--- বিজ্ঞাপন ---

প্রধানমন্ত্রী  আগে নিজের ঘর শেষ করেই পরকে ধরবেন: চট্টগ্রামে ওবায়দুল কাদের

0

চট্টগ্রাম, (২৭ অক্টোবর, ২০১৯ ইং) : আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের চট্টগ্রামে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বর্তমানে চলমান শুদ্ধি অভিযান কোন  লোক দেখানো নয়, দলমত নির্বিশেষে সবার বিরুদ্ধে এ অভিযান চলবে। তিনি মন্তব্য করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী  আগে নিজের ঘর শেষ করে এরপর অন্যদেরও  ধরবেন।

তিনি আজ রোববার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগরীর পাঁচলাইশে একটি কমিউনিটি সেন্টারে চট্টগ্রাম  বিভাগের ৬টি সাংগঠনিক জেলার প্রতিনিধি সম্মেলনে এসব কথা বলেন।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা লোক দেখানো শুদ্ধি অভিযান করছি না। আমরা প্রমাণ করব, আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা প্রমাণ করবেন অপকর্মের বিরুদ্ধে তিনি কঠোর অবস্থানে আছেন। এ শুদ্ধি অভিযানে শুধু আওয়ামী লীগের লোক নয়, বিএনপিরও কে কি করেন সবার খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ‘কে কোথায় বসে কোন অপকর্ম করছেন, অপরাধ করছেন তার খোঁজ নেওয়া হচ্ছে, সময়মত টের পাবেন, বুঝতে পারবেন। ‘সময়মত টের পাবেন, বুঝতে পারবেন। ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নেত্রী  ঘরেরটা শেষ করে পরকে ধরবেন। সব আসবে। সব অপরাধী ধরা পড়বে এই জালে। সব অপকর্মকারীরা ধরা পড়বে।’

সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘চট্টগ্রামে বলে যাচ্ছি, হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করছি চিহ্নিত চাঁদাবাজরা সাবধান হয়ে যান, টেন্ডারবাজরা, ভূমি দস্যুরা, মাদকব্যবসায়ীরা সাবধান হয়ে যান। শেখ হাসিনার অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন। অ্যাকশন শুরু হয়ে গেছে। অপকর্ম করে কেউ পার পাবেন না। নিজের লোককে শায়েস্তা করার সৎ সাহস শেখ হাসিনার আছে।’

দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ক্ষমতার দাপট দেখাবেন না। দল যখন ক্ষমতায় থাকবে না, তখন কোথায় থাকবেন, কোথায় পালাবেন ? আওয়ামী লীগ মাটি ও মানুষের দল। মানুষের ভালোবাসা হারিয়ে ফেললে আওয়ামী লীগ বাঁচবে না। আওয়ামী লীগ মানুষের ভালোবাসা নিয়ে বেঁচে থাকতে চায়। শেখ হাসিনার উন্নয়ন এবং নেতাকর্মীদের ভালো আচরণ- এই নিয়ে আওয়ামী লীগ এগিয়ে যেতে চায়।’

‘ফেনীর নুসরাত হত্যা মামলার রায় দেখেছেন। সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতিরও ফাঁসির রায় রায় হয়েছে। নিজ দলের নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগ সরকার ছাড় দেয়নি। আমাদের অনেক এমপিকেও দুদক নোটিশ দিয়েছে। কোনো কোনো সাবেক মন্ত্রীকে আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে। একজন এমপি দন্ডিত হয়ে জেলে আছে। আমরা আদালতের ওপর হস্তক্ষেপ করি না। আমরা কখনো দুদককে বলব না, অমুককে ছেড়ে দিন।’

শুদ্ধি অভিযান নিয়ে বিএনপি নেতাদের সমালোচনার জবাবে আওয়ামী লীগের এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘বিএনপিনেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অনেক বড় বড় কথা বলছেন। বিএনপি নেতাদের বলতে চাই, একটা প্রমাণ দেখান দলের অপরাধীদের একজনেরও আপনারা শাস্তি দিয়েছেন কি না। বিএনপির সময় দেশ পর পর পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। তাদের মুখে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বক্তব্য ভূতের মুখে রাম নাম। হাওয়া ভবনের লুটপাটের কথা এদেশের মানুষ ভুলে যায়নি।

’তারেক রহমানকে উদ্দেশ্য করে কাদের বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মুচলেকা দিয়ে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেবে বলে বিদেশ গিয়েছিলেন। ওয়ান ইলেভেনের পর বিদেশ থেকে বসে বসে ষড়যন্ত্রের গুটি চালছেন। বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত করছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি বসে নেই। বিএনপি ইস্যু খুঁজছে। নিজেদের মধ্যে তুচ্ছ ঘটনা ঘটিয়ে বিরোধীদের হাতে ইস্যু তুলে দেবেন না।’

চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ সম্পর্কে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের মূল সমস্যা হচ্ছে অন্ত:কলহ। নেতারা সবসময় একসঙ্গে থাকেন, কিন্তু মাঝে মাঝে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যায়ৃ। এই সভায় আমরা ঐক্য ও শৃঙ্খলা কিছুটা দেখতে পাচ্ছি। এই ঐক্য ও শৃঙ্খলা যেন বজায় থাকে এবং সংগঠন যেন আরও শক্তিশালী হয়।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দলের দুঃসময়ের নেতাকর্মীদের কোণঠাসা করা হলে আওয়ামী লীগ টিকবে না। ত্যাগীদের বাদ দিয়ে অনেক অনুপ্রবেশকারী, হাইব্রিড দলের বিভিন্ন পদে জায়গা করে নিয়েছে। নেতাদের বলব, এই অপকর্ম করবেন না। শেখ হাসিনার এত পরিশ্রম, অপকর্ম করে দলকে ছোট করবেন না। বঙ্গবন্ধুর নাম নিয়ে অপকর্ম করবেন না।’

মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের ওপর আস্থা-বিশ্বাস রেখে অন্য দল থেকে লোক আসতে পারে। আওয়ামী লীগ গণমানুষের সংগঠন। যে কেউ আওয়ামী লীগে আসতে পারে। তবে যুদ্ধপরাধে জড়িত দলের সদস্য কাউকে আমরা দলে নেব না। যারা আগুন সন্ত্রাস করেছে, অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত, তাদের আমরা দলে নেব না। যারা সৎ-যোগ্য, যাদের বিরুদ্ধে অনৈতিক কর্মকান্ডের অভিযোগ নেই, কেন্দ্রের অনুমতি নিয়ে তাদের দলে নেওয়া যেতে পারে। খারাপ লোকদের দ্রুত দল থেকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করতে হবে। ক্লিন ইমেজের নেতৃত্ব নিয়ে দলকে এগিয়ে নিতে হবে।’

আওয়ামী লীগ প্রচার সম্পাদক তথ্য মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘পরপর তিনবার দল ক্ষমতায় থাকার কারণে অনেকে এখন আওয়ামী লীগ করতে চায়। দলে অনেক অনুপ্রবেশকারী সুবিধাবাদীরা  ঢুকেছে। তৃণমূল পর্যায়েও ঢুকেছে। সুবিধাবাদী-বর্ণচোরাদের বাদ দিয়ে সংগঠনকে পরিস্কার করতে হবে। আওয়ামী লীগ গণমানুষের সংগঠন, যে কেউ সমর্থন করতে পারে। কিন্তু ২১ বছর ধরে যারা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করেছে, পেট্রোল বোমার সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের বের করে দিতে হবে। যেসব ছাড়পোকা-উইপোকা দলে ঢুকেছে তাদের বের করে দিতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, ‘হাইব্রিড, অনুপ্রবেশকারী, উইপোকারা দলের ভেতরে ঢুকে গেছে। সৎ, ত্যাগী নেতাকর্মীরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকেন তাহলে অনুপ্রবেশকারী-হাইব্রিডরা আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে প্রভাবিত করতে পারবে না।’

চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালাম বলেন, চিহ্নিত স্বাধীনতাবিরোধী ও তাদের দোসর, পেট্রোল বোমার আসামি, আগুন সন্ত্রাসী, যারা অতীতে আওয়ামী লীগের ক্ষতি করেছে তাদের দলে নেওয়া যাবে না।’

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে এবং নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন দলের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম,  নগর কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, উত্তর জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালাম, দক্ষিণ জেলা সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান।

সম্মেলনে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি জেলার তৃণমূল পর্যায়ের মনোনীত নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

## শহীদ

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.