--- বিজ্ঞাপন ---

কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তান কি শেষ পর্যন্ত বড় ধরনের যুদ্ধে লিপ্ত হবে?…শেষ পর্ব

0

কাশ্মীর নিয়ে ভারত -পাকিস্তান মুখোমুখি। কাশ্মীরে বর্তমানে  কি অবস্থা বিরাজ করছে তা জানার জন্য মুখিয়ে আছে সারা বিশ্ব। ভারত -পাকিস্তানের সাথে সীমান্ত নিয়ে একাধিকবার যুদ্ধ হলেও এবারের বিষয়টি কেউ হালকাভাবে নিচ্ছে না। ভারত ও পাকিস্তান কাশ্মির নিয়ে বড় ধরনের কোন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে কিনা তা নিয়ে সারা বিশ্বে চলছে জল্পনা কল্পনা। ভারত-পাকিস্তানের কার অবস্থা কি রকম..এ নিয়ে পাঠকদের জানার জন্য কয়েক সিরিজের প্রতিবেদন প্রকাশ করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশের সংবাদ।  আন্তর্জাতিক অঙ্গনের বিভিন্ন বিষয়সহ পুরো বিষয়টি তুলে এনেছেন নির্বাহী  সম্পাদক মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম…প্রকাশিত হলো  শেষ পর্ব।

আকাশ যুদ্ধে পাকিস্তানের কাছে ভারত হেরেছে, ভারতের উপর ভরসা করা যায়না : নিউইয়র্ক টাইমস

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্ভরযোগ্য জার্নাল ‘ফরেন পলিসি’তে প্রখ্যাত সাংবাদিক লারা সেলিগম্যান মার্কিন সামরিক বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে গত ৪ এপ্রিল তার কলামে শিরোনাম দেন “ডিড ইন্ডিয়া শুট ডাউন এ পাকিস্তানি জেট? ইউএস কাউন্ট সেজ নো”।  ফরেন পলিসি জার্নালে ঐ প্রতিবেদন প্রকাশের পরই ভারতের এফ-১৬ জঙ্গী বিমান ভূপাতিত করার দাবীটি মিথ্যা ও ভুয়া প্রমাণিত হয়। এরপর ভারতের পক্ষ থেকে আর কোন জোরালো দাবী আসেনি।

ঐসময় মার্কিন প্রভাবশালী পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় ৩ মার্চ প্রকাশিত প্রতিবেদনে মারিয়া আবি হাবিব তো বলেই ফেলেছেন, ‘আকাশ যুদ্ধে ভারত হেরেছে পাকিস্তানের কাছে। অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এশিয়ায় চীনের আঞ্চলিক আধিপত্য ঠেকাতে ভারতের মত অদক্ষ সামরিক বাহিনীর উপর ভরসা করছে।’ তিনি তার কলামে আরও উল্লেখ করেন, পাকিস্তানের সাথে মার্কিন সম্পর্কের এ অবনতির সুযোগে গত এক দশকে প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সর্বাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় করে নিয়েছে। যা এক দশক আগেও ছিল শূন্যের কোঠায়। অর্থ্যাৎ তখন মার্কিনীরা ভারতকে আধুনিক সাজ সরঞ্জাম দিতে অনীহা প্রকাশ করত।  নিউইয়র্ক টাইমস এর প্রতিবেদনে ভারতের বিশাল সামরিক বাহিনীকে একটি অদক্ষ সেকেলে উল্লেখ করে বলা হয় যে, এশিয়ার এই দুই চীর প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে গত প্রায় ৫০ বছরের মধ্যে এটিই প্রথম সরাসরি ভারতীয় বাহিনীর শক্তিমত্তা পরীক্ষার জন্য এটি ছিল উপযুক্ত সময়। ভারতের বিমান খোয়ানো ও পাইলট বন্দী  হতে দেখে ওয়াশিংটনের সামরিক পর্যবেক্ষকমহল হতভম্ব ও হতবাক। এদিকে বিবিসি স্যাটেলাইটে ভারতের দাবী অনুযায়ী কাশ্মীরের যে স্থানটিতে ভারত হামলা চালিয়ে জয়স-ই-মুহাম্মদ নামের জঙ্গী  গোষ্ঠীর আস্তানা ধ্বংস করেছে বলেছিল তারও একটি ছবি তুলে ধরে। এতে দেখা গেছে ঐ স্থানের সবকিছু অক্ষত রয়েছে  ভারতীয় বাহিনী  সেখানে বোমা না ফেলে জঙ্গলে বোমা ফেলেছে। তবে ঐ সময়ে আরও  দু:সংবাদ হল পাকিস্তানের বিমান মনে করে ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ভারত নিজেদের একটি হেলিকপ্টার ধ্বংস করে । যাতে ভারতের বৈমানিকসহ বিমানবাহিনীর ছয় সদস্য মারা পড়ে।

