কাজী আবুল মনসুর, আরব আমিরাত থেকে ফিরে
এখানকার বাংলাদেশি শ্রমিকরা ভালো নেই। এক সময় আরব আমিরাতে বাংলাদেশী শ্রমিকদের বাজার রমরমা থাকলেও ক্রমশ তা খারাপের দিকে যাচ্ছে। অনেক চেষ্টা তদবিরের পর ভিসিট ভিসা চালু করলেও বন্ধ রেখেছে শ্রমিক ভিসা। বাংলাদেশের অব্যাহত কুটনৈতিক তৎপরতা সত্বেও আরব আমিরাতের শ্রমিক ভিসার দুয়ার খুলছে না। বর্তমানে আরব আমিরাতে সীমিত আকারে ইনভেস্টর ভিসা চালু আছে, তাও আজমান আর রাস -আল -কায়মাতে। যাদের অর্থবিত্ত আছে তারা সহজে এসব দেশে ভিসা নিয়ে যান। অভিযোগ রয়েছে, এক শ্রেনির রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী অবৈধ অর্থের পাহাড় জমিয়েছে এসব দেশে। কিন্ত যে সব সাধারন শ্রমিক নিজের শ্রম দিয়ে বাংলাদেশে টাকা পাঠায় তার কোন মূল্যায়ন নেই। দেশের বিমান বন্দরে এদের সাথে চলে খারাপ ব্যবহার। এসব শ্রমিকরা দেশে আসলেই বিমান বন্দরে হয়রানির মূখে পড়ে এটা অনেকটা ওপেন সিক্রেট। অথচ আরব আমিরাত থেকে কোন বাধা ছাড়াই সহজভাবে এরা চলে আসেন। নতুন ভিসা বন্ধ, পুরানোরা এখন অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে ব্যস্ত। পুরানোদের ভিসা নবায়নের বিষয়টি খোলা থাকার কারনে এখনও বাংলাদেশ আরব আমিরাত থেকে বিপুল রেমিট্যান্স পায়।
শ্রমিক ভিসা বন্ধ, ভিসিট ভিসা ইস্যু করা হচ্ছে বেশি দিন হচ্ছে না। এরই মধ্যে যারা ভিসিট ভিসায় যাচ্ছেন তাদের নিয়েও বিমান বন্দরে শুরু হয়েছে টানা হেচঁড়া। ভিসিটি ভিসা ইস্যু করার ক্ষেত্রে যিনি স্পনসর করছেন তার অনেকগুলো বিষয় আইন কানুনের মধ্যে আটকা থাকে। যারা যান তারা অবশ্যই ফিরে আসতে বাধ্য হবেন। কারন আইনি কাঠামোর কারনে এখানে থাকার কোন সুযোগ নেই। তারপরও বিমান বন্দরে যেভাবে হয়রানি, সন্দেহ চলে তাতে এ ভিসাও যদি বাংলাদেশের জন্য বন্ধ করে দেয় তাহলে বলার কিছু থাকবে না। আরব দেশগুলোতে এখন নিয়ম কানুন এত কঠিন করেছে তাতে কারও পক্ষে অবৈধভাবে বাস করা সহজ নয়।
আরব আমিরাতের বাংলাদেশি শ্রমিকদের অবস্থানে ঘুরে নানা চিত্র উঠে এসেছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো এরা অভিভাবক হিসেবে দেশের প্রশাসনকে পায় না। ভারত-পাকিস্তানের চিত্র ভিন্ন। এক সময় আরব আমিরাতে বাংলাদেশের মানুষ শ্রমিক মহলে নেতৃত্ব দিতেন। এখন সেসব স্থান দখল করছে ভারতীয়রা। এমন কোন স্থান নেই যেখানে ভারতীয়দের পুশ করা হয় নি। আর এটা সম্ভব হচ্ছে ভারতের কুটনৈতিক মহলের শক্ত অবস্থানের কারনে। তদুপরি বাংলাদেশি শ্রমিকদের মূল্যায়ন নিজের দেশে না হওয়ায় অন্য দেশের শ্রমিকরা সাহস পেয়ে যায়। ফলে বাংলাদেশিদেও শ্রম বাজারে তারা ঢুকে ষড়যন্ত্র করে এক সময় নিজেদের দেশের শ্রমিককে এনে ঢুকায়। বাংলাদেশি শ্রমিককে বের করে দিতে তাদের এতটুকু বেগ পেতে হয় না।
