আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ ভারতের হাতে ফ্রান্স থেকে রাফাল যুদ্ধবিমান আসতে শুরু করছে। ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ফ্রান্স থেকে প্রথম রাফাল যুদ্ধবিমানটি গ্রহন করেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। তিন দিনের ফ্রান্স সফররত রাজনাথ এদিন রাফাল গ্রহণের পর বলেছেন ভারত-ফ্রান্স সম্পর্কে এ ঘটনা নতুন দিগন্ত উন্মোচন করল। রাজনাথ বলেন, “রাফাল বিমান নির্ধারিত সময়ে পেয়ে আমি খুশি, আমার দৃঢ় বিশ্বাস এই বিমান আমাদের বিমানবাহিনীকে আরও শক্তিশালী করবে। আমি আশা করি দুটি বৃহৎ গণতন্ত্রের মধ্যে সহযোগিতা সর্বক্ষেত্রেই বৃদ্ধি পাবে।”
মোট ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান পাওয়ার কথা ভারতের। প্রথম রাফালটি নিতে প্যারিসের মেরিন্যাক বিমান ঘাঁটিতে পৌঁছান প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। এরপর দাসোর ফ্যাক্টরিতে যান তিনি। ভারতীয় কায়দায় পুজোর মাধ্যমে হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয় রাফালের। যুদ্ধবিমানের ককপিটেও বসে রাজনাথ এটির শোডাউন করেন। প্রথম রাফালের নাম আরবি-০০১। আরবি-র পুরো অর্থ রাকেশ ভাদোরিয়া। যিনি ভারতের বর্তমান বিমান বাহিনী প্রধান।
চুক্তিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা থাকার কারণেই তাঁকে এই সম্মান দিল দাসো। ২০১৫ সালে ফ্রান্সের সঙ্গে চুক্তি হয় ভারতের। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারত ফ্রান্সের কাছ থেকে ৩৬টি রাফাল বিমানের অর্ডার চুড়ান্ত করে। যার দাম পড়ে ৫৯ হাজার কোটি টাকা। মঙ্গলবার রাফাল বিমান সরকারি ভাবে হাতে তুলে দেওয়া হলেও প্রথম চারটি রাফাল বিমান ভারতে উড়ে আসবে ২০২০ সালের মে মাসে। ভারতীয় বিমান বাহিনী ইতিমধ্যেই প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো প্রস্তত করে ফেলেছে, পাইলটদের প্রশিক্ষণও সম্পন্ন করা হয়েছে।
এই বিমানগুলি রাখা হবে ভারতের আম্বালা বিমানঘাঁটিতে। যা কৌশলগতভাবে ভারতের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ বলে জানা গেছে। এখান থেকে ভারত-পাক সীমান্ত ২২০ কিলোমিটার দূরে। রাফালের দ্বিতীয় স্কোয়াড্রন রাথা হবে পশ্চিমবঙ্গের হাসিমারায়। রাফাল বিমান এই এলাকার ভারতের আকাশ শক্তি বাড়াবে। বর্তমান যুগে এগুলো আধুনিক যুদ্ধ বিমান বলে সুত্র জানায়।
রাফাল নিয়ে যত কথা ভারতেঃ ফ্রান্স থেকে রাফাল যুদ্ধবিমান ক্রয় নিয়ে কেলেংকারী হয়েছে বলে প্রথম দিকে ভারতে বেশ সোরগোল উঠে। এক পর্যায়ে জানানো হয়, চুরি হয়ে গেছে রাফালের নথি। মূলতঃ কত টাকা দিয়ে এ যুদ্ধ বিমান কেনা হচ্ছে, কারা এ কেনার সাথে জড়িত এসব নিয়ে ভারতের বিরোধী দল থেকে কথা উঠে। বিষয়টা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়ায়।যুগান্তর পত্রিকা সূত্রে জানা গেছে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেই এই নথিপত্রগুলো চুরি হয়েছে জানিয়ে বলা হয়, ওই মন্ত্রণালয়ের সাবেক বা বর্তমান কর্মচারীরা চুরিতে সাহায্য করেছে ।ফ্রান্সের সঙ্গে রাফাল বিমান চুক্তিতে দুর্নীতি হয়েছে বলে যখন মোদিবিরোধীরা সরব, ঠিক সে মুহূর্তে এ নথিগুলো চুরির কথা জানাল কেন্দ্রীয় সরকার। এর আগে রাফাল দুর্নীতি নিয়ে ভারতের ‘চৌকিদার’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ‘চোর’ ও ‘আম্বানিদের দালাল’ বলে সমালোচনা করেছিলেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। রাফাল মামলার শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল সুপ্রিমকোর্টে জানান, রাফাল সংক্রান্ত নথিগুলো চুরি হয়ে গিয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থেই সেগুলো আদালতকে দেখানো যাচ্ছে না। গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর ভারতীয় সুপ্রিমকোর্ট জানিয়েছিল, রাফাল যুদ্ধবিমান কেনা নিয়ে প্রশ্ন তোলা এবং তদন্তের প্রয়োজন নেই। এই চুক্তিতে আর্থিক দুর্নীতি হয়নি। ১২৬-এর জায়গায় ৩৬টি বিমান কেনা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে যে প্রশ্ন তোলা হয়েছে তা একেবারেই অনুচিত বলে রায় দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। তাছাড়া বিমান কেনার প্রক্রিয়ায় কোনও সমস্যা নেই জানিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বানিজ্যিক পক্ষপাতিত্বের যে অভিযোগ উঠেছে তাও ভিত্তিহীন জানায় সুপ্রিমকোর্ট।
এরপরই রায়ের পুনর্বিবেচনার আরজি জানিয়ে মামলা করেন সাবেক অর্থমন্ত্রী যশবন্ত সিনহা, অরুণ সৌরি ও আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ।পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধাবস্থার মধ্যে সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, তার দেশ যদি সঠিক সময়ে রাফাল যুদ্ধবিমান কিনতে পারত, তবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক লড়াইয়ের ফল ভিন্ন হতেও পারত।
ভারতীয় দৈনিক ইন্ডিয়া টুডে মিডিয়া সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, ভারতের এখন রাফাল যুদ্ধবিমান দরকার। ফ্রান্স থেকে তারা এ বিমান ক্রয় করতে চাইছেন। বিরোধী দল কংগ্রেসের কাছ থেকে দুর্নীতির অভিযোগ আসার পর এ চুক্তি নিয়ে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম হয়েছে।
২০১৬ সালে করা রাফাল চুক্তিতে সরকার বড় অনিয়ম করেছে বলে অভিযোগ তোলে বিরোধী দলগুলো। অভিযোগ, দুই-দুইবার করে করা হয়েছে এই চুক্তি। সেটা ভারতের কোম্পানি রিলায়েন্সের মালিক আম্বানি গোষ্ঠীর স্বার্থেই। ধনকুবের ব্যবসায়ী অনিল আম্বানির ভুঁইফোড় সংস্থা রিলায়েন্স ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিজকে কাজ পাইয়ে দিতে পুরনো চুক্তি বাতিল করে নতুন চুক্তি করা হয়।
তবে ফ্রান্সের ফ্রাসোয়া ওলান্দ চুক্তির অনিয়ম স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ভারতে বিমান তৈরির কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে অনিল আম্বানির কোম্পানির নামই প্রস্তাব করে মোদির সরকার। আম্বানির সংস্থাকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ভারত সরকার চাপও দিয়েছিল। #৮.১০.১৯