--- বিজ্ঞাপন ---

নিজের দক্ষতায় বাংলাদেশের সন্তান নিউরো সার্জন প্রফেসর ড. রামপ্রসাদ বিশ্বকে জয় করেছেন-চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির

0

চট্টগ্রাম, (৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ইং): সুদীর্ঘ ৬৪ বছর বিদেশে অবস্থান করলেও একমুহুর্তের জন্যও ভোলেননি দেশকে,  দেশের মাতৃভাষাকে।প্রবাসে থেকে দেশের তথা চট্টগ্রামের মুখ উজ্জ্বল করেছেন চট্টগ্রামের কৃতি সন্তান এই নিউরো সায়েন্টিস্ট ও নিউরো সার্জন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নগরীর জামালখানস্থ চট্টগ্রাম সিনিয়র্স ক্লাব মিলনায়তনে প্রফেসর ড. রামপ্রসাদ সেনগুপ্ত(রবিন)ওবিই এর নাগরিক সংবর্ধনার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ্ব  আ জ ম নাছির উদ্দীন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সামসুদ্দোহা।চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জহিরুল আলম দোভাষ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এতে  অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন,  চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের (চমেক)পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহসিন উদ্দিন আহমদ, চমেক  এর অধ্যক্ষ সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, চুয়েট এর ভিসি রফিকুল ইসলাম,চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফয়েজুল্লাহ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন চসিক প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার সেলিম আকতার চৌধুরী ও শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজের ডা.শাহ মোহাম্মদ জহির ।

প্রফেসর ড.রাম প্রসাদ সেনগুপ্ত রবিন এর সফরসঙ্গী নিউরোলোজিস্ট ঋষি কুমার, ডা. আশিষ দত্ত, ডা.দিপেন্দ্র প্রধান, সুরদিপ দে, ডা.গৌরী দাশ, তুষার চক্রবর্তী এবং ঢাকা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ডা. আহসান হাবীব, ডা.তৌহিদুল ইসলাম, ডা. সেলিম শাহী, ডা. মোরশেদ বাকী ও আরিফুল উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া নগরীর বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্যে চট্টগ্রাম কলেজ অধ্যক্ষ আবুল হাসান, প্রফেসর ডা. এল এ কাদেরী, ডা. বাসনা মুহুরী সহ নগরীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান এবং  চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর, সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউান্সিলর,চসিকের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমদ, সিটি কর্পোরেশন মেমন মাতৃসদন হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. প্রীতি বড়ুয়া সহ চসিক ডাক্তার  এবং কর্পোরেশনের কর্মকর্তাগণ এসময় উপস্থিত ছিলেন। সংবর্ধিত ব্যক্তি প্রফেসর ড.রামপ্রসাদ সেনগুপ্ত রবিনকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ্ব আ জ ম নাছির উদ্দীন সংবর্ধিত ব্যক্তি ড.রবিন এর হাতে এই ক্রেস্ট তুলে দেন।সভা সঞ্চালনায় ছিলেন চসিক তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিটি মেয়র বলেন, বিশ্ববরণ্যে নিউরো সায়েন্টিস্ট ও সার্জন প্রফেসর ড.রামপ্রসাদ সেনগুপ্ত রবিন নিজের মেধা ,যোগ্যতা ও দক্ষতায় বাংলাদেশের এই কৃতিসন্তান বিশ্বকে জয় করতে সক্ষম হয়েছে। সিটি মেয়র আরো বলেন এই বরণ্যে চিকিৎসক তাঁর জম্মভুমির মাটি,মানুষ ও দেশকে প্রচন্ডভাবে ভালবাসতেন। তার এই ভালবাসার শেকড় অনেক গভীরে। ৬৪ বছর দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকলেও জম্মভুমি  চট্টগ্রাম এবং শৈশবকালের সঙ্গীদের কথা তিনি কখনো ভুলেননি। সময়ে সময়ে সঙ্গী এবং পাড়া-প্রতিবেশীদের খবর নিতেন দেশবরণ্যে এই চিকিৎসক। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ড.রামপ্রসাদ সেনগুপ্ত রবিন বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছেন। মানবতার সেবায় নিজকে আত্ম নিয়োগ করা এই মানুষটিকে সংবর্ধিত করতে পেরে মেয়র নিজকে ধন্য মনে করেন। মা, মাটি ও দেশকে কিভাবে ভালবাসসতে হয়,শ্রদ্ধা জানাতে হয় ড.রামপ্রসাদ সেনগুপ্তর কাছ থেকে এই শিক্ষা আমরা পাই। দেশের মানুষ তার কাছে ঘরের মানুষের মত। দেশের মানুষকে তিনি ভালবাসতেন আপন স্বজনের মত। সুদীর্ঘ ৬৪ বছর বিদেশে অবস্থান করলেও একমুহুর্তের জন্যও ভোলেনি দেশকে,  দেশের মাতৃভাষাকে। আজও তিনি চাঁটগাইয়্যা ভাষাতে কথা বলেছেন এটাই আমাদের শিক্ষনীয়। তার মত নিরহংকারকারী মানুষের কাছ থেকে শিক্ষনীয় বিষয়। বৃক্ষ বড় হয় শেকড়কে আকড়ে ধরে। শেকড়ই প্রোথিত থাকে তার অস্তিত্বে।  সিটি মেয়র বলেন ৮৪ বছর বয়সের এই সর্জন ব্যক্তিটি চশমা ছাড়া ল্যাপটপ দেখে বক্তব্য দিয়েছেন । তার এই কন্ঠস্বর শুনে মনে হয়, একজন উদায়মান যুবক বক্তব্য দিচ্ছেন।

