে তাঁর লগ বুকে এসব লিখেছিলেন। বর্তমানে বিশেষজ্ঞরা প্রকৃত লগবুক পরীক্ষা করে যে মত দিয়েছেন তার সারমর্ম হল, নাবিকেরা যে আলো দেখেছেন তা হল স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ব্যবহৃত নৌকায় রান্নার কাজে ব্যবহৃত আগুন, আর কম্পাসে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল নক্ষত্রের অবস্থান পরিবর্তনের কারণে।


১৯৫০ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর ই. ভি. ডব্লিউ. জোন্স সর্বপ্রথম এ ত্রিভুজ নিয়ে খবরের কাগজে লিখেন। এর দুবছর পর ফেইট ম্যাগাজিনে জর্জ এক্স. স্যান্ড ‘‘সী মিস্ট্রি এট আওয়ার ব্যাক ডোর’’ শিরোনামে একটি ছোট প্রবন্ধ লিখেন। এ প্রবন্ধে তিনি ফ্লাইট নাইনটিন (ইউ এস নেভী-র পাঁচটি ‘টি বি এম এভেন্জার’ বিমানের একটি দল, যা প্রশিক্ষণ মিশনে গিয়ে নিখোঁজ হয়) এর নিরুদ্দেশের কাহিনী বর্ণনা করেন এবং তিনিই প্রথম এই অপরিচিত ত্রিভুজাকার অঞ্চলের কথা সবার সামনে তুলে ধরেন। ১৯৬২ সালের এপ্রিল মাসে ফ্লাইট নাইনটিন নিয়ে আমেরিকান লিজান ম্যাগাজিনে লেখা হয়। এরপর ভিন সেন্ট গডিস ‘‘প্রাণঘাতী বারমুডা ট্রায়াঙ্গল’’ নামে আর এক কাহিনী ফাঁদেন ১৯৬৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে। এর উপর ভিত্তি করেই তিনি আরও বিস্তর বর্ণনা সহকারে লিখেন ইনভিজিবল হরাইজনচ মানে ‘‘অদৃশ্য দিগন্ত’’ নামের বই। আরও অনেক লেখকই নিজ নিজ মনের মাধুরী মিশিয়ে এ বিষয়ে বই লিখেন, তাঁরা হলেন জন ওয়ালেস স্পেন্সার, তিনি লিখেন লিম্বো অফ দ্যা লস্ট (১৯৬৯, থেকে ১৯৭৩), মানে ‘‘বিস্মৃত অন্তর্ধান’’ চার্লস বার্লিটজ লিখেন ‘‘দি বারমুডা ট্রায়াঙ্গল’’ ( ১৯৭৪), রিচার্ড উইনার লিখেন দ্যা ডেভিলহস ট্রায়াঙ্গল ‘‘শয়তানের ত্রিভুজ’’ (১৯৭৪) নামের বই, এছাড়া আরও অনেকেই লিখেছেন। এরা সবাই ঘুরেফিরে একার্ট বর্ণিত অতি প্রাকৃতিক ঘটনাই বিভিন্ন স্বাদে উপস্থাপন করেছেন।