দুবাই এর সবজি বাজারের ব্যবসায়ী আজিম উদ্দিন তালুকদার দীর্ঘ ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে অবস্থান করছেন। তিনি বাংলাদেশের শ্রমিকদের দুঃখ দুর্দশার চিত্র তুলে ধরে বলেন, একসময় সবজি ব্যবসায় লাভ হাজার হাজার দেরহাম হতো তা এখন শ’য়ে নেমে এসেছে। শ্রমিকরা নায্য পাওনা পায় না। ভারতের একজন শ্রমিক যেখানে গড়ে ১৫০০ দেরহাম থেকে ৩০০০ দেরহাম বেতন পান, সেখানে বাংলাদেশি শ্রমিকদেও এক হাজার দেরহাম থেকে দেড় হাজার দেরহামে সন্তষ্ট থাকতে হয়। তিনি বলেন, ভারতের শ্রমিকদের নায্য পাওনার ব্যাপারে সে দেশের প্রশাসনের সাথে এ দেশের প্রশাসনের বুঝাপড়া রয়েছে। যা আমাদের দেশের নেই। ওদের দেশের প্রশাসনের লোকজন শ্রমিকদের সুবিধা-অসুবিধার খোজ খবর নেন, আর আমাদের দুতাবাসের লোকজন খোজঁ খবর নেয়া তো দুরের কথা ঠিক মতোন দুতাবাসে সমাদরও পান না।
আজমানের বোরকা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ গফুর এ প্রতিবেদককে বলেন, আজমানে বোরকা ব্যবসায়ীরা বেশিরভাগ চট্টগ্রামের। তবে এখন আগের সুসময় নেই। এ ব্যবসাও হাত ছাড়া হতে চলেছে। শ্রমিক ভিসা বন্ধ, কাজের লোকের অভাবসহ নানা কারনে অনেকে ব্যবসা গুটিয়ে ফেলছে। বাংলাদেশি শ্রম বাজার বন্ধ থাকার কারনে এখানে ব্যবসা যেমন হচ্ছে না, তেমনি সময় মতোন সরবরাহ করতে না পারাসহ নানা কারনে ঐতিহ্যবাহি এ ব্যবসায় নেমে এসেছে অশনি শংকেত। আজমান থেকে প্রতিদিন যেখানে আরব পরিবারের কাছে শত শত বোরকা সরবরাহ হতো এখন তা হাতেগুনা কয়েকটিতে চলে এসেছে। ব্যবসা ক্রমশ লোকসানের দিকে যাচ্ছে। অনেকে চলে যাচ্ছেন দেশে।’
আরব আমিরাতের আজমান, শারজাহ, রাস আল কায়মা, দুবাই ও আবুদাবি ঘুরে দেখা যায় এসব প্রদেশে প্রচুর পরিমান শ্রমিকের চাহিদা রয়েছে। তারা এখন শহর সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে গ্রামের দিকে। মরুভূমির উপর দিয়ে নির্মান করছে রাস্তাসহ বিপুল স্থাপনা। বিশেষ করে লেবার ও ক্লিনারের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশের শ্রমিক ভিসা বন্ধ থাকার সুযোগ নিচ্ছে ভারত, নেপাল ও পাকিস্তানী শ্রমিকরা। নেপাল বেশ সক্রিয়। গত কয়েক বছওে নেপালের বিপুল পরিমান লোক আরব আমিরাতের শ্রম বাজারে ঢুকে পড়েছে। তাদের আসতেও খরচ অনেক কম। আমাদের দেশের শ্রমিকরা যেতে যেখানে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা খরচ হয় সেখানে মাত্র ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকায় নেপালি শ্রমিক যাচ্ছেন আরব আমিরাতে।
আরব আমিরাতের রাস -আল -কায়মাতে কথা হয় হাটহাজারি প্রবাসী নুরুল আবসারের সাথে। তিনি গত ৮ বছর ধরে ট্যাক্সি চালান। নুরুল আবসার বলেন, এক সময় ট্যাক্সি চালকদের বেশিরভাগই ছিল বাংলাদেশি। প্রতি জন চালক গড়ে মাসে প্রায় ১ থেকে দেড় লাখ আয় করতেন। ভিসা বন্ধ হবার পর থেকে নেপালী ট্যাক্সিচালকরা বাংলাদেশিদের জায়গা দখল করে নিচ্ছে।
