অনার কিলিং পাকিস্তানে নিত্য ব্যাপার। এ অনার কিলিং এর শিকার হয়ে অনেকের নির্মম মৃত্যু হয়েছে। যেমনটি হয়েছিল ২০১৬ সালের ১৫ জুলাই পাকিস্তানী মডেল কান্দিল বালুচ। মুলতানের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় বিখ্যাত এ মডেল ও সোশ্যাল মিডিয়া তারকার লাশ। ঘুমের মধ্যে তাঁকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছিল বলে অভিযোগ।
গত শুক্রবার সেই ঘটনায় তাঁর বড়ভাই মহম্মদ ওয়াসিমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল মুলতানের আদালত। ২০১৬ সালে কান্দিলের বাবা তার ছেলে ওয়াসিম, শাহিন ও আরিফের নামে মেয়েকে খুনের অভিযোগ দায়ের করে। এরপরই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে পাকিস্তানে। কিছুদিন বাদেই ওয়াসিম ও শাহিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কিন্তু, ফেরার হয়ে যায় আরিফ। তবে গ্রেপ্তার হয় ধর্মগুরু মুফতি-সহ বাকিরা। আদালতের বিচারকের সামনে জবানবন্দী দিতে গিয়ে বোনকে মাদক খাইয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে খুনের কথা স্বীকার করে ওয়াসিম। জানায়, বোনের বেহিসাবি জীবনযাপনের ফলে পরিবারের সম্মান নষ্ট হচ্ছিল। তাই তাঁকে খুন করেছে সে।
এর কিছুদিন বাদে কান্দিলের পরিবার তরফে ওয়াসিমকে ছেড়ে দেওয়ার আরজি জানিয়ে একটা আবেদনও জমা দেওয়া হয় আদালতে। কিন্তু, সেই আবেদনে সাড়া দেয়নি আদালত। বরং সাধারণ খুনের মামলা চালানোর বদলে অনার কিলিং বিরোধী আইন অনুযায়ী মামলা চালাতে থাকে। অবশেষে শুক্রবার ওয়াসিমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয়।
পাকিস্তানের একটি রক্ষণশীল পরিবারে জন্ম নিয়েছিল কান্দিল বালোচ। প্রথমে সব ঠিকঠাক থাকলেও স্বামীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের পর খোলামেলা জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। পাকিস্তানের মতো ধর্মান্ধ দেশে জন্মেও যৌনতা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় খোলাখুলি আলোচনা করতেন। এর ফলে পাকিস্তানের ‘সেক্স সিম্বল’ রূপে দেশের প্রথম সোশ্যাল মিডিয়া তারকা হিসেবে পরিচিতি তৈরি করেছিলেন। এর ফলে গুগুল তাঁকে পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় ১০ জন ব্যক্তিত্বের মধ্যে চিহ্নিতও করেছিল। আর সেই পরিচিতিই কাল ডেকে আনল তাঁর জীবনে। তবে শুধু কান্দিল বালোচই নয়, পাকিস্তানে প্রতিবছর কমপক্ষে ১ হাজার মহিলাকে পরিবারের পুরুষ সদস্যদের হাতে অনার কিলিংয়ের স্বীকার হতে হয়। (সূত্রঃ সংবাদ প্রতিদিন)