--- বিজ্ঞাপন ---

ভারতের হাতে এ্যাসল্ট হেলিকপ্টার বা ‘উড়ন্ত ট্যাংক’!!

0

মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম,( ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ইং) ##

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যেকার কাশ্মীরকে ঘিরে এখন টান টান যুদ্ধের উত্তেজনা। এরই মধ্যে ভারতের বিমান বাহিনীতে ( বায়ুসেনা) আজ ৩ সেপ্টেম্বর পৌঁছে গেল পৃথিবীর অত্যাধুনিক আক্রমণাত্নক এ্যাসল্ট হেলিকপ্টার এএইচ-৬৪ই এ্যাপাচে গার্ডিয়ান । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানী বোয়িং এর এই এ্যাপাচেকে বিশ্বের সামরিক অঙ্গনে ‘উড়ন্ত ট্যাংক’ আখ্যা দেয়া হয়েছে। ভারতের অর্ডার দেয়া ২২ টির মধ্যে এনিয়ে হাতে পৌঁছেছে ৮টি । যা দিয়ে একটি নতুন আলাদা স্কোয়াড্রন গঠন করা হয়েছে সে দেশের বিমান বাহিনীতে।

সামরিক সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ভারতকে ২২০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের ২২টি এইচ-৬৪ই এ্যাপাচে এ্যাসল্ট হেলিকপ্টার বিক্রীর অনুমোদন দেন। একই সাথে ঐ সময় ১৫টি চিনুক সিএইচ-৪৭ হেভি লিফ্ট হেলিকপ্টারেরও অনুমোদন দেন তিনি। চুক্তিতে আরও ১১টি এইচ-৬৪ এ্যাপাচে ও ৭টি চিনুক কেনার আগাম অনুমোদনও রাখা হয়। বিশ্বের সবচাইতে আক্রমণাত্নক এই এ্যাপাচে হেলিকপ্টার ঘন্টায় ২৮৪ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারে। এতে সজ্জিত থাকে লেসার নিয়ন্ত্রিত নির্ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম ট্যাংক বিধ্বংসী ‘হেলফায়ার’ ক্ষেপণাস্ত্র। আরও থাকে ৭০ মিলিমিটার রকেট ৩০ কিলোমিটার কামান।

ভারতের এএসি (আর্মি এভিয়েশন কোর) ৩টি স্কোয়াড্রনে এধরণের  ৩৯টি এ্যাপাচে সংগ্রহ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এবং এগুলি পাকিস্তান সীমানের নিকট পাঠানকোট বিমান ঘাঁটিতে মোতায়েন করা হচ্ছে বলে ভারতীয় সামরিক সূত্রে জানা গেছে। চুক্তি অনুযায়ী বাকী এ্যাপাচে গুলি আগামী ২০২০ সালের মধ্যে ভারতে পৌঁছবে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, পাকিস্তান মার্কিন পরিচালিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সহযোগী কাতারের দেশ হিসেবে বহুবার এধরণের হেলিকপ্টার সরবরাহ করার আবেদন জানালেও মার্কিন প্রশাসন অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এই এ্যাপাচে পাকিস্তানকে দিতে অনীহা প্রকাশ করে। তবে পাকিস্তানের কাছে এর চাইতে কম আধুনিক মার্কি ন এইচ-১এস কোবরা আক্রমণাত্নক হেলিকপ্টার আগে থেকেই আছে। ২০১৫ সালের এর আধুনিক সংস্করণ ১৫টি এএইচ-১জেড ভাইপার  দেয়ার চুক্তি হলেও মার্কিন সরকার গড়িমসি করে এযাবৎ তা দেয়নি দেশটিকে। সামরিক পোর্টাল ‘ডিপ্লোমেট’ পত্রিকান্তরে জানা যায়, এবছরের ২৭ জুলাই ভারতে এ্যাপাচের প্রথম চালান ৪টি এইচ-৬৪ এ্যাপাচে পৌঁছে। ভারতের দিল্লীর গাজিয়াবাদের হিন্দন এয়ার ফোর্স স্টেশনে রাশিয়ায় নির্মিত সামরিক পরিবহণ বিমান এএন-১২৪ ‘কনডোর’ স্ট্র্যাটেজিক এয়ারলিফ্টার বিমানে করে সেগুলি পৌঁছানো হয়। নিদ্দিষ্ট সময়ের কয়েক সপ্তাহ আগেই হেলিকপ্টারগুলি ভারতে পৌঁছানো  হয় ।  ভারতের বিমান বাহিনী সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে ২৯ জুলাই ‘ডিপ্লোমেট’ পত্রিকায় সাংবাদিক ফ্রেঞ্জ স্টিফেন গ্যাডি তার প্রতিবেদনে জানান।

