--- বিজ্ঞাপন ---

কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তান কি শেষ পর্যন্ত বড় ধরনের যুদ্ধে লিপ্ত হবে?….১ম পর্ব

0

কাশ্মীর নিয়ে ভারত -পাকিস্তান মুখোমুখি। কাশ্মীরে বর্তমানে  কি অবস্থা বিরাজ করছে তা জানার জন্য মুখিয়ে আছে সারা বিশ্ব। ভারত -পাকিস্তানের সাথে সীমান্ত নিয়ে একাধিকবার যুদ্ধ হলেও এবারের বিষয়টি কেউ হালকাভাবে নিচ্ছে না। ভারত ও পাকিস্তান কাশ্মীর নিয়ে বড় ধরনের কোন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে কিনা তা নিয়ে সারা বিশ্বে চলছে জল্পনা কল্পনা। ভারত-পাকিস্তানের কার অবস্থা কি রকম..এ নিয়ে পাঠকদের জানার জন্য কয়েক সিরিজের প্রতিবেদন প্রকাশ করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশের সংবাদ।  আন্তর্জাতিক অঙ্গনের বিভিন্ন বিষয়সহ পুরো বিষয়টি তুলে এনেছেন নির্বাহী  সম্পাদক মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম

এশিয়ার দুই পরমাণু শক্তির অধিকারী দেশ পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে কাশ্মীরকে ঘিরে উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। কয়েক মাস আগে ফেব্রুয়ারীতে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ভারতীয়  বিমান হামলা ও পরবর্তীতে ভারতীয় বিমান ভূপাতিত করে বৈমানিক আটক এবং সর্বশেষ গত ৫ আগস্ট কাশ্মীরকে ভারতের  বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার ৩৭০ ধারা বিলোপ করে কার্ফু দিয়ে গোটা অঞ্চলের মানুষকে উত্তপ্ত পরিস্থিতির মুখে ঠেলে দেয়ার ঘটনায় বিশ্বব্যাপী কাশ্মীরের মুসলিম জনগণের পক্ষে নিন্দা ও প্রতিবাদের  ঝড় উঠেছে। জাতিসংঘ এবং  বিভিন্ন দেশ কাশ্মীরের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ চীন ও পাকিস্তানের আহ্বানে ৫০ বছরের মধ্যে  এই প্রথমবারের মত কাশ্মীর নিয়ে গত ১৬ আগস্ট রুদ্ধদ্বার বৈঠকে  বসে। জাতিসংঘে পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. মালিহা লোদী  ৫০ বছর পর নিরাপত্তা পরিষদ কাশ্মীর সমস্যাকে বিশ্ব সমস্যা হিসেবে গুরুত্ব দেয়ায় এটি তাদেরই জয় হয়েছে দাবী করেন।

লোদী আরও অভিযোগ করেন, ভারত চেয়েছিল নিরাপত্তা পরিষদে কাশ্মীর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা না হোক। ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়, এটি তার আভ্যন্তরীন ব্যাপার। বৈঠকে পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় । রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বলা হয়, কাশ্মীরের সমস্যা এখন আর ভারতের আভ্যন্তরীন ব্যাপার নয় এটা জাতিসংঘের চার্টার মোতাবেক নিরাপত্ত পরিষদের সিদ্ধান্তের আলোকে দু’দেশ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করবে। কাশ্মীরের ঘটনায় বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্র কতটা উদ্বিগ্ন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের টুইট সেটা প্রমাণ করে। সর্বশেষ গত ২০ আগস্ট মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক টুইটে জানান, ফোনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সাথে কাশ্মীরের ব্যপারে তিনি আলাপ করেছেন। তিনি দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীকেই কাশ্মীর নিয়ে সৃষ্ট উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানিয়েছেন।  উভয় দেশ সীমান্তে অতিরিক্ত সৈন্য সমাবেশ ও যুদ্ধ জড়ো করছে। ইতিমধ্যেই কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষে দু’ পক্ষের সৈন্য মারা গেছে। যেকোন মুহুর্তে সীমিত কিংবা বড় আকারের যুদ্ধ বেধে যেতে পারে আশংকা করা হচ্ছে। মোগল আমলে একসময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যর জন্য  মুসলিম অধ্যুষিত এই কাশ্মীরকে ভূস্বর্গ বলা হত। এখন এটি একটি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের এলাকা ও যা অনেকটা মধ্যপ্রাচ্যের প্যালেস্টাইনের মত।

