--- বিজ্ঞাপন ---

এ কেমন প্রেম..আলবিদা বলে প্রেমিক-প্রেমিকার কাপ্তাই হ্রদে ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যা।

0

রাঙ্গামাটি শহরের রিজার্ভবাজারের স্থায়ী বাসিন্দা ওষুধ ব্যবসায়ী ছোটন দেওয়ানজির ছেলে প্রান্ত দেওয়ানজি হিমেল (১৮)। একই জেলা শহরের এক আত্মীয়ের বাসায় থেকে পড়াশুনা করছিলো চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার শিলক এলাকার শহীদ তালুকদারের কন্যা তাহফিমা খানম তিন্নি (১৮)। লেকার্স পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের বাণিজ্য বিভাগের ছাত্রী হিসেবে পড়াশুনা করছেন রাঙ্গামাটি থেকেই।

কলেজে আসা যাওয়ার পথে মাঝে মধ্যে দেখা আর দেখা থেকেই একে অপরের পছন্দ। এভাবে কিছুদিন যেতেই ভিন্ন ধর্মের এ মানুষকে জীবনসঙ্গি হিসেবেই পছন্দ করে বসে ঢাকার ক্যামব্রিয়ান কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র হিমেল। তাহফিমা খানম তিন্নি (১৮)ও তার সাথে গভীর প্রেমে আচছন্ন হয়ে পড়ে। কিন্তু তাদের দুজনের ভালবাসায় বাঁধা হয়ে দাড়ায় ধর্ম। সমাজ ও সংস্কৃতির কারণে তাদের অনেককেই কিছু বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়। তারপরও ভালোবাসার মানুষ বলে কথা! তাই কঠিন বাস্তবতাও প্রেমীক যুগলের কাছে হয়ে ওঠে লঙ্ঘনীয় ব্যাপার। (হিন্দু-মুসলিম) দুজন দুই ধর্মের জাতক হওয়ায় দুই পরিবারের মাঝেও দেখা দিয়েছে সংশয়। দুজনের মনেই আবেগের জায়গা থেকেই এমনই সংশয় কাজ করছে যে, তাদের জন্য সামাজিক ভাবে পরিবার হেয় হবে।

একদিকে মনের মধ্যে অপরাধবোধ অন্যদিকে নিজেদের প্রেমের সম্মান রক্ষা। ধর্ম ভিন্ন হলেও সম্পর্ক একটাই, ভালোবাসার। দুটোকেই বাঁচিয়ে রাখতে দুজনই বেঁচে নিয়েছে আত্মহত্যার মতো জগন্য পথ। এ চিন্তা থেকেই গত ২৩ জুলাই সকাল ৭টা ৩৩ মিনিটে হিমেল তার ফেসবুকের ওয়ালে স্ট্যাটাস লিখেছিলেন ‘আলবিদা’। এরপর থেকে নিখোঁজ হয় হিমেল। তার পরিবারের পক্ষ থেকে খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারে ঠিক একই সময়ে নিখোঁজ হয় তিন্নিও। এরপর দুই পরিবারের মাঝে ধারণা ছিলো ভালবেসে বিয়ে করার উদ্দ্যেশেই হয়তো তারা পালিয়ে গেছে। কিন্তু তখনও কেউ ভাবেনি তারা দুজন কাপ্তাই হৃদে ঝাপ দিয়ে নিজেদের প্রাণ উৎসর্গ করে পরিবারের সম্মান ও ভালবাসা দুটোকেই বাঁচিয়ে দেবে।

নিখোঁজের দুদিন পর আজ ২৫ জুলাই বৃহস্পতিবার সকালে রাঙামাটি-কাপ্তাই সড়কের বরগাং এলাকায় হৃদ থেকে যুগলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে হ্রদের জল থেকে ভাসমান অবস্থায় ছেলে ও মেয়ে দুজনের লাশ উদ্ধার করে। পরে তাদের পরিবারকে খবর দিলে স্বজনরা এসে লাশগুলো শনাক্ত করে।

প্রেমিক যুগলের লাশ উদ্ধারের তথ্য নিশ্চিত করেছেন রাঙ্গামাটির সদরের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহেদুল হক রনি। বলেন, দুজন দু ধর্মের হয়েও তারা সম্পর্কের অনেক দুর চলে যায়। যেখান থেকে আর ফেরার সম্ভাবনা ছিলনা। এদিকে দুজনের পরিবারের পক্ষ থেকে এবং সমাজের পক্ষ থেকেও তা অসম্ভব জেনেই ফেসবুকে ঘোষণা দিয়েই যুগলটি আত্মহত্যা করে। তারা আবেগ থেকেই এমন জগন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে করছে ওসি। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান ওসি রনি। হিমেলের পিতা ছোটন দেওয়ানজি জানিয়েছেন, আমার ছেলে কেন এমন কাজ করেছে তা আমাদের বোধগম্য নয়, তবে তার বন্ধু বান্ধব ও পরিচিত কয়েকজনের ভাষ্যমতে তারা দুজন প্রেমের কারণেই আত্মহত্যা করেছে বলে ধারণা করছি। তিনি বলেন হিমেলের প্রেম ঘটিত কোন বিষয় সম্পর্কে আমি অবগত ছিলাম না।

এদিকে তিন্নি রাঙ্গামাটির যে বাসায় থেকে পড়াশুনা করতো সে বাসার স্বজন নুরুল আলম মিয়াও বলছেন তারা আসলে কিচুই জানতো না। তারাও শুনেছে একটি হিন্দু ছেলের সাথে তিন্নির সম্পর্ক ছিলো। গত ২৩ জুলাই তিন্নি নিখোঁজ হয়। দুইজন দুই ধর্মের হওয়ায় তারা নিজেরাই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে আবেগী মনের সিদ্ধান্তে এ পথ খুঁজে নেন। তিনিও কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বলতে থাকেন কিসের মধ্যে কি হলো কিছুই বুঝতে পারছিনা।

অন্যদিকে দুজনের লাশ উদ্ধারের পর হিমেলের টাইমলাইনের শেষ স্ট্যাটাস পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে শোকাহতের ধ্বনি। ভালোবাসার এমন করুণ সলিল সমাধীতে বিস্মিত অনেকেই। আবার আত্মহত্যার মতো জগন্যতম পথ বেঁচে নিয়ে কাজটা ভাল করেননি বলেও মন্তব্য অনেকের। সূত্রঃ বাংলাদেশ মেইল

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.