--- বিজ্ঞাপন ---

অসহায় প্রবাসীরা চাইছে সরকারের সুনজর, দুতাবাসের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বেশি

0

কাজী আবুল মনসুর, আরব আমিরাত থেকে ফিরে ##
কুয়েতে শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা, সৌদিআরবে চলছে নানা সীমাবদ্ধতা। ইতোমধ্যে সৌদি সরকার বেশ কয়েকটি ক্যটাগরিতে বিদেশী শ্রমিকদের কাজে না রাখার নির্দেশনা জারি করেছে। এ অবস্থায় বাকি আছে আরব আমিরাত। যেখান থেকে প্রতি বছর বিপুল রাজস্ব বাংলাদেশে আসে। বর্তমানে সেখানেও বিরাজ করছে চরম আতঙ্ক। তাদের পাশে দাড়ানোর জন্য কেউ নেই। আরব আমিরাতের আবুদাবি ও দুবাই এর বাংলাদেশ দুতাবাস নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। কাঙ্খিত কোন সেবাই সঠিক সময়ে মিলে না দুতাবাস থেকে। আরব আমিরাতে যেখানেই গেছি, দুতাবাসের বিরুদ্ধে ক্ষোভ দেখেছি। একটাই অভিযোগ, তারা শ্রমিকদের মানুষ করে না। তাদের ব্যবহার খারাপ। নিজেদের দেশের দুতাবাসের যখন এ অবস্থা তখন শঙ্কার মধ্যে থাকা ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। কারন গত ১০/২০ বছর ধরে যে, যে অবস্থায় থাকুক না কেন, কোন কারনে চাকরি চলে গেলে নতুন চাকরিতে যোগদানের সুযোগ নেই। ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ বন্ধ। দেশে ফিরে আসা ছাড়া কোন গত্যন্তর নেই। পুরানোদের ভিসা নবায়নের ক্ষেত্রে যেখানে প্রয়োজন হয় চার হাজার দেরহাম, সেখানে নেয়া হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ হাজার দেরহাম। তিন বছরের ভিসা নবায়নের জায়গায় এখন দু’বছর করে দেয়া হচ্ছে। দুতাবাস এসব কর্মকান্ড দেখেও না দেখার ভান করে। গাদা গাদা অভিযোগ দায়ের হলেও তাদের এসব নিয়ে কোন মাথাব্যথা নেই।

দুবাই দুতাবাসে গিয়ে ঢুকা সম্ভব হয়নি। সুদানি দারোয়ান বাংলাদেশ দুতাবাসে চাকরি করলেও বাংলাদেশি বান্ধব নয়। এখানে সবাই নামকা ওয়াস্তে ব্যস্ত থাকেন। সাথে থাকা আমিরাত প্রবাসি মোহাম্মদ আজিম তালুকদার দুঃখ করে বলেন, ‘আমরা যারা এখানে কষ্টের শ্রমের টাকা দেশে পাঠায়, দেশকে সমৃদ্ধ করি তাদেও কোন মূল্য নেই। আমাদেও দুতাবাসের মতোন খারাপ নজির অন্য কোথাও নেই। তিনি বলেন, এখানে মানুষ আসে নিজেদের পাসপোর্ট নবায়ন, ভিসা না থাকলে আউট পাস নিতে বা জরুরী প্রয়োজনে কোন পাওয়ার অব এটর্নি নিতে হলে। কিন্ত বাধাটা শুরু হয় এ দারোয়ানের কাছ থেকে। নাম্বারিং, সিরিয়াল নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে হয়। তারা ফেসবুক চালায়, আড্ডা দেয়। অথচ আধা ঘন্টার কাজের জন্য পুরোদিন ব্যয় করে। আজিম তালুকদার বলেন, আগে পুরানো শ্রমিকদের পাসপোর্টে ভিসা দিতো তিন বছরের। সাধারনত লাইসেন্সধারীরা এ কাজটি করেন। তাদেও মাধ্যমেই শ্রমিকরা এখানে আসেন। এ ভিসা নবায়নের জন্য খরচ পড়ে সাধারনত তিন হাজার নয়’শ দেরহাম। অথচ এক শ্রেনির লাইসেন্সধারি আছেন, সে যে দেশের হোক না কেন, বাংলাদেশি শ্রমিক হলেই ১০ হাজার দেরহাম থেকে ১৫ হাজার দেরহামস হাতিয়ে নেয়। যা রীতিমতো জুলুম।’
