--- বিজ্ঞাপন ---

পাকিস্তানী বিমান মনে করে নিজেদের হেলিকপ্টার ধ্বংস করল বিশ্বের আধুনিক অস্ত্র ক্রেতা ভারত

0

মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম: বিশ্বের দ্বিতীয় প্রধান অস্ত্র আমদানীকারক দেশ ভারত। সর্বাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র দেশটির সংগ্রহের তালিকায় স্থান পেলেও দক্ষতার সাথে সেগুলির সঠিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে  ভারত পাকিস্তানের চাইতে পিছিয়ে রয়েছে। অবশেষে ভারতের বিমান বাহিনী প্রধানের স্বীকারোক্তির মধ্য দিয়ে এ সত্যটি প্রমাণিত হল। গতকালের ৪ অক্টোবরের ভারতের প্রধান পত্র-পত্রিকায় পাকিস্তানী বিমান মনে করে নিজেরাই  নিজেদের একটি হেলিকপ্টার ক্ষেপণাস্ত্র মেরে ধ্বংস করার ঘটনা স্বীকার করার সংবাদটি ফলাও প্রচারিত হয়। নিজ বাহিনীর অদক্ষতার দায়টি মাথায় নিয়ে ভবিষ্যতে আর ভুল করা হবেনাও বলেছেন তিনি।

কলকাতা থেকে প্রকাশিত আনন্দবাজার পত্রিকায় ৪ অক্টোবর বিমান বাহিনী প্রধানের ভুল স্বীকারের সংবাদটি ছেপেছে এভাবে:-“গত ২৭ ফেব্রুয়ারির ওই ঘটনায় বায়ুসেনার ৬ জন ও এক সাধারণ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছিল। যাঁরা গুলি করে নামিয়েছিলেন নিজেদের ওই হেলিকপ্টারটিকে, বায়ুসেনার সেই দুই অফিসারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন বায়ুসেনা প্রধান। ফেব্রুয়ারিতে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখায় পাকিস্তানের যুদ্ধবিমানের সঙ্গে মুখোমুখি লড়াই চালানোর সময় ভারতীয় বায়ুসেনার ‘এমআই-১৭ ভি-৫’ হেলিকপ্টারটিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে নামানোটা ‘বড় ভুল’হয়ে গিয়েছিল। এই স্বীকারোক্তি আর কারও নয়, শুক্রবার এ কথা কবুল করেছেন খোদ বায়ুসেনা প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল রাকেশ কুমার সিংহ ভাদৌরিয়া।”

এয়ার চিফ মার্শাল ভাদৌরিয়া এ দিন বলেন, ‘‘আমাদের এটা একটা বড় ভুল। আমরা এটা মেনে নিচ্ছি। আমাদের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রই হেলিকপ্টারটিকে ধ্বংস করেছিল। বায়ুসেনার ‘কোর্ট অফ এনকোয়ারি’ গত সপ্তাহে তদস্ত শেষ করেছে। আমাদের ভুল সেই তদসোত প্রমাণিত হয়েছে। তার প্রেক্ষিতে প্রশাসনিক ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সে জন্যও নেওয়া হচ্ছে যথাযথ ব্যবস্থা।’’

ভারতের আজকাল পত্রিকায় সংবাদটি মন্তব্য করা হয়, “গত ২৭ ফেব্রুয়ারি  শ্রীনগর এয়ারবেস থেকে ইজরায়েলে তৈরি ওই স্পাইডার সারফেস– টু– এয়ার ক্ষেপণাস্ত্রের উৎক্ষেপণ নিয়ে কোনও সন্দেহ ছিল না। কিন্তু বায়ুসেনা এই ঘটনার দায় নিতে রাজি না হওয়ায় তদন্ত শেষ করতে সময় লাগছিল। মিসাইল উৎক্ষেপণ থেকে হেলিকপ্টার ধ্বংসের ঘটনাটি ঘটেছে মাত্র ১২ সেকেন্ডের মধ্যে। তাই ওই হেলিকপ্টারে থাকা বায়ুসেনার কর্মীরা বিষয়টি বুঝেই উঠতে পারেননি।”