ভারতের দি হিন্দু পত্রিকা ঘটনাটি ফাঁস করে দেয় এবং এ ঘটনায়  একটা যুদ্ধকালীন সময়ে ভারতীয় বাহিনীর দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। ভারতের প্রভাবশালী এই দৈনিকের ২ জুন সংস্করনে সাংবাদিক দিনাকর পারি তার প্রতিবেদনের শিরোনাম দেন “হাউ ডিড এন ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্স এমআই-১৭ হেলিকপ্টার গেট শুট ডাউন বাই দি আইএএফ ?”  অর্থ্যাৎ ভারতীয় বিমান বাহিনী কি করে নিজেদের বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারকে নিজেরাই ভূপাতিত করল এ প্রশ্ন রাখেন তিনি। ঘটনার উল্লেখ করতে গিয়ে সাংবাদিক দিনাকর পারি লিখেন, গত ২৭ ফেব্রুয়ারী সকালে যখন পাকিস্তানের বিমানের সাথে ভারতীয় মিগ বিমানের সংঘর্ষ হয় ঠিক তখনই কাশ্মীরের শ্রীনগর থেকে ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি এমআই-১৭ হেলিকপ্টার ২জন পাইলট ও ৪ জন সেনাসহ উড্ডয়ন করে

 

উড্ডয়নের ১০ মিনিটের মধ্যেই হেলিকপ্টারটি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ভূপাতিত হয়। প্রথমে মনে করা হয়েছিল, হয়তবা পাকিস্তানী বিমানের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে এটিকে আঘাত করা হয়েছে। কিন্তু পরক্ষণে তদন্তে জানা গেল, ভারতীয় বিমানবাহিনী পাকিস্তানি বিমান মনে করে তাদের  ইসরাইলের  দেয়া আধুনিক স্পাইডার এয়ার ডিফেন্স ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতেই হেলিকপ্টারটিকে ভূপাতিত করা হয়েছে। হেলিকপ্টারটি জনবহুল এলাকায় ভূপাতিত হওয়ায় আরও একজন বেসামরিক ব্যক্তিসহ মোট ৭ জন মারা যায়। পত্রিকা দি হিন্দু’র প্রতিবেদনে ভারতীয় বাহিনীর হাতে সর্বাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে কিন্ত এর যথাযথ ব্যবহারে দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।  হেলিকপ্টারটির সরবরাহকারী দেশ রাশিয়ার সামরিক বিশেষজ্ঞরা তাদের ঐ হেলিকপ্টারটি একেবারেই নতুন এবং কোথাও কোন ত্রুটি ছিলনা উল্লেখ করে ন। রাশিয়ার সংবাদ মাধ্যম আরটি’র সাথে সাক্ষাতকারে রুশ সামরিক বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃতি দিয়ে শিরোনামে বলা হয়,“  রাশিয়ার সংবাদ মাধ্যম ‘আরটি’ ভারতের বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র সেনাদের ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করে  গত ২৯ মার্চ এ ঘটনার আরও বিশদ উল্লেখ করে শিরোনাম দেয় ‘ ইন্ডিয়া ব্লো আপ ইটস ওন হেলিকপ্টার হোয়াইল টার্গেট পাকিস্তানী জেটস, কিলিং সেভেন’। অর্থ্যাৎ পাকিস্তানী  জঙ্গী  বিমানকে টার্গেট করতে গিয়ে নিজেদের হেলিকপ্টারটি খোয়ালো ভারতীয়রা। এতে আরও বলা হয় রাশিয়ার এ মডেলের এমআই-১৭ভিফাইভ টি নতুন এবং এটিতে কোন কারিগরি ত্রুটি ছিলনা। আসলে ভারতীয় বাহিনী শত্রু মিত্র চেনার সাংকেতিক সিস্টেমস আইএফএফ ( আইডেন্ডিফিকেশন অব ফ্রেন্ড এন্ড ফো ) এর বোতাম ঠিক সময়ে টিপেনি। এধরনের একটি হেলিকপ্টারের বর্তমান মূল্য ১ কোটি ৭০ লক্ষ মার্কিন ডলার।