গেল বছর আরব আমিরাত থেকে রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় সাড়ে ১১ শ কোটি টাকা। প্রবাসীরা নিজের রক্ত ঘাম ঝরিয়ে দেশে টাকা পাঠায়। আমরা তাতে বহাল তবিয়তে চলি। কিন্ত এ রেমিট্যান্স বা বিপুল অর্থের যোগানদাতারা কোথায় আছে, কেমন আছে, কি অবস্থায় আছে তার কোন খোজঁ খবর কেউ রাখেন না। যেসব শ্রমিক এখন আমিরাতে কাজ করে যাচ্ছেন তাদের ভিসার মেয়াদ শুরুতে ছিল তিন বছর। সময়সীমা অতিক্রম হলে মেয়াদ বাড়ানো হয়। বাংলাদেশি শ্রমিক ভিসা বন্ধ হবার পর থেকে এক শ্রেনির লাইসেন্সধারী মালিকদের জুলুম নির্যাতন অনেক বেড়ে যায়। এক একটি লাইসেন্সের বিপরীতে একশ থেকে দেড়শ. ক্ষেত্র বিশেষে আরও বেশি শ্রমিক থাকে। এসব শ্রমিকের ভিসার মেয়াদ শেষ হলে নতুন করে তিন বছরের ভিসা লাগানো হতো। কিন্ত বাংলাদেশি শ্রমিক ভিসা বন্ধের পর এটি দু’বছরে নিয়ে আসা হয়। তিন বছরের ভিসা যেখানে লাগানোর কথা ছিল সেখানে ভিসার মেয়াদ কমিয়ে দু’বছর করা হয়। অভিযোগ উঠে, কতিপয় লাইসেন্সধারী বাংলাদেশি শ্রমিকদের উপর জুলুম নির্যাতন করে দ্বিগুন-তিনগুন টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এ ব্যাপারে দুতাবাস কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। অথচ এ বিষয়ে কড়া আইন রয়েছে। আমিরাত সরকারের সাথে বাংলাদেশ সরকার বিষয়টি নিয়ে যদি বুঝাপড়া করতো তাহলে অনেকে হয়রানি থেকে রক্ষা পেতো।
এমনিতেই আরব আমিরাতে প্রবাসীদের জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। এখানে যারা এতকাল সচ্ছল ছিল বর্তমানে তাদের সঞ্চয়েও হাত পড়েছে। কারন ভ্যাট, ট্যাক্স, পে-পার্কিং ব্যবস্থা সব জায়গায় সরকার কর বসিয়ে দিয়েছে। একজন যদি তার কর্মস্থলে ৮ ঘন্টার জন্য কোন গাড়ী পার্কিং করে রাখেন তাহলে তার প্রায় প্রতিদিন বাংলাদেশি ৫’শ থেকে ৭’শ টাকা শুধু পার্কিং চার্জ আসবে। আগে এ রকম ছিল না। এখন জিনিষ কিনতে নির্দিষ্ট হারে ভ্যাট ট্যক্স দিতে হচ্ছে। বাংলাদেশি ৪ হাজার টাকার পণ্য কিনলে আড়াই থেকে তিন’শ টাকার ভ্যাট দিতে হবে। নয় বাই নয় ফুটের একটি বাসা যদি শহরের বাইরেও হয় তাহলে তার ভাড়া পড়বে বাংলাদেশি টাকায় ৪০ হাজারের মতোন। এ অবস্থায় দিশেহারা প্রবাসিরা আর আগের মতোন সঞ্চয় করতে পারেন না। সঞ্চয় করলেও জীবন যাত্রার ব্যয় সামলাতে না পেরে অনেক সময় সঞ্চয় ভেঙ্গে খেতে হচ্ছে।


দুবাই এর সবজি বাজারের শ্রমিক রাসেল, দেশ থেকে এসেছেন পাচঁ বছর হলো। সন্দ্বীপ বাড়ি, আসতে খরচ হয়েছে চার লাখ টাকারও বেশি। এখনও সে টাকা উঠাতে পারে নি। অনেক কষ্টে লেবার রুমে গাদাগাদি করে থাকেন। প্রতি মাসে টানা পরিশ্রম করে আয় করেন দেড় হাজার দেরহাম। যা বাংলাদেশি টাকায় ৩৪ হাজার ৫’শ। নিজের খরচ বাদ দিয়ে দেশে পাঠাতে পারতেন ২৩ হাজার টাকা। এখন আর পারছে না। কারন খরচ বেড়ে গেছে, দিতে পারছেন ১৬ হাজার টাকা মতোন। রাসেল বলেন, সাইকেল ব্যবহার করে তাকে এখানে চলতে হয়। তাও নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখতে হয়। নানা ধরনের ট্যাক্স বসেছে বলে তার ব্যয়ও বেড়ে গেছে।’
বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে দুবাই এর ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম বলেন, আগে ব্যবসা করেছি তেমন ট্যাক্স দিতে হয় নি। কারন আরব আমিরাত ছিল ট্যাক্স প্রি দেশ। এখন যে সব প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা সাড়ে তিন লাখ দেরহামের উপরে হচ্ছে তাতে বসানো হচ্ছে নির্দিষ্ট অংকের ট্যাক্স। নুরুল ইসলাম বলেন, শুনতেছি এ হার আরও বাড়বে। দেশ থেকে লোকজন আনতে পারছি না। কারন ভিসা বন্ধ। ব্যবসার কলেবর বাড়াতে পারছি না। কেন হঠাৎ করে এ ট্যাক্সের খড়গ. এ বিষয়ে তিনি বলেন, যখন আরব আমিরাতের তেলের ব্যবসা রমরমা ছিল তখন এ ধরনের কোন বিষয় তাদের মাথায় আসেনি। তেলের দাম যতই কমছে ততই ট্যাক্সের দিকে তারা নজর দিচ্ছে। আশানুরূপ তেল বিক্রি না হওয়া বা বেশি দাম না পাওয়ার কারনে এ শূন্যতা পূরন করতে ট্যাক্সের পরিমান বাড়ছে বলে তিনি মন্তব্য করেনে।’
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিদেশি শ্রমিকদের ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে নতুন করে চারিত্রিক সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রথম দিকে আরব আমিরাতের সব কটি দেশে এটি বাধ্যতামূলক করলেও আদেশ জারির কয়েকদিন পর দুবাই প্রশাসন তা থেকে সরে এসেছে। বর্তমানে দুবাই ছাড়া অন্য দেশগুলোতে এ সনদ বাধ্যতামূলকভাবে নিতে হবে। এ বিষয়টি বাংলাদেশি শ্রমিকদের আরও বেকায়দায় ফেলছে। আরব আমিরাত ভ্রমনকালে এ ধরনের একটি বিষয় আমিরাতের দৈনিক পত্রিকা ‘খালিজ টাইমসে’র বরাত দিয়ে জানানো হয় বলে প্রবাসিরা উল্লেখ করেন। মূলত গত ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকে এ সার্কুলারটি দিয়ে জানান দেয়া হয়। এ সাকুর্লারের সাহায্যে শ্রমিকদের আইনের শিকলে বেঁেধ রাখতে চাইছে সরকার।’ বিষয়টির ব্যাপারে জানতে চাইলে শারজাহ এলাকার একজন ব্যবসায়ী জানান, ‘বিদেশীদের মধ্যে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের শ্রমিকদের নিয়ে আমিরাত সরকার নানা সময় বেকায়দায় পড়ে। এখানে আফ্রিকারও অনেক লোকজন আছে। সবচেয়ে বেশি আছে ভারতের। কিন্ত বাংলাদেশি ও পাকিস্তানী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে বিগত সময়ে হত্যা, গুমসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশিরা কোন অপরাধ করলে দেশের নামসহ পত্রিকায় শিরোনাম হয়, অন্য দিকে পাকিস্তান বা ভারত হলে এটি হয়ে যায় এশিয়ান। গণমাধ্যমে যদি বাংলাদেশের নাম চলে আসে তবে স্বাভাবিকভাবে অন্যরা চাপের মূখে পড়ে। তাই সরকার কোন শ্রমিক নিয়োগের ব্যাপারে নিকটবর্তি পুলিশ স্টেশন থেকে ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট নিতে আদেশ জারি করেছে। এখানে এটি সহজে মিলবে না। তারা শ্রমিকের ফিঙ্গার প্রিন্ট পাঠাবে সংশ্লিষ্ট দেশের আরব আমিরাতের দুতাবাসে। সেখান থেকে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে তারপর মিলবে প্রশংসাপত্র। আর এ প্রশংসাপত্র নিতে গুনতে হবে বাংলাদেশি প্রায় সাড়ে ৪ হাজার টাকা।