এদিকে ভারতের পত্রপত্রিকায় এ আধুনিক হেলিকপ্টার সংগ্রহের ফলে বায়ু সেনার শক্তি বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে মন্তব্য করা হয়। পত্রিকাগুলোতে বলা হয়, পাক সেনার মোকাবিলায় দেশের অস্ত্রভাণ্ডার আরও উন্নত করতে তৎপর ভারত। ভারতীয় বায়ুসেনার হাতে পৌঁচেছে ৮টি অ্যাপাচে অ্যাটাক হেলিকপ্টার। আমেরিকার বোয়িং সংস্থা দ্বারা নির্মিত এই উন্নত ও সর্বাধুনিক হেলিকপ্টারগুলি পাঠানকোটে বায়ুসেনার ঘাঁটিতে এসে পৌঁছেছে। সেখানে অ্যাপাচের আনুষ্ঠানিক অন্তর্ভুক্তি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, বায়ুসেনা প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল বিএস ধানোয়া।  তিনি বলেন, “বিশ্বের ধ্বংসাত্মক এবং আক্রমণাত্মক হেলিকপ্টারগুলোর মধ্যে অন্যতম অ্যাপাচে হেলিকপ্টার। এক সঙ্গে অনেকগুলো মিশনে এদের ব্যবহার করা যেতে পারে। অ্যাপাচের অন্তর্ভুক্তি নিঃসন্দেহে ভারতীয় বায়ুসেনার শক্তি বহু গুণ বাড়িয়ে দিল।” বায়ুসেনা প্রধান আরও বলেন, “ভারতীয় বায়ুসেনার প্রয়েোজন অনুযায়ী এই হেলিকপ্টারের গঠনে রদবদল করা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে হেলিকপ্টারগুলি হাতে আসায় আমরা খুব খুশি।”

ভারতীয় পত্রিকাসমূহ জানিয়েছে, ২২টি অ্যাপাচে কপ্টার কেনা নিয়ে মার্কিন সরকার ও বোয়িংয়ের সঙ্গে ভারত সরকারের কয়েক হাজার কোটি টাকার চুক্তি হয়েছিল ২০১৫ সালে। ভবিষ্যতে পাক সেনার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মোকাবিলার জন্য এবং স্থলসেনা ও বায়ুসেনাকে সাহায্য করতেই অ্যাপাচেগুলিকে পাঠানকোটের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকার বায়ুসেনা ঘাঁটিতে রাখা হচ্ছে। ভারতীয় বিমানবাহিনীর এক সিনিয়র অফিসারের মতে, ‘এএইচ ৬৪ই’ অ্যাপাচে কপ্টার বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত বহুমুখী মারণক্ষমতা সম্পন্ন যুদ্ধযান। অনেকে একে ‘উড়ন্ত ট্যাঙ্ক’ও বলেন। আর এই ‘উড়ন্ত ট্যাঙ্ক’-এর সাহায্যেই পাকবিরোধী যুদ্ধের অস্ত্রে শান দিচ্ছে বায়ুসেনা। ভারতীয় পত্রিকার ভাষায় , ‘মঙ্গলবারের পর থেকে এই অ্যাপাচে কপ্টারই পাকিস্তানের কাছে জুজু হয়ে দাঁড়াবে, এমনটাই মনে করছে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশ।’##

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.