--- বিজ্ঞাপন ---

কালুরঘাট সেতু ভেঙ্গে পড়তে পারে

0

কাজী আবুল মনসুর…

বড় ধরনের ঝুকিঁতে রয়েছে চট্টগ্রামের ৯০ বছরের পুরানো কালুরঘাট সেতু। দিন যতই যাচ্ছে কালুরঘাট সেতু নিয়ে শঙ্কা ততই বাড়ছে। প্রতিদিন ঝুকি নিয়ে যাতায়াত করছে ট্রেনসহ হাজার হাজার ভারী যানবাহন। অথচ ২০ বছর আগেই সেতুটিকে ঝুকিঁপূর্ণ ঘোষণা করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। গত ২০ বছরে সেতুটির পেছনে ব্যয় হয়েছে ৪০ কোটি টাকারও বেশি টাকা। এখন জোড়াতালি দিয়েই চলছে এখন সেতুটি। ভেঙ্গে পড়তে পারে যে কোন মুহুর্তে। কালুরঘাট সেতু নির্মানের জন্য বিভিন্ন সরকারের কাছে দাবি কম উঠেনি। কিন্ত কিছুই হচ্ছে না। শেষপর্যন্ত এ সেতুর জন্য স্থানীয় সাংসদ মাইনুদ্দিন খান বাদল নিজের দলবদল, এমনকি পদত্যাগেরও হুমকি দিয়েছেন। তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ অবশ্য বলেছেন, এ সরকারের আমলে কালুরঘাট সেতু হবে। কিন্ত কবে শুরু হবে নির্মান কাজ।
কালুরঘাট সেতুর জন্য বর্তমানে যেসব কর্মকান্ড হচ্ছে একই কর্মকান্ড হয়েছে কর্ণফুলি সেতু নিয়েও। বছরের পর বছর চলেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের বাহাস। শেষপর্যন্ত চীনের হাতে এ সেতু নির্মান হলে সব কিছুর সমাপ্তি ঘটে।
এদিকে কালুরঘাট সেতু নির্মান নিয়ে ‘কর্ণফুলী নদীর ওপর রেল কাম সড়ক সেতু প্রকল্প’ নামের একটি প্রকল্প ইতিমধ্যে একনেকে উপস্থাপিত হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, কর্নফুলী নদীর ওপর এই রেল ও সড়ক সেতু ভবিষ্যতে চীন, ভারত, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে সংযুক্ত করে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের অংশবিশেষ হিসেবে কাজ করবে। এটি নির্মাণে ব্যয় হবে ১ হাজার ১৬৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা। কিন্ত প্রশ্ন উঠেছে, এ প্রকল্পটি আদৌ বাস্তবায়িত হবে কিনা। হলে দীর্ঘসূত্রতায় পড়বে কিনা। আর এ দীর্ঘসূত্রতার মধ্যে কালুরঘাট সেতু নিয়ে বড় ধরনের কোন দূর্ঘটনা হয়ে যাচ্ছে কিনা। বর্তমানে সেতুটির অবস্থা যে পর্যায়ে গেছে তাতে যে কোন মূহুর্তে এটি ভেঙ্গে পড়তে পারে। এটি আর ভার সইতে পারছে না।


অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯১৪ সালের দিকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় কর্নফুলি নদীর উপর একটি সেতু নির্মানের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। বৃটিশ সরকার ১৯৩০ সালে বিদেশ থেকে ভারী লোহার পাত, পিলার আর কাঠ দিয়ে নির্মান করে সেতুটি। কালু মাঝির নাম দিয়ে এর নামকরন কালুরঘাট সেতু। চট্টগ্রামের সাথে দক্ষিণ চট্টগ্রামের ট্রেন চলাচল যোগাযোগ সহজ করার লক্ষে মূলত সেতুটি নির্মিত হয়। পরবর্তিতে ১৯৫৮ সালে যানবাহনের উপযুক্ত করে সেতুটি চলাচলের জন্য উপযুক্ত করা হয়। যখন রেল চলে তখন সেতুতে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। প্রায় ২ হাজার ১০০ ফুট দীর্ঘ এ সেতুতে রয়েছে ৬টি বিশালাকৃতির ইটের পিলার, ১২টি স্টিল পিলার, ১৯টি স্প্যান। কালুরঘাট সেতু ঝুকিপূর্ণ হওয়ার কারনে চট্টগ্রাম বাসীর দীর্ঘদিনের দাবির মূখে কর্নফুলি সেতু নির্মান করা হয়। এ সেতুতে ট্রেন চলাচলের কোন ব্যবস্থা না থাকা এবং দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের বিশাল অংশের কোন কাজে না লাগার কারনে কালুরঘাট সেতুর চাহিদা অনেকটা আগের মতোন থেকে যায়। এখনো দক্ষিণ চট্টগ্রামের বড় অংশের অন্যতম ভরসা এই একমুখী রেল সেতুটি। একমুখী চলাচলের কারণে দুই পাশে যানজট লেগে থাকে। প্রতিদিন সেতুটির উপর যে চাপ পড়ে তাতে কখন এটি ভেঙ্গে পড়ে তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। প্রতিবছর এ সেতু নিয়ে এক ধরনের ব্যবসা হচ্ছে। মেরামতের নামে হচ্ছে টাকার শ্রাদ্ধ। সেতুর ওপরের কার্পেটিং অনেক স্থানে উঠে গেছে। কয়েকটি স্থানে লোহার পাতে মরিচা ধরেছে। নিচের পিলারগুলোর বয়স এখন প্রায় ৯০ বছর। কোন স্থাপনা ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করলে তা ব্যবহার করা যায় কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সাধারনত সেতুর লোহার পিলার ৬০ থেকে ৭০ বছর ব্যবহার করার বিষয়টি বিশেষজ্ঞ মহলে থাকলেও কালুরঘাট সেতুর পিলারের বয়স এখন ৯০ বছরের কাছাকছি।
রেল সুত্রে জানা গেছে, গত ২০০১ সালে এ সেতুটিকে ঝুকিপূর্ণ বলে ঘোষণা করে রেলওয়ে কতৃপক্ষ। এক পর্যায়ে এটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ২০০৪ সালে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে এটি সংস্কার করা হয়। পরবর্তিতে এ সেতুর জন্য দু’ বা এক কোটি টাকা করে বাজেট রাখা হয়। প্রতিবছর কোটি টাকার শ্রাদ্ধ হচ্ছে। জোড়াতালি দিয়ে উপরের অংশে প্রলেপ লাগিয়ে টাকা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্ত পানির ভেতরের অংশ বা যে অংশের উপর পুরো সেতুটি দাড়িয়ে আছে তার অবস্থা কি রকম আছে তার খবর কেউ রাখে না। অথচ এ সেতুটির উপর দিয়েই চলছে ট্রেন। তেলের ট্যাংকার। ক’বছর আগে এ সেতুটির পার হয়ে পরবর্তি বোয়ালখালির সাকিরাপুল সেতু ভেঙ্গে তেলের ট্যাংকার নিচে পড়ে যায়। এখানে পড়া তেল চর্তুদিকে ছড়িয়ে পড়ার পর পরিবেশের উপর প্রভাব পড়ে। কিন্ত কোন কারনে কালুরঘাট সেতু ভেঙ্গে তেলের ট্যাংকার নিচে পড়লে চট্টগ্রাম শহরের ওয়াসার পানি সরবরাহও বন্ধ হয়ে যাবে। কারন কালুরঘাট সেতুটি এমন স্থানে রয়েছে যেখান থেকে মিঠা পানির উৎসস্থল হালদা শুরু। আর হালদা থেকে পানি নিয়ে ওয়াসা পরিশোধনের মাধ্যমে চট্টগ্রামে সরবরাহ করে। তাছাড়া হালদা হচ্ছে প্রাকৃতিক মাছের প্রজনন কেন্দ্র। মূল্যবান সম্পদ বলে খ্যাত হালদাও এখন কালুরঘাট সেতর কারনে ঝুকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, কালুরঘাট সেতুর উপর দিয়ে বেশি ওজনের যে কোন যান চলাচল নিষেধ রয়েছে। কিন্ত বাস্তবে তার কোন প্রতিফলন নেই। কিন্ত যেসব ট্যাংকার এ সেতুর উপর দিয়ে চলাচল করে তার সম্মিলিত ওজনও ৮-১০ টনেরও বেশি। ফলে কালুরঘাট সেতুতে যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যার পরিনাম হবে ভয়াবহ।###

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.