--- বিজ্ঞাপন ---

৮৭ বছরের ‘রিভলভার দাদি’

0

বয়সের ভারে কোমরের সমস্যা থাকায় বাঁ হাতটা কোমরে রেখেই হাঁটেন। খুব জোরে হাঁটাচলা করতে পারেন না। বয়স হার মেনেছে শুধু একটা জায়গাতেই। নিশানা আর লক্ষ্যভেদ। দৃঢ় দৃষ্টি আর নির্ভুল নিশানায় আজও তিনি যে কোনও লক্ষ্যকে ভেদ করতে পারেন। এই বয়সেও তাঁর বন্দুকবাজিতে মেতে সারা গ্রাম। তিনি ভারতের উত্তরপ্রদেশের বাগপত জেলার জহরি গ্রামের বাসিন্দা ‘রিভলভার দাদি’। প্রকৃত নাম চন্দ্র তোমর। বিশ্বের প্রবীণতম শুটার। প্রত্যন্ত এই গ্রামে মেয়েদের বাড়ির বাইরে বেরনো ছিল একপ্রকার ‘নিষিদ্ধ’। বাড়ির মহিলারা বাইরে গিয়ে কাজ করবেন! ছি ছি পড়ে যেত গ্রামে।

এমন একটা গ্রামে থেকে ৬৫ বছর বয়সে বাড়ির বাইরে পা দেওয়াটা ভীষণ কঠিন ছিল তাঁর কাছে। কিন্তু নিশানা যদি সঠিক হয়, লক্ষ্যভেদ যে হবেই। যে বয়সে কাজ থেকে অবসর নিয়ে নেন সবাই, সেই বয়স থেকেই এক নতুন জার্নি শুরু করেছিলেন চন্দ্র। ৬৫ বছর বয়সে তিনি প্রথম তাঁর অসামান্য এবং নির্ভুল শুটিংয়ে তাক লাগিয়ে দেন বিশ্বকে। এখন তিনি ৮৭ বছরের। বয়সের ছাপ যদিও বন্দুকবাজিতে বিন্দুমাত্র পড়েনি। নাতনির বন্দুকবাজিতে আগ্রহ দেখে একদিন তাঁকে সঙ্গে করে স্থানীয় রাইফেল ক্লাবে ভর্তি করাতে যান চন্দ্র। সেখানে গিয়ে নিজে হাতে বন্দুক তুলে শুট করেন। প্রথম শুটিংয়েই টার্গেটের ঠিক মাঝখানে লাগিয়ে দেন তিনি। তাঁর বন্দুকবাজি দেখে রাইফেল ক্লাবের প্রত্যেকে অবাক হয়ে যান। নাতনির সঙ্গে তাঁকেও প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য জোরাজুরি করতে লাগেন কোচ। দাদিও তাতে রাজি হয়ে যান। কিন্তু প্রশিক্ষণ নিতে গেলে যে সময় তাঁকে দিতে হবে, তার উপায় ছিল না। এর তীব্র বিরোধী ছিল তাঁর রক্ষণশীল পরিবারও। প্রথম প্রথম স্বামীর সমর্থনও পাননি তিনি। গ্রামবাসীরাও তাঁকে নিয়ে ঠাট্টা করতে শুরু করেন। সব বাধা উপেক্ষা করে ৬৫ বছর বয়সে নতুন পথে চলা শুরু তাঁর। পরিবারের কেউ যাতে তাঁর দিকে আঙুল তুলতে না পারেন, সে জন্য ভোরে ঘুম থেকে উঠে সংসারের কাজ করতেন। রান্না করা, গরুর দেখভাল করা— এ সব শেষ করে তারপর যেতেন প্রশিক্ষণ নিতে। এ পর্যন্ত ১০০টারও বেশি পদক জিতে নিয়েছেন তিনি। তারমধ্যে ৩০টা জাতীয় স্তরের পুরস্কার রয়েছে। এতদিন যাঁরা তাঁকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করতেন, তাঁরাই এখন সমীহ করে চলেন। পরিবারও তাঁকে পূর্ণ সমর্থন দেয়। আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, গ্রামে কোনও মেয়ের বিয়ে দেওয়ার সময় শ্বশুরবাড়ি থেকে যৌতুক চাইলে তাদেরকে নাকি দাদি আম্মার কথা বলা হয়। দাদি আম্মার নাম শুনে কেউ আর যৌতুক নেন না।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.