--- বিজ্ঞাপন ---

কাশ্মীর নিয়ে ইমরানের পক্ষেই সুর পাল্টালেন ট্রাম্প, ভারত নারাজ

0

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, (২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ইং): একদিন যেতে না যেতেই  সুর পাল্টালেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমনটিই অভিযোগ ভারতীয় প্রচার মাধ্যমের। আগের দিন তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর হাউডি মোদী সংবর্ধনায় পাকিস্তানকে ইঙ্গিত করে ট্রাম্প  মৌলবাদী জঙ্গীদের বিরুদ্ধে যৌথ লড়াইর কথা বলেছিলেন। পরদিন তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে সোমবারের  বৈঠকের পর উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে বেমালুম বিপরীত বক্তব্য দেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ভারতের ঐ হাউডি মোদী সংবর্ধনায় অতি আক্রমণাত্নক বক্তব্য দেয়া হয়েছে। এটা আশা করেননি তিনি । মৌলবাদী ইসলামিক জঙ্গীর ব্যাপারে কাশ্মীরের পাকিস্তানের জঙ্গীদের ইঙ্গিত করা হয়েছিল সেটাও তিনি ইউ টার্ন করে সাংবাদিকদের বলেন, মূলত: আমি ইরানকে ইঙ্গিত করেছি। ট্রাম্প এ নিয়ে তৃতীয়বার কাশ্মীর নিয়ে  দুদেশের সমস্যার ইঙ্গিত করে  বলেন, ‘ আমি পাকিস্তানের ইমরান খানের উপর ভরসা করতে পারি।আমি চাই কাশ্মীরের সকলে ভাল থাকুন। আমি একজন ভার মধ্যস্থতাকারী দুদেশ চাইলেই আমি সেটা করতে পারি।’ অথচ ভারত বারবার তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতার প্রস্তাব  নাকচ করে আসছে। অপরদিকে পাকিস্তান চায় ট্রাম্প এ ব্যাপারে মধ্যস্থতার ভুমিকা পালন করুক।

 

ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার সাংবাদিক অগ্নি রায় ট্রাম্পের একদিনেই বক্তব্য পরিবর্তনকে দিল্লীকে ট্রাম্প অস্বস্তিতে ফেলেছেন বলে ২৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন। তার প্রতিবেদনে তিনি বলেন, হিউস্টনে ‘হাউডি মোদী’ অনুষ্ঠানে গত কাল কার্যত ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারের মঞ্চ সাজাতে দেখা গিয়েছে নরেন্দ্র মোদীকে। তার বিনিময়ে কাশ্মীর-সহ নানা ক্ষেত্রে মার্কিন সাহায্য পাওয়া যাবে বলে আশা করেছিল দিল্লি। কিন্তু আজ পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে বৈঠকের পরে ফের কাশ্মীর প্রশ্নে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিলেন ট্রাম্প। এই নিয়ে তৃতীয় বার। এবং আরও এক বার অস্বস্তিতে ফেললেন নয়াদিল্লিকে।

ভারত সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেন রদ করার পরে রাষ্ট্রপুঞ্জে এসে গোড়া থেকেই নানা মঞ্চে কাশ্মীর নিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন ইমরান। কিন্তু গতকাল ট্রাম্পের উপস্থিতিতে মোদী যে ভাবে কাশ্মীর নিয়ে সুর চড়িয়েছেন, কিন্তু আজ ইমরানের সঙ্গে বৈঠকে ট্রাম্প বলেন, ‘‘আমি পাকিস্তানের উপরে ভরসা করি। আমি চাই কাশ্মীরে সকলে ভাল থাকুন। প্রধানমন্ত্রী মোদী ও প্রধানমন্ত্রী খানের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভাল। ওঁরা দু’জনেই যদি বলেন যে আমাদের একটা সমস্যা দূর করার আছে, তা হলে আমি সেটা করতে পারি।’’ একই সঙ্গে ট্রাম্পের দাবি, ‘‘আমি খুবই ভাল মধ্যস্থতাকারী।’’