 

পাকিস্তান পরমাণু ওয়ারহেড বৃদ্ধি ও মার্কিন বিজ্ঞানীদের উদ্বেগ

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু বিজ্ঞানীদের প্রভাবশালী সংগঠন ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টদের বিশিষ্ট বিজ্ঞানীরা হলেন হ্যান্স এম. ক্রিস্টেনসেন,  রবার্ট এস. নরিস  ও জুলিয়া ডায়মন্ড। গত বছর ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ফেডারেশনের বুলেটিনে পাকিস্তানের পরমাণু বোমা বানানোর হার আশংকাজনক বৃদ্ধির কারণ উল্লেখ করে  শিরোনাম ‘ পাকিস্তানি নিউক্লিয়ার ফোর্সেস, ২০১৮’ প্রতিবেদন তুলে ধরেন। এতে তারা আশংকার সাথে উল্লেখ করেন যে, বর্তমানে পাকিস্তানের হাতে ১৪০-১৫০ টি পারমানবিক ওয়ারহেড রয়েছে যা পাকিস্তানের স্বল্প পাল্লার ‘নসর’সহ, মাঝারি ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের সাহায্যে ছোঁড়ার জন্য প্রস্তুত করে রেখেছে।  মার্কিন গোয়েন্দা সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বিজ্ঞানীরা ঐ প্রতিবেদনে বলেন, যে হারে পাকিস্তান পরমাণু বোমা বানিয়ে চলেছে  ২০২৫ সাল নাগাদ এ সংখ্যা ২২০-২৫০টি পরমাণু বোমার ওয়ারহেডের অধিকারী  হবে পাকিস্তান। সুইডেন ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিচার্স ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই) এর ২০১৮ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের হাতে পরমাণু অস্ত্র রয়েছে ৬,৪৫০। রাশিয়ার আছে প্রায় ৬,৮৫০টি। যুক্তরাজ্যেও ২১৫, ফ্রান্সের ৩০০ এবং চীনের ২৮০ টি। এক্ষেত্রে ভারতের চাইতে পাকিস্তান এগিয়ে রয়েছে বলে মনে করছে গবেষণা সংস্থাটি। ভারতের যেখানে পরমাণু অস্ত্রেও সংখ্যা ১৩০ টি, সেখানে পাকিস্তানের ১৪০ টি অস্ত্র রয়েছে বলে ধরে নেয়া হয়। এছাড়া, ইসরায়েলের ৮০টি এবং উত্তর কোরিয়ার ২০ টি পরমাণু অস্ত্র রয়েছে বলে জানাচ্ছে সুইডেন ভিত্তিক এ ইন্সটিটিউট। এর আগে ২০১৬ সালের দিকে সর্বপ্রথম পাকিস্তানের ১৩০টি পরমাণু বোমার সবক’টি ভারতের দিকে তাক করে রাখা হয়েছে মর্মে মার্কিন কংগ্রেসনাল রিচার্স সার্ভিস (সিআরএস) এই চাঞ্চল্যকর রিপোর্র্টটি পেশ করার পর বিশ্বে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়।

পাকিস্তান পরমাণু ওয়ারহেডবাহী টেকটিক্যাল ক্ষেপণাস্ত্র ভারত কেন্দ্রিক ‘নসর’ ভারতের দিকে তাক করে রেখেছে