কুসচ এর ব্যাখ্যা
লরেন্স ডেভিড কুসচ হলেন ‘‘অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটি’’-র রিসার্চ লাইব্রেরিয়ান এবং ‘‘ দ্যা বারমুডা ট্রায়াঙ্গল মিস্ট্রি: সলভড (১৯৭৫)’’ এর লেখক। তাঁর গবেষণায় তিনি চার্লস বার্লিটজ এর বর্ণনার সাথে প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনার অসংগতি তুলে ধরেন। যেমন- যথেষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণ থাকার পরেও বার্লিটজ বিখ্যাত ইফটসম্যান ডোনাল্ড ক্রোহার্সট এর অন্তর্ধানকে বর্ণনা করেছেন রহস্য হিসেবে। আরও একটি উদাহরণ হল- আটলান্টিকের এক বন্দর থেকে ছেড়ে যাওয়ার তিন দিন পরে একটি আকরিক-বাহী জাহাজের নিখোঁজ হবার কথা বার্লিটজ বর্ণনা করেছেন, আবার অন্য এক স্থানে একই জাহাজের কথা বর্ণনা করে বলেছেন সেটি নাকি প্রশান্ত মহাসাগরের একটি বন্দর থেকে ছাড়ার পর নিখোঁজ হয়েছিল। এছাড়াও কুসচ দেখান যে বর্ণিত দুর্ঘটনার একটি বড় অংশই ঘটেছে কথিত ত্রিভুজের সীমানার বাইরে। কুসচ এর গবেষণা ছিল খ্বুই সাধারণ। তিনি শুধু লেখকদের বর্ণনায় বিভিন্ন দুর্ঘটনার তারিখ, সময় ইত্যাদি অনুযায়ী সে সময়ের খবরের কাগজ থেকে আবহাওয়ার খবর আর গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো সংগ্রহ করেছেন যা গল্পে লেখকরা বলেননি। কুসচ এর গবেষণায় যা পাওয়া যায় তা হল- বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে যে পরিমাণ জাহাজ ও উড়োজাহাজ নিখোঁজ হওয়ার কথা বলা হয় তার পরিমাণ বিশ্বের অন্যান্য সমুদ্রের তুলনায় বেশি নয়। এ অঞ্চলে গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঝড় নিয়মিত আঘাত হানে, যা জাহাজ ও উড়োজাহাজ নিখোঁজ হওয়ার অন্যতম কারণ। কিন্তু বার্লিটজ বা অন্য লেখকেরা এধরনের ঝড়ের কথা অনেকাংশেই এড়িয়ে গিয়েছেন।
অনেক ঘটনার বর্ণনাতেই লেখকেরা কল্পনার রং চড়িয়েছেন। আবার কোন নৌকা নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে দেরিতে বন্দরে ভিড়লে তাকে নিখোঁজ বলে প্রচার করা হয়েছে। আবার কখনোই ঘটেনি এমন অনেক ঘটনার কথা লেখকেরা বলেছেন। যেমন- ১৯৩৭ সালে ফ্লোরিডার ডেটোনা সমুদ্রতীরে একটি বিমান দুর্ঘটনার কথা বলা হয়, কিন্তু সেসময়ের খবরের কাগজ থেকে এ বিষয়ে কোন তথ্যই পাওয়া যায়নি। সুতরাং কুসচ এর গবেষণার উপসংহারে বলা যায়- লেখকরা অজ্ঞতার কারণে অথবা ইচ্ছাকৃত ভাবে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল নিয়ে বানোয়াট রহস্য তৈরি করেছেন।

কি সেই রহস্য
একে শয়তানের ত্রিভূজ নামেও আখ্যায়িত করা হয়। এখানে বেশ কিছু জাহাজ ও উড়োজাহাজ রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হওয়ার কথা বলা হয়। অনেকে মনে করেন ঐ সকল অন্তর্ধানের কারণ নিছক দূর্ঘটনা, যার কারণ হতে পারে প্রাকৃতিক দূর্যোগ অথবা চালকের অসাবধানতা। আবার চলতি উপকথা অনুসারে এসবের পেছনে দায়ী হল কোন অতিপ্রাকৃতিক কোন শনি বা ভিনগ্রহের কোন প্রাণীর উপস্থিতি। তবে এ বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য রয়েছে যে, যেসব দূর্ঘটনার উপর ভিত্তি করে বারমুডা ট্রয়াঙ্গলকে চিহ্নিত করা হয়েছে তার বেশ কিছু ভুল, কিছু লেখক দ্বারা অতিরঞ্জিত হয়েছে এমনকি কিছু দূর্ঘটনার সাথে অন্যান্য অঞ্চলের দূর্ঘটনার কোনই পার্থক্য নেই।
মানব ঘটিত দূর্ঘটনা
অনেক জাহাজ এবং বিমান নিখোঁজ হওয়ার ঘটনার তদন্তে দেখা গেছে এর অধিকাংশই চালকের ভুলের কারণে দূর্ঘটনায় পতিত হয়েছে। মানুষের ভুল খুবই স্বাভাবিক ঘটনা, আর এমন ভুলের কারণে দুর্ঘটনা বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের ঘটতে পারে। যেমন কোস্ট গার্ড ১৯৭২ সালে ভি.এ. ফগ -এর নিখোঁজ হবার কারণ হিসেবে বেনজিন এর পরিত্যাক্ত অংশ অপসারণের জন্য দক্ষ শ্রমিকের অভাবকে দায়ী করেছেন। অনেক নিখোঁজ ঘটনার উপসংহারেই পৌঁছানো যায়নি, কারণ অনুসন্ধানের জন্য তাদের কোন ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

