--- বিজ্ঞাপন ---

রোবট দিয়ে ঘরের কাজ

0

কাজী আবুল মনসুর
রোবট নিয়ে সব ধরনের মানুষের এখন ব্যাপক আগ্রহ। রোবট নিয়ে যতো সাইন্স-ফিকশন আর গল্প হাতের কাছে পাওয়া যায় তরুনরা সবই ঝটপট করে পড়ে ফেলো। রোবট নিয়ে কোনো ছবি হলে তো কথাই নেই, সেটা শেষ না করে ওঠাই যাবে না। রোবট তৈরির প্রযুক্তি বর্তমানে এমন এক পর্যায়ে এসে পৌছেছে যে, রোবট দিয়ে ঘর পরিষ্কার করা থেকে শুরু করে বাড়ির সব ধরনের কাজ করানো হচ্ছে। এসব কথা কি অনেকের জানতে ইচ্ছে করে। করবে না-ই বা কেন, সেসব তো আমারও খুব জানতে ইচ্ছে করে! চলো, এবারে জেনে আসি বাড়িতে কাজের রোবটদের সাতকাহন
!http://bangladeshersangbad.com

পৃথিবীর জনসংখ্যা এগিয়ে যাচ্ছে সাড়ে সাত”শ কোটির দিকে। এ নিয়ে অনেকেই চিন্তিত। বিকাশমুখী অনেক দেশেই জনসংখ্যা বাড়ছে। তোমরা হয়তো জেনে অবাক হবে যে, জাপানে ঘটছে পুরোপুরি এর উল্টোটা। সেখানে বাচ্চা নিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করছে আজকের প্রজন্ম। ১৯৫০সালে জাপানের একটি পরিবারে দুই থেকে তিনটি করে বাচ্চা দেখা গেছে। কিন্তু এখন একটি বাচ্চাই যথেষ্ট মনে করা হচ্ছে। এবং কোন কোন ক্ষেত্রে জাপানিরা বাচ্চার ঝামেলাতেই যেতে চাইছেন না।মনে অনেকের প্রশ্ন জেগেছে যে, যদি নতুন প্রজন্মের সংখ্যা এত কম হয় তাহলে যারা বৃদ্ধ, তাদের যত্ন কে নেবে? এইসব বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের দেখাশোনাই বা কে করবে? কীভাবে রক্ষা করা হবে তাদের প্রয়োজনগুলো? এসব প্রশ্নের মুখে এগিয়ে এসেছে বেশ কিছু গাড়ি তৈরির কারখানা থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান এবং ইলেকট্রনিক্সের কোম্পানি। তারা তৈরি করছে রোবট। যেমন প্যানাসনিক কোম্পানি এমন একটি বিছানা তৈরি করেছে যা হুইল চেয়ার হিসেবেও ব্যবহার করা সম্ভব। এমন একটি রোবটও তারা তৈরি করেছে যে রোবটটি বৃদ্ধ বা বৃদ্ধার চুলে শ্যাম্পু করতে এবং চুল ধুয়ে দিতে সাহায্য করবে। কোম্পানির পরিচালক ইয়ুকিও হোন্ডা বলেন, ‘‘আমাদের লক্ষ্য হল সমাজের বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সাহায্য করা। শারীরিকভাবে যারা আর আগের মত পরিশ্রম করতে পারেন না, তাদের প্রতিদিনের জীবনকে আরো সহজ করে তোলা।’’

আরও জানিয়ে রাখি টয়োটা মোটর কোম্পানি তৈরি করছে এমন একটি রোবট যা সঙ্গী হবে নিঃসঙ্গ মানুষের। তারা ঘর পরিষ্কার করবে, প্রয়োজনীয় ওষুধটি কাছে এনে দেবে, হাঁটা-চলার সময় একটি হাত ধরে রাখবে। এ ধরনের সেবা দেবে রোবট। তুমি নিশ্চয়ই জেনে থাকবে, জাপানের মানুষরা দীর্ঘায়ু লাভ করে থাকে। পুরুষরা সাধারণত ৮০বছর পর্যন্ত বাঁচে এবং মহিলারা ৮৬। একশো বছর বয়সের মানুষ জাপানে কম নয়। জাপানের বর্তমান জনসংখ্যা বারো কোটির কিছু বেশি। এর মধ্যে ২৩ শতাংশের বয়স ৬৫’র ওপরে। আশঙ্কা করা হচ্ছে ২০৫৫ সালের মধ্যে জাপানের জনসংখ্যা নেমে আসবে নয় কোটির নিচে।জাপানের সংবাদমাধ্যমগুলো খবর দিয়েছে, দেশটির বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের এখন সাহায্য করছে রোবট। বর্তমানে বেশ কিছু সংস্থা বিশেষ ধরনের রোবট তৈরি করছে যারা ঘর পরিষ্কার করা থেকে শুরু করে চুলে শ্যাম্পু পর্যন্ত করে দিতে সক্ষম।

সংক্ষেপে একটা ঘটনা বলি, .. জাপানে ৭৯ বছর বয়সী বৃদ্ধা একিনো। বাস করেন রাজধানী টোকিও থেকে বেশ দুরের একটি গ্রামে। বাড়িতে তার স্বামী নেই, নেই কোন সন্তানও। স্বামী-আতœীয় স্বজন সবাই মারা গেছেন। তাই বলে এই বৃদ্ধার গোটা জীবন কিন্তু একাকী কাটেনি। সেই বৃদ্ধার একমাত্র সঙ্গী হল প্রিমো পুয়েল। এই প্রিমো আসলে কোনও মানুষ নয়। এক ধরনের রোবট, যার সাথে একিনো কথা বলেন, খেলা করেন।
এমনি আর একটি ঘটনা। হিরোজকি কাইকোর রোবটের নাম নভো। তার একমাত্র সাথী এই রোবট। তিনি বলেন, আমি নভোকে আমার পড়ার টেবিলের পাশে রাখি। তাকে আমি আধঘন্টা পরপর শব্দ করতে বলি সে আমাকে সময় জানায়। মাঝে মাঝে সে আমাকে বিভিন্নভাবে হেঁটে চলে দেখায়। এতে করে আমার নিঃসঙ্গতার মাঝে আনন্দ খুঁজে পাই। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০৫০ সালে জাপানে একিনো ও হিরোজকির মতো ৬৫ উর্ধ্ববয়স্কের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ হবে। অতিরিক্ত বাচ্ছা না নিয়ে মানুষ যে রোবট চায়, রোবটকে দিয়ে কাজ করাতে চায়, সেটারও প্রমাণ হয়ে গেলো ২০০৮ সালে। ২০০২ সালে বাজারে ছাড়া হয়েছিলো রুম্বা নামের এক ভ্যাকুয়াম ক্লিনার রোবট। মাত্র ৬ বছরেই এই ক্লিনার রোবট বিক্রি হয়েছে আড়াই মিলিয়নেরও বেশি। তাহলেই বলো, মানুষ রোবট ব্যবহার করতে চায় কিনা? ঘরে যদি একটা রোবট থাকতো, যেটা সারা বাড়ি ধুয়ে মুছে পরিস্কার করে রাখতো, কিংবা যখন যা দরকার তা এগিয়ে দিতো, তাহলে কি খারাপ হতো? তাহলে অন্যরাই বা রোবট ব্যবহার করতে চাইবে না-ই বা কেনো?

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.