পাকিস্তান তার পরমাণু বোমা ব্যবহারের নীতিও পাল্টিয়েছে। ভারতের পরমাণূু নীতির দিকে দৃষ্টি রেখেই তারা এটা করছে। পাকিস্তান তার আগের নীতি ‘ক্রেডিবল মিনিমাম ডিটারেন্ট’ থেকে বর্তমানে ‘ফুল স্পেকট্রাম ডিটারেন্ট’ নীতিতে সরে এসেছে। ভারত হঠাৎ করে  তার পরমাণু নীতি ‘কোল্ড স্টার্ট’ এ সরে আসার পরই  পাকিস্তান এ ‘নসর’  ক্ষেপণাস্ত্র তৈরীতে হাত দেয়। ‘নসর’ হচ্ছে এমন একটি ক্ষেপণাস্ত্র যা নির্ভুল ভাবে অভীষ্ট লক্ষ্যে অপেক্ষাকৃত ছোট আকৃতির পরমাণু ওয়ারহেড ছুঁড়তে সক্ষম এবং এটি দ্রুত  রণকৌশল পরিবর্তন করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঐ ‘নসর’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার মাধ্যমে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী একই সময়ে একাধিক লক্ষ্যস্থলে আঘাত হানতে পারবে। ইসলামাবাদ সম্প্রতি ‘নসর’ ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা  ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে। ভারতের ‘সিএসডি’ (কোল্ড স্টার্ট ডকট্রিনে) ঠেকাতে এই ক্ষেপণাস্ত্র উদ্ভাবন করেছে পাকিস্তান। সিএসডি ’র অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে, আচমকা ৩৫ হাজার সৈন্য অথবা ৮টি স্বতন্ত্র ব্রিগেড নিয়ে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে দ্রুত ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রবেশ করা।  ভারতের পরমাণু নীতি পরিবর্তনের পর থেকে পাকিস্তান দ্রুত কিভাবে সিএসডি  মোকাবেলা করা যায় উপায় বের করতে থাকে । ২০১১ সালের এপ্রিলে ভারতের আচমকা হামলা ঠেকাতেই পাকিস্তান হাতফ-৯ ‘নসর’ ক্ষেপণাস্ত্র উদ্ভাবন করে  দেশটি। একের পর এক পরীক্ষা চালিয়ে  সফলতার সাথে পরীক্ষা সম্পন্ন করে ‘নসর’ সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করে। ‘নসর’  টেকটিক্যাল ক্ষেপণাস্ত্রের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে  এটি নির্ভুলভাবে একই সাথে চারটি টিউবে ছোঁড়া যায়। এতে যে পরমাণু ওয়ারহেড টিএনডব্লিউ (টেকটিক্যাল নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড) থাকবে সেটি ২০ কিলোটন ক্ষমতার যা দিয়ে স্বল্প লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা যায়। এতে নিদ্দিষ্ট লক্ষ্যে আঘাত হানা হবে যাতে অন্য  বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতি হবে না।  ভারতকেন্দ্রিক্ এই দ্রুত  মোতায়েনযোগ্য ‘নসর’ পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালানোর  পরপরই পাকিস্তানের  স্ট্র্যাটেজিক ফোর্সেস কমান্ড ভারতের ‘বিএমডি’ ও ‘সিএসডি’  ঠেকাতে ইসলামাবাদের  পরমাণু নীতিতে পরিবর্তন আনে।  ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ‘ফুল স্পেকট্রাম ডিটারেন্ট’ নীতির ঘোষণা দেয় ইসলামাবাদ।ভারতের আচমকা হামলা ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করতে পাকিস্তান সকল পর্যায়ে সর্বশক্তি দিয়ে পরমাণু বোমার ব্যবহার করাই এই ‘ফুল স্পেকট্রাম ডিটারেন্ট’। পাকিস্তানের তৎকালীন স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান ডিভিশনের  প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল খালেদ কিদওয়াই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত থিংক ট্যাংক ‘কার্নেগী এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পীস’ এর আমন্ত্রণে ওয়াশিংটনে বক্তব্যকালে প্রথমবারের মত ভারতের বিরুদ্ধে ‘নসর’ পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করার হুমকি দেন।  জেনারেল কিদওয়াই ভারতের সম্ভাব্য হামলা ঠেকাতে ‘নসর’  ব্যবহারে তার দেশের  যুক্তি তুলে ধরার পর এ ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে বিশ্বে  হৈচৈ পড়ে যায়।

ভারতসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্ভাব্য যুদ্ধে পাকিস্তানের উদ্ভাবিত ছোট আকারের পরমাণু ওয়ারহেড নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে। এদিকে  ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং তার দেশের ‘প্রথমে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করা হবেনা’  নীতিটি  প্রয়োজনে পরিবর্তন করার হুমকি দিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। জবাবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গত ১৮ আগস্ট  বলেন,  এটা হচ্ছে ভারতের মোদী সরকারের মত  ফ্যাসিবাদী হিন্দু আধিপত্যবাদী সাম্প্রদায়িক চরিত্রের প্রতিফলন । তিনি বলেন, দেশটির পরমাণু অস্ত্রের নিরাপত্তা নিয়ে  বিশ্বকে এখন ভাবতে হবে।   ইমরান খান বলেন, ভারতের  কাশ্মীরৈ ৪০ লক্ষ মুসলমানকে সেদেশ থেকে বিতাড়নের পরিকল্পনা  করা হচ্ছে । এটা  বিজেপির মূলমন্ত্র রাষ্ট্রীয় সেবক সংঘ বা আরএসএস এর হিন্দুত্ববাদী নীতিরই প্রতিফলন।