কম্পাসের ভুল দিক নির্দেশনা
কম্পাসের পাঠ নিয়ে বিভ্রান্তি অনেকাংশে এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের কাহিনীর সাথে জড়িত। এটা মনে রাখা প্রয়োজন যে কম্পাস থেকে চুম্বক মেরুর দূরত্বের উপর ভিত্তি করে এর দিক নির্দেশনায় বিচ্যুতি আসে। উদাহরন হিসেবে বলা যায়- যুক্তরাষ্ট্রে শুধুমাত্র উইসকনসিন থেকে মেক্সিকোর উপসাগর পর্যন্ত সরলরেখা বরাবর চৌম্বক উত্তর মেরু সঠিক ভাবে ভৌগোলিক উত্তর মেরু নির্দেশ করে। এই সাধারন তথ্য যে কোন দক্ষ পথপ্রদর্শকের জানা থাকার কথা। কিন্তু সমস্যা হল সাধারন মানুষকে নিয়ে, যারা এ বিষয়ে কিছুই জানে না। ঐ ত্রিভূজ এলাকা জুড়ে কম্পাসের এমন বিচ্যুতি তাদের কাছে রহস্যময় মনে হয়। কিন্তু এটা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গলটি কিছু স্থলভাগের উপর দিয়েও গিয়েছে। যেমন পোর্তো রিকো , বাহামা এমন কি বারমুডা নিজেই। কিন্তু এসব জায়গায় কোন স্থলযানের নিখোঁজ হবার খবর জানা যায়নি। এছাড়া এই ত্রিভূজের মধ্যে অবস্থিত ফ্রীপোর্ট শহরে বড়সড় জাহাজ কারখানা আর একটি বিমান বন্দর রয়েছে, যা কোন গোলযোগ ছাড়াই বছরে ৫০,০০০ টি বিমানের ফ্লাইট পরিচালনা করছে। দেখা গেল যে ১৯৭৮ সালেই বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্যের জট খুলে গেছে।
কিন্তু ‘পলিমোড প্রোগ্রাম’ -এর অনুসন্ধানের কথা অজানা থাকার কারণে অনেকের কাছে এটি এখনও রহস্যময়।

কয়েকটি অস্বাভাবিক বিমান দুর্ঘটনা 
মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট এম এইচ ৩৭০ অস্বাভাবিকভাবে উধাও হয়েছে। এক মাসেরও বেশী সময় ধরে ব্যাপক তল্লাশি চালিয়েও এখনো বিমানটির হদিস পাওয়া যায়নি। ইতিহাসের পাতায় আছে এমন আরও অনেক উদাহরণ। এবার জানবো, এমনই বেশ কয়েকটি অস্বাভাবিক বিমান দুর্ঘটনা সম্পর্কে!
(১) ১৯৩৭ সালের ২য় জুলাইয়ে পাইওনারিং আমেরিকান এভিয়েটর “এমেলিয়া ইয়ারহার্ট” পৃথিবী প্রদক্ষিণ কালে তার সহকর্মীকে নিয়ে উধাও হন। অনেক মনে করেন, পর্যাপ্ত জ্বালানির অভাবে তার প্লেনটি সমুদ্রে আছড়ে পড়ে। আবার অনেকে মত দিয়েছেন, তিনি তার প্লেনের সাথে জাপানের একটি মালভূমিতে বিলীন হয়ে যান। আরও খবর পাওয়া যায় যে, তিনি প্লেন ক্র্যাশ থেকে বেঁচে ফেরত এসেছেন এবং তার নাম পরিবর্তন করে নেদারল্যান্ড-এ বাস করছেন।
(২) ১৯৪৪ সালে জনপ্রিয় বিগ ব্যান্ড লিডার “গ্লেন মিলার” আমেরিকার আর্ম ফোর্স-এ স্ট্রিং পারফর্মেন্স এর জন্য যান। পরদিন প্যারিস যাওয়ার সময় ইংলিশ চ্যানেলের উপর থেকে তার প্লেনটি উধাও হয়ে যায়। অনেকে বলেন অগ্নিবিস্ফোরণের কারণে প্লেনটি ক্র্যাশ করে। তবে সবচেয়ে মজার তথ্যও পাওয়া যায় যে, মিলার নাকি হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন।
(৩) ১৯৪৫ সালে প্রথম বারমুডা ট্রায়েঙ্গেলের আবির্ভাব ঘটে। ঘটনাটি ছিল ১৪ জন নৌবাহিনীর ট্রেইনির। অভিজ্ঞ পাইলট চার্লস ফ্লোরিডা থেকে গন্তব্যের দিকে যাওয়ার সময় বারমুডার উপর থেকে প্লেনসহ হারিয়ে যান। হারিয়ে যাবার মুহূর্তে বৈমানিকদের একজন অতি নিম্ন বেতার তরঙ্গ পাঠাতে সক্ষম হয়েছিলেন। তার এই বেতার বার্তাতে বারবার একটি কথাই বলা হচ্ছিল, ‘সামনে প্রচন্ড কুয়াশা। আমরা কিছু দেখতে পাচ্ছি না। কোথায় যাচ্ছি তাও বুঝতে পারছি না। আমাদের উদ্ধার করো।’
জানা যায়, আবহাওয়ার হঠাৎ পরিবর্তনের কারনে প্লেনটিকে খুঁজে পাওয়া যায়নি আর। তবে ভূতুড়ে হলেও সত্যি যে, প্লেনটি সম্পর্কে আরও তথ্য নিতে আরেকটি বিমান পাঠানো হলে সেটিও আর ফেরত আসেনি।

