ভারতের সবচেয়ে দক্ষিণের শহর ধনুষকোডি। যদিও এখন সে শহর জনমানবহীন। এক সময়ে বেশ উন্নত শহর ছিল। রেলওয়ে স্টেশন, চার্চ, পোস্ট অফিস, বাজার, হাসপাতাল— একটা শহরে যা যা থাকে তার সবই ছিল এখানে। অথচ আরও উন্নত হওয়ার পরিবর্তে জাঁকজমকপূর্ণ সেই শহর আজ ভুতুড়ে। সম্পূর্ণ জনমানবহীন। তামিলনাড়ুর রামেশ্বরম জেলার এই দ্বীপ-শহর এমন একটা জায়গা, যেখানে প্রকৃতি এবং মানুষের বিস্ময়ের মেলবন্ধন ঘটেছে।
আর বিস্ময়ের সঙ্গে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মিশেলের জন্য এই ভুতুড়ে শহরের পর্যটকদের কাছে ব্যাপক চাহিদা এই শহর থেকে শ্রীলঙ্কার দূরত্ব মাত্র ৩১ কিলোমিটার। ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত এই শহরের উপর দিয়েই ভারত আর শ্রীলঙ্কার মধ্যে নিত্য যাতায়াত ছিল সাধারণ মানুষজনের। কখনও ব্যবসা, কখনও তীর্থের জন্য সেখানে যেতেন অনেকে। একটা ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় লণ্ডভণ্ড করে দেয় শহরটাকে। ১৮৬৪ সালের ২২-২৩ ডিসেম্বরের সেই ঘূর্ণিঝড় রামেশ্বরম সাইক্লোন বা ধনুষকোডি সাইক্লোন বলে পরিচিত। যা ২৮০ কিলোমিটার গতিবেগে বয়ে গিয়েছিল শহরটার উপর দিয়ে। দ্বীপ শহর ধনুষকোডির ২৩ ফুট উপরে লাফিয়ে উঠেছিল সমুদ্রের জলরাশি। লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল গোটা এলাকা। শহরের বেশির ভাগটাই চলে গিয়েছিল জলের তলায়। অন্তত ১৮০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। জানা যায়, ১১৫ যাত্রী নিয়ে রামেশ্বরমের পাম্বান থেকে ধনুষকোডি পর্যন্ত একটি যাত্রীবাহী ট্রেন যাচ্ছিল সে সময়। ঘূর্ণিঝড়ে ট্রেনের সমস্ত যাত্রীই মারা যান। পাম্বান থেকে ধনুষকোডি পর্যন্ত একটা রেলব্রিজ ছিল। সেটাও পুরো ধ্বংস হয়ে যায়। যে ক’জন মানুষ বেঁচে ছিলেন, তাঁরাও প্রাণভয়ে শহর ছেড়ে চলে আসেন তামিলনাড়ুর মূল ভূখণ্ডে। এর পরই তামিলনাড়ু সরকার শহরটাকে ‘গোস্ট টাউন’ বা ভুতুড়ে শহর হিসাবে ঘোষণা করে দেয়। একই সঙ্গে ছিন্ন হযে যায় ভারত-শ্রীলঙ্কার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ এই ট্রানজিট পয়েন্ট।