দুবাই এর একটি পারপিউম কোম্পানির ব্যবস্থাপক হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের মোহরার সন্তান মোহাম্মদ আরিফ। তিনি বলেন, ‘আরব আমিরাতে ডাক্তার, প্রকৌশলী, তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যোগ্য লোকের ব্যাপক চাহিদা আছে। এসব পদ এখন ভারতীয়দের নিয়ন্ত্রনে। বিশেষ করে আইটি সেক্টরে যোগ্য লোকের অভাব। কিছু বাংলাদেশি এসব সেক্টরে থাকলেও তা অপ্রতুল।’
অনুসন্ধানে করতে গিয়ে জেনেছি, আরব আমিরাত বাংলাদেশিদের জন্য শ্রমিক ভিসা বন্ধ করে গত ২০১২ সালে। আক্রোশ বশতঃ একটি ঘটনার জের ধরে অপরাধ সংঘটিত হবার পর আরব আমিরাতের ভিসা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্ত আরব পত্রিকা খালিজ টাইমস সূত্রে জানা যায়, পাকিস্তানীদের হাতে ২০১৭ সালে এক তরুন, ২০১৮ সালে দু’পাকিস্তানীর হাতে তাদেও দেশের এক ব্যবসায়ীকে হত্যা করার ঘটনা ঘটে। তাদের ভিসা বন্ধ না হলেও, বাংলাদেশিদের ভিসা বন্ধ করে দেয়। সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হলো, কোন ঘটনার সাথে পাকিস্তানি বা ভারতীয়রা জড়িত থাকলে গণমাধ্যমে এবং রাষ্ট্রিয় প্রশাসন থেকে কোন দেশের নাম উল্লেখ না করে এশিয়ান বলে উল্লেখ করা হয়। অপরদিকে কোন বাংলাদেশি হলে তাতে দেশের নাম জুড়িয়ে দেয়া হয়। ফলে আরব মহলে নেতিবাচক ধারনার জম্ম দেয়।
শারজাহ এর বাংলাদেশি রফিক আহমেদ বলেন, দু’একজন অপরাধির কারনে কেন বাংলাদেশের লাখ লাখ শ্রমিক কষ্ঠ পাবে। এ বিষয়টি আমাদের সরকার সঠিকভাবে তুলে ধরছে না। বাংলাদেশি শ্রমিকদের কষ্ট আর শ্রমের বিনিময়ে তো এখানে নির্মান হচ্ছে। আরব আমিরাতের ইট পাথওে বাংলাদেশি শ্রমিকদেও ঘাম আছে। তাই সরকারকে আরও গুরুত্বেও সাথে এগুলোর প্রতি নজর দিতে হবে।’
আরব আমিরাতে বাংলাদেশি শ্রমিক যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৬ সাল থেকে। এ পর্যন্ত ২২ থেকে ২৩ লাখ শ্রমিক এবং প্রায় দেড় লাখ নারী যাওয়ার তথ্য থাকলেও নানা কারনে তা কমে ১৫ লাখে এসেছে ঠেকেছে। তবে শ্রমিকদের বড় একটি অংশ নিজেদের অবস্থান শক্ত করে শ্রমিক থেকে ব্যবসায়ী হয়েছেন। বিনিয়োগ করছেন নানা খাতে। এখানকার আরবদের বিশ^াস একবার অর্জন করতে পারলে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয় না উন্নতির শিখরে পৌছানে যায়। আরবদের আস্থা অর্জন কওে অনেক বাংলাদেশি এখন প্রবল প্রতিপত্তিতে টিকে আছে আরব আমিরাতে। এসব ব্যবসায়ী নিজেদেও অবস্থান শক্ত করার সাথে সাথে অনেক বাংলাদেশির কর্মসংস্থান করেছেন। আবার অনেকে নিজেদের ব্যবসার কলেবর বাড়িয়েছেন। বাংলাদেশি শ্রমিক হয়ে পরবর্তিতে নিজেকে সম্মান জনক অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার কাহিনীও রয়েছে অনেক।