বিরোধপূর্ণ অঞ্চল কাশ্মীরের একাংশ আজাদ কাশ্মীর ও উত্তরাঞ্চল গিলগিট বালটিস্তান ৮৫,৮৪৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের অংশ পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে। অপরাংশ জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ নিয়ে ১,০১,৩৩৮ বর্গ কিলোমিটার ভারতের অধীনে শাসিত। ভারত অভিযোগ করে আসছে, পাকিস্তান কাশ্মীরের  ট্রান্স কারাকোরাম অংশ চীনকে হস্তান্তর করে দেয় ১৯৬৩ সালে । এবং আকশাই চিন অঞ্চলসহ মোট ৩৭,৫৫৫ কিলোমিটার এলাকার উপর থেকে নিজেদের দাবী প্রত্যাহার করে চীনকে ছেড়ে দিয়েছে। ভারত ঐ অঞ্চল নিজেদের বলে দাবী করে আসছে। কাশ্মীরের ভারত অংশের  জনসংখ্যা ১ কোটি ৪৫ লক্ষের কাছাকাছি। জনসংখ্যার  বেশীর ভাগই মুসলিম। পাকিস্তান অংশের আজাদ কাশ্মীরের জনসংখ্যা ৪০ লক্ষ এবং গিলগিট বালটিস্তান ২০ লাখ। ১৯৪৭ সালের আগস্টে  বৃটেন থেকে  ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভের সময় কাশ্মীর নিয়ে দুদেশের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধে। জনসংখ্যার বেশীর ভাগ মুসলিম পাকিস্তানে যোগ দিতে চাইলে রাজ্যটির হিন্দু মহারাজা  হরি সিং ভারতে যোগ দেয়ার পক্ষে মত দিলে পাকিস্তান তা মানতে অস্বীকার করে ভারতের বিরুদ্ধে কাশ্মীরে যুদ্ধ ঘোষণা করে। পাকিস্তান আজাদ কাশ্নীর অঞ্চল দখল করে নেয়। পরে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় প্রথমবারের যুদ্ধবিরতি হয় এসময় জাতিসংঘের পক্ষ থেকে গণভোটের মাধ্যমে এ বিরোধ সমাধানের সুপারিশ করা হলেও অদ্যাবধি  তা বাস্তবায়ন হয়নি। পরে ১৯৬৫ সালে পুনরায় এই কাশ্মীর নিয়ে দেশ দু’টি আবারও যুদ্ধে লিপ্ত হয়।  সেই  থেকেই দু’দেশের  মধ্যে অমীমাংসিত কাশ্মীর নিয়ে  বিরোধ চলে আসছে। এদিকে, গত কয়েক মাস ধরে সৃষ্ট উত্তেজনায় নতুন করে যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। এরই প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভবিষ্যৎে যে কোন আকাশ যুদ্ধে ভারতের দক্ষতা ও সক্ষমতা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের সামরিক বিশেষজ্ঞদের মধ্যে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। কাশ্মীরকে নিয়ে বর্তমানে দুই পরমাণু শক্তিধর দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমাগত উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে  বিশ্বের সেরা সমর বিশারদরা বরাবরই ভারতের ব্যাপারে শংকা প্রকাশ করেছেন। যুদ্ধে অগণিত সংখ্যা আর অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র দিয়ে যে অনেক সময় যুদ্ধে মুন্সিয়ানা চলেনা সেটা বিশ্বের কয়েকটি  দেশ আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। যুদ্ধের প্রধান অস্ত্রই হচ্ছে সৈনিকদের উঁচু মনোবল। প্রতিপক্ষের চেয়ে সংখ্যাধিক্য আর নিত্য নতুন অস্ত্রশস্ত্র  যতই থাকুকনা কেন দুর্বল মনোবল চিত্তের সৈন্য প্রতিপক্ষের  উঁচু মনোবলে বলীয়ানদের  সামনে  টিকতে পারেনা হেরে যায় ।

সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যের মাত্র ৬৬ লাখ  ৯৭ হাজার ইহুদী জনসংখ্যার ( সূত্র: ইসরাইল সেন্ট্রাল ব্যুরো অব স্টাটিস্টিকস, মার্চ, ২০১৯ ইং) ক্ষুদ্র দেশ  ইসরাইল। সেখানে বাকী ১৮ লক্ষ ৯০ হাজার প্যালেস্টাইনীর বেশীর ভাগই মুসলিম। এর মধ্যে অল্পসংখ্যায় খ্রীস্টান ও দ্রুজ রয়েছে।  ৭৩’ সালের আরবদের সাথে যুদ্ধে আরও কম লোকবল নিয়ে জিতেছে। এবং আজ  অবধি সীমান্তের  বৈরী ভাবাপন্ন দেশ মিসর, সিরিয়া, জর্ডান, লেবানন সহ সম্মিলিত জোটের বিশাল সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে একাই লড়াই করে  চলেছে  দেশটি । সমর বিশারদদের মতে, ইসরাইলের জয়ের অন্যতম গোপণ অস্ত্র হচ্ছে সেদেশের বিমান সেনাদের হাই মোরাল অর্থ্যাৎ উঁচু মনোবল আর ভাল প্রশিক্ষণ । বিশ্বে সর্বশেষ হিসেবে ইহুদীদের মোট সংখ্যা ১ কোটি ৪৫ লক্ষ ( সূত্র: জুইস ভার্চুয়াল  লাইব্রেরী, মে ২০১৯ ইং) ইসরাইলে বাস করে মোট ইহুদীর ৪৫ শতাংশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আছে মোট ১০ লক্ষ। ….(চলবে)

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.