--- বিজ্ঞাপন ---

ভারত সীমান্তে পাকিস্তান-চীন ‘শাহীন-৮’ বৃহৎ সামরিক মহড়া কি বড় যুদ্ধের ইঙ্গিত!

0

মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম, ( ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ইং): পাকিস্তান ও চীন  ভারত সীমান্তে এযাবৎকালের সর্ববৃহৎ সামরিক মহড়া চালিয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে এই মহড়ার তীব্র নিন্দা জানানো হয়। ভারতীয় সামরিক বিশেষজ্ঞরা ভারতের সীমান্ত ঘেঁষে ‘শাহীন-৮’ নামের এই মহড়াকে অনেকটা যুদ্ধের উস্কানির মতই মনে করছেন।

ভারতের সীমান্ত জুড়ে সংঘর্ষের মত ঘটনায় প্রতিদিনই যখন টান টান উত্তেজনা তখনই এ যুদ্ধ মহড়াকে সামরিক অঙ্গনে বেশ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।

ভারত-মার্কিন  পাল্টা মহড়া ‘যুদ্ধ অভ্যাস’ শুরু

এদিকে ভারতও থেমে নেই পাল্টা জবাব হিসেবে  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের সাথে যৌথ সামরিক মহড়া ‘যুদ্ধ অভ্যাস-২০১৯’ শুরু করল নয়াদিল্লী। ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়া  ১২ সেপ্টেম্বর এক প্রতিবেদনে বলছে, মার্কিনীদের সাথে সামরিক এই মহড়া দুদেশের সামনে ভবিষ্যত দিনগুলোতে যে কোন ধরনের হুমকী মোকাবেলায় যৌথ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দেশ দুটির সেনারা  কাজ করে যাবে।

আমেরিকায়  রাজধানী ওয়াশিংটনের লুইস মেককড ঘাঁটিতে এই মহড়া চলবে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এদিকে, পাকিস্তানও চীন দুদেশের মধ্যে  এযাবৎকালের সর্ববৃহৎ ১৫ দিনের সামরিক বিমান মহড়া কেবলই সমাপ্ত করল।

 

সামরিক বিশ্লেষকরা এসব মহড়াকে নীচক মহড়া হিসেবে দেখছেননা । তারা এটাকে নিকট ভবিষ্যতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সীমিত কিংবা বড় যুদ্ধের পূর্ব প্রস্তুতিরই ইঙ্গিত বলে মনে করছেন।

 

ভারত সীমান্তে পাকিস্তান-চীন এযাবৎকালের বৃহত্তম সামরিক মহড়ার উদ্দেশ্য

ভারতের বহুল প্রচারিত ইংরেজী  দৈনিক দি হিন্দুস্থান টাইমস ৭ সেপ্টেম্বর এর সংস্করণে  মহড়াটির তাৎপর্য উল্লেখ করে বলেছে, এটি এমন এক সময় চালিয়েছে যখন কিনা ভারতের ও পাকিস্তান  সাম্প্রতিককালে সীমান্তে দুটি দেশ একে অপরের বিরুদ্ধে  বিমান  হামলা চালিয়ে এক উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মুখোমুখি অবস্থান করছে।

পত্রিকাটি জানায়, গত ২৩ আগস্ট থেকে শুরু ১৫ দিনব্যাপী এ মহড়াটি কোন বিদেশী বিমান বাহিনীর সাথে চীনের এযাবৎকালের সবচাইতে বড় মহড়া । হিন্দুস্থান টাইমস পত্রিকা আরও জানায়, শুক্রবার শেষ হওয়া এই বড় মহড়ায় পাকিস্তান ও চীনের ৫০টি সর্বাধুনিক মডেলের বিমান ও স্টেট অব দি আর্ট ক্ষেপণাস্ত্র, রাডার ব্যবস্থা সঠিক যুদ্ধের মতই পরীক্ষা নিরীক্ষা চালায় দুদেশ। চীন আর কোন বাইরের দেশের বিমান বাহিনীর সাথে কখনও এত বড় মহড়া করেনি বলে জানায় পত্রিকাটি।

 

মহড়ায়  লেটেস্ট  সংস্করণের ক্ষেপণাস্ত্র অত্যাধুনিক জঙ্গী বিমান অংশ নেয়

পাকিস্তান চীন একই সময়ে চালিয়েছে ‘শাহীন-৮’ নামের দুদেশের মধ্যেকার যৌথ সামরিক মহড়া। আর মহড়াটি ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের লাদাখের নিকট চীনের হুলটোন শহরে। যা ভারতের লেহ শহর ঘেঁষা চীন সীমান্তের ৩০০ কিলোমিটার দূরে।  ভারতের সীমান্তে এই মহড়া চালানোয় দেশটির পক্ষ থেকে এটাকে উস্কানিমূলক বলে মন্তব্য করা হয়েছে।  ভারতীয় বিমানবাহিনী মহড়ার প্রতিটি পদক্ষেপের উপর কড়া নজর রাখছে জানিয়েছে ইন্ডিয়া টুডে পত্রিকা। ভারতের পত্রিকার মতে মহড়ায় অংশ নেয় পাকিস্তান ও চীনের যৌথ তৈরী জঙ্গী বিমান জেএফ-১৭ থান্ডার ।

পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের গিলগিট বালটিস্তানের স্কারদু বিমান ঘাঁটি থেকে জঙ্গী বিমানগুলি  চীনে উড়ে যায় এবং ঐ শহরে উস্কানিমূলক যুদ্ধ মহড়ায় অংশ নেয়। পাকিস্তানের ‘আআজ’ নিউজসহ অন্যান্য মিডিয়ায় ১০ সেপ্টেম্বর পাকিস্তান-চীন বিমান বাহিনীর ১৮ দিনব্যাপী ‘শাহীন-৮’  সামরিক মহড়ার সংবাদ ফলাও করে প্রচারিত হয়েছে। পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের সীমান্তের কাছে উত্তর পশ্চিম চীনে অনুষ্ঠিত এ মহড়ায় দু’দেশের বিভিন্ন মডেলের জঙ্গী বোমারু বিমান, ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র, রাডার স্থাপনা সাথে নিয়ে ব্যাপক যুদ্ধ মহড়া চালিয়েছে। চীনের পিএলএ (পিপলস লিবারেশন আর্মি) এয়ার ফোর্স ও পাকিস্তান বিমান বাহিনী (পিএএফ) এর চৌকশ বৈমানিকরা এতে অংশ নেন।

 

মহড়ায় পাকিস্তানের জঙ্গী বিমান জেএফ-১৭ থান্ডার কাশ্মীর থেকে উড়ে যায়

মহড়ার সর্বশেষ মডেলের ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে দক্ষতা পরখ করা হয়, জঙ্গী বিমানসমূহ নিদ্দিষ্ট  লক্ষ্যবস্তুতে  নিশানা বরাবর নির্ভুল হামলা চালিয়ে নিজ নিজ দেশের পাইলটদের সর্বোত্তম পরীক্ষাসমূহ সম্পন্ন করে। হিন্দুস্থান টাইমস আরও জানায়, মহড়ায় পাকিস্তান ও চীনের যৌথভাবে  তৈরী জেএফ-১৭ থান্ডার জঙ্গী বিমানের সর্বশেষ মডেল, পূর্ব সতর্কীকরণ গোয়েন্দা বিমান এবং অত্যাধনিক অস্ত্রশস্ত্র ও সেনা এতে অংশ নেয়। মহড়ায়  চীনের অত্যাধুনিক  জে-১০সি ও জে-১৬ জঙ্গী বিমান ও চীনের কেজে-৫০০ এয়ারবোর্ন আর্লি ওয়ার্নিং এয়ারক্র্যাফট ( এইডব্লিউএন্ডসি) বিমান, জেএইচ-৭ দূরপাল্লার বোমারু বিমান যুদ্ধকালীন কমবাট দক্ষতা প্রদর্শন করে।

পাকিস্তান ও চীনের বিমানগুলোতে অত্যাধুনিক একটিভ ইলেকট্রনিক্যালি স্ক্যানড এরে সংক্ষেপে ‘এইএসএ’ রাডার ব্যবস্থা পরীক্ষা করা হয়। চীনের কেএলজে-৭এ এইএসএ  রাডার  ১৭০ কিলোমিটার দূর থেকে শত্রু বিমানকে টার্গেট করে বিমানে থাকা সবচাইতে লেটেস্ট পিএল-১০ ও পিএল-১৫ এর মত এয়ার টু এয়ার মিসাইল নিক্ষেপ করে লক্ষ্যবস্তু  ঘায়েল করতে সক্ষম। পাকিস্তান সেদেশে তৈরী জেএফ-১৭ থান্ডার বিমানে এসব ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালাচ্ছে বলে পাকিস্তানের সামরিক সূত্রে জানা যায়।

 

এ মহড়া ভারতকে হুমকি দেখাতেই চীন-পাকিস্তানের প্রয়াস!

সামরিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান চীন ঠেকানো নীতিতে ভারতকে ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে দেখছে ওয়াশিংটন। তাই এধরণের মহড়ায় একে অপরের সামরিক সম্পর্ককে আরো পাকাপোক্ত করছে। একই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পাকিস্তান ও চীন । ৪০’এর দশক থেকেই একে অপরের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে দেশ দুটি গভীর সম্পর্ক বজায় রেখেছে।

পাকিস্তান চীনের সাথে সেদেশের সম্পর্ককে  হিমালয় পর্বত থেকেও উঁচু মনে করে। আর চীনও একে অপরের ‘অল ওয়েদার ফ্রেন্ড’ সকল সময়ের বন্ধু মনে করে আসছে যা এখন ওপেন সিক্রেট। কাশ্মীর পরিস্থিতিতে চীনই বিষয়টিকে জাতিসংঘে তুলেছে। অথচ ভারত এটাকে দু’দেশের মধ্যেকার দ্বিপাক্ষিক সমস্যা মনে করে থাকে।

## শহীদ, ১৩.০৯.২০১৯ইং।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.