পাকিস্তানের তৈরী জেএফ-১৭ থান্ডার ও এফ-১৬ , মিরেজ পরমাণু বোমা বহনে সক্ষম ভারতের জাগুয়ার

পাকিস্তানের মার্কিন নির্মিত এফ-১৬ জঙ্গী বিমানের পাল্লা ১৬০০ কিলোমিটার এটি পরমাণু বোমা বহনে সক্ষম। তাছাড়া, মিরেজ ৩ ও মিরেজ-৫ ও পরমাণু বোমা বহন করতে পারে। ভারতের এসইউ-৩০, জাগুয়ার বিমানও পরমাণু বোমা বহনে সক্ষম। সাম্প্রতিক সময়ে ভারত যখন একদিকে বিএমডি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্রিয় এবং আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় রুশ এস-৩০০ ও রুশ এস-৪০০, ইসরাইলের ফ্যালকন এ্যাওয়াকস গোয়েন্দা বিমান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাধুনিক পি-৮ পোসাইডন সাবমেরিন বিধ্বংসী গোয়েন্দা বিমান নিয়ে গড়ে তুলছে এক অপ্রতিরোধ্য ব্যবস্থা। শুধু তা-ই নয় মার্কিন  যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বুশ কর্তৃক ভারতকে দেয়া উপহার বেসামরিক পরমাণু সহযোগিতা চুক্তির সুবিধায় ভারত ঐ সকল রিএ্যাক্টর থেকে পরমাণু অস্ত্র তৈরীর উপাদান ফিসাইল উপাদানের ভান্ডার গড়ে তুলছে। যা দিয়ে ভারত প্রথম দফায় আক্রমণে পাকিস্তানের নিউক্লিয়ার ডিটারেন্ট ঠেকিয়ে দিতে পারে। এছাড়া ভারতের বিমান বাহিনী এবং নৌ বাহিনীর ক্রমবর্ধমান শক্তি বৃদ্ধিকে পাকিস্তান হুমকী হিসেবে দেখছে। এটা ঠেকাতে পাকিস্তান প্রথমে ভূমি থেকে নিক্ষেপণযোগ্য ৭০০ কিলোমিটার পাল্লার পরমাণু বোমা বহনে সক্ষম ‘বাবুর’ ক্রুজ মিসাইল তৈরী করে। পরে বিমান থেকে নিক্ষেপণযোগ্য ৩৫০ কিলোমিটার পাল্লার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ‘রা’দ’ মোতায়েন শুরু করে দেশটি।  পাকিস্তানের সমর পরিকল্পনাবিদরা ভারতের বিএমডি বা ব্যালেস্টিক মিসাইল ডিফেন্স ব্যবস্থা অকার্য্যকর করতে সেকেন্ড স্ট্রাইক ক্যাপাবিলিটি  দ্ধিতীয় দফায় আক্রমণ ঠেকাতে নিজেদের প্রস্তুত রেখেছে।

 

