--- বিজ্ঞাপন ---

নগরীর হোটেল মালিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা ফুটপাতে কোন ধরনের খাবার বিক্রয় করা যাবে না- সিটি মেয়র আ জ ম নাছির

0

চট্টগ্রাম, (৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ইং):  হোটেল-রেস্তোরাঁ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা ও স্বাস্থ্যসম্মত নিরাপদ খাদ্য তৈরীতে হোটেল রেস্তোরাঁর মালিকদের মানসিকতা পরিবর্তনের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র আলহাজ্ব আ জ ম নাছির উদ্দীন। তিনি আজ রোববার সকালে রীমা কনভেনশন সেন্টারে নগরের হোটেল মালিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন। মতবিনিময় সভায় প্রায় ৫ শত হোটেল রেস্তোরাঁর মালিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী অংশগ্রহণ করেন।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামশুদ্দোহার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় চসিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আফিয়া আখতার, নগরীর হোটেল রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা দিদারুল আলম, পুলিশ প্রশাসনের এডিসি কাজীমুল রশিদ, হোটেল রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতির চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ইলিয়াছ আহমেদ ভূইয়া, কো-চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদুল হান্নান বাবু, ক্যাবের সহ সভাপতি এস এম নাজির হোসেন, ইপসার কর্মকর্তা ওমর সাহেদ হিরু, চসিক মডার্ন খাদ্য পরীক্ষাগারের মাইক্রো বায়োলজিস্ট আশীষ কুমার দাশ, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. হাসানুজ্জামান, চসিকের স্বাস্থ্য পরিদর্শক ইয়াসিনুল হক চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।

সিটি মেয়র বলেন, নগরীর ফুটপাতে কোন ধরনের খাওয়ার বিক্রয় করা যাবে না। এই খাবারগুলো নিরাপদ নয়। আমরা চাই আমাদের শহরে বিশুদ্ধ খাবার প্রস্তুত এবং বিক্রি হয়। এ লক্ষ্যে যত রকম উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন তার জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কাজ করে যাবে। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান। মেয়র জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি। নগরবাসী ও মেয়রের প্রত্যাশা অঙ্গাঙ্গীকভাবে জড়িত। হোটেল রেস্তোরাঁয় জরিমানা করা সিটি কর্পোরেশনের মুখ্য উদ্দেশ্য নয়। সিটি কর্পোরেশনের মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে নগরীতে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা। এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, সরকার জনস্বার্থে আইন প্রণয়ন করে থাকে। এ আইন পরিবর্তনের কোনো সুযোগ সিটি কর্পোরেশনের নেই। আমরা চাই আপনারা সরকার প্রণীত আইন মেনে চলুন। যে কোন ব্যবসা পরিচালনা করতে হলে সরকারি নিয়ম নীতি কিংবা আইন জানতে হবে। আইন না জানার অজুহাত কোনভাবে কাম্য নয়। এ মানসিকতা থেকে সংশ্লিষ্টদের বেরিয়ে আসতে হবে।

মেয়র বলেন, প্রতিটি রেস্তোরাঁয় একজন ম্যানেজার থাকে। এই ম্যানেজারকে সচেতন করতে হবে মালিককে। এ প্রসঙ্গে ভোক্তার নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে নগরীর হোটেল ও রেস্টুরেন্ট ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ১৯টি করণীয়াদি আরোপ করেছেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। এ শর্তগুলো বাস্তবায়নে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে হোটেল রেস্তোরাঁ বরাবরে ফেষ্টুন প্রদান করা হবে। ফেষ্টুনে  অননুমোদিত রং, ফ্লেভার, কৃত্রিম রং মিশ্রিত মটর, কেমিক্যাল, ছাপা সংবাদপত্রের কাগজ ব্যবহার করে খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, সংরক্ষণ, পরিবেশন ও সরবরাহ, রেফ্রিজারেটরে কাঁচা মাছ-মাংসের সাথে সবজি, অর্ধ-রান্না খাবার, রান্না বা খাবার খোলা অবস্থায় সংরক্ষণ, জমানো পানিতে তৈজসপত্র ধৌত করা, নোংরা-ময়লা পাত্র/ তৈজসপত্র ব্যবহার হতে বিরত থাকুন  ইত্যাদি নিয়মাদির উল্লেখ থাকবে।