এ বিষয়ে আলাপকালে আরব আমিরাতের ব্যবসায়ী ও রাঙ্গুনিয়ার রাজনীতিবিদ জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘যেসব বাংলাদেশি আরবীয় শেখদের আস্থা অর্জন করেছেন তারাও এখন এ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অংশিদার। বাংলাদেশের তাদের রেমিট্যান্সের টাকা পরিবারের কাছে যায়। জসিম উদ্দিন বলেন, এমন উদাহরণ আমার পরিবারের মধ্যেও আছেন। দু’জন নিকট আত্মীয় আরব শেখের একটি স্কুলে অনেক বছর চাকরি করছেন। এদের উপর সন্তষ্ট হয়ে আরব আরবাব (স্কুল মালিক) তাদের দু’জনের জন্য স্কুলের ভেতরে নামাজ আদায়ের স্থান থেকে শুরু করে দেশের বাড়ি রাঙ্গুনিয়াতে ২২ লাখ টাকায় মসজিদও নির্মান করে দিয়েছেন। এদের একজন চাকরি ছেড়ে দেশে চলে আসার সময় তার হিসেব নিকেশ কড়া গন্ডায় বুঝিয়ে দিয়েছেন। তদুপরি ৬ মাস পর তাকে আবার নিজের খরচে নিয়ে গেছেন। তারা এখন পুরো স্কুল অনেক গুরুত্বপূর্ণ কর্মকান্ডে নিয়োজিত। এটি আমাদেও জন্য গর্বেও বিষয়।’
আবুদাবি, রাস আল কায়মা, আজমান, শারজাহ ঘুরে দেখা যায়, বিপুল পরিমান বাংলাদেশি আরব আমিরাতে রাত-দিন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। এখানে দুই শিফটে শ্রমিকরা কাজ করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশিদের ভিসা বন্ধের সুযোগে অনেক মালিক সঠিক সময় বেতন দেয় না। এ নিয়ে অভিযোগ করার সাহসও নেই। অথচ আমিরাত সরকার বিষয়টিতে কড়া আইন চালু রেখেছে। ঘন্টা প্রতি শ্রমের মজুরি নির্ধারন কওে দিয়েছে। বছরের মাত্র দু’এক মাস এরা গরম থেকে একটু রিলিফ পায়। বাকি বেশিরভাগ সময় তপ্ত রোদে এরা শ্রম দেয়। এখানকার শ্রমটা এত কঠোর যে কড়ায় গন্ডায় আদায় করে নেয়। অভিযোগ রয়েছে, এদের শ্রমের টাকায় চাদাঁ তুলে নিয়ে যায় দেশের তথাকথিত কিছু রাজনৈতিক নেতা। শ্রমিকদেও বড় অংশই কেউ আওয়ামি লীগ, কেউবা বিএনপি।
রাজনৈতিক দলের মতাদর্শী এসব শ্রমিকরা প্রতিদিন দেশে দলের খোঁজ খবর নেন। রাজনৈতিক কোন একটি দলের সাথে না থাকলে অনেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। এ কারনে দলের নেতারা এখানে গিয়ে তাদেও সমাদর পান। তাদের মধ্যে অনেকেই এ সহজ সরল মানুষগুলোর মাথার উপর হাত বুলিয়ে লাখ লাখ টাকা নিয়ে যায় বা লাখ টাকার উপহার গ্রহণ করে। এরাও হাসি মুখে তা দেয়। বাংলাদেশি অনেক শ্রমিক টানা ১০/১৫ বছর লড়াই করে এখানে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন। অনেক আরব বাংলাদেশি মানুষদের এত বিশ্বাস করে যে প্রয়োজনে নিজদের খালি ঘরবাড়ি পযন্ত থাকার জন্য ছেড়ে দেয়। এমন অনেক আরব মানুষের গল্প শুনেছি মাত্র দু’জন বাঙ্গালি স্টাফের জন্য প্রতিষ্ঠানের ভেতরে এবাদত খানা তৈরি করে দিয়েছেন। একজন বাংলাদেশি শ্রমিককে ভালোবাসতে গিয়ে লাখ লাখ খরচ করে গ্রামের বাড়িতে মসজিদ নিমার্ন করে দিয়েছেন। অনেক