সংবর্ধিত ব্যক্তি তার বক্তব্যে বলেন, ‘আঁই চাটগাঁইয়া পোয়া। ১৯৫৫ সালে পড়ালেখা গরিবারলাই আঁই কলকাতাত যাই। এরপর বিলাত। আর ন আই দেশত। আজুয়া ৬৪ বছর পর দেশত আসসিযে। আঁই ইংল্যান্ডত থাকিলেও ইংরেজি নঅ শিখি। প্রয়োজনে ইংরেজিত লেখি। আঁরা বাসাতও চাটগাঁইয়া ভাষায় কথা কই।’ এরপর ইংরেজীতে ড.রামপ্রসাদ সেনগুপ্ত  রবিন লিখিত বক্তব্য দেন।  লিখিত বক্তব্যে তিনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের  উদ্যোগে নাগরিক সংবর্ধনা প্রদান করায় সিটি মেয়র আলহাজ্ব আ জ ম নাছির উদ্দীনকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। এই সময় তিনি বিদেশের মাটিতে দেশের মুখ উজ্জ্বল করা চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের ব্যাপারে বলেন, এদেশের সন্তান ড.টিপু আজিজ ইংল্যান্ডে চিকিৎসা সেবায় নিজের কৃতিত্ব দিয়ে দেশের সুনাম বৃদ্ধি করেছে। এদেশের জাতীয় অধ্যাপক ডা.নুরুল ইসলাম আমার কলেজের ছাত্র ছিল। প্রফেসর ড. রামপ্রসাদ সেনগুপ্ত রবিন বলেন, আমি চট্টগ্রামের ভূমিপুত্র। ফতেয়াবাদ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ব্রজ সাহার স্মৃতি মনে পড়ে। একদিকে পাহাড়, অন্যদিকে কর্ণফুলী-এমন সৌন্দর্য বিশ্বের আর কোথাও দেখিনি। আমার জন্মস্থান, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সব বন্ধু, স্বজন, শুভাকাঙ্ক্ষী, ডোনার, সহকর্মীদের ঋণ আমি কখনো শোধ করতে পারবো না। চট্টগ্রাম  দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম বন্দর।  এটি সকল ধর্মের সম্প্রীতির তীর্থভূমি। সূর্য সেন চট্টগ্রামের সন্তান। ক্রিকেটে বাংলাদেশের সুনাম ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বজুড়ে। বক্তব্যে তিনি সকল শুভানুধ্যায়ী,বন্ধুবান্ধব পরিচিতজন সকলের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। একনজরে ড. রবিনের পরিচিতি-নগরীর ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডের উত্তর ফতেয়াবাদের নন্দীরহাট গ্রামে জন্ম ১৯৩৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর। ১৯৪৪ সালে নন্দীরহাট শৈলবালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষায় হাতেখড়ি। ১৯৫৩ সালে ফতেয়াবাদ আদর্শ বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয় হতে স্কলারশীপ পেয়ে ম্যাট্রিক পাশ করেন, ১৯৫৫ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ১৯৬১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিবিএস, ১৯৬৭ সালে এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এফআরসিএস, ১৯৬৯ সালে ইংল্যান্ড থেকে এফ আর সি এস,১৯৭৭ সালে নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০১ সালে ডারহ্যাম ইউনিভার্সিটি ও ২০০৯ সালে ভারতের ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্স থেকে ফেলোশিপ করেন। ১৯৭৩ সালে দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে কর্মজীবন শুরু করেন।  ২০১৬ সালে ‘নিউরো সার্জিক্যাল কনট্রিবিউশন অ্যান্ড নিউরো সার্জিক্যাল ডেভেলপমেন্ট’র জন্য ইংল্যান্ডের রানি কর্তৃক প্রিন্স চার্লিস থেকে অফিসার অব দ্য ব্রিটিশ এমপায়ার (ওবিই) গ্রহণ করেন। ২০১৭ সালে দ্য ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব নিউরো সার্জিক্যাল সোসাইটি কর্তৃক নিউরো সার্জারিতে  নোবেল পুরস্কারের সমপর্যায়ে দ্য মেডেল অব অনার প্রদান করেন।  ২০০৫ সালে কলকাতার মল্লিক বাজারে ১৫০ শয্যার নিউরোলজি সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন ড. রবিন।

## শহীদ,০৫.০৯.২০১৯ইং

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.