--- বিজ্ঞাপন ---

বাংলাদেশের উপকূলে রাডার বসাতে চায় ভারত

0

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ উপকূলে রাডার বসাতে চায় ভারত। সর্বক্ষণিক মনিটরিং ব্যবস্থার (কোয়েস্টাল সারভাইল্যান্স সিস্টেমসিএসএসবিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারকে সই করেছে ভারত ও বাংলাদেশ। এর আওতায় বাংলাদেশের উপকূলে ২০টি রাডার সিস্টেম নেটওয়ার্ক স্থাপন করবে ভারত। বলা হচ্ছেএর মাধ্যমে বঙ্গোপসাগর এলাকায় কড়া দৃষ্টি রাখবে ভারত, যা সমুদ্রপথে যেকোনো সন্ত্রাসী হামলা সনাক্ত করার পাশাপাশি প্রতিবেশীদের নৌ সীমানায় দৃষ্টি রাখতে পারবে।

তবে বিষয়টি চীনবাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁদের মতেএ অঞ্চলে চীনা যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিনের উপস্থিতির কারণেই ভারত এই ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, “চীন দেখবে এই এমওইউয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ তাঁদের বিরুদ্ধে কাজ করছে, যা আমাদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বরাবরই বলে এসেছেন আমাদের ভূমি ব্যবহার করে অন্য রাষ্ট্রের ক্ষতি তিনি করতে দেবেন না। কিন্তু ভারতের সাথে এই চুক্তি তাঁর সেই বক্তব্যের সম্পূর্ণ বিরোধী অবস্থান।এর বিরোধিতা করে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল এক বিবৃতিতেবলেছেবাংলাদেশের সমুদ্র উপকুলে ভারতীয় নৌবাহিনীর আধিপত্য নজরদারি বিস্তারের অনুমোদন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী। ভারতীয় বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জয়ন্ত বলেনবাংলাদেশে ২০টি রাডার কেন্দ্র স্ট্রাটেজিক লক্ষ্যে বসানো হচ্ছেনাকি উপকূলে দু’পক্ষের প্রয়োজনীয় নজরদারির জন্য বসানো হচ্ছেসেটি তাঁর কাছে এখন পর্যন্ত স্পষ্ট না।

গত ৫ অক্টোবর শেখ হাসিনানরেন্দ্র মোদি বৈঠকে মংলা ও চট্টগ্রামের বন্দর ব্যবহারউপকূলে রাডার স্থাপনসহ ভারতকে বেশ কিছু সুবিধা দিয়ে মোট সাতটি সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি হয়।

বিবিসি কি বলছেঃ বিবিসি জানায়, যদিও দু’দেশের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছুই এখনও জানানো হয়নি, তবে প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছে এই সমঝোতা অনুযায়ী বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ভারত একটি আধুনিক রেডর সিস্টেম বসাতে সাহায্য করবে। বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলে ‘মেরিটাইম সিকিওরিটি’ বা সামুদ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও এই পদক্ষেপ কার্যকর হবে বলে বলা হচ্ছে।

শনিবার দিল্লির হায়দ্রাবাদ হাউসে ভারত ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীদের উপস্থিতিতে দু’দেশের মধ্যে যে মোট সাতটি সমঝোতা স্মারক হস্তান্তর হয়েছে তার মধ্যে সপ্তম তথা শেষটি ছিল এই কোস্টাল সার্ভেল্যান্স সংক্রান্ত। এই দলিলটির শিরোনাম ছিল বাংলাদেশকে ‘একটি উপকূলীয় নজরদারি সিস্টেম প্রদানের জন্য এমওইউ’ বা সমঝোতাপত্র।

রেডার ব্যবস্থার কাজ কী হবে?

সমুদ্রপথে কোনও সন্ত্রাসবাদী হামলার চেষ্টা হলে – যেমনটা এক দশক আগে ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইতে হয়েছিল – তার আগাম খবর পেয়ে যাওয়া সম্ভব এই ধরনের সিস্টেমের সাহায্যে

নরেন্দ্র মোদী ও শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বাংলাদেশের তরফে দলিলটি ভারতকে হস্তান্তর করেন সে দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামালউদ্দিন। আর ভারতের তরফে তাদের দলিলটি বাংলাদেশের হাতে তুলে দেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের বর্তমান রাষ্ট্রদূত রিভা গাঙ্গুলি দাস।

তবে সেই অনুষ্ঠানের পর ২৪ ঘন্টারও বেশি সময় কেটে গেছে, কিন্তু সেই দলিলে ঠিক কী আছে তার বিস্তারিত আনুষ্ঠানিকভাবে ভারত বা বাংলাদেশ কেউই প্রকাশ করেনি। ভারতের সরকারি সূত্রগুলো শুধু এটুকুই বলছে – বঙ্গোপসাগরীয় উপকূলে সামুদ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এটি হবে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