ভারতের অন্য প্রধান প্রধান পত্রিকাসহ আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলিও সংবাদটি গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছে। সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে, যুদ্ধকালীন সময়ে শত্রু মিত্র চেনার জন্য স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা ক্ষেপণাস্ত্র ইউনিটগুলোতে সংযুক্ত থাকে। দক্ষ সেনারা  প্রথমে বিমান কিংবা হেলিকপ্টার রাডারে এলে ‘ফ্রেন্ড এন্ড ফো’ এর বোতাম টিপে আগে ঠিক করে নেন রাডারের বস্তুটি শত্রু না মিত্র। তারপরেই ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়েন।

ভারতীয় বাহিনীর দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ইংরেজী দৈনিকদি হিন্দু’র

আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র চালানোর ক্ষেত্রে ভারতীয় বাহিনীর দক্ষতা নিয়ে এই ঘটনাটি নিয়ে সেদেশের অন্যতম প্রধান ইংরেজী দৈনিক ‘দি হিন্দু’  রীতিমত প্রশ্নবিদ্ধ করেছে দেশটির সামরিক বাহিনীর যুদ্ধকালীন সময়ে দক্ষতা ও তাদের মনবল ও সক্ষমতা নিয়ে। প্রথমদিকে নিজেদের সৈন্যদের মনেবলের উপর প্রভাব ফেলবে বিধায় ভারতীয় সমস্ত্র বাহিনী তদন্তের নামে সংবাদটির সত্যতা বিলম্বিত করে । তবে  ‘দি হিন্দু’  পত্রিকা ঘটনাটি ফাঁস করে দেয় এবং এ ঘটনায়  একটা যুদ্ধকালীন সময়ে ভারতীয় বাহিনীর দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। ভারতের প্রভাবশালী এই দৈনিকের ২ জুন সংস্করনে সাংবাদিক দিনাকর পারি তার প্রতিবেদনের শিরোনাম দেন “হাউ ডিড এন ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্স এমআই-১৭ হেলিকপ্টার গেট শুট ডাউন বাই দি আইইএফ (ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্স) ?”  অর্থ্যাৎ ভারতীয় বিমান বাহিনী কি করে নিজেদের বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারকে নিজেরাই ভূপাতিত করল এ প্রশ্ন রাখেন তিনি।

ঘটনার উল্লেখ করতে গিয়ে সাংবাদিক দিনাকর পারি লিখেন, গত ২৭ ফেব্রুয়ারী সকালে যখন পাকিস্তানের বিমানের সাথে ভারতীয় মিগ বিমানের সংঘর্ষ হয় ঠিক তখনই কাশ্মীরের শ্রীনগর থেকে ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি এমআই-১৭ হেলিকপ্টার ২জন পাইলট ও ৪ জন সেনাসহ উড্ডয়ন করে। উড্ডয়নের ১০ মিনিটের মধ্যেই হেলিকপ্টারটি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ভূপাতিত হয়। প্রথমে মনে করা হয়েছিল, হয়তবা পাকিস্তানী বিমানের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে এটিকে আঘাত করা হয়েছে। কিন্তু পরক্ষণে তদন্তে জানা গেল, ভারতীয় বিমানবাহিনী পাকিস্তানি বিমান মনে করে তাদের  ইসরাইলের  দেয়া আধুনিক স্পাইডার এয়ার ডিফেন্স ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতেই হেলিকপ্টারটিকে ভূপাতিত করা হয়েছে। হেলিকপ্টারটি জনবহুল এলাকায় ভূপাতিত হওয়ায় আরও একজন বেসামরিক ব্যক্তিসহ মোট ৭ জন মারা যায়। পত্রিকা দি হিন্দু’র প্রতিবেদনে ভারতীয় বাহিনীর হাতে সর্বাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে কিন্ত এর যথাযথ ব্যবহারে দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