আরব আরবাব প্রতি বছর বাড়িতে পাঠানোর জন্য আলাদাভাবে টাকা দেয়। আরব আমিরাতে চট্টগ্রামের লোক বেশি। অনেকে এখানে এখন কোটি টাকা দামের গাড়ি চালায়। আবার অনেকের জন্য সাইকেল হচ্ছে তার প্রিয় বাহন। তবে গাড়ীর প্রবেশাধিকার সব জায়গায় থাকলেও সাইকেল নিয়ন্ত্রিত। এক সময় শ্রম বাজাওে বাংলাদেশি শ্রমিকদের প্রাধান্য থাকলেও এখানে ক্রমশ ভারতীয়রা নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে। বাংলাদেশি শ্রমিকদের চেয়ে ভারতীয় শ্রমিকদের বেতন গড়ে ৩০০ থেকে ৫০০ দেরহাম বেশি হয়। ভারতীয় শ্রমিকদের জন্য ভিসা ওপেন থাকলেও বাংলাদেশিদের শ্রমিক ভিসা বন্ধ। ভারতীয় শ্রমিকদের সুবিদা- অসুবিধাদায় দৌড়ে আসে ওদের দুতাবাস। আর আমাদের দুতাবাসকে কেন্দ্র করে হয়রানির অভিযোগ অহরহ। আরব আমিরাতের বিলাসবহুল সিটি সেন্টারে এক ভারতীয় সেলস ম্যান রবিন শর্মার সাথে কথা হয়। তিনি বিয়ের জন্য বাড়ি যাবেন। এখান থেকে বাজার করে নিয়ে যাচ্ছেন। তার দেশের কাস্টমসে কোন হয়রানি নেই উল্লেখ কওে বলেন, সরকার প্রবাসিদের আলাদা সম্মান দেয়। বিপরীতে আমাদের কাস্টমস এর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ঘরে ব্যবহারের জন্য নেয়া সামান্য জিনিষও আটকিয়ে অবৈধ বলে স্লিপ ধরিয়ে দেয়। না হলে এগুলো আটক করার নামে টাকা আদায় করে নেয়। ভারতে প্রবাসি শ্রমিকদেন সম্মান জানায়, কারন তারা দেশের জন্য রেমিটেন্স পাঠায়। আর আমাদের শ্রমিকরা কোটি কোটি ডলার রেমিটেন্স পাঠালেও আতংক নিয়ে দেশের কাস্টমসকে মোকাবেলা করে।’ দেশে যাবার অভিজ্ঞতা বর্ননা করে প্রবাসি হানিফ বলেন, বিভিন্ন দেশের কাস্টমস শ্রমিকদের স্যার বলে গ্রহণ করে। আর আমি আসার সময়ও দেখছি, এক কমর্কতা প্রবাসে আসার সময় এক শ্রমিককে বলছেন, ঐ মিয়া ঠিকমতো লাইনে ঠিক মতোন দাড়াতে পারেন না বিদেশ গিয়া কি করবেন।’ এখানকার শ্রমিকরা বেশির ভাগই দলবদ্ধভাবে থাকেন। অনেকটা ভারতীয় ট্রেন এর ভেতরে তিন তলা (থ্রি টায়ার) বিশিষ্ট যে সব সিট রয়েছে সে রকম খোপের মধ্য। ১০/১০ ফুট একটি কামরার ভাড়া পড়ে বাংলাদেশি ৪০/৫০ হাজার টাকার মতো। সবাই ভাগ করে তা বহন করে। নিজেদের দুঃখ কষ্ট নিজেরাই শেয়ার করে। ঘর ভাড়া, খাওয়া, আনুসাঙ্গিক খরচ বাদ দিয়ে দেশে পরিবারের জন্য এরা হাসিমূখে টাকা পাঠায়। এদের শ্রম খাটিঁ। ফাকিঁ দেয়ার কোন সুযোগ নেই। একমাত্র সাপ্তাহিক বন্ধের দিন এরা সবাই মিলে আড্ডা দেয়। খাওয়া দাওয়া করে। পরিবারের কথা একজন অন্য জনের সাথে শেয়ার করে। বাংলাদেশি শ্রমিকরা অমানুষিক পরিশ্রম করেন। তাদের ব্যবহার ভালো। তারপরও কেন যে এ দেশের শ্রমিকদের জন্য ভিসা খুলে দেয়া হচ্ছে না তা নিয়ে সংশয়, সন্দেহ দানা বাধছে। বাংলাদেশের শ্রমিকদেও ভিসা বন্ধের ব্যাপারে তৃতীয় কোন শক্তি কলকাটি নাড়ছে না এটাই এখন দেখার বিষয়।##চলবে