এই সমঝোতা অনুযায়ী বাংলাদেশের উপকূলে ভারত যে ধরনের রেডার সিস্টেম বসানোর কাজ করবে, প্রায় একই ধরনের সিস্টেম ভারত এর আগে মরিশাস, সেশেলস, মালদ্বীপের মতো ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রগুলোতে বসিয়েছে। তা ছাড়া মিয়ানমার উপকূলেও ভারতের পক্ষ থেকে আর একটি এই ধরনের রেডার সিস্টেম বসানোর কথাবার্তা চলছে।

এই ধরনের সমঝোতা আগামী দিনে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি ‘হোয়াইট শিপিং এগ্রিমেন্ট’ তৈরির পথ প্রশস্ত করতে পারেও বলা হচ্ছে।

দুটো দেশের মধ্যে এই ধরনের চুক্তি থাকলে তাদের নৌবাহিনী পরস্পরের বাণিজ্যিক জাহাজগুলোর চলাচল নিয়ে যাবতীয় তথ্য আগেভাগেই নিজেদের মধ্যে আদানপ্রদান করে থাকে।

উপকূলে নজরদারির আসল লক্ষ্য চীন

ভারত কেন এই আধুনিক রেডার ব্যবস্থা বাংলাদেশের উপকূলে বসাতে আগ্রহী, তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা এখনো জানা যায়নি। তবে কুয়ালালামপুরের মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চীন বিভাগের ড. সৈয়দ মাহ্‌মুদ আলী মনে করেন, আনুষ্ঠানিকভাবে দুই দেশের তরফ থেকে যা-ই বলা হোক না কেন দিল্লির সরকার ভারত সাগরের বিভিন্ন দ্বীপরাষ্ট্রে যে অত্যাধুনিক নজরদারির ব্যবস্থা গড়ে তুলছে তার আসল উদ্দেশ্য চীনের নৌবাহিনীর গতিবিধির দিকে নজর রাখা। তিনি বলছেন, “চীন সম্পর্কে ভারতের যে উৎকণ্ঠা রয়েছে, এবং বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে, তা কিছুটা নিষ্ক্রিয় করতেই ভারত সরকার অবশ্যই চাইবে এটা প্রমাণ করতে যে বাংলাদেশের ওপর তাদেরও কিছুটা হলেও প্রভাব রয়েছে।”

এ ধরনের একটি রেডার ব্যবস্থা বাংলাদেশের ভূখন্ডে স্থাপন করলে সেটাই প্রমাণিত হবে বলে তিনি মনে করেন।

বাংলাদেশের ভারসাম্যের চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশ ১৯৭৬ সাল থেকে চীনের সাথে ক্রমে ক্রমে বেশ ঘনিষ্ট অর্থনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। িএই সম্পর্ক গত ১০ বছরে, অর্থাৎ বর্তমান সরকারের আমলে, গভীর এবং নিবিড় আকার ধারন করেছে।

বাংলাদেশ ২০০৯ সাল থেকে তার সশস্ত্র বাহিনী, বিশেষভাবে বিমান ও নৌবাহিনীর, আধুনিকীকরণের ক্ষেত্রে চীনের কাছ থেকে ব্যাপক সাহায্য ও সহযোগিতা পেয়েছে বলে ড. সৈয়দ মাহ্‌মুদ আলী উল্লেখ করেন।

“এ নিয়ে ভারতের ক্ষোভের অন্ত নেই। ভারতের নৌবাহিনীর সাবেক প্রধান খুবই রুষ্টভাষায় বাংলাদেশের সমালোচনা করেছেন,” তিনি বলছেন, “বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভারতের সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন বাংলাদেশ শুধুমাত্র নিজস্ব উন্নতিকল্পে,এবং দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে যেখান থেকে যতটুকু সাহায্য পেতে পারে, তার সবই নেবে। এজন্য ভারতের চিন্তার কোন কারণ নেই।” তিনি বলছেন, ভারত-চীন-যুক্তরাষ্ট্র মিলে যে একটি ‘স্ট্র্যাটেজিক ট্রয়াঙ্গল ডায়নামিকস’ তৈরি করেছে, বিশ্বব্যাপী তার গুরুত্ব রয়েছে। বাংলাদেশ যেহেতু ভারত ও চীন উভয়ের সাথেই ঘনিষ্ট, তাই সে দেশের ওপর তার একটা প্রভাব পড়তে বাধ্য।

কাজেই, বাংলাদেশকে একটা ‘সফিসটিকেটেড’ ভারসাম্য রক্ষা করেই চলতে হবে বলে ড. আলী মন্তব্য করেন। (সূত্র: বিবিসি/সঠিক সংবাদ)

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.