আরব আমিরাত ঘুরে দেখা পেছে, বহাল তবিয়তে কাজ করে যাচ্ছেন ভারতীয়রা। সম্প্রতি ভারত সে দেশের তেল সেক্টরে বিনিয়োগ করছে, এ খবরে চাঙ্গা ভারতের প্রবাসীরা। পাশাপাশি নেপালের শ্রমিকরাও বেশ আছেন। চাকরির ক্ষেত্রে ছোট ছোট স্থানগুলো এখন নেপালিরা দখল করে নিচ্ছেন। বাংলাদেশি নতুন কেউ যেতে পারছেন না, পাশাপাশি পুরানো যারা বছরের পর বছর ধরে এখানে চাকরি বা ব্যবসা করে আসছেন তারাও বেকায়দায়। একমাত্র পুরানোরা এখনও টিকে আছেন তারা আরবি ভাষাটা রপ্ত করেছেন বলে। কিন্ত পুরানোরা নিজেদের লোক নিতে পারছেন না। যারা যাচ্ছেন তারাও সুবিদা করতে পারছেন না।
গত ১৮ বছর ধরে আজমানে আছেন রাউজানের নুরুল আবসার। চাকরি করতেন একটি স্টিল কোম্পানিতে। সম্প্রতি চাকরি চলে যাবার পর নতুন চাকরিতে যোগ দিতে পারছেন না। কারন তার ভিসার মেয়াদ শেষ। চাকরি পরিবর্তন করে অন্য চাকরি নেবেন এমন সুযোগও নেই। অসহায়ভাবে বলেন, ‘এখানে বেশ গুছিয়ে উঠেছিলাম। দু’সন্তান ইন্ডিয়ান স্কুলে পড়তো। কিন্ত চাকরি চলে যাবার পর কোন রাস্তা বের করতে পারি নি। শেষ পর্যন্ত স্ত্রী – সন্তানদের দেশে পাঠিয়ে দিয়েছি। এখন আমিও বেকায়দায়, দেশে তারাও বেকায়দায়। তিনি বলেন, কাজ পাচ্ছি. কিন্ত বাংলাদেশিদের চাকরি পরিবর্তনের কোন সুযোগ নেই। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় কাজ করবো এমন সুযোগও নেই। এখানে যারা বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজ করছেন তারা একটি কোম্পানিতে বছরের পর বছর আটকে থাকেন। চাকরি হারালেই দেশে ফেরত। তিনি বলেন, সরকার যদি এ ব্যাপারে এগিয়ে না আসে তাহলে ভবিষ্যতে অনেকে বিপাকে পড়ে দিশেহারা হয়ে পড়বে।’
অনেকটা একই অবস্থা হাটহাজারীর জামসেদুল করিমের। তিনি রক্ষা পেয়েছেন বিপুল টাকা ব্যয় করে আজমান প্রশাসনের কাছ থেকে ইনভেস্টর ভিসা করে। তিনি বলেন, ‘আজমান এখনও ইনভেস্টর ভিসার সুযোগ রেখেছে। অন্যথায় আমাকেও দেশে ফিরে যেতে হতো। কিন্ত ইনভেস্টও ভিসা বা লাইসেন্স কওে কি করেবা। বাংলদেশি শ্রমিক ভিসা তো বন্ধ। অন্যান্য দেশের শ্রমিকদেও বেতন বেশি। শেষপর্যন্ত কি হবে তা ভেবে পাচ্ছি না।’
আশার কথা যে, বাংলাদেশ মুসলিম রাষ্ট্র বলে আরব আমিরাত সহানুভুতিশীল। যদি সঠিকভাবে তাদের বুঝানো যায় তাহলে বাংলাদেশ থেকে বিপুল শ্রমিক তারা নিয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশি শ্রমিকরা পরিশ্রমি ব্েরল সুনাম আছে। আরব আমিরাত ২০২২ সাল পযর্ন্ত বিপুল কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করছে। এ মূহূর্তে যদি তাদের কোনমতে বুঝানো যায় তাহলে বাংলাদেশের বিপুল শ্রমিক এখানে কাজ করার সুযোগ পাবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশিরা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় আছে আকামা (চাকরি পরিবর্তন) পরিবর্তন নিয়ে। গত ২০১৬ সালে অন্যান্য দেশগুলোর কর্মীদের এ সুযোগ দেয়া হলেও বাংলাদেশকে দেয়া হয়নি। এ বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ সরকার প্রচেষ্টা চালিয়ে আসলেও কোন সুরাহা হচ্ছে না। কোন অবস্থাতে তাদের রাজি করানো যাচ্ছে না। আমিরাত সরকার এ বিষয়টি নিয়ে প্রতিশ্রুতি দিলেও কার্যকর কোন পদক্ষেপ এখনও গৃহিত হয় নি। ফলে প্রতি বছর চাকরি হারিয়ে অনেকে দেশে ফিওে আসতে বাধ্য হচ্ছেন।
এদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে শ্রমিক ভিসা বন্ধ থাকলেও নারী গৃহকর্মী ও পরিচ্ছন্নতা নারী কর্মীদের ভিসা খোলা রয়েছে। গত ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রায় ৭৩ হাজার নারী শ্রমিক এখানে কাজ করছেন। অনেক নারী শ্রমিকও ভোগান্তিতে রয়েছেন। একশ্রেনির মনিব নারী শ্রমিকদের উপর নানা নির্যাতন করেন বলে অভিযোগ আছে। এখানে যে সব নারী শ্রমিক আসছে তারা বেশিরভাগই অদক্ষ। ভিটা মাটি বিক্রি কওে তারা যে উদ্দেশ্য নিয়ে আরব আমিরাতে তা সফল হচ্ছে না। ভাষা সমস্যা, ইংরেজি না জানা, আইন-কানুন সর্ম্পকে ধারনা না থাকার কারনে অনেক নারী শ্রমিক বেকায়দায় আছে।
বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে আজমানের বোরকা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ গফুর বলেন, ‘ আমার বোরকার ক্লায়েন্ট হিসেবে অনেক এ দেশিয় নারী রয়েছে। তাদের কাছ থেকে জেনেছি, আমাদের দেশের নারীদের যারা নানা নির্যাতন, হয়রানি করে তারা মূলত এ দেশীয় অধিবাসী না। আরব আমিরাতে জম্মগ্রহণকারী নাগরিক ছাড়া আরও অনেক দেশের নাগরিক এখানে বাস করছে। যাদের অনেকের আচার আচরণ নিয়ে নানা সমস্যা রয়েছে। এ দেশের প্রকৃত নাগরিকরা নারীদের সম্মানের চোখে দেখেন। কিন্ত বাইরের এক শ্রেনীর আরবীয় রয়েছে যাদের বিরুদ্ধে এ সব ব্যাপারে নানা অভিযোগ পাওয়া যায়।’
আরব আমিরাতে থাকা প্রায় নয় লাখ বাংলাদেশির ব্যাপারে এখনই নজর দেয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে শ্রমিক ভিসা বন্ধ থাকলেও তারা যাতে চাকরি পরিবর্তন করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারে তার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় বিপুল সংখ্যক প্রবাসি প্রতি বছর দেতশে ফিরতে বাধ্য হবে। তাছাড়া বাংলাদেশ দুতাবাসে যদি বাংলাদেশি শ্রমিক বান্ধব কর্মকর্তাও পদায়ন না হয়, যদি হয়রানি চলতে থাকে তাহলে যে কোন সময় সংঘবদ্ধ বাংলাদেশিরা ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠতে পারে। সরকার গভীরভাবে বিসয়গুলো খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে দেশ বড় ধরনের রেমিট্যান্স থেকে বঞ্চিত হবে। বর্তমান সরকার দেশকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে নিয়ে যেতে বদ্ধ পরিকর। কিন্ত যে সব জায়গাতে প্রশাসনের নজর দেয়া উচিত সে সব জায়গায় যদি নজর না হয় তাহলে সরকারের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না। আরব আমিরাত সরকারের সাথে বুঝাপড়া করে বর্তমানে কর্মরতদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করা গেলে আগামিতে বড় ধরনের সব অর্জন নষ্ট হয়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।### (শেষ)

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.