হেলিকপ্টারটির সরবরাহকারী দেশ রাশিয়ার সামরিক বিশেষজ্ঞরা তাদের ঐ হেলিকপ্টারটি একেবারেই নতুন এবং কোথাও কোন ত্রুটি ছিলনা উল্লেখ করেন। রাশিয়ার সংবাদ মাধ্যম ‘আরটি’ ভারতের বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র সেনাদের ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করে  গত ২৯ মার্চ এ ঘটনার আরও বিশদ উল্লেখ করে শিরোনাম দেয় ‘ইন্ডিয়া ব্লো আপ ইটস ওন হেলিকপ্টার হোয়াইল টার্গেট পাকিস্তানী জেটস, কিলিং সেভেন’।  অর্থ্যাৎ পাকিস্তানী  জঙ্গী  বিমানকে টার্গেট করতে গিয়ে নিজেদের হেলিকপ্টারটি খোয়লো ভারতীয়রা। এতে আরও বলা হয়, রাশিয়ার এ মডেলের হেলিকপ্টার এমআই-১৭ভি৫ টি নতুন এবং এটিতে কোন কারিগরি ত্রুটিও ছিলনা। আসলে ভারতীয় বাহিনী শত্রু মিত্র চেনার সাংকেতিক সিস্টেমস আইএফএফ (আইডেন্ডিফিকেশন অব ফ্রেন্ড এন্ড ফো) এর বোতাম ঠিক সময়ে টিপেনি। এধরণের একটি হেলিকপ্টারের বর্তমান মূল্য ১ কোটি ৭০ লক্ষ মার্কিন ডলার। ভারতের বিমানবাহিনী ( আইএএফ) ও তাদের বৈমানিকদের দক্ষতা যে কতটা নড়বড়ে এ  প্রশ্ন তুলে ‘ফাইটার জেট ওয়াল্ড’ গত ৬ মার্চের (২০১৯) এক হিসাব তুলে ধরে শিরোনাম দেয় ‘ওয়াস্ট থার্টি ডে’জ ফর ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্স: লস্ট সেভেন জেটস এন্ড ওয়ান হেলিকপ্টার।’

বিনাযুদ্ধে পাখীর ধাক্কা পাইলটের ভুল ১৭০৭টি বিমান হারিয়েছে ভারত

একেতো ভারতীয় বিমানবাহিনীর পাইলটদের দক্ষতা নিয়ে বিশ্ব মহলে মুখরোচক কৌতুক আছে। কোনপ্রকার যুদ্ধ ছাড়া কেবলমাত্র পাখীর সাথে ধাক্কা লেগে শান্তিকালীন সময়ে ভারতের যতগুলি জঙ্গী  বিমান ধ্বংস হয়েছে বহু দেশের বিমান বাহিনীতেও এত বিমান নেই। ১৯৭০ সাল থেকে এপর্যন্ত গত কয়েক দশকে  ভারতের বিমানবাহিনী পাখির সাথে ধাক্কা লেগে এবং পাইলটের ভুলের কারণে ৫০০ এর  কাছাকাছি জঙ্গী বিমান খুইয়েছে। ভারতীয় সংসদে গত ২০১২ সালে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এ কে এন্টনির দেয়া এক হিসেবে প্রথম আঁৎকে উঠা এ খবরের সূত্রপাত। ঐ সময়ে অর্থ্যাৎ ৭ বছর আগে সংসদে দেয়া হিসেবে তিনি জানান, ১৯৭০ থেকে ২০১২ পর্যন্ত শুধুমাত্র মিগ সিরিজের জঙ্গী বিমান পাখির সাথে ধাক্কা ও পাইলটের ভুলে ৮৭২টির মধ্যে অর্ধেকেরও বেশী ৪৩৮ টি খোয়া গেছে এবং পাইলট নিহত হয়েছে ২০০। এছাড়া গত কয়েক বছরে ২০১৫-১৯ সালে চার বছরে গেছে জঙ্গী বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে  ২৭টি (তথ্য: টাইমস অব ইন্ডিয়া) এতে পাইলট মারা গেছে ৪০। এবছর ২০১৯ সালের শুরু থেকে গত কয়েক মাসে ভারতীয় বিমান বাহিনীর এসইউ-৩০ ও বৃটিশ নির্মিত জাগুয়ার এর মত  আধুনিক বিমানও পাখির ধাক্কায় খুইয়েছে ভারতীয় বিমান বাহিনী।