এর আগে ইমরানের পাশে বসে ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, কাশ্মীর নিয়ে মোদীই তাঁকে মধ্যস্থ হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। ভারত তার প্রতিবাদ করে জানিয়ে দেয়, কাশ্মীর দ্বিপাক্ষিক সমস্যা। গোড়ায় নিজের অবস্থানে অনড় থাকলেও পরে মধ্যস্থ হতে চান না বলে মন্তব্য করেছিলেন ট্রাম্প।

 

হিউস্টনের মঞ্চে সন্ত্রাস প্রশ্নে নাম না করে পাকিস্তানকে তুলোধোনা করেন মোদী। ‘মৌলবাদী জঙ্গি’দের বিরুদ্ধে যৌথ লড়াইয়ের কথা বলেন ট্রাম্পও। কিন্তু আজ তিনি বলেন, ‘‘কাল ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণাত্মক মন্তব্য করতে শুনলাম। সেটা আশা করিনি।’’ তবে একই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য ‘‘ওই কথা শুনে ৫০ হাজার মানুষ খুশি হলেন।’’ কিন্তু মোদী তো জঙ্গি ঘাঁটি হিসেবে পাকিস্তানের দিকে ইঙ্গিত করেছিলেন? ট্রাম্পের জবাব, ‘‘আমি ইরানকেই বেশি ইঙ্গিত করেছি।’’

ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রের অবশ্য দাবি, এটা প্রত্যাশিতই ছিল। পররাষ্ট্র দপ্তরের এক কর্তার মতে, ‘‘পাকিস্তানকে পুরোপুরি ছুড়ে ফেলা ট্রাম্পের পক্ষে সম্ভব নয়। মনে রাখতে হবে ট্রাম্প জানিয়েছেন যে দু’পক্ষ চাইলে তবেই তিনি সালিশি করবেন। ভারত যে রাজি নয় তা তিনি জানেন।’’

এদিকে পাকিস্তানের ইংরেজী দৈনিক দি এক্সপ্রেস ট্রিবিউন ২৪ সেপ্টেম্বর শিরোনামে লিখেছে, ট্রাম্প আগে জানতেননা হাউডি মোদী সমাবেশে এধরণের আগ্রাসী বক্তব্য দেয়া হবে। তিনি পাকিস্তানকে ইঙ্গিত করেই বক্তব্যের কথা বুঝাতে চেয়েছেন বলে পত্রিকাটি জানায়।

অপরদিকে নিউইয়র্কে অপর এক অনুষ্ঠানে সোমবার কাউন্সিল অব ফরেন রিলেশনস-এ বক্তব্য রাখতে গিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ৯/১১ এর ঘটনার পরে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভুল করেছিল পাকিস্তান।  পারভেজ মুশাররফের সরকারের ওই সিদ্ধান্তের সমালোচনায় মুখর ইমরান এদিন বলেন, ‘যা করা সম্ভব নয়, সেই প্রতিশ্রুতি দেয়া ঠিক হয়নি।’

মার্কিন আগ্রাসন শুরু হওয়ার আগে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানের তালিবান সরকার মাত্র তিনটি দেশের সমর্থন পেয়েছিল। তাদের একটি ছিল পাকিস্তান। ৯/১১ এর ঘটনা সেই সমীকরণ বদলে দেয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ নেয় পাকিস্তান। সোমবার এই সিদ্ধান্তকে ঐতিহাসিক ভুল বলে ব্যখ্যা করেন ইমরান। অতীত তুলে এনে তিনি বলেন,‘‘ ১৯৮০-র দশকে সোভিয়েত রাশিয়া আফগানিস্তান দখল করতে এসেছিল। এই সময়ে সোভিয়েতের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায়। আইএসআই (ইন্টার সার্ভিস ইন্টালিজেন্স) সেবার সোভিয়েতের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরির জন্যে মুসলিম বিশ্বের জেহাদি গোষ্ঠীগুলিকে প্রশিক্ষণ দেয়।’’ ইমরান খানের  দাবি, সে সময়ে জেহাদিরা নায়কের মতো ছিল। তাঁদের চেষ্টাতেই ১৯৮৯ সালে আফগান মাটি ছেড়ে দেয় রাশিয়া।

## শহীদ, ২৪.০৯.২০১৯ইং।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.