(৪) ১৯৪৭ সালে আর্জেন্টিনা থেকে সান্তিয়াগো যাওয়ার সময় ব্রিটিশ সাউথ এয়ারওয়েজ এর “স্টার ডাস্ট” বিমানটি আন্দিজ পর্বতের উপর আঘাত হানে এবং গন্তব্যে পৌছতে পারেনি। গবেষণায় বলা হয়, ভিনগ্রহের কোন যন্ত্রের মাধ্যমে বিমানটিতে আঘাত ঘটানো হয়েছিল। এই ঘটনার ৫০ বছর পর আর্জেন্টিনার দুই ব্যক্তি বিমানটির কিছু ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পায়।
(৫) ১৯৪৮ এ আবারও ব্রিটিশ সাউথ এয়ারওয়েজ এর “স্টার টাইগার” বিমানটি বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের উপর থেকে হারিয়ে যায়। বিমানটি খুবই খারাপ আবহাওয়ার মধ্যে যাত্রা শুরু করে। এতো ধীরে যাওয়ার কারনে জ্বালানী ফুরিয়ে যেতে থাকে। এক সময় বারমুডার উপর অপর্যাপ্ত জ্বালানীর কারণে এটা বিধ্বস্ত হয়।
(৬) ১৯৯৯ সালে ফ্লাইট ১৯১ শিকাগো থেকে যাত্রা শুরু করার কিছুক্ষনের মধ্যে বিধ্বস্ত হয়। সবচেয়ে আজব ব্যাপার হল, এরপর যত বিমান এই নামে করা হয়েছিল সবই গন্তব্যে যাওয়ার আগেই ধ্বংস হয়ে যায়।
(৭) ১৯৪৯ সালে বারমুডা থেকে জ্যামাইকা যাওয়ার পথে ব্রিটিশ সাউথ এয়ারওয়েজ এর “স্টার এরিএল” বিলিন হয়ে যায়। বলা হয় যে, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে প্লেনটির এ দশা হয়।
(৮) উরুগুয়ের একটি প্লেন খারাপ আবহাওয়ায় পরে আন্দিজ পর্বতে আছড়ে পড়ে। ৪৫ জনের মধ্যে মাত্র ১৬ জন ঘটনাস্থলে বাকিদের মৃতদেহ খেয়ে বেঁচেছিলেন। ১৯৯৩ সালে এই অবিশ্বাস্য ঘটনা নিয়ে একটি মুভিও করা হয়।
(৯) মিশরীয় ফ্লাইট ৯৯০ এর ক্র্যাশ করার ঘটনাটি অনেকটাই কাকতালীয়। পাইলট আর কো-পাইলটের মধ্যে বাক বিতণ্ডায় প্লেনটির এই হাল হয় বলে জানা যায়।
(১০) ২০০৯ সালে আটলান্টিক মহাসাগরের উপর হারিয়ে যায় ফ্রান্স ফ্লাইট ৪৪৭। জানা যায় যে, বরফের খণ্ড বিমানের মুখ বন্ধ করে দেয় আর অটো পাইলট এর সাথেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যার কারনে বিমানটি গতিবিধি হারিয়ে সমুদ্রে পড়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে ৫০টি মৃতদেহের সন্ধান পাওয়া যায়। পরবর্তীতে ২০১১ সালে বিমানটির আরও কিছু অংশ পাওয়া যায় যেখান থেকে আরও ১৪৭ টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। বাদবাকি ৭৪ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন!

এ ধরনের আরো অনেক অস্বাভাবিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। যার রহস্য পুরোপুরি উন্মোচন করতে পারেননি পৃথিবীর বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীরা। সেসব ঘটনা আরেকদিন না হয় শোনাব তোমাদের।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.