এই সেকেন্ড স্ট্রাইক ক্যাপাবিলিটির জন্য পাকিস্তান সাবমেরিন থেকে নিক্ষেপণযোগ্য পরমাণু বোমাবাহী ‘বাবুর-৩’ ক্রুজ মিসাইল এবং ২,২০০ কিলোমিটার পাল্লার  অত্যাধুনিক মার্ভ ( মাল্টিপল ইন্ডিপিন্ডেন্ট রি-এন্ট্রি ভেহিকল) প্রযুক্তির ‘আবাবিল’ প্রস্তুত রেখেছে। পাকিস্তানে মার্ভ প্রযুক্তির ক্ষেপণাস্ত্র , ‘বাবুর’ পরমাণু অস্ত্রবাহী ক্রুজ মিসাইল, শাহীন-৩ যা ২,৭৫০ কিলোমিটার পাল্লার । এই শাহীন-৩  পরমাণু বোমা বহণে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্রটি ভারতের সর্বত্র আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত আঘাত হানতে সক্ষম।  সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গোট ভারতই এখন পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্রবাহী ক্ষেপণাস্ত্রের আওতার মধ্যে। সমরবিদদের মতে, সংখ্যাধিক্যের উপর ভিত্তি করে ভারত কাগজে কলমে এগিয়ে থাকলেও প্রকৃত যুদ্ধ বেধে গেলে সেটা হয়তবা  ‘কোয়ালিটি’ বনাম ‘কোয়ানটিটি’র যুদ্ধ হতে পারে। এক্ষেত্রে  চীনের সাথে কৌশলগত সম্পর্ক থাকায় দেশটি   ‘অল ওয়েদার ফ্রেন্ড’ থেকে যুদ্ধে সকল সহযোগিতা পাবে। সেদিক বিবেচনায়  সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, চীনের মত বৃহৎ শক্তির সমর্থন নিয়ে পাকিস্তানের মত পরমাণু শক্তির অধিকারী দেশকে খাটো করে দেখার অবকাশ নেই। অপরদিকে, ভারত চীন ও  পাকিস্তানকে ঠেকাতে ‘অগ্নি’ ব্যালেস্টিক মিসাইল তৈরী করেছে যার পাল্লা ৫,০০০ কিলোমিটার  এর সফল পরীক্ষাও চালিয়েছে। নৌ বাহিনীতে ভারত অনেক দূর এগিয়েছে। ভারতের রয়েছে ১টি বিমানবাহী জাহাজ যা পাকিস্তানের নেই। তবে পাকিস্তান চীন থেকে বিমান থেকে নিক্ষেপণযোগ্য  বিমানবাহী জাহাজ ধ্বংস করতে সক্ষম এন্টি শীপ ব্যালেস্টিক মিসাইল এম-২০ বি সংগ্রহ করছে। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করে ভারতের দৈনিক বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার সাংবাদিক অজয় শুকলা এটাকে ভারতের বিমানবাহী জাহাজের  জন্য একটা দু:সংবাদ বলে আখ্যা দিয়ে গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেন । বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ বিধ্বংসী অত্যাধুনিক শব্দের চাইতে দ্রুতগামী এই মিসাইল  সংগ্রহ করে প্রতিযোগিতায় সমতা আনল পাকিস্তান । ভারত নিজ দেশে তৈরী পরমাণু শক্তিতে চলে এমন একটি সাবমেরিন  তৈরী করেছে নাম দিয়েছে ‘অরিহান্ত’।

 

 

আরও সাথে আছে ১৬টি সাবমেরিন। রয়েছে ১৪টি ডেস্ট্রয়ার, ১৩টি ফ্রিগেট ও ১১৬টি অন্যান্য উপকূলীয় নৌযান। অপরদিকে পাকিস্তান নিজ দেশে ফ্রান্সের প্রযুক্তিতে  তৈরী করেছে অগাস্টা ৯০-বি শ্রেণীর আধুনিক মেসমা এআইপি (এয়ার ইন্ডিপেনডেন্ট প্রপালশন সিস্টেমস) প্রযু্িক্তর সাবমেরিন। দেশটির নৌবাহিনীতে এধরণের আধুনিক সাবমেরিন রয়েছে ৩ টি। এর প্রথমটি ‘খালিদ’ সরাসরি ফ্রান্স থেকে আনা হয়। আর বাকী দুটি যথাক্রমে ‘সা’দ’ ২০০২ সালে এবং ‘হামজা’ ২০০৬ সালের ১৪ আগস্ট নির্মাণ করা হয় দেশটির করাচী ডকইয়ার্ডে। এসকল সাবমেরিন  পরমাণু বোমাবাহী ক্রুজ মিসাইল নিক্ষেপ করতে সক্ষম। গত কয়েক মাসে ভারতের সাথে উত্তেজনা চলাকালীন সময়ে গত মার্চের ৪ তারিখের সর্বশেষ ঘটনায় পাকিস্তানের জলসীমায় অনুপ্রবেশকালে একটি ভারতীয় সাবমেরিন আটকে দেয় পাকিস্তানের অগাস্টা-৯০বি শ্রেণীর  একটি সাবমেরিন।  পরদিন ৫ মার্চ আটকে দেয়ার ঐ ঘটনার ঘন্টা সময়সহ ভিডিও বিশ্বে প্রচার করলে পাকিস্তানের এ সাবমেরিনের  সক্ষমতা  প্রকাশ পায়। সবমিলিয়ে পাকিস্তানের হাতে বর্তমান সাবমেরিন রয়েছে ৯টি। চীন থেকে আরও ৮টি সাবমেরিন ক্রয়ের চুক্তি করেছে দেশটি । এছাড়া,  চীন পাকিস্তানের জন্য  ৪টি সর্বাধুনিক ০৫৪এপি শেণীর ফ্রিগেটও বানাচ্ছে। এগুলি আগামী কয়েক বছরে পাকিস্তানের নৌবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।##

 

 

 

 

 

 

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.