ঐসময় ভারতের রাজস্থান পত্রিকার রিপোর্টার জীবন এক সংবাদ সম্মেলনে সেদেশের বৈমানিকরা ঘন ঘন পাখির ধাক্কা কিংবা তাদের এত ত্রুটিতে প্রচুর বিমান বিনাযুদ্ধে খোয়ার কারণ কি এ প্রশ্ন তোলেন ভারতীয়  বিমান বাহিনী প্রধান বি এস ধানোয়ার কাছে। তিনি এক হিসাব দেখিয়ে বলেন,  শুধুমাত্র জানুয়ারী মাসের ৩০ তারিখ থেকে ফেব্রুয়ারী মাসের ২৭ তারিখের এক মাস সময়ে ভারতীয় বিমান বাহিনী বিনাযুদ্ধে ৭ টি জঙ্গী বিমান ও ১টি হেলিকপ্টার খুইয়েছে। জঙ্গী  বিমানের মধ্যে রয়েছে ১টি ব্রিটিশ নির্মিত সিপিক্যাট জাগুয়ার, ১টি মিরেজ ২০০০টিআই, ১টি মিগ-২৭, ২টি সূর্য কিরণ বিএই ব্রিটিশ হক মার্ক-১৩২, ২ টি মিগ-২১ ও একটি রুশ নির্মিত এমআই-১৭ভি৫। এসময় ৬ জন বৈমানিক ও ৫ জন বিমানসেনাও এতে মারা যান।অপর একটি চাঞ্চল্যকর হিসেব দিয়েছে সুপরিচিত সামরিক বিষয়ক ভারতীয় ব্লগ পোর্টাল ‘ভারত রক্ষক’। এতে বলা হয়েছে, ভারতীয় বিমান বাহিনী গত ৮৬ বছরে এপর্যন্ত বিনাযুদ্ধে পাখীর ধাক্কা ও পাইলটের ভুল ও বিমানের ত্রুটির কারণে ১৭০৭টি বিমান হারিয়েছে। ঐ হিসেবে আরও বলা হয়, শুধুমাত্র ২০০০ সাল থেকে  ২০১৫ পর্যন্ত  ১৫ বছরে বিনাযুদ্ধে  পাখির ধাক্কা ও ত্রুটির কারণে ভারত ২৬৪টি বিমান খুইয়েছে ভারতীয় বিমান বাহিনী বা ভারতীয় হিন্দী ভাষায় ‘বায়ুসেনা’।

আকাশ যুদ্ধে ভারত হেরেছে পাকিস্তানের কাছে-নিউইয়র্ক টাইমস

ঐসময় মার্কিন প্রভাবশালী পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় ৩ মার্চ প্রকাশিত কলামে মারিয়া আবি হাবিব তো বলেই ফেলেছেন,‘আকাশ যুদ্ধে ভারত হেরেছে পাকিস্তানের কাছে। অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র  এশিয়ায় চীনের আঞ্চলিক আধিপত্য ঠেকাতে ভারতের মত অদক্ষ সামরিক বাহিনীর উপর ভরসা করছে।’ তিনি তার কলামে আরও উল্লেখ করেন, পাকিস্তানের সাথে মার্কিন সম্পর্কের এ অবনতির সুযোগে গত এক দশকে প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সর্বাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় করে নিয়েছে। যা এক দশক আগেও ছিল শূন্যের কোঠায়। অর্থ্যাৎ তখন মার্কিনীরা ভারতকে আধুনিক সাজ-সরঞ্জাম দিতে অনীহা প্রকাশ করত।  নিউইয়র্ক টাইমস এর প্রতিবেদনে ভারতের বিশাল সামরিক বাহিনীকে একটি অদক্ষ সেকেলে উল্লেখ করে বলা হয় যে, এশিয়ার এই দুই চীর প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে গত প্রায় ৫০ বছরের মধ্যে এটিই প্রথম সরাসরি ভারতীয় বাহিনীর শক্তিমত্তা পরীক্ষার জন্য এটি ছিল উপযুক্ত সময়। ভারতের বিমান খোয়ানো ও পাইলট বন্দী  হতে দেখে ওয়াশিংটনের সামরিক পর্যবেক্ষকমহল হতভম্ব ও হতবাক।পাকিস্তানের সাথে আগামী যুদ্ধকালীন সময়ে ভারতের বিমানবাহিনীর মনোবল সংকট ও দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্বের সেরা সমরবিদরা।##

০৫.১০.২০১৫ ইং

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.