এছাড়া খাদ্যদ্রব্য বিক্রয়কালে মোড়ক/পাত্র/ঠোঙ্গার ওজন বাদ দিন, খাদ্যদ্রব্য বিক্রয়কালে বিক্রয় রশিদ প্রদান করুন, দর্শনীয় প্রকাশ্য স্থানে খাদ্যদ্রব্যের হালনাগাদ মূল্য-তালিকা প্রদর্শন করুন, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি/লাইসেন্স গ্রহণ পূর্বক ব্যবসা পরিচালনা করুন, হোটেল, রান্নাঘর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন। যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে রাখুন, হোটেল রেস্তোরায় প্রবেশ পথে তামাকজাত পণ্যের বিক্রয় ও প্রদর্শনী বন্ধ রাখুন, ভোক্তার সাথে সংযত আচরণের কথা অনুষ্ঠানে পাঠ করে শুনান সিটি মেয়র।  তিনি বলেন, আমরা যে ফেষ্টুন দিচ্ছি তা ক্যাশে কাউন্টারের পেছনে বা পাশে তা টাঙ্গিয়ে দিবেন। এতে জনসচেতনতা সৃষ্টি হবে। উল্লেখিত নির্দেশনা নগরীর হোটেল রেস্তোরাঁ মালিককে অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে।

তিনি বলেন, নিরাপত্তার জন্য গরিব মানুষও এখন নিরাপদ পানি কিনে খাচ্ছে। পচা, বাসি, মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার নিজে খাবেন না, ভোক্তাদের কেন খাওয়াবেন ? কর্মচারীরা যাতে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে সেদিকে লক্ষ্য রাখার পরামর্শ দেন মেয়র। তিনি বলেন, নগরীর হোটেল মালিক সমিতির ছাড়পত্র ছাড়া চসিকের ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হবে না। আমরা চাই সকলের মধ্যে দায়বদ্ধতা সৃষ্টি হোক।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আফিয়া আখতার বলেন, জনগণের স্বার্থে আইন তৈরি ও প্রয়োগ হয়। আইন জানতে হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে অপরাধ সংঘটিত হলে এবং অপরাধী অপরাধ স্বীকার করলে জরিমানা বা শাস্তি দেওয়া হয়। জরিমানার টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে চলে যায়। সচেতন করার জন্যই জরিমানা করা হয়। হোটেল মালিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনার বাসার রান্নাঘরের পরিবেশ ও হোটেলের রান্নাঘরের পরিবেশ দেখুন। সুপারভিশন করুন। পরিষ্কার রাখুন। আপনারা সচেতন হলে আমরা আপনাদেরকে ধন্যবাদ জানাব।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মো. হাসানুজ্জামান বলেন, আমরা কেউ কারো প্রতিপক্ষ নই। দই তৈরি করতে হলে বিএসটিআই’র লাইসেন্স নিতে হবে। মোড়কের গায়ে উৎপাদন, মেয়াদ, খুচরা মূল্য থাকা বাঞ্চনীয়। বিদেশী পণ্যের মোড়কে আমদানিকারকের নাম, বাংলাদেশি টাকায় মূল্য ইত্যাদি থাকা বাধ্যবাদকতা রয়েছে।

হোটেল রেস্তোরা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদুল হান্নান বাবু চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রদত্ত ফেষ্টুনের সিদ্ধান্ত কার্যকরণে একবছর সময় চেয়েছেন। এ সময়ের পরই তারা হোটেল রেস্তোরাঁয় চসিকের মোবাইল কোর্ট পরিচালনার অনুরোধ জানান। তবে হোটেল রেস্তোরাঁ মালিকদের আবেদনকৃত সময়ের বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারনে মত প্রকাশ করেন মেয়র। এতে আরো উপস্থিত ছিলেন চসিকের কাউন্সিলর, সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর, ক্যাবের কর্মকর্তা, হোটেল রেস্তোরা মালিক সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ ।

শহীদ, চট্টগ্রাম, ০৮.০৯.২০১৯ ইং।##

 

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.