--- বিজ্ঞাপন ---

চট্টগ্রামের মন জুড়ানো টাইগার পাস

0

বিশেষ প্রতিনিধি: রাতে চট্টগ্রামের টাইগার পাস অতিক্রমকালে অনেকে এখনও চমকে উঠে। বনের ঝোপে হঠাৎ বাঘের দেখা! বাঘের উপস্থিতি বাস্তব কিনা তা সামলে উঠতে চট্টগ্রামে নতুন আসা অনেকের সময় লাগে। বিশেষ করে রাতে যখন টাইগার পাসটি পার হতে হয়। তবে চট্টলাবাসী ইতিমধ্যে জেনে গেছেন টাইগার পাসের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে তিনটি অবিকল বাঘের বাঘের মূর্ত্তি বসানো হয়েছে। বাঘ দেখেই যেন পর্যটকরা বুঝতে পারেন এখানে এক সময় বাঘের আনাগোনা ছিল। দু’পাহাড়ের মাঝপথ দিয়ে যাবার প্রাক্কালে এখন সর্ব শ্রেণীর মানুষ বাঘের অস্তিত্ব অনুভব করে। বাস্তব না হলেও কৃত্রিম বাঘের অস্তিত্ব দেখতে এখন উৎসুক মানুষ ভীড় করে টাইগার পাসে।
চট্টগ্রাম এলে ‘টাইগার পাস’ না দেখলে মন ভরে না। প্রাকৃতিকভাবে জঙ্গলাকীর্ণ এলাকাটি এমনভাবে তৈরি হয়েছে যে, আসলেই যে কারও মন জুড়িয়ে যায়। শত শত বছর আগে পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়েছে টাইগার পাসের রাস্তাগুলো। এটি যে এক সময় বাঘের বিচরণ ক্ষেত্র ছিল তা ঐতিহাসিকদের লেখনিতে প্রমান মেলে। শত শত বছর আগে এলাকাটির নির্জনতা ও গভীর জঙ্গলাকীর্ণ বৈশিষ্টের কারনে কাঠুরেরা কাঠ কাটতে আসতো না। দীর্ঘ মাইলের পর মাইল ধরে টাইগার পাসের পাহাড় ছড়িয়ে গেছে পার্বত্য অঞ্চল পর্যন্ত। তাই টাইগার পাসের জঙ্গল থেকে কাঠ, বাশঁ, ছন কাটতো স্থানীয় লোকজন।

তবে বাঘের ভয়ে অনেকে এ পথ মাড়াতো না। স্থানীয় অধিবাসীরা সর্বক্ষন বাঘের ভয়ে সন্ত্রস্ত থাকতো। তদানিন্তন ইংরেজ কালেকটরও এ ব্যাপারে সতর্ক ছিলেন। তাই বাঘ শিকার করে আনতে পারলে তার জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকতো। বাঘের উৎপাত বন্ধের লক্ষে ইংরেজ কালেকটর পুরস্কার প্রবর্তন করলে অনেকে বাঘ মেরে পুরস্কারও নিয়েছেন। আবার জীবন্ত বাঘ ধরে বাহ্বাও কুড়িয়েছেন। বাঘের ফাদেঁ মানুষ পড়ার ঘটনাও এখানে বহুল প্রচলিত রয়েছে। ঐতিহাসিকদের মতে, সেলিম নামের স্থানীয় এক যুবকের পেশা ছিল দা তৈরি করে বিক্রি করা। জঙ্গল সাফ করে ফাদঁ তৈরির কাজে পারদর্শিও ছিলেন সেলিম। অনেকটা পাগলাটে স্বভাবের এ সেলিম একদিন বাঘ ধরার নেশায় মেতে উঠে। কারণ বাঘের উৎপাতের কারনে ইংরেজ কালেকটর বড় অংকের পুরস্কার ঘোষনা করেছিলেন। তাই টাইগার পাসের জঙ্গলে দরজা সমৃদ্ধ একটি ফাদঁ তৈরি করে সেখানে একটি ছাগলের বাচ্চা রেখে আনে সেলিম। তিনদিন পর গিয়ে দেখেন তার ছাগশিশুটি ভ্যা ভ্যা করে চিৎকার করছে। তার কারণ অনুসন্ধানে নিজে যখন ফাদেঁর মধ্যে ঢুকে অমনি ফাদেঁর দরজা বন্ধ হয়ে আটকা পড়ে সেলিম। কোন মতে ফাদেঁর ভেতর থেকে দরজা আর খোলেনা। ফাদেঁর ভেতর থেকে সেলিমের চিৎকার কেউ শুনতে পায় না। তিনদিন পর একদল কাঠুরে ফাদেঁর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সেলিমের চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করে। সেলিমের ফাদেঁ পড়ার ঘটনাটি শেষ পর্যন্ত সে সময়ের ইংরেজ কালেকটর এ এল ক্লে সাহেবের কানেও যায়।তবে তিনি সেলিমের প্রশংসা করেছিলেন। ১৮৭৮ সালে চট্টগ্রামের ইংরেজ কালেকটর ছিলেন এ এল ক্লে। তিনি তার আত্মজীবনী ‘লিডস ফ্রম এ ডায়েরী ইন লোয়ার বেঙ্গলে’ উল্লেখ করেছেন- একদিন দুপুরে খোলা বাজারে বাঘের আক্রমনে তার একজন নিটভ প্রাণ হারিয়েছে। তিনি বাঘের আক্রমন থেকে রক্ষার জন্য পুরস্কার ঘোষনা করলে দুটি বাঘ মেরে আনেন স্থানীয় লোকজন। তিনি সবসময় বাঘ ও হরিনের ডাক শুনার বিষয়টিও তার লেখনিতে তুলে ধরেন। বাঘের উৎপাত থেকে এ অঞ্চলের নাম রাখা হয় ‘টাইগার পাস’। টাইগার পাসের পাশে থাকা বাটালী পাহাড়টি চট্টগ্রামের সর্বোচ্চ পাহাড়। বাটালী পাহাড়ের পাদদেশে টাইগার পাসকে কেন্দ্র করে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। মূলত সমুদ্রে যাওয়ার জন্য বাটালী পাহাড়ের একাংশ কেটে দু’টুকরো করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পাহাড়ের পথটি আরও প্রশস্ত করা হয়। যাতে গোলাবারুদ সমৃদ্ধ গাড়ী চলাচল করতে পারে। চট্টগ্রামের টাইগার পাসের জঙ্গল ঘিরে অবস্থান নিয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সৈনিকরা। টাইগার পাস ও বাটালী পাহাড় ঘিরে স্থাপন করা হয়েছিল বিমান বিধবংসী অস্ত্র। কারণ এ পাহাড়ে উঠলেই দেখা যেতো সাগর। ফলে শত্র“ আক্রমন সহজ ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এ অঞ্চলেই মারা যায় বৃটেন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের সাতক শতাধিক সৈন্য। যাদের লাশ সমাহিত হয় চট্টগ্রামের ‘ওয়ার সেমিট্রি’তে।###

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.