--- বিজ্ঞাপন ---

ইট হ্যাজ বিন রেইনিং ইন ক্যাটস এন্ড ডগস

0

 

রেফায়াত কবির শাওন##

২০১৭ তেই মাছ বৃষ্টি হল শ্রী লংকা, অস্ট্রেলিয়া আর মেক্সিকোতে। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই ব্যাঙ বর্ষনের খবর পাওয়া যায়। প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক হেরাক্লাসও তার বইতে ব্যাঙ বৃষ্টির আদ্যোপান্ত লিখেছেন। ২০০৫ এ ব্যাঙ বৃষ্টিতে রীতিমত ব্যাঙ বন্যা হয় সার্বিয়ার ওজাকি শহরে। স্পেনের ছোট শহর জামোরার লোকজন তো রীতিমত রক্তস্নাত হয় লাল বৃষ্টিতে। ২০১৫ তে একবার অস্ট্রেলিয়াতে আর এই ২০১৯ এর গোড়ার দিকে ব্রাজিলে হয়ে গেল মাকড়সা বৃষ্টি । ঊনসত্তরে একবার আমেরিকার ফ্লোরিডায় নাকি হয়েছিল গল্ফ বল বৃষ্টি। কারো মাথায় দুয়েকটা পরেছিল কি না জানা যায় নি।

বিজ্ঞানীরা কার্যকারণ বের করতে ওস্তাদ। তাদের মতে ঘূর্ণিবায়ু মাঝে মাঝে জলের মাছ টেনে তুলে মেঘের রাজ্যে। আর সেই মেঘ গলে বৃষ্টির সাথে ডাঙায় ফিরে আসে মাছগুলো। ব্যাঙ বৃষ্টির ব্যাখ্যাও একই। মাকড়শা বৃষ্টির ব্যাখ্যায় বিজ্ঞানীরা বলেন, পতঙ্গ ধরতে জাল পাতার সময় মাকড়শারা বেলুনিঙ নামে এক পদ্ধতি অবলম্বন করে। আর নিদ্রিষ্ট জলবায়ু অবস্থায় এই প্রক্রিয়া চলাকালে মাকড়শা চড়ে বসে মেঘের উপর। গলফ খেলার সময় খেলোয়াড়রা কখনও কখনও অনেক উপরে ছুঁড়ে তাদের বল আর সেসব বল নাকি মাঝে মাঝে ঘুর্ণি বাতাসে পরে চলে যায় মেঘেদের রাজ্যে। আর বৃষ্টির জলে একধরণের লাল ছত্রাকের মিশ্রনই নাকি রক্তবরণ বৃষ্টির কারণ।

তবে বৃষ্টির ব্যাখ্যায় বিজ্ঞানীদের ব্যার্থতাও কম নয়। ২০১৫ সালে কুয়েতে হয় টাকার বৃষ্টি। আকাশে বাতাসে ভাসতে থাকে লক্ষ লক্ষ টাকা। একই ঘটনা ঘটে আমেরিকার ইন্ডিয়ানাপলিসে ২০১৭ সালে। অনেক কাঠখর পুড়িয়েও নাসার বিজ্ঞানীরা বের করতে পারে নি এই অর্থবৃষ্টির কারণ। থিওডোলাইট দিয়ে আকাশ দর্শনের বুদ্ধি সে দেশের কোন মন্ত্রীর থাকলে, ওখানকার বিজ্ঞানীদের এই বেইজ্জতি হতে হত না। আমেরিকার বিজ্ঞানীরা ফেল করলেও, ছোট মাথায় বড় বুদ্ধিওয়ালা চীনা বিজ্ঞানীরা কিন্তু কিছুতে পিছিয়ে নেই। শুনছি বেইজিং এর আকাশে মেঘ জমলে ওরা হেলিকপ্টার নিয়ে মেঘের উপরে গরম ছাই ফেলে বৃষ্টি নামায়। ওই মেঘটা হয়ত আমাদের এখানে এসে ঝরত। কি আর করা, ওরা আমাদের বাজারের মত বৃষ্টিটাও দখল করে ফেলল।

ভারতের হরিয়ানায় আকাশ থেকে মহাজাগতিক বর্ষন নিয়ে, ইংল্যান্ডের পত্রিকা দি টেলিগ্রাফ রীতিমত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। হরিয়ানার ফাজিলপুরে আকাশ থেকে ইষৎ সোনালী বরফখন্ড পরতে দেখে মানুষজন ঐশ্বরিক উপহার ভেবে তা সংরক্ষণ করতে থাকে। সবার বাড়ীর ডিপ ফ্রিজ ভরে ওঠে এইসব স্বর্ণাভ বরফখন্ডে। যারা পেয়েছে তাদের খুশির সীমা নেই, নিজেদের আশীর্বাদপুষ্ট ভাবতে লাগল। মানুষজনের এত আগ্রহ দেখে, অনুসন্ধানে নামে পুলিশ। সেম্পল পাঠানো হয় দিল্লীর গবেষণাগারে। বিজ্ঞানীরা ব্যাপক অনুসন্ধানে জানতে পারেন এই পবিত্র মহাজাগতিক বরফঘন্ড আসলে মনুষ্য মলের কঠিন রুপ। প্লেনের যাত্রীদের ত্যাগকৃত এসব বস্তু ভূপৃষ্ঠ থেকে অত্যধিক উচ্চতায় থাকার ফলে ঠান্ডায় ঘনীভূত হয়ে হলদে সোনালী বরফখন্ডে রুপ লাভ করে। আর ওই এলাকা দিয়ে ওড়ার সময় কোন কোন এয়ারলাইন্স প্লেনের প্রক্ষালণ কক্ষের নিচের প্রকোষ্ঠ খুলে এসব ধরাধামে ফেলে দেয়। তবে ফাজিলপুরে পাওয়া এসব হিমায়িত মল বিজনেস ক্লাস না ইকনমি ক্লাসের যাত্রিদের প্রক্ষালনকৃত তা দি টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় নি। এ খবর প্রকাশিত হওয়ার পর, ফাজিলপুলবাসিকে ব্যাপকহারে ফ্রিজ পরিস্কার করতে দেখা যায়। এ ঘটনার পর ভারতীয় সুপ্রীম কোর্ট সেদেশের আকাশে হিমায়িত মলত্যাগকারী উড়ো জাহাজের উপর জরিমানা ধার্য্ করেছে।

মাছ না হয় কিনেই খাব, শুনেছি ভিয়েতনামের লোকজন ফ্রাইড মাকড়শা খেতে ভালবাসে, আমাদের তাতেও কোন আশক্তি নেই। ব্যাঙের ডাকে এমনিতেই অতিষ্ঠ, আর গলফ বলের বাড়ি তো সুখকর নয়ই, এমনকি ডলার বৃষ্টিও চাইনে, ‘খাঁইট্টা খামু’। শুধু আমাদের ভাগের ‍বৃষ্টিটা চাই।

আল্লাহ মেঘ দে, পানি দে, ছায়া দে রে তুই

 সূত্র : হিমায়িত মল বর্ষনের খবরটুকু বৃটিশ পত্রিকা ‘দি টেলিগ্রাফ’ এ পড়া। আর অন্যসব বর্ষনের খবর এ মাসের রিডার্স ডাইজেস্টের